বন্ধুদের নিয়ে ঈদ পরবর্তী নৌ ভ্রমণ (দ্বিতীয় পর্ব)। ১০% সাই-ফক্স।
সবকিছু ঠিক হওয়ার পর মোটামুটি কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম। এভাবে নিশ্চিন্ত মনে ঈদ পার করলাম। ঈদের পরের দিন চিন্তা করলাম রাফসানকে একবার ফোন দিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখি যে খাবারের ব্যাপারে হোটেলওয়ালা সঙ্গে কথা বলেছে কিনা। রাফসানকে ফোন দিলাম কিন্তু ওকে ফোনে পেলাম না। পরবর্তীতে বিকালের দিকে আবার ফোন দিলাম। তখন সে ফোন ধরলো। যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে হোটেল ওয়ালার সঙ্গে খাবারের ব্যাপারে কোন কথা হয়েছে কিনা। তখন সে জানালো হোটেল তো বন্ধ।
একথা শুনে আমি খুবই দুশ্চিন্তায় পড়লাম। তখন ওকে বললাম এখন কি করা যায়? তারপর আমি ওকে প্রস্তাব দিলাম যে তুই তোদের এলাকা থেকে কাউকে দিয়ে রান্না করিয়ে নিয়ে আসিস। প্রয়োজন হলে তাদেরকে কিছু বাড়তি টাকা দিয়ে দেয়া যাবে। ও বলল ঠিক আছে রান্নার ব্যবস্থা আমি করছি। ওর কথা শোনার পরও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারলাম না। একটা চিন্তা মাথার ভেতরে থেকেই গেলো।
পরদিন এলো আমাদের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এদিকে সকালবেলা উঠে দেখি ট্রলার ওয়ালা আমাকে ফোন দিয়েছে। ফোন দিয়ে বলছে আপনাদের সময় আধাঘন্টা পেছাতে হবে। আমার ঘাটে আসতে একটু দেরি হবে। আমি তখন তাকে ঝাড়ি দিয়ে বললাম আপনার সাথে তিনদিন আগে থেকেই কথা যে আমরা একটার সময় ট্রলারে উঠবো। এখন আপনি অন্য কথা বলছেন। তিনি জানালেন তিনি এখন রাস্তায় আছেন। যদি রাস্তায় কোন সমস্যা হয় তাহলে একটু দেরি হতে পারে। এজন্য তিনি আগে থেকেই আধাঘন্টা সময় চেয়ে নিলেন।
অগত্যা কি আর করা? তার দাবি মেনে নিলাম। তারপরে আমি ফোন করে আমার বন্ধুদেরকে জানিয়ে দিলাম যে আমরা আরও আধা ঘন্টা পরে বের হবো। এর ভিতর এক বন্ধুকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম ওয়ান টাইম প্লেট গ্লাসের ব্যবস্থা করার জন্য সে বলেছিল সকালে আমাকে জানাবে। কিন্তু দেখি তার কোন খবর নেই। পরে আমি যখন তাকে ফোন দিলাম তখন সে বলল সমস্যা নেই আমরা যেখান থেকে রওনা দেব সেখানেই ওয়ান টাইম প্লেট গ্লাস পাওয়া যায়।
পরে আমি পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সাড়ে এগারোটার সময় সবার সঙ্গে টেপাখোলা বাজারে মিলিত হলাম। সেখানে গিয়ে দেখি ৬ জন উপস্থিত আছে। আমি তাদেরকে দেখে খুবই খুশি হলাম। কারণ আমি মনে মনে চিন্তা করছিলাম যে ৬ জনই যথেষ্ট। এর ভেতরে আমাদের আরেক বন্ধু কে ফোন দিলাম। যার আমাদের সঙ্গে ট্রলার ভ্রমণে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সে জানালো সে যেখানে কাজ করে সেখানে একটা সমস্যা হওয়ার কারণে সে যেতে পারছে না। এর ভিতর অন্য আরেকজন বন্ধু যাকে আমরা ধরে রেখেছিলাম সে যাবে না। হঠাৎ করে সে যেতে রাজী হয়ে গেলো। পরে তাকে বললাম তাড়াতাড়ি বাড়িতে গিয়ে কিছু কাপড়চোপড় নিয়ে এসো। কারন আমরা নদীতে গোসল করবো।
এখন খাওয়া দাওয়ার জন্য হালকা কিছু কেনাকাটা করতে হবে। সে উপলক্ষে আমি বন্ধু প্রদীপ কে সঙ্গে নিয়ে দুটি তরমুজ কিনে নিয়ে আসলাম। এই গরমের ভেতরে তরমুজের মত রসালো ফল খেতে খুবই ভালো লাগবে। তারপর অন্য আরেকটি দোকানে গিয়ে মিনারেল ওয়াটার কিনলাম বড় দুই বোতল। সাথে নিলাম চিপস। আর গোসল করার জন্য মিনিপ্যাক শ্যাম্পু এবং সাবান। সবকিছু নিয়ে আমরা সি এন্ড বি ঘাটের দিকে রওনা দিলাম।
