স্রোতের বিপরীতে চলা মানুষেরা (শেষ পর্ব)। ১০% সাইফক্স।
পূর্ববর্তী পর্বের-লিংক
তারেক তখন তার বসকে বলল বস আপনি ব্যবস্থা করুন। শুধু আমাকে একটু আগে থেকে স্থানটা জানিয়ে দিয়েন। তারেক বসের রুম থেকে বের হয়ে অফিসের বারান্দায় চলে এলো। বারান্দায় এসে সবুজকে ফোনে সব কিছু জানালো। সবুজ বলল আপনি যত দ্রুত সম্ভব আপনার বসের কাছ থেকে লোকেশনটা জেনে নিন যেখানে আপনি ওই লোকের সাথে আলোচনায় বসবেন। তারেক সবুজ কে বলল আমি কিছুক্ষণ পরেই তোমাকে লোকেশন জানাচ্ছি।
ঘন্টাখানেক পর তারেকের বস তারেককে ফোন দিয়ে বলল অফিসের কাছেই একটি নামিদামী রেস্তোরাঁ আছে। সেখানে তারা তারেকের সঙ্গে বসতে চায়। তারেক রাজি হলো। তারপর তারেক সবুজকে ফোন দিয়ে সেই রেস্তোরাঁর কথা জানালো। সবুজ বললো আপনি আজকে একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বাসায় আসবেন। আপনাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিতে হবে। তারেক তার বসের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে দুপুরে বাসায় চলে গেল।
বাসায় পৌঁছে সবুজকে ফোন দিয়ে জানালো যে সে বাসায় এসেছে। কিছুক্ষনের ভিতর সবুজ তার দুই বন্ধুকে নিয়ে তারেকের বাসায় উপস্থিত হল। তারপর তারা তারেকের কাছে ছোট্ট একটি ক্যামেরা দিলো। সবুজ বললো এই ক্যামেরাটা অডিও এবং ভিডিও দুটিই রেকর্ড করতে পারে। আমরা আপনার কাছাকাছি থাকবো। কোন সমস্যা হলে আমরা সেখানে উপস্থিত হবো। আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আর আপনি তাদের সাথে এমন ভাবে কথা বলার চেষ্টা করবেন যাতে তারা তাদের কুকীর্তির অনেক গল্প আপনার সাথে করে। তারা তারেককে সবকিছু বুঝিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
সময় যতই গড়াচ্ছে ততোই তারেকের বুকের ভেতরটা দুরুদুরু করছে। কি হবে সেটা নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলো তারেক।যাই হোক সন্ধ্যার পর তারেক বাসা থেকে বের হলো সেই রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে। তারিখের পিছুপিছু সবুজ এবং তার দুই বন্ধু রওনা দিল। সবুজ তারেককে ফোন করে বলল আপনার ক্যামেরাটা অন করুন আমরা একটু টেস্ট করে দেখি সব ঠিকঠাক মত রেকর্ড হচ্ছে কিনা। তারেক ক্যামেরাটা কিছুক্ষণ অন করে রাখল এবং কিছু কথা বললো। সবুজ তারেক কে ফোন করে জানাল সব ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই।
কিছুক্ষনের ভিতর তারেক নির্ধারিত রেস্টুরেন্টে পৌঁছলো। রেস্টুরেন্টে পৌঁছে তারেক একটি টেবিলে বসে ছিল। কিছুক্ষণ পর একজন ওয়েটার এসে বলল স্যার আপনি আমার সাথে ভেতরে আসুন। আপনার জন্য স্যারেরা ওয়েট করছে। তারেক তখনও ব্যাপারটা খুব একটা বুঝতে পারেনি। তার পরেও সেই ওয়েটারের পিছুপিছু সে গেলো। গিয়ে দেখলো রেস্টুরেন্ট এর ভেতরের দিকে একটি আলাদা রুম আছে। সেই রুমে আগে থেকেই ৮/১০ জন লোক বসে আছে। রুমটি বেশ বড়। তারেক তখন বুঝতে পারল এই রেস্টুরেন্টটি সম্ভবত এই দুর্নীতিবাজদের ভেতরে একজনের।
রুমে ঢোকার আগেই তারেক তার ক্যামেরা অন করে নিয়েছে। তারেক রুমের ভিতরে ঢোকার সাথে একজন তার দিকে উঠে এলো। এসে তার সঙ্গে হাত মেলালো। তারপর তারা তারেককে বসতে বলল। তারেক ঘুরে ঘুরে সবাই কে দেখছিল এবং এমনভাবে ঘুরছিলো যাতে সবাইকে ক্যামেরাতে ভালোভাবে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর তারেক তাদের সাথে কথা বলা শুরু করলো।
