অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি (শেষ পর্ব)।
প্রথমে ফরিদ মনে করলো সে ভুল শুনেছে। কিন্তু একটু দাঁড়িয়ে খেয়াল করতে পরিষ্কার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলো। কান্নার আওয়াজ শুনে ফরিদ ডাস্টবিনের কাছাকাছি গিয়ে খুঁজতে লাগলো আওয়াজটা কোত্থেকে আসছে। হঠাৎ করে সে ডাস্টবিনের ভেতরে উঁকি দিয়ে যে দৃশ্য দেখলো। সেটার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিল না। দেখতে পেলো কাপড়ের পুটুলিতে মোড়া একটি মানব শিশু। সেই পুটুলিটা মুখে করে ধরে রেখেছে একটি কুকুর। দৃশ্যটি দেখে ফরিদ সাহেবের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার জোগাড়।
সে দ্রুত একটি ইট উঠিয়ে কুকুরটিকে মারতে গেলে তখন কুকুরটি মুখ থেকে কাপলের পুটলিটা রেখে পালিয়ে গেলো। তখন ফরিদ গিয়ে বাচ্চাটিকে কোলে উঠিয়ে নিলো। বাচ্চাটিকে যে কাপড় দিয়ে মোড়ানো ছিল সেটি প্রচন্ড দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে রয়েছে। ফরিদের মনে হলো এই বাচ্চাটি খুব বেশিক্ষণ হয়নি এখানে এসেছে। কেউ হয়তো তার অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চা এখানে ফেলে দিয়ে গিয়েছে। মানুষের নিষ্ঠুরতার কথা চিন্তা করে ফরিদের চোখে পানি চলে এলো। ফরিদ তার নিজের কথা চিন্তা করলে লাগলো।
একটি সন্তানের জন্য তার বুকের ভেতরে কি হাহাকার সেটা শুধু সেই জানে। সে এটাও জানে তার স্ত্রীর অবস্থা ও তার মতই। আর এদিকে মানুষ তাদের নিজের সন্তানকে এভাবে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। ফরিদ বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো কি করবে ? কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করার পর সে সিদ্ধান্ত নিল এই শিশুটিকে সে বাসায় নিয়ে যাবে। এখন থেকে এটি তাদের সন্তান। ফরিদ দ্রুত পা চালাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর একটি রিক্সা পেয়ে রিক্সাওয়ালাকে বলল তাড়াতাড়ি বাড়িতে যেতে। ফরিদ বাড়িতে পৌঁছে জোরে জোরে দরজার কড়া নাড়ছিলো। তার স্ত্রী দরজা খুলে তার কোলে বাচ্চাটিকে দেখে হতবাক হয়ে যায়।
সে জিজ্ঞেস করে এ বাচ্চা কার? তুমি কোথায় পেলে ? প্রশ্ন পরে কোরো আগে আমাকে ভিতরে আসতে দাও। তখন ফরিদ ঘরে ঢুকে তার স্ত্রীকে বললেন দরজা বন্ধ করো তোমাকে সব কিছু খুলে বলছি। তখন ফরিদ সাহেব তার স্ত্রীকে সবকিছু খুলে বলল। তার স্ত্রী তাকে বলল তুমি তো কাজটা ভালো করনি। তোমার আগে উচিত ছিল এই বাচ্চাটাকে নিয়ে একটা ডাক্তার দেখানোর। তারপর থানায় ইনফর্ম করা। ফরিদ সাহেব বলল আমার মাথায় তখন এত কিছু আসেনি। আর পুলিশের কাছে গেলে যদি কোন ঝামেলায় পড়ি সেজন্য আর যাইনি।