অল্প সময় সেখানে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছে আমরা একটি ছোট্ট ভুল করে ফেললাম। যেই ঘাটে আমাদের ট্রলার আছে আমরা সেখানে না থেমে অন্য ঘাটে চলে গিয়েছি। যার ফলে আমাদেরকে বেশ খানিকটা হেঁটে আবার সেই ঘাটে পৌঁছতে হয়েছে। আসলে সেখানে অনেকগুলো ঘাট আছে। যার ফলে আমাদের মত যারা নতুন সেই এলাকায়। তাদের এ ধরনের সমস্যা হয়েই থাকে। সেখানে পৌছে আমরা সকলে মিলে ট্রলারে উঠলাম। তারপর ট্রলার ওয়ালাকে তেল কেনার জন্য এক হাজার টাকা দিলাম। তাকে বললাম এই টাকা দিয়ে ১২ লিটার তেল কিনে আনবেন। এই তেলে আমরা যতদূর ঘুরতে পারি ঘুরবো। আর তেল ফুরিয়ে গেলে তখন আপনার কাছ থেকে তেল নেবো। লোকটা টাকা নিয়ে তেল কিনতে চলে গেলো। এর ভেতর আমরা যারা ট্রলারে বসে ছিলাম তাদের ভেতর দু-তিনজন ট্রলার থেকে নেমে গেলো চা খাওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে ট্রলারের লোক তেল নিয়ে চলে এসেছে দেখে তারা তাড়াতাড়ি চা শেষ করে ট্রলারে এসে উঠলো।
আমি ফোন করে বন্ধু রাফসানকে জানিয়ে দিলাম যে আমরা ট্রলার নিয়ে রওনা দিয়েছি। খাবার নিয়ে তোদের বাড়ির কাছের ঘাটে চলে আয়। সে আমাকে জানালো সমস্যা নেই তোরা আসার আগেই আমি ঘাটে পৌঁছে যাবো। কিন্তু ওর কথা শুনে খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারলাম না। কারণ সে কথা না রাখার জন্য বন্ধুদের ভেতর খুব প্রসিদ্ধ। কিছুক্ষণ পর আমাদের ট্রলার রাফসানের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। খুশিতে সবাই হই হই করে উঠলো। আমরা নদীর দু'পাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আস্তে আস্তে রাফসান দের বাড়ির দিকে আগাচ্ছিলাম। (চলবে)
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে এই গল্পের পরবর্তী পর্ব নিয়ে।
সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | সি এন্ড বি ঘাট |
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
খুবই ভালো লাগলো বন্ধুদের কে সাথে নিয়ে চমৎকার একটি সময় কাটিয়েছেন, নৌপথের ভ্রমণ বেশ চমৎকার ছিল আপনার ভ্রমণ কাহিনী। বন্ধুদের সাথে ছোট ছোট খুনসুটি ভালোই লাগে।
আসলেই ঠিক বলেছেন। বন্ধুবান্ধবদের ভিতরে এমন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে লেগেই থাকে। ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করি।
আমিও এই সপ্তাহে ১৫ স্টিম পাওয়ার আপ করেছি। পাওয়ার আপ মানে নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এভাবেই এগিয়ে যান আপনার জন্য।
ভাই বোধহয় অন্য কোন পোষ্টের কমেন্ট এখানে করেছেন। এটাতো পাওয়ার আপ পোস্ট না। কমেন্ট সাবমিট করার আগে অন্তত একবার ভালোমতো চেক করে দেখবেন।
আমি দুঃখিত ভাইয়া আমার ভুলটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। 🤭😥
আমরা প্রতিদিন শত কাজে ব্যস্ত থাকি। আর সেই ব্যস্ততার মাঝে আমরা কোথাও ঘুরে বেড়ানোর অবকাশ পাইনা। তাই ঈদের সময় লম্বা ছুটিতে মন চাই একটু এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতে। যদি সেটা হয় নৌকাভ্রমণ তাহলে তো কোন কথাই নেই। যাইহোক ভাইয়া আপনার ঈদ পরবর্তী নৌভ্রমণের গল্পটি পড়ে আমার খুব ভালো লাগছে। আপনি খুব চমৎকার করে নৌ ভ্রমণের সম্পূর্ণ আয়োজন আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। নৌ ভ্রমণে গিয়ে আপনারা বেশ আনন্দ করেছেন সেটা বুঝতেই পারছি। ফটোগ্রাফি গুলো দেখেও আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। আপনার রোমাঞ্চকর নৌভ্রমণের পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ।