এমন ভাবে তাদের সাথে কথা বলল যে তারা এই দুর্নীতির অনেক তথ্যই তারেকের কাছে খোলামেলাভাবে বলল। তারা জানালো যে টাকার দুর্নীতি হয়েছে সব টাকা তারা একা খায়নি। আরো অনেককে এখান থেকে ভাগ দিতে হয়েছে। তারেক কৌশলে তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য বের করে নিলো। শেষ পর্যন্ত তারেক তাদের সাথে কথা বলে সেখান থেকে বিদায় নিলো। আসার সময় তারা জানতে চাইলো তাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারেক? তাদেরকে জানালো দু এক দিনের ভিতরেই তাদেরকে জানানো হবে। এই দুর্নীতিবাজেরা তারেককে বিভিন্ন কথার ফাঁকে পরিষ্কার হুমকিও দিয়েছে। যে তাদের নাম যদি এই তদন্ত থেকে কাটা না হয়। তাহলে তারেকের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। আর যদি তারেক তাদের নাম এই তদন্তে থেকে কেটে দেয়। তাহলে তার জন্য বড় অঙ্কের টাকা অপেক্ষা করছে।
তারেক সেখান থেকে বের হয়ে সোজা তার বাসায় চলে এলো। কিছুক্ষণ পর সবুজ এবং তার দুই বন্ধু সেখানে এলো। তারপর তারা সবাই মিলে ক্যামেরায় রেকর্ডকৃত ভিডিও দেখতে লাগলো। ভিডিও কোয়ালিটি দেখে তারা সবাই সন্তুষ্ট হল। সিদ্ধান্ত নিল আজ যেহেতু রাত হয়ে গিয়েছে। আগামীকাল সকালে এই ভিডিও ক্লিপ নিয়ে প্রথমে একটি প্রেস কনফারেন্স করা হবে। তারপর এই ভিডিও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সবুজ এবং তার দুই বন্ধু সেখান থেকে চলে গেল।
কিন্তু তারেকের টেনসনে রাতে ঘুম আসছেনা। যদি এই ভিডিও ওই প্রভাবশালী লোকদের উপর কোন চাপ তৈরি করতে না পারে। তাহলে তারেকের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে এটা তারেক বুঝতে পারছিল। সারাটা রাত তারেকের চিন্তায় চিন্তায় কেটে গেল। পরদিন তারেক অফিসে গেলো না। তার বস কে ফোন করে জানাল তার শরীর খারাপ। সবুজ এবং তার বন্ধুরা দশটার সময় তারেককে ফোন দিয়ে জানালো এক ঘন্টা পর প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে। তারেক যেন সময়মতো সেখানে উপস্থিত থাকে।
তারেক যথাসময়ে প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত হল। সবুজ এবং তার বন্ধুরা তাদের পরিচিত সাংবাদিকদের আগে থেকেই খবর দিয়ে রেখেছিল। সেই প্রেস কনফারেন্সে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং পত্রিকার সাংবাদিকেরা ছিল।তারেক তাদের কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো এবং ভিডিও ক্লিপটি হস্তান্তর করলো। প্রেস কনফারেন্স শেষ হওয়ার দুই ঘন্টার ভিতরে একাধিক টিভি চ্যানেলে এই ভিডিও এবং তারেকের প্রেস কনফারেন্স প্রচারিত হলো। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সারাদেশে মুহূর্তের ভিতর ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ল। সারাদেশে একটি ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হলো।
সন্ধ্যার ভিতর ভিডিও ক্লিপে দেখতে পাওয়া প্রত্যেকটা লোককে অ্যারেস্ট করা হলো। লোকাল থানার ওসিকে সাসপেন্ড করা হলো। তারেক সারা দেশের মানুষের কাছে একজন সৎ অফিসার হিসাবে পরিচিতি পেলো। এর মধ্যে তারেক দেখল তার বস তাকে ফোন করেছে। তার বস তাকে বললো কাজটা তুমি ভালো করোনি। যদিও সে তার বসের কথা সাংবাদিকদের কাছে কিছু বলেনি। যার ফলে তার বস এ যাত্রায় রক্ষা পেলো। পুরো ব্যাপারটা হঠাৎ করে এভাবে বদলে যাবে এটা তারেক কল্পনাও করেনি।
অনেকগুলো চ্যানেল থেকে তার সাক্ষাৎকার নিতে এল। তাকে নিয়ে পত্রিকায় কলাম লেখা হলো। ডিপার্টমেন্ট থেকে তাকে জানালো হলো তার এই সততার জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হবে। তারেকের বুকের উপর থেকে অনেক বড় একটা পাথর সরে গিয়েছে। গত কিছুদিন সে প্রচণ্ড চাপে ছিলো। এখন তার অনেকটা ভালো লাগছে। যার ফলে সে তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলল বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় চলে আসতে। তার স্ত্রী জানালো আগামীকাল দুপুরে রওনা দেব সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় চলে আসব।
