স্বপ্ন পূরণে ছুটে চলা। (শেষ পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক

ঢাকায় এসে জামাল দেখতে পেলো ঢাকা ভার্সিটিতে যারা পরীক্ষা দেবে তারা সবাই বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা করছেন। আর এদিকে জামালের কোন শিক্ষকও ছিল না যে তাকে ঢাকা ভার্সিটির ভর্তির ব্যাপারে গাইড করবে। জামাল একা একাই পড়ালেখা করেছে। পরীক্ষা দেয়ার পর জামাল বাড়িতে চলে এলো । চার পাশের এত ছেলেমেয়েদের দেখে জামালের ধারণা হয়েছিল সে কিছুতেই এখানে চান্স পাবে না।

Polish_20220901_193203791.jpg

জামাল যেই বাড়িতে উঠেছিল। তাদের কাছে তার রোল নাম্বার দিয়ে বলেছিল যদি আমি চান্স পাই তাহলে আমাকে একটু জানাবেন। কারণ আমার পক্ষে রেজাল্ট নিতে আর ঢাকা শহরে আসা সম্ভব না। যখন ফল প্রকাশিত হলো তখন দেখা গেল জামাল মেধা তালিকার একদম প্রথমদিকে। জামালের সেই শিক্ষকেরা জামালের রেজাল্ট এর খবর জানতে পেরে মিষ্টি নিয়ে তাদের বাড়িতে এলো। কিন্তু এসে দেখে জামাল বাড়িতে মন খারাপ করে বসে আছে।

তারা জামালকে জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার? এত ভালো রেজাল্ট করেছো অথচ এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন? তখন জামাল তার শিক্ষকদেরকে বললেন স্যার ঢাকায় থেকে লেখাপড়া করার সামর্থ্য তো আমার নেই আপনারা জানেন। আর আপনারাও বা আমার জন্য আর কতো করবেন? এর থেকে আমি দেখি বরিশালে গিয়ে কিছু করতে পারি কিনা। কিন্তু তার সেই শিক্ষক দুজন প্রবল আপত্তি জানালেন। তারা বলল তুমি ঢাকা গেলে কিছু না কিছু করতে পারবে। পড়ালেখার পাশাপাশি নিজের খরচ চালানোর জন্য ঢাকায় অনেক কাজ আছে।

আপাতত তুমি আমার বোনের বাসায় মাসখানেক থাকতে পারবে। তারপর ওদেরকে আমি বলে দেব তোমার জন্য কয়েকটা টিউশনি জোগাড় করে দিতে। যাতে তুমি নিজের খরচ নিজেই চালাতে পারো। আর ঢাকা যাওয়ার জন্য তোমার এখন যে টাকা লাগবে আমরা দুজন যেভাবে পারি সেটা জোগাড় করে দিচ্ছি। দুই দিনের ভেতর তারা হাজার পাঁচেক টাকা এনে জামালের কাছে দিল। এই টাকাটা তারা এলাকার অবস্থা সম্পন্ন মানুষের কাছ থেকে জামালের জন্য চেয়ে এনেছে।

সেই টাকা নিয়ে জামাল ঢাকা শহরে আসলো। এসে তার শিক্ষকের বোনের বাড়িতে উঠলো। কিন্তু জামালের মাথায় সব সময় একটা চিন্তায় ঘুরতো কিভাবে একটা কাজ জোগাড় করা যায়? অবশ্য কয়েকদিনের ভিতরেই সেই বাসা থেকে জামালকে দুটো টিউশনি জোগাড় করে দিলো। আর এর ভেতরে জামাল বিভিন্ন ছাত্রদের সাথে কথাবার্তা বলে হলে তার একটা সিটের ব্যবস্থা করেছে। যদিও তার সিট হয়েছে গণরুমে। সেখানে এক রুমে অনেক ছেলেপেলে থাকে। জামাল যখন ঢাকা ভার্সিটির হলে গিয়ে উঠলো। তখন জামালের কাপড় চোপড় দেখে সেখানকার অনেকেই ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছিলো।

যদিও জামাল খেয়াল করে দেখেছে তার মত আরো কিছু ছেলে সেখানে আছে। যারা দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছে। তারপর জামাল ক্লাসের পাশাপাশি বেশ কয়েকটা টিউশনি করাতে লাগলো। সে খেয়াল করে দেখেছে ঢাকা শহরে টিউশনি করে ভালো টাকা আয় করা সম্ভব। টিউশনির টাকা দিয়ে সে নিজে চলতো। বাড়িতে কিছু টাকা পাঠাতো আবার কিছু টাকা জমাও করত। এভাবে তার বেশ ভালোই চলছিল। যদিও ক্লাস করে নিজের পড়ালেখা করার পর চার পাচটা টিউশনি করতে তার খুব কষ্ট হতো। কিন্তু তার সামনে তো অন্য কোন রাস্তা খোলা নেই।

এর ভেতরে হঠাৎ করে এলো করোনা নামক মহামারী। তখন একবারে জামালের সবগুলো টিউশনি ছুটে গেলো। জামাল পড়লো অথই সাগরে। এখন কি করবে সে কিছু বুঝতে পারছিলো না। কিছু জমানো টাকা তার কাছে আছে। কিন্তু সেই টাকাটা যদি সে এখন খরচ করতে থাকে। তাহলে বিপদে পড়লে কি করবে? এর ভেতরে তার এক বন্ধু তাকে একটা বুদ্ধি দিলো। তুই তোর জমানো টাকা দিয়ে একটি মোটরসাইকেল কিনে ফেল। তারপর সেখানে রাইড শেয়ারের মাধ্যমে তুই ভালোই ইনকাম করতে পারবি। বুদ্ধিটা জামালের পছন্দ হলো। তারপর থেকেই জামাল পড়ালেখার পাশাপাশি মোটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। সোহেল জামালের গল্প শুনে অবাক হয়ে গেলো। (সমাপ্ত)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

অত্যন্ত ধৈর্য ও সাহস নিয়ে এবং দুজন শিক্ষকের সহযোগিতায় জামাল সামনের দিকে দারুন ভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল। যদিও করোনা মহামারীর সময় অনেকেই তার কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছিল। তবে জামানের বন্ধু দেওয়া বুদ্ধিটা জামালের জন্য খুবই উপকারে এসেছে। অসাধারণ একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য প্রিয় ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65792.18
ETH 2695.80
USDT 1.00
SBD 2.90