ভুল শিক্ষা এবং মনুষত্বের অবক্ষয়।। জুলাই -২২/০৭/২০২৩।।
☬নমস্কার সবাইকে☬
হ্যালো বন্ধুরা,
সময়ের সাথে সাথে আমরা অনেক বেশি আধুনিক হচ্ছি, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি। আজ থেকে ৩০ বা ৫০ বছর আগের কথা যদি বলা যায় তাহলে খেয়াল করে দেখবেন যে মানুষ কতটা কুসংস্কার আচ্ছন্ন জীবন যাপন করত। কিন্তু সেই কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আমরা নিজেদেরকে অনেক বেশি আধুনিক এবং সময় উপযোগী মানুষ হিসেবে তৈরি করতে পেরেছি। তবে সেই মানুষ হিসেবে আমরা নিজেদেরকে পরিচয় দিলেও, আসলে আমরা কতটা মানুষ সেই ব্যাপারে আমি আসলে বেশ কিছুটা সন্ধিহান। আমরা মানব জাতি অন্যান্য জীবজন্তু বা প্রাণীকূল থেকে অনেকটাই আলাদা এবং বিবেক-বুদ্ধির দিক থেকে আমরা অনেক বেশি আধুনিক। সঠিক বিচার করার ক্ষমতা এবং বিচক্ষণতা এই দুটো ব্যাপার আমাদের ভিতর যথেষ্ট পরিপূর্ণ রয়েছে। তবে এত কিছু থাকার পরেও আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যে মনুষত্বের দিক থেকে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে। আজ থেকে কিছু বছর আগে পর্যন্ত মানুষের ভিতরে যে মনুষত্ব কাজ করত, দিনে দিনে সেটা এখন অনেকটাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমরা এখন মানুষের দুর্বল পয়েন্টগুলো তুলে ধরতে পারলেই বা খুঁজে বের করতে পারলেই সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেই, ভাইরাল হওয়ার জন্য। একবারও চিন্তা করি না যে ওই মানুষটার কি হবে পরবর্তীতে।
এইসব অনেক ব্যাপার রয়েছে যেগুলো চোখের সামনে দেখলে মনে হয় আমরা আসলে দিনে দিনে শিক্ষিত হচ্ছি না, তার পরিবর্তে আমরা সঠিক শিক্ষা গ্রহণের অভাবে অশিক্ষার চরম পর্যায় পৌঁছে যাচ্ছি। কি হবে জীবনে এত ডিগ্রি অর্জন করে, মানুষের ভিতর যদি সেই মনুষত্বটাই না থাকে। গতকাল বৃষ্টির দিনে আমি স্টেশনে গিয়েছিলাম কিছু ফটো তোলার জন্য। যদিও আমার টুকটাক বাজার করার প্রয়োজন ছিল, তবে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে স্টেশনে আমাকে বেশ কিছু সময় বসতে হলো। এমন সময় দেখলাম যে একটা বনগাঁ গামী ট্রেন স্টেশনে থামতেই বেশ কিছু মানুষ স্টেশনে নামলো। তার ভিতরে একজন ভদ্রলোক কোট পরে, কালো জুতো পরে ট্রেন থেকে নেমেই দ্রুত একজন জুতো পালিশ কারীর কাছে গিয়ে রীতিমতো তার মুখের সামনে জুতোটা উঁচু করে বলল, এটা একটু পালিশ করে দিন তো তাড়াতাড়ি, আমার খুব তাড়া রয়েছে। লোকটা দেখলাম হাসিমুখে বললো জি স্যার দিচ্ছি। ওই শিক্ষিত লোকটার তুলনায় ওই লোকটা কমপক্ষে কুড়ি বছরের বড় ছিল। আমার ওখানে বসে আসলে একটা জিনিসই মাথায় ঢুকছিল না যে এই দুজনের ভেতর শিক্ষিত লোক কে। যে হাসিমুখে ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে, নাকি যে মুখের সামনে জুতো উঁচু করে ধরেছে।
বেশ কিছুদিন আগে একটা পোস্টে আমি বলেছিলাম যে একটা মাঝ বয়সী, মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় তিন রাস্তার মোড়ে শুয়েছিল। কিছু লোক দেখলাম সেখানে দাঁড়িয়ে তাকে সাহায্য করার পরিবর্তে রীতিমতো মহিলাটার ফটো তুলে নিচ্ছে। ওই সময়টাতে আসলে অনেক বেশি অবাক হয়েছিলাম যে এটা কি ফটো তোলার সময়, নাকি মহিলাটাকে তুলে কোন জায়গায় রেখে আসা উচিত যাতে করে মহিলাটার সেই অর্ধ উলঙ্গ অবস্থা অন্য কাউকে দেখে চোখ বন্ধ করে সেখান থেকে চলে না যেতে হয়। ওই সময়টাতে শুধু আমার একটা ব্যাপারই মাথায় ঘুরছিল সেটা হল যে, উলঙ্গ আসলে কারা... যে শিক্ষিত সমাজ এগুলো দেখে চোখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে, নাকি যে মহিলাটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় শুয়ে রয়েছে রাস্তার মাঝখানে।
