অপু এবং ব্রহ্মদৈত্য (শেষ পর্ব)।। জুন -১৩/০৬/২০২৩।।
☬নমস্কার সবাইকে☬
হ্যালো বন্ধুরা,
আগের পর্বে যেখানে শেষ করেছিলাম -
বৃদ্ধ লোকটি বললো আগামীকাল আমার দুই ছেলে আমার শ্রাদ্ধ এর খাওয়া-দাওয়া দেবে এবং আমার জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গায় তারা খাবার গুলো রেখে আসবে তুমি কি সেটা আমাকে এনে দিতে পারবে। এই কথা শুনে অপু বেশ অবাক হয়ে গেল, আর মনে মনে চিন্তা করল এটাও কি সম্ভব। তখন বৃদ্ধ লোকটি তাকে বলল যে আসলে যখন বেঁচে ছিলাম তখন ছেলেপেলেরা আমাকে ঠিকঠাক মতো ভাত দেয়নি। এখন মরে যাওয়ার পরে প্রতি বছর আমার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমি তো তাদের উপর প্রচন্ড রেগে রয়েছি, তাই আর বাড়ির দিকে যাই না।
অপুর এইবার মনে মনে বেশ কিছুটা খারাপ লাগলো কারণ সেও তো বাবা-মায়ের মনে কষ্ট দিয়ে একা একা বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে। অপুর তার ভুল কিছুটা বুঝতে পারলো এবং এটাও বুঝতে পারল যে তার বাবা-মা তাকে যে এত বকাবকি করে বা এত কথা শোনায় সেটা শুধুমাত্র তার ভালোর জন্য। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল এই বৃদ্ধ লোকটির ইচ্ছা পূরণ করেই আবার মায়ের কোলে ফিরে যাবে। কতই না টেনশন করছে তারা তাকে নিয়ে। এত সময় হয়তো মা কান্না করা শুরু করে দিয়েছে। যাই হোক অপুর ভুল ভাঙতেই তার দুচোখ দিয়ে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। অপু তখন বৃদ্ধ লোকটার কাছে বিদায় নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ল গ্রামের উদ্দেশ্যে। তবে গিয়ে বিশেষ লাভ হলো না কারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি, সবেমাত্র প্রস্তুতি চলছে। যাই হোক বৃদ্ধ লোকটির বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দেখে যে তার ছেলেরা সমস্ত আয়োজন সুষ্ঠুভাবে করার চেষ্টা করছে এবং এত খাবারের আয়োজন যেটা বলে বোঝানো যাবে না। একবার তো তার ছোট ছেলের মুখে এটাও বলতে শুনলাম যে বাবা যা যা খেতে পছন্দ করত তাই তাই যেন বাবার জন্য স্পেশাল করে রান্না করে রেখে দেয়া হয় নিমতলায়।
ঐদিন রাতটা কোন কায়দায় বাড়ির অন্যান্য কর্মীদের সাথে একটা জায়গায় ঘুমিয়ে পড়লাম পরের দিন সকাল থেকেই সমস্ত আয়োজন শুরু হয়ে গেল। ঘর সাজানো থেকে শুরু করে রান্নাবাড়ার ধুমধাম আয়োজন চলছে। এদিকে যে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে এত আয়োজন করা হচ্ছে সেই লোকটিই অভিমান করে না খেয়ে বসে রয়েছে এক জঙ্গলে। মোটামুটি সমস্ত রান্নার আয়োজন বিকালের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তখন সমস্ত অতিথিদের খাবার দেওয়ার আগে তার বাবার জন্য দেওয়া খাবার সব গুছিয়ে একটা নিমতলায় রেখে দেওয়া হয়। তবে আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে খাবারগুলো কুকুরে খেয়ে না নেয়। কিন্তু এটা আমি বুঝতে পারিনি যে যার জন্য খাবার রাখা হয় তার অনুমতি ছাড়া একটা মাছিও সেই খাবারের উপর বসতে পারে না। সুতরাং ঘটনাটা সেরকমই হল একটা কুকুর তো দূরের কথা একটা বিড়ালও সে খাবারের কাছে আমি যেতে দেখলাম না, আর অপেক্ষায় থাকলাম কখন সেই খাবার নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়তে পারবো।
