রমিজ মিয়ার অপূর্ণ স্বপ্ন(দ্বিতীয় পর্ব)। ১০% সাই-ফক্স।
রমিজ মিয়া তখন তার বউকে বলল আর একটা দিন কষ্ট করো। আল্লাহ চায় তো কালকে থেকে আমাদের আর সমস্যা থাকবে না। যদিও রমিজ মিয়া এখনও নিশ্চিত নয় শহরে তার ব্যবসা কেমন হবে। তবে রমিজ মিয়া মনে মনে চিন্তা করে রেখেছে যদি এই তালগুলো সে ভালো দামে বিক্রি করতে পারে। তাহলে গ্রামে আরো অনেকগুলো তাল গাছ আছে। সেই গাছের মালিকদের থেকে সে সব তাল কিনে নেবে। তারপর সেগুলো সে শহরে নিয়ে বিক্রি করবে।
পরদিন সকালে সিরাজ মিয়া তার বাড়ির সামনে এসে হাক দিলো রমিজ বাড়িতে আছো নাকি? রমিজ মিয়া এর ভেতরে বন্ধুর বাড়ি থেকে ভ্যান নিয়ে চলে এসেছে। সে ভ্যান এর উপর তাল গুলো সব সাজিয়ে রেখেছে। সিরাজ মিয়া ডাক দেয়ার সাথে সে উত্তর দিলো আসছি। সিরাজ মিয়া দেখে রমিজ মিয়া একটি ভ্যান ভর্তি তাল নিয়ে বের হচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে সিরাজ মিয়া বলল এটাতো একটা ভালো কাজ করেছো। তখন রমিজ মিয়া সিরাজ কে বলল ভ্যানে ওঠো দুজন গল্প করতে করতে যাই। যেতে যেতে দুজনে অনেক গল্প করলো।
রমিজ মিয়া সিরাজকে জিজ্ঞেস করলো শহরে তাল কত টাকা করে বিক্রি হয়? সিরাজ জানালো এক একটা তাল ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। রমিজ মিয়া শুনে অবাক হয়ে গেলো। কারণ সে তার ভ্যানে তিন চারশ তাল নিয়ে এসেছে। সে হিসাব করতে লাগলো যদি সবগুলো ১৫ টাকা করে বিক্রি করতে পারে তাহলে সে আজকে ৬০০০ টাকার তাল বিক্রি করতে পারবে। একথা চিন্তা করে রমিজ মিয়া খুব খুশ হলো। তারপর সিরাজ মিয়ার কাছে জিজ্ঞেস করলো কোথায় গেলে তাল বেশি বিক্রি হবে? সিরাজ মিয়া বললো চল তোমাকে শহরের একটি জায়গা আমি দেখিয়ে দেবো সেখানে দাঁড়ালে বেশি বিক্রি করতে পারবে।
তবে সেখানে তাল বিক্রি করতে হলে পুলিশকে কিছু টাকা দিতে হতে পারে। পুলিশ আসলে তাদেরকে ১০০ টাকা দিয়ে দেবে। এ কথা শুনে রমিজ অবাক হলো। সে বলল পুলিশকে টাকা দিতে হবে কেন? তখন সিরাজ মিয়া হেসে বললো এটা শহরের নিয়ম। তুমি তো নতুন তাই অনেক কিছু জানো না। তোমাকে অনেক কিছু শিখতে হবে আস্তে আস্তে। এভাবে ঘণ্টাখানেকের ভেতর তারা শহরে চলে এলো। তারপর সিরাজ মিয়া রমিজকে একটি জায়গায় দেখিয়ে দিয়ে বললো তুমি ভ্যান নিয়ে এখানেই দাঁড়াও। কিছুক্ষণ পর দেখবে আরো অনেক ভ্যানঅলা এখানে এসেছে। তাদের সাথে দাঁড়িয়ে তুমিও তাল বিক্রি করবে। আর কেউ যদি তোমাকে কিছু বলে। তাহলে তুমি বলবে পুলিশের সাথে তোমার কন্টাক হয়েছে। তাহলে আর তোমাকে কেউ কিছু বলবে না।
