জোবেদা বেগমের পথ চলা। ১০% সাইফক্স।
তবে তার এলাকার লোকজন তাকে এখনো ভুলে যায়নি। সেখানকার অনেকেই তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করে। সে উদ্দেশ্যেই আজকে বাড়ি থেকে বের হওয়া। বের হওয়ার আগে থেকেই জোবেদা বেগম ঠিক করে রেখেছে আজকে যে টাকা সে মানুষের কাছ থেকে পাবে। সেখান থেকে দুই নাতির জন্য কিছু জামা কাপড় কিনবে। তারা আবার বায়না দিয়ে রেখেছে ঈদের দিন পোলাও মাংস খাবে।
তাই জোবেদা বেগম চিন্তা করেছে যাওয়ার সময় এক কেজি পোলাওর চাল কিনে নিয়ে যাবে। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তাদের জন্য পোলাও-মাংস বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়। তারপরও বছরের একটা দিন নাতিদের মুখে যদি একটু ভালো-মন্দ তুলে দিতে পারে। তাহলে তার কাছে অনেক ভালো লাগবে। কিছুক্ষণ সেখানে বসে বিশ্রাম নেয়ার পর জোবেদা বেগম আবার রওনা দিলো তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
বেশ কিছুক্ষন হাটার পর সে তার পুরোনো এলাকায় পৌঁছালো। প্রথম বাড়িতে গিয়ে সে বসে এক গ্লাস পানি চাইলো। বাড়ির মহিলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তুমি রোজা নেই? সে বলল এসিডিটির সমস্যার জন্য রোজা থাকতে পারিনা। বাড়ির মহিলা তাকে কিছু কথা শুনিয়ে দিলো। যদিও আসার সময় তাকে কিছু টাকা দিয়েছিল সে মহিলা। এভাবে বেশ কয়েকটা বাড়িতে যাওয়ার পর সে তার বান্ধবীর বাড়িতে উপস্থিত হোলো।
যদিও বান্ধবী এখন বাড়িতে থাকে না। বাড়িতে এখন বান্ধবীর ছেলে আর তার বউ থাকে। সেখানে গিয়ে আবার কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো সে। পরে বান্ধবীর ছেলের বউয়ের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ গল্প করলো। সেখান থেকেও সে কিছু টাকা পেলো। আসার সময় বান্ধবীর ছেলের বউ তাকে কিছু খাবার ও দিয়ে দিলো। সাথে ফ্রিজ থেকে বের করে একটি মুরগিকে দিয়ে বললো এটা আপনি বাসায় নিয়ে রান্না করে খাবেন। জোবেদা বেগম মুরগি পেয়ে খুবই খুশি হলো। সে বললো এই মুরগিটা নিয়ে কারো ফ্রিজে রেখে দেবো। ঈদের দিন এই মুরগী রান্না করে দেবো আমার নাতিদেরকে।
এভাবে এলাকার সব পরিচিত বাসার যাওয়ার পর সে দেখল তার কাছে বেশ কিছু টাকা হয়েছে। সকাল থেকে এখন প্রায় দুপুর পার হয়ে গিয়েছে। সকাল থেকে হাঁটার উপরে আছে। এখন আর শরীরে কুলাচ্ছে না। তাই সে একটি রিকশা নিয়ে মার্কেটে গেলো নাতিদের জন্য জামা-কাপড় কিনতে। ফুটপাত থেকে নাতিদের জন্য অল্প টাকার ভেতর কিছু জামা কাপড় কিনলো। জোবেদা বেগম জানে এই অল্প টাকার জামা-কাপড় পেয়েই তার নাতিরা অনেক খুশি হবে।
সে মনে মনে তার পুরনো দিনের কথা চিন্তা করে আফসোস করতে লাগলো। যদি আজ তাদের অবস্থা আগের মতো থাকতো। তাহলে সে নাতিদেরকে ভালো খাওয়াতে পারতো ভাল কাপড়-চোপড় দিতে পারতো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ তাদেরকে ভিক্ষা করে জীবন নির্বাহ করতে হচ্ছে। জামা কাপড় কেনার পর জোবেদা বেগম ১ কেজি পোলাওর চাল কিনলো। আর সাথে এক প্যাকেট সেমাই কিনলো ঈদের দিন রান্না করার জন্য।
সবকিছু নিয়ে সে যখন বাড়ী পৌছালো। তখন তার নাতিদের আনন্দ আর ধরে না। তারা নানীর কাছে বায়না ধরল আজকেই পোলাও খাবে। জোবেদা বেগম তাদেরকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বলল আর মাত্র একটা দিন বাকি আছে। ঈদের দিন আমি তোমাদের জন্য পোলাও-মাংস, সেমাই সবকিছু রান্না করবো। এমন অনেক দিন তাদের যায় যেদিন তাদের তিন বেলা ভাত জোটে না।
তাই জোবেদা বেগম যে টাকা পেয়েছে বুদ্ধি করে সেখান থেকে এক বস্তা চাল আর কিছু ডাল কিনলো। এখন আগামী বেশকিছুদিন আর তাদের ভাতের অভাব হবে না। সন্ধ্যার সময় জোবেদা বেগমের মেয়ে বাড়িতে এসে দেখে ছেলে দুটি নতুন জামা গায়ে দিয়ে বসে আছে। জোবেদা বেগমের মেয়ে তার সন্তানদের জিজ্ঞেস করলো তোরা নতুন জামাকাপড় কোথায় পেলি? তারা জানালো তাদের নানি তাদেরকে নতুন জামাকাপড় দিয়েছে।