সময় সুযোগ পেলে বন্ধুবান্ধব নিয়ে এমন কোন নৌভ্রমণে বেরিয়ে পড়বেন। দেখবেন খুবই মজা লাগবে।
বন্ধুদের সাথে নদীতে ভ্রমণ করার মুহূর্তগুলো সত্যিই অসাধারণ ছিল। আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে খুবই সুন্দর সময় পার করেছেন। বিশেষ করে আপনার যে বন্ধু যেতে রাজি হয়েছিল না। সে যেতে চেয়েছে এটা জানতে পেরে আমি আরো বেশী খুশী হয়েছেন এবং তাকে কিছু কাপড় চোপড় নিয়ে আসতে বললেন। আপনারা নদীতে গোসল করবেন। আসলে নদীতে গোসল করার মুহূর্তগুলো সত্যিই খুবি ভালো লাগে।
নদীতে গোসল করতে নেমে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম। কারণ পানিতে নেমে দেখি তীব্র স্রোত। তবে আসলেই অনেক মজা করেছি।
ভাই আপনার ভ্রমনের কাহিনী পড়ে খুবই ভাল লাগতেছে। মন চাচ্ছে আপনাদের সাথে গিয়ে জয়েন করি, তবে সেটা কোনভাবে সম্ভব হল না। ধন্যবাদ ভাই পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভালো থাকবেন।
চলে আসুন একসময়। আপনাদের সবাইকে নিয়ে একটা নৌভ্রমণ হবে।
আরে দারুন ব্যাপার তো ভাই । প্রিয় বন্ধুরা সব এক সাথে মজা করতে করতে আরেক বন্ধুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া। নদীর খোলা হাওয়া। ভাবতেই অন্য রকম লাগছে। গান বাজনা নিয়ে রওনা দিলে আরো ভালো লাগতো। মানে নিজেরা যদি গিটার কাহন এসব নিয়ে বেরোতেন। জমে যেত মনে হয় আরো।
আর ভাই সব বন্ধু সার্কেলে এমন একজন থাকে যে সব সময় লেট করবেই 🤪।
একসময় গিটার ওয়ালা এক বন্ধু আমাদের সঙ্গী হোতো। কিন্তু আজকাল আর তাকে পাওয়া যায় না।
গল্পের এই অংশটুকু আমার জানা ছিল না। রাফসানের জন্য আসলে এত দেরি হয়েছিল তা না হলে আরো প্রায় বাড়তি এক ঘণ্টা ঘোরার সুযোগ পেতাম।
আমি তো মনে করছিলাম তোমার সাথে শেয়ার করেছে। এখন দেখছি তুমিও কিছু জানো না।
প্রতিটা গ্রুপেই আপনার বন্ধু রাফসানের মতো একজন থাকে যে কীনা দেরি করে আসার জন্য প্রসিদ্ধ। আমার বন্ধু লিখন এই চরিএের। নৌকা ভ্রমণ সাধারণত বর্ষাকালে করা হয়। এখন নদীতে পানি কম এই সময়ে নৌকাভ্রমণ🤔। যাইহোক ভ্রমণ হলেই হলো। তরমুজ আমার অনেক পছন্দ গরমে এটা পানির চাহিদা পূরণ করে। বেশ উপভোগ করেছেন ভ্রমণটা।
নদীতে এখন পানি কম না। বেশ বেড়েছে। এখনই নৌ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। কিছুদিন পর পানি হবে অনেক বেশি। তখন বিপদের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
আপনাদের কতক্ষণ লেগেছিল ভাইয়া বি এন্ড সি গেটে পৌঁছাতে? আসলে ভাইয়া আপনি ঠিক বলেছেন নতুন নতুন কোথাও গেলে এমনটা হয়। এক ঘাট থেকে আপনারা আরেক ঘাটে চলে গেলেন।
সব ফ্রেন্ড সার্কেলই তাহলে এমন কিছু বন্ধু থাকেই ভাইয়া 😇🥰। তবে বন্ধুদের সাথে ছোট ছোট খুনসুটি ভালোই লাগে।
বাহ ভাইয়া অনেক আশায় ছিলাম আপনাদের নৌকা ভ্রমণ এর গল্পটা পুরো ভাবে সুনবো সেই আসায় ছিলাম আর খুব মনোযোগ সহকারে পরলাম। ভাইয়া আপনার তুলনা হয় না আপনি একদম সব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন। তবে ট্রলার লোকটি কেমন জানি ছেন ছেনে মেজাজ আমি এই প্রথম শুনলাম ট্রলারের লোক আপনাদের অপেক্ষায় থাকবে সেটা না হয়ে ট্রলার আলা আপনাদের বলে দেয় ৩০মিনিট লেট হবে হাইরে দুনিয়া। খুব ভালো লাগলো শেষ গল্পের অপেক্ষায় রইলাম। 💙💙