তারেক পরদিন যখন অফিস থেকে বাসায় ফিরছে তখন তার মন খুব ফুরফুরে ছিলো। সে ঠিক করেছে এই ছেলেদের দলকে সে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়াবে। কারণ আজ তাদের জন্যই এই সমস্যাটার সমাধান হলো। বাসায় ফিরে স্ত্রীকে এই কথাটা বলতে হবে। তার বাচ্চারা মিষ্টি খুবই পছন্দ করে। তাই সে একটি মিষ্টির দোকান থেকে তাদের পছন্দের কিছু মিষ্টি কিনলো। বেশ কয়েকদিন সে পরিবারের থেকে দূরে আছে। আজ বাসায় ফিরে পরিবারের সবাইকে দেখতে পাবে চিন্তা করেই তার ভাল লাগছিল।
মিষ্টির দোকানটা তারেকের বাসা থেকে খুব একটা দূরে নয়। যার ফলে তারেক মিষ্টি নিয়ে হেঁটে আসছিল। তারেকের বাসায় আসার এই রাস্তাটা সন্ধ্যার পরে খুবই নিরিবিলি থাকে। লোকজন খুব একটা দেখা যায় না। ক'দিন ধরে আবার রাস্তার লাইট নষ্ট হয়ে রয়েছে। যার ফলে সে প্রায় অন্ধকার হেঁটে হেঁটে আসছিল। তারেক যখন বাসার কাছাকাছি পৌঁছেছে তখন হঠাৎ করে দুজন লোক এসে তার পথ রোধ করে দাড়ালো। তারেক অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকালো। যদিও আলো না থাকার কারণে তাদের চেহারা খুব একটা ভালো দেখা যাচ্ছিল না। তারেক জিজ্ঞেস করলো গেল কি সমস্যা ভাই? এর ভেতর আগন্তুক দুজন পিস্তল দিয়ে তারেককে পরপর চারটি গুলি করল। তারেক সেখানেই লুটিয়ে পড়লো। তার সন্তানদের চেহারা আর দেখা হলো না। (সমাপ্ত)।
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
অবশেষে গল্পের সমাপ্তি ঘটলো। শেষ পর্বটি পরতে বেশ আকর্ষণীয় লাগছিলো। শেষের দিকে তারেক তার সন্তানদেরকে দেখতে পেলো না শুনে খুব খারাপ লাগছিল। যদিও এটি একটি গল্প ছিলো। পরতে পরতে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। এই ধরনের গল্প আরো আশা করছি। শুভকামনা রইল।
ভালো মানুষের শেষ পরিনতি ঠিক এমনটাই হয়। কারণ খারাপ জিনিসগুলো মানুষকে এমন ভাবে তাড়া করে মৃত্যুর ছায়ার মত হয়ে থাকে। আপনার গল্পে ও তাই ফুটে উঠেছে, যদিও ক্ষনিকের সুখের প্রশান্তি পেয়েছিল তারেক। আর সেই সুখ তাকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় দিয়ে দিল। অসম্ভব সুন্দর ছিল আপনার গল্পটি। গল্পটির অপেক্ষায় ছিলাম আজ শেষ পর্বটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো এবং আকর্ষণীয় ছিল। আশা করছি আমাদের জন্য আরও সুন্দর সুন্দর গল্প নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হবেন। আপনার জন্য ভালোবাসা অবিরাম ভাইয়া।
অবশেষে আপনার এই গল্পটির সমাপ্ত ঘোষণা করলেন আজকে। আপনার এই গল্পটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে প্রত্যেকটি পর্ব আমি খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছি। আসলে আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এমনই আকার ধারণ করেছে যা থেকে সৎ ব্যক্তিরা মূল্যায়ন পাইনা। বরং তারা যখন সমাজের জন্য কোন ভালো কাজ করতে যাই ক্ষমতাশীল ব্যক্তির কাছ থেকে তারা নানাভাবে হুমকির শিকার হয়। আপনার গল্পের এই তারেক সাহেব ঠিক তেমনি একজন সরকারি কর্মচারী।
আমাদের সকলের উচিৎ এই ধরনের মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
ভেবেছিলাম মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য হলেও তারেক সাহেব কে বাঁচিয়ে রাখবে কিন্তু সমাজের বাস্তব সত্যটাই তুমি তুলে ধরলে। আমাদের দেশে এখন এমনটাই চলছে। তাদের সাহেবরা কখনোই বেশিদিন বাঁচতে পারে না।
বাঁচিয়ে রাখার ইচ্ছে জেগেছিল মনে। কিন্তু চিন্তা করে দেখলাম মিথ্যে আশা দেখিয়ে লাভ কি?