যেহেতু সারাদিন না খাওয়া ছিলাম তাই আমিও সামান্য কিছু খাবার খেয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম এদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে যেতেই দেখলাম সবাই অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে। তাই আমি অতি দ্রুত সেখান থেকে খাবারটা তুলে নিয়ে জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। জঙ্গলে গিয়ে দেখি বৃদ্ধ লোকটা আমার জন্য অনেক আগে থেকেই অপেক্ষা করে বসে রয়েছেন। আমাকে দেখে অনেকটা খুশি হলেন এবং বললেন যে খাবারগুলো দিয়ে আমি যেন এখান থেকে চলে যাই আর কখনো এদিকে না আসি। বৃদ্ধ লোকটার এই কথায় আমার দুচোখ বেয়ে জল পড়তে লাগলো। একটা মানুষ কতটা অসহায় ভাবে মৃত্যুবরণ করলে এইভাবে তাকে খাবার খেতে হয়। তবে যাওয়ার আগে লোকটি বলেছিল যে এটাই তার বাড়ির দেওয়া শেষ খাওয়া। এরপর আর কোন খাবার সে কখনো গ্রহণ করবে না তার ছেলেদের দেওয়ার। আমি আসলে এরপর আর কোন কথা না বলে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
বাড়ি ফিরতেই দেখি বাবা-মা দুজনে দরজার পাশে হেলান দিয়ে কান্না করছে। আমাকে দেখতে পেয়ে তারা দুজন ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল বাবু তুই কোথায় গেছিলিস...? তোকে আর কোনদিনও বকব না তুই আমাদের কখনো ছেড়ে যাস না। আমি আসলে তখন নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছিলাম। এই পৃথিবীতে বাবা মায়ের থেকে আপন কেউ হতে পারে না, আর তাদের কষ্ট দেওয়া মানে এর থেকে বড় পাপ আর কিছু হতে পারে না। এরপর থেকে আমার দুষ্টুমি কিছুটা করে কমিয়ে দিয়েছিলাম। নিজের পড়াশোনায় নিজেকে অনেকটাই আগ্রহী করে তুলেছিলাম। এরপর যখনই বাবা-মা একটু বকুনি দিত তখন বুঝতে পারতাম যে সেটা আমার ভালোর জন্যই দিচ্ছে, তাই হাসিমুখে সেগুলো মেনে নিতাম।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | স্টোরি রাইটিং। |
---|
অবশেষে গল্পটার শেষ পর্ব পেয়ে গেলাম। অনেকদিন পর লিখলেন শেষ পর্ব টা। শুরু থেকে এই গল্পটা পড়ছি এবং আমার তো বেশ ভালো লেগেছে প্রথম থেকেই। অপু চরিত্রটা আমার কাছে ভীষণ মজার লেগেছে। লেখাটা কিছুটা কাল্পনিক হলেও হিন্দু রীতি অনুযায়ী কিন্তু একদম সঠিক। আমাদের সমাজে মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধের আগ পর্যন্ত এই বিশ্বাসটাই এখনো প্রচলিত আছে। আর যে কথাটা না বললেই নয়, মা বাবা সত্যিই যাই করেন তা আমাদের ভালোর জন্যই করেন। এই পৃথিবীতে যদি কেউ নিঃস্বার্থভাবে আমাদের ভালো চেয়ে থাকে তবে সেটা হলো আমাদের মা বাবা। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যেখানে যেখানে মায়ের কথা শুনিনি ঠিক সেখানে সেখানে ভীষণ পরিমাণে ঠকেছি এবং যার ফল এখনো ভুগতে হচ্ছে আমাকে। পরিশেষে এটাই বলব ঈশ্বর যেন আমাদের সবাইকে সৎ বুদ্ধি দান করেন, আমরা অন্তত মা বাবার কথা শুনে যেন চলতে পারি।
আসলে মাঝখানে বেশ কিছু ঝামেলার ভেতর জড়িয়ে পড়েছিলাম এজন্য গল্প লেখার প্রতি অতটা ইন্টারেস্ট ছিলনা। তারপরও মোটামুটি একটা কায়দা করে শেষ করে দিয়েছি। তবে যতটা সুন্দর করতে চেয়েছিলাম ততটা সুন্দর হয়নি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সজীব ভাই গল্পটা শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য।
অপু যে ,শেষ পর্যন্ত নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো এটা দেখেই খুব ভালো লাগলো। তবে বৃদ্ধ লোকটির জন্য সত্যিই খুব খারাপ লাগলো, বেঁচে থাকতে যে মানুষটি তার নিজের পছন্দের খাবারগুলো পাইনি, মারা যাবার পর তার জন্যই তার পছন্দের খাবারগুলো দিয়ে এত আয়োজন! তবে মারা যাওয়ার পর, যার উদ্দেশ্যে খাবার দেওয়া হয় , তার অনুমতি ছাড়া যে অন্য কেউ সেটা খেতে পারে না, এটা আমার জানা ছিল না ,তোমার এই পোষ্টের মধ্যে দিয়ে জানতে পারলাম।
আসলে সবশেষে একটা কথাই বলতে হয় সেটা হল আমাদের বাবা-মায়ের উপরে আর কোন কিছুই হতে পারে না। তবে অপু যে শেষ পর্যন্ত নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে এটাই অনেক। তাছাড়া অনেকে তো সেটাও বুঝতে পারে না। গল্পটা শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।