আজ থেকে কিছু বছর আগে পর্যন্ত মানুষের ভেতর যথেষ্ট মনুষত্ব ছিল। মানুষ বিপদে পড়লে এগিয়ে আসতো যে কি হয়েছে সেটা দেখার জন্য এবং যতটা সাধ্যের ভিতর ছিল চেষ্টা করত যে কিভাবে সাহায্য করা যায়। তবে আজকাল মানুষের ফ্ল্যাট হয়ে গেছে। এমনও ঘটনা শুনেছি যে একই ফ্ল্যাটে থাকে দুই বছর হয়ে গেছে তবে কেউ কাউকে চেনে না। তাহলে কি শিক্ষা আমাদের অনুভূতিগুলোকে ভোতা বানিয়ে দিচ্ছে, নাকি আমরা নিজেরা সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি না। প্রশ্নটা আপনাদের কাছে থাকলো যদি পারেন তাহলে উত্তর দিয়ে যাবেন। তবে কিছু কিছু ব্যাপার আমি চিন্তা করেছি যে মানুষ আসলে কেনো এরকম হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। সেটা হলো যে হয়তো কেউ চিন্তা করছে যে, ও তো আমার কোন উপকারে আসে না তাহলে আমি তার উপকারে কেন যাব, এটা একটা পয়েন্ট। তারপর আজকাল মানুষ পেছনে অনেক বেশি কথা বলে এজন্য হয়তো মানুষ চায় যে নিজের জায়গা ঠিক রাখতে অন্যেরটা যা হয় হয়ে যাক। তবে আমরা সবাই মিলে যদি একটু একটু করে সচেতন হই এবং মানুষের প্রতি কিছুটা মানবিক হওয়ার চেষ্টা করি তাহলে হয়তো এই সমস্যা আজ থেকে কিছু বছর পরে কিছুটা হলেও সমাধান করা সম্ভব।
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং। |
---|
পৃথিবীতে এখন মনুষত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। আমিও মাঝে মাঝে মানুষের কিছু কর্মকাণ্ড দেখে অবাক হয়ে যাই। বুঝতেই পারিনা মানুষ আসলে কতটা বিবেকহীনতায় ভুগছে। আসলে উচ্চ শ্রেণীর লোকেরা নিম্ন শ্রেণীর মানুষদের এখন আর ভদ্রতার চোখে দেখেনা। তাইতো লোকটি জুতা উঁচু করে মুচির সামনে ধরেছে। আর অন্যদিকে ওই মহিলার সঠিক ব্যবস্থা না করে ছবি তুলেছে।
আসলে আমরা কম বেশি স্বার্থপর এটা নিয়ে কোন কথা বলবো না। তবে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের মনুষত্ব বলে একেবারেই কোন কিছু নেই। যাইহোক পোস্ট পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
জি ভাই বর্তমানে শিক্ষার হার বেড়েছে। মানুষের মধ্যে কুসংস্কারের অন্ধকার বের হয়ে গেছে। এখন মানুষ আর কুসংস্কারকে বিশ্বাস করে না শুধু শিক্ষার জন্য। আপনি যে মহিলাটার কথা এখানে উল্লেখ করেছেন এটা পড়ে সত্যি ভাই খুব খারাপ লাগলো। কারণ তিনি তো ভারসাম্যহীন একজন মানুষ। তার ভেতরে কোন বোধ নেই, যার ফলে তিনি এভাবে চলছেন অথচ মানুষজন তাকে চেয়ে চেয়ে দেখছে অথচ তাদের কোন সাহায্য করছে না। আগের মানুষের মধ্যে শিক্ষা ছিল না কিন্তুু মনুষ্যত্ব ছিল, মানুষের প্রতি সহানুভূতি ভালোবাসা ছিল। কিন্তুু বর্তমান জাতি যত শিক্ষিত হচ্ছে তত তাদের ভেতর মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। তারা যে মানুষ সে কথাটা তারা ভুলে যাচ্ছে। মানুষের মনুষ্যত্বের অবক্ষয় দিন দিন তলানিতে চলে যাচ্ছে।
মানুষের ভিতর যদি মনুষ্যত্ব ব্যাপারটা থাকতো তাহলে হয়তো সেই মহিলাটাকে ওইভাবে অর্থ উলঙ্গ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে হতো না ভাই। যাই হোক পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি মনে করি আমরা সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি না।
আমরা শিক্ষিত কিন্তু আমাদের উচিত সুশিক্ষিত হওয়ার। আমারও মনে হয় আমরা মনুষ্যত্বের দিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে । অসাধারণ কিছু কথা আপনি সুন্দর ভাবে আমাদের কাছে ভাগ করে নিলেন।
এটা ঠিকই যে আমরা মনুষত্বের দিক থেকে অনেক বেশি পিছিয়ে। তবে আমাদের কিছু কিছু ব্যাপারে আসলে অনেক বেশি সচেতন হওয়া দরকার আছে। আপনাকে ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ভাই শিক্ষিত আর সুশিক্ষিত এর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যারা সুশিক্ষিত তারা অবশ্যই মানুষকে মূল্যায়ন করে। কারণ তাদের ভিতরে মনুষ্যত্ব রয়েছে। আর যারা শুধু শিক্ষিত তাদের ভিতরে অহংকার খুব বেশি। তারা নিচু শ্রেণীর মানুষদেরকে মানুষ বলে গণ্য করে না। আর বর্তমানে শিক্ষিত মানুষের হার বেশি। একজন মানুষকে কখনো তার কর্ম বা পেশা দিয়ে বিচার করা ঠিক না। দারুণ একটি টপিক নিয়ে পোস্ট করেছেন ভাই। সেজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
যারা সুশিক্ষিত তাদের ভেতর মনুষত্ব রয়েছে এটা আমিও জানি। তবে আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষই সার্টিফিকেটধারী অশিক্ষিত, যেটা তাদের ব্যবহারে প্রকাশ পায়।
একদম ঠিক বলেছেন ভাই, আর এখনকার বেশিরভাগ মানুষ মনে হয় সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্যই পড়াশোনা করে। বাস্তব জ্ঞান খুবই কম। আর নিজেদেরকে ওভার স্মার্ট মনে করে। যাইহোক ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।