এই কথা বলে সিরাজ মিয়া সেখান থেকে চলে গেলো। রমিজ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু এত সকালে সেখানে কোন কাস্টমার ছিলো না। একটু বেলা হওয়ার সাথে সাথে সে দেখতে পেলো আরো বেশকিছু হকার সেখানে এসে উপস্থিত হলো। কেউ ভ্যান নিয়ে এসেছে আবার কেউ ফুটপাতে পলিথিন বিছিয়ে তার উপর বিভিন্ন ফল বিক্রি করছে। কিন্তু তার সাথে কেউ কথা বললো না। ইতিমধ্যে আরো কয়েকজন তালশাঁস ওয়ালা কে দেখতে পেল সে। তাদের সাথে গিয়ে আলাপ জমানোর চেষ্টা করলো।
কিন্তু তারা রমিজকে খুব একটা পাত্তা দিলো না। রমিজ বুঝতে পারল তারা তাকে পছন্দ করছে না। তারপরেও রমিজ নাছোড়বান্দার মতো তাদের সাথে লেগে রইলো। রমিজের উদ্দেশ্য তারা কতো টাকা করে বিক্রি করে এটা সে দেখবে। তারপর সেই হিসেবে বিক্রি করবে। কিছুক্ষণ পরেই একজন কাস্টোমার আসলো। সে একজনের কাছ থেকে দশটা তাল শাঁস নিলো। দোকানদার তার কাছে ২০০ টাকা দাম চাইলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেড়শ টাকায় বিক্রি করলো। রমিজ একটি ভাল ধারনা পেয়েছে কিভাবে তাল বিক্রি করতে হবে। সে তার ভ্যানের কাছে ফিরে গেলো। গিয়ে কাস্টোমারের অপেক্ষা করতে লাগলো।
অল্প সময়ের ভিতর সেখানে বেশ কিছু কাস্টোমার চলে এলো। রমিজ মনের আনন্দে তাদের কাছে বিক্রি করতে লাগলো। একটা কাস্টমারের কাছে সে ১০ টাকায় তাল বিক্রি করেছে এটা দেখে তার পাশের হকাররা তাকে রাগ করলো। তারা বললো খালি খালি মার্কেট নষ্ট করো কেন? এরপরে আর ১৫ টাকার নিচে তাল বিক্রি করবে না। রমিজ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। সে বললো আজকে আমি প্রথম তো এইজন্য বুঝতে পারিনি। কালকে থেকে আর এই ভুল হবেনা।
সেখানে কয়েকজন ডাব বিক্রেতাকেও দেখতে পেলো। তাদের কাছে গিয়ে ডাবের দাম শুনে রমিজের প্রায় বেহুঁশ হওয়ার দশা। প্রতিটা ডাব ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করে বিক্রি করছে। অথচ এই টাকায় গ্রামে দশটা ডাব পাওয়া যায়। মনে মনে বুদ্ধি আটলো যে তালের সিজন শেষ হলে সে শহরে এসে ডাব বিক্রি করবে। কারণ ডাবের যা দাম এখানে তাতে অল্প কিছু ডাব প্রতিদিন বিক্রি করতে পারলেও তার ভালো টাকা ইনকাম হবে। এভাবে দুপুরের ভেতর তার সব তাল বিক্রি হয়ে গেলো।
সে ৪০০ তাল এনেছিলো। টাকাগুলো গুনে দেখল প্রায় ৬০০০ টাকার মতো সে বিক্রি করেছে। রমিজ খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। সে সরাসরি গ্রামের দিকে রওনা দিলো। গ্রামে পৌঁছে সেখানকার বাজার থেকে চাল ডাল তেল যা যা লাগে সব কিছু কিনলো। সাথে একটি মুরগীও কিনে নিলো। আর সে শহর থেকে অল্প কিছু মিষ্টি কিনে এনেছে আসার সময়। বাড়িতে এসে যখন মিষ্টিগুলো তার সন্তানদের হাতে দিলো। তখন তাদের আনন্দ আর দেখে কে। তার সন্তানেরা সবাই হই হই করে উঠলো। অনেকদিন পর তারা মিষ্টি খেতে পারছে। তারা এই আনন্দে বিভোর।