তখন জোবেদা বেগম এর মেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল তুমি এত টাকা কোথা থেকে পেলে? তখন সে জানালো সে তার পুরনো এলাকায় গিয়েছিলো। সেখানকার মানুষ যে টাকা দিয়েছে সেই টাকা থেকে নাতিদের জন্য জামা কিনেছে। তার মেয়ে তাকে রাগ করতে লাগলো। শুধু শুধু জামাকাপড় কিনে টাকা পয়সা নষ্ট করেছো। এর থেকে কিছু চাল-ডাল কিনে রাখলে ভালো হতো। তাহলে আগামী বেশকিছুদিন আর আমাদের খাওয়ার কষ্ট হতো না জোবেদা বেগম তখন তাকে জানালো আজকে বেশ কিছু টাকা পেয়েছি। সেখান থেকে চাল-ডাল কিনেছি। এই কথা শুনে তার মেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হলো। তার মা যে এরকম বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য চাইতে যায়। এটা তার মোটেই পছন্দ না। কিন্তু সে জানে এটা ছাড়া তাদের চলার কোন উপায়ও নেই।
কারণ সে যে যৎসামান্য টাকা সে বেতন পায়। সে টাকায় চারজন মানুষের সংসারের চলার কোন উপায় নেই। জোবেদা বেগম এখন বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে।ঘরে খাবার চালডাল আছে। হাতে কিছু টাকাও আছে। আবার নাতিদেরকে নতুন জামা কাপড় দিতে পেরেছে। সবকিছু মিলিয়ে তার কাছে অনেক ভালো লাগছিলো। সাথে একটা চিন্তা তার মাথায় খেলা করছিলো। চাল-ডাল আর টাকাগুলো শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী দিনগুলি তাদের কিভাবে কাটবে? (সমাপ্ত)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 0/6) Get profit votes with @tipU :)
জোবেদা বেগম কে নিয়ে আপনার লেখাটা পড়ে খুব খারাপ লাগলো আমাদের সমাজে এরকম হাজারো জোবেদা এখনো বেঁচে আছে যারা তাদের পরিবারের সন্তানদের নাতি-নাতনিদের ছোট ছোট স্বপ্ন আশা পূরণ করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণেই আমাদের অবস্থান একেক সময় একেক রকম হয়। আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে গরীব অসহায় মানুষদের কথা খুব কম লোকই ভাবে তাদের স্বপ্ন ছোট তাদের চাহিদা অনেক কম কিন্তু তার পরেও আমরা কত অবহেলা চোখে দেখি তাদের সবাই মিলে একটু হাত বাড়িয়ে দিলেই এই মানুষগুলো সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারত। এত সুন্দর পোস্ট আপনি অনেক সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লিখেছেন জোবেদা বেগমের গল্প। অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া পড়ে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এ ধরনের লোক আমাদের সমাজে অভাব নেই। কিন্তু আমরা কেউই তাদের খোঁজ রাখি না। তাদের প্রতি কিছুটা সহমর্মিতা তাদের জীবনটাকে অনেক সুন্দর করে তুলতে পারে।
জোবেদা বেগম এর পথ চলা লেখাটা পড়তে পড়তে আমার মনে হচ্ছিল চোখের সামনে কিছু বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। আসলে এটা আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার প্রতিচ্ছবি আমার শুধু এটাই বারবার মনে হচ্ছিলো। আমাদের সমাজ অবস্থাটা এরকম হয়েছে ধনীরা দিন যেন দিন দিন আরও ধনী হচ্ছে। কিন্তু দারিদ্র্যসীমার নিচে যে সমস্ত লোক বসবাস করছে তাদের দিকে বিন্দুমাত্র তাকানোর অবকাশ নেই। সেটা না করে আমরা যদি ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারতাম। তাহলে মনে হয় আমাদের আনন্দের মাত্রা অনেক গুণে বেড়ে যেত। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি লেখা শেয়ার করার জন্য।
আমরা সবাই ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে আছি। আমাদের এই সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের দিকে তাকানোর সময় কই?
জোবেদা বেগম কে নিয়ে অনেক সুন্দরভাবে আপনি একটি লেখা উপস্থাপন করলেন। আসলে আমাদের আশেপাশে এরকম হাজারো মানুষ আছে যার প্রত্যেকটি ঘরে জেবেদা বেগমের মতো অবস্থা। সত্যি ভাই আপনাকে স্যালুট জানাই সুন্দর একটি টপিক নিয়ে লেখার জন্য।
আমাদের সকলেরই এই ধরনের লোকদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। আমাদের সামান্য একটু সহযোগিতা এদের জীবনটা অনেক সুন্দর করে তুলতে পারে।
ঠিক বলেছেন ভাই, আমি আমার সাধ্য মত চেস্টা করি।