রমিজ মিয়ার অপূর্ণ স্বপ্ন। ১০% সাই-ফক্স।
রমিজ মিয়া ঘরের বারান্দায় মুখ ভার করে বসে আছে। আর ঘরের ভেতর থেকে তার স্ত্রী চিৎকার চেঁচামেচি করছে। ঘরে আজ একটা দানা পানিও নেই। সকাল থেকেই তাদের বাচ্চারা না খেয়ে আছে। এজন্যই তার স্ত্রী চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। রমিজের স্ত্রীর অভিযোগ সে কোনো কাজের চেষ্টা করছে না। কিন্তু এই অভিযোগ সত্য নয়। সকাল থেকে সে কাজের অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখন এলাকাতে তেমন কোন কাজ নেই। বেশিরভাগ ফসলের মাঠ পানিতে ডুবে গিয়েছে। যার ফলে এলাকার ঘরে ঘরে এখন অভাব।
রমিজ অবস্থাপন্ন কয়েকজনের কাছে গিয়ে সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সেখানেও কোন লাভ হয়নি। তারা সাহায্যতো করেইনি উল্টো কথা শুনিয়ে দিয়েছে। তারপর রমিজ গিয়েছিল স্থানীয় মেম্বার এর কাছে। সেখান থেকেও তাকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। মেম্বার বলেছে পরবর্তীতে যখন দুস্থ মানুষের জন্য রিলিফের কার্ড করা হবে। তখন রমিজের নাম সেখানে দেবে। কিন্তু রমিজ মিয়া জানে যে মেম্বার দুই-একদিনের ভিতরে এই কথাটা ভুলে যাবে। কারণ এরকম কথা সে সবাইকে দেয়।
নানা রকম চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে সে বাড়িতে ফিরে এসেছে। কিন্তু তার স্ত্রী মনে করেছে সে বাজারে গিয়ে গল্প-গুজব করে ফিরে এসেছে। এইজন্য তার স্ত্রী চেঁচামেচি করেই যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আর সহ্য করতে না পেরে সে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। সে নদীর পাড়ে গিয়ে বসে রইলো। এর ভিতর রমিজ দেখে তার প্রতিবেশী সিরাজ মিয়া শহর থেকে ফিরছে। সিরাজ মিয়া শহরে হকারি করে। সেখান থেকে তার মোটামুটি ভালোই আয় হয়। সেটা তার চলাফেরা থেকে বোঝা যায়।কারণ সে তার পরিবার নিয়ে বেশ সচ্ছল জীবনযাপন করে।
রমিজ মাঝে মাঝে চিন্তা করেছে শহরে গিয়ে সে হকারি করবে। কিন্তু হকারি করতে গেলেও তো কিছু প্রাথমিক মূলধন দরকার। তার তো সে টাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। যার ফলে আর সেটা হয়ে ওঠেনি। সিরাজ মিয়া রমিজকে নদীর পাড়ে বসে থাকতে দেখে তার পাশে বসে। সিরাজ মিয়া অনেকটা পথ হেঁটে এসেছে। সে জন্য তার সারা শরীর ঘামে ভিজে রয়েছে। সে মাজা থেকে গামছাটা খুলে নিজের মুখ মুছে নেয়। তারপর জিজ্ঞেস করে তুমি এখন এই সময়ে নদীর পাড়ে বসে আছো? রমিজ বলে আর বইলো না। ঘরে কোন খাবার-দাবার নাই। বউয়ের জ্বালায় ঘরে থাকতে পারি না। তাই এখানে এসে বসে আছি।
তখন সিরাজ রমিজকে বলে তুমিতো শহরে গিয়ে কিছু করতে পারো। রমিজ বলে কি করবো। সিরাজ বলে তুমি শহরে গিয়ে তো আমার মত কিছু বেচাকেনা করতে পারো। তাতে আয়-রোজগার ভালোই হবে। তুমি ভালোভাবে থাকতে পারবে। রমিজ বলে আমারতো জিনিসপত্র কেনার টাকা নাই। সেজন্য তোমার মত হকারি করতে পারছিনা।