তার বউ ওঅনেক খুশি হয়েছে। তার বউ তাকে জিজ্ঞেস করল শহরে কি কি হলো সে গল্প আমাকে বলো। রমিজ মিয়া বলল আগে রান্না চড়িয়ে দাও। খাওয়া-দাওয়া করে তারপর গল্প করবো। এই কথা বলে রমিজ মিয়া গামছা নিয়ে নদীতে চলে গেলো গোসল করতে। গোসল করে এসে ঘরে সে কিছুক্ষন শুয়ে থাকলো। এর মধ্যে তার বউ তাকে ভাত খেতে ডাকলো। অনেকদিন পর তারা মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছে। পরিবারের সবাই খুব খুশি ছিলো। (চলবে)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
ভাইয়া গল্পটা বেশ জমে উঠেছে। আপনি গ্রামের গরিব মানুষের খুব সুন্দর একটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে ঠিকই বলেছেন ভাইয়া, গ্রাম থেকে কোন লোক শহরে উঠলে তাকে কেউ কোন কাজে সহযোগিতা করে না, এবং পাত্তাও দিতে চায়না। তবে হতে পারে গল্প কিন্তু বাস্তবতার সাথে অনেক মিল। আপনি অসাধারণ গল্প লেখেন, অনেক ভালো লেগেছে। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য রইল ভালোবাসা অবিরাম।
ঠিক বলেছেন শহরের মানুষেরা আসলেই খুবই স্বার্থপর। গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
আহারে মানুষ, একেক মানুষের জীবন কাহিনী একেক রকম। কিছু মানুষ এমনও দিন যায় একদিনে ৬০০০টাকা উড়িয়া নষ্ট করে দেয়। আর কিছু মানুষ সারাদিন খেটে ৬০০০ টাকা ইনকাম করে। সত্যি তাদের জীবন অবস্থা দেখলে খুবই হতাশ লাগে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
এই দুই ধরনের মানুষই আমাদের আশেপাশে আছে। তবে রমিজ মিয়াদের জীবন থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।
ভাইয়া, আপনি খুবই সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।আপনার গল্পটি এত মনোযোগ সহকারে পড়েছি কখন যে গল্পটি শেষ হয়ে গেছে বুঝতে পারলাম না। এই গল্পটির মধ্যে আমাদের সমাজের বাস্তবিক কিছু চিত্র লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন ।
রমিজ মিয়া গ্রামের মানুষ তাই শহরের হাবভাব কোন কিছু বুঝে না।পুলিশকে টাকা দিতে হয় সে ব্যাপারটা জানতো না। আমাদের দেশে এখন নিয়ম হয়ে গিয়েছে পুলিশকে টাকা না দিলে ব্যবসা করা সম্ভব হয় না। এটা একদম বাস্তব কথা, ভাইয়া আপনার পরবর্তী গল্পের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।।
অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে আমাদের দেশে।
আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগছে এবং রমিজ মিয়া তাল বিক্রি করে ভালো ইনকাম করার পর তাঁর আনন্দে আত্মহারা খুশি হওয়াটা আমার কাছে অনেক খুশি লাগলো এবং সেইসাথে তার বউ বাচ্চারাও অনেক খুশি ও আনন্দিত। তবে এই খুশির পেছনে কেমন যেন একটা অখুশির ছাপ লক্ষ্য করছি, যাই হোক পরবর্তী গল্পেই বুঝা যাবে অপেক্ষায় রইলাম।