ফরিদের স্ত্রী তখন তাকে বললো তুমি একটু দেরি করো। আমি তৈরি হয়ে নিই। তারপর তারা দুজন মিলে বাচ্চাটাকে একজন শিশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। ডাক্তার সবকিছু দেখে বললেন খুব একটা সমস্যা নেই। তবে বাচ্চাটির সম্ভবত শীতের রাতে বাইরে থাকার কারণে ঠান্ডা লেগে গিয়েছে। একে এখন একটু সাবধানে রাখতে হবে। তারপর তারা তাদের পরিচিত এক পুলিশ অফিসার কে ফোন দিল বাসায় আসার জন্য। পুলিশ অফিসারটি ফরিদের চাচাতো ভাই। তারা তখন সে পুলিশ অফিসার কে সবকিছু খুলে বললো। পুলিশ অফিসার বলল সমস্যা নেই। তখন সে পুলিশ অফিসার বাচ্চাটির একটা ছবি তুলে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
হঠাৎ করে ফরিদ এবং তার স্ত্রীর দুনিয়াটা যেন পাল্টে গিয়েছে। তারা দুজন সব সময় বাচ্চাটাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে লাগলো। ফরিদ সেই রাতেই তার বসকে ফোন করে কয়েক দিনের ছুটি চেয়ে নিয়েছে। তাদের আধার ঘরে যেন পূর্ণিমার আলো ঢুকেছে। ফুটফুটে সেই বাচ্চাটাকে নিয়ে তারা দুজন অসম্ভব আনন্দিত ছিলো। ফরিদের স্ত্রী সারাদিন আগে মনমরা হয়ে বসে থাকতো। কিন্তু বাচ্চাটা আসার পর থেকে তার মুখ খুশিতে ঝলমল করছিলো। কিভাবে বাচ্চাটার যত্ন করা যায় সব সময় সেটা নিয়েই তার মাথায় চিন্তা কাজ করছিলো। তাদের দুজনের অপূর্ণতাটা অপ্রত্যাশিত ভাবে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই দুজনেই সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করলো তাদের ঘরটা খুশিতে ভরে দেয়ার জন্য। (সমাপ্ত)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আসলে এমন ঘটনা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে। কেউ একটা বাচ্চার জন্য দেশ থেকে দেশান্তর হচ্ছে ,নিজের প্রাণের বিনিময়ে হলে বাচ্চা চাচ্ছে। আবার কেউ বাচ্চা ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে ,এইটাই বুঝি নিয়তি। যাই হোক ফরিদ সাহেব ও তার বৌ বাচ্চাটা পেয়ে বেশ খুশি হয়েছে। গল্পটা ভালো লাগলো। ধন্যবাদ
ভাইয়া চারিদিকে সুখের বন্যা, শেষটা এমন পড়তে আমার খুবই ভাল লাগে। আমার মনে হয় সবারই তাই। যাই হোক ফরিদ সাহেবএর স্ত্রী বাচ্চাটিকে দেখে খুব অবাক হয়ে যায়। তিনি ফরিদ সাহেব কে বললেন,পুলিশ কে কেন জানায়নি।কিন্তু ফরিদ সাহেব ঝামেলা হওয়ার ভয়ে জানায়নি, তা ঠিকই। আজকাল ভাল কিছু করতে গেলে ঝামেলাই পড়তে হয়।যাই হোক, তারা দুজন মিলে বাচ্চাটিকে একজন শিশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল।এরপর তার এক ভাই পুলিশ এ ব্যাপারে কথা বলে ঝামেলামুক্ত হলো।এখন তাদের ঘরে পুর্নিমার আলো যেন ঝলমল করছে। সুখ আর সুখ। তার স্ত্রীর মুখে এখন হাসি।অনেক ভাল লাগলো পড়ে ভাইয়া।সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রথমে তো খুবই আফসোস হচ্ছিল এই শিশুটির জন্য। অল্পের জন্য জোর বাঁচা বেঁচে গেছে কুকুরের হাত থেকে। ফরিদের আসতে আর একটু দেরী হলেই শিশুটি হয়তো আর বেঁচে থাকত না। কোন স্বার্থপর বাবা-মা এমন ফুটফুটে শিশু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারে এমনটি চিন্তাও করা যায় না। যাই হোক, অবশেষে ফরিদ ও তার স্ত্রী পেল তাদের শূন্য কোলে সন্তান আর শিশুটি পেল তার আশ্রয়স্থল। সত্যি ভাইয়া, "অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি"দারুন লিখেছেন। ধন্যবাদ