তখন সে রামিজকে বুদ্ধি দেয়। তোমার বাড়ির পাশে কয়েকটা তাল গাছ আছে না? রমিজ বলে হ্যাঁ। সিরাজ বলে শহরের মানুষ তালশাঁস খেতে খুব পছন্দ করে। তুমি তোমার গাছের তাল পেড়ে নিয়ে শহরে গিয়ে বিক্রি করতে পারো। তাতে ভালো টাকা রোজগার করতে পারবে। রমিজ মিয়া শুনে অবাক হয়ে যায় যে শহরের লোকজন এই তালশাঁস টাকা দিয়ে কিনে খায়? তাদের গ্রামে তো কাউকে কখনো টাকা দিয়ে কিনে খাওয়া দেখেনি তালশাঁস।
তার এই বুদ্ধিটা পছন্দ হয়। তখন সে সিরাজকে বলে আমি কালকে শহরে যাবো তুমি একটু আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে। সিরাজ বলে আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাওয়ার সময় তোমাকে ডাক দিবো। রমিজ মিয়া তখনই বাড়ি চলে যায়। বাড়ি গিয়ে সে দাও আর দড়ি নিয়ে সোজা তাল গাছে উঠে যায়। তারপর সে তার তাল গাছ গুলো থেকে অনেকগুলো তাল পাড়ে। কয়েকটা কেটে সে তার ছেলেমেয়েদেরকে খেতে দেয়। বাদবাকি গুলো সব এক জায়গায় জড়ো করে রাখে। তার বউ এগুলো দেখে বলে তোমার কি মাথা খারাপ হলো নাকি? তালগুলো পাকলে সেগুলো বিক্রি করে কিছু টাকা পাওয়া যেতো।
রমিজ কোন কথা না বলে মুচকি হেসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তার এক বন্ধুর ভ্যান আছে। সে দিন চুক্তিতে ভ্যান ভাড়া দেয়। রমিজ তার কাছে গিয়ে বললো আগামীকাল তোর ভ্যান আমি নেবো। তার বন্ধু জিজ্ঞেস করে কি করবি ভ্যান নিয়ে? রমিজ বলে শহরে যাবো কাজ আছে। তার বন্ধু বলে আচ্ছা সকালে নিয়ে যাস। এদিকে রমিজ মিয়া বাড়ি পৌঁছে দেখে তার বউ তার জন্য ভাত নিয়ে অপেক্ষা করছে। সে তার বউকে জিজ্ঞেস করে চাউল কোথায় পেলে। তার বউ জানালো পাশের বাড়ি থেকে কিছু চাউল ধার এনেছে। (চলবে)

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |


ভাই রমিজ মিয়ার গল্পটি পড়ে ভালোই তো লাগছিল কেন যে শেষ করে দিলেন। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। এ পর্যন্ত যা পড়লাম প্রথমে একটু খারাপ লাগলেও পরে রমিজ মিয়া তাল বিক্রি করার জন্য যে আনন্দ তা ফিরে পেলো সেখানে খুব ভালো লাগলো। সিরাজ মিয়ার বুদ্ধিটা খারাপ হয়নি।
পরবর্তী পর্ব ইতিমধ্যে পোস্ট করেছি। চাইলে পড়ে নিতে পারেন।
জীবনধর্মী ঘটনাটি সমাজের হাজারো রমিজ মিয়াদেরকে সচল জীবনে ফিরিয়ে আনুক।
এবার দেখার পালা ধার করা চাউলের ভাত খেয়ে রমিজ মিয়া ও তার পরিবার কতটুকু তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারে। সাথেই আছি।
দ্বিতীয় পর্বও কিন্তু চলে এসেছে। রমিজ মিয়ার পরবর্তী কার্যকলাপ জানতে চাইলে পড়তে পারেন।
জি ভাই, দেখার ইচ্ছে রইল দোয়া করবেন।
গল্পটা পড়ে দারুণ লাগল। রমিজ মিয়ার মতো অসংখ্য লোক রয়েছে। তাদের সঠিক কোনো কর্মস্থল নেই। আশাকরি এখন সে তালসাস বিক্রি করে সাবলম্বি হবে যদিও গল্পটা কোন দিকে যাবে সেটা আপনার উপর নির্ভর করছে। অপেক্ষায় থাকলাম ভাই।।
এই ধরনের গল্প স্বপ্ন দেখতে শেখায়। নতুন করে অনুপ্রেরণা যোগায়। পড়তে থাকুন গল্প যে কোন দিকে যেতে পারে।