রাতুল ।। আমার গল্প কথা : পর্ব ০২
নমষ্কার,,
আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি সকলে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। কয়েকদিন আগে অর্থাৎ গত সপ্তাহে একটি রম্য গল্প লিখে পোস্ট করেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় আরেকটি নতুন গল্প লেখা শুরু করেছি। তবে এটা কয়েকটি পর্বে পোস্ট করব ভেবেছি। প্রথম পর্বটা সবার সাথে শেয়ার করেছিলাম। আজ আমি দ্বিতীয় পর্বটা পোস্ট করছি। প্রথম পর্বটা পড়ে অনেকেই কনফিউজড। আশা করি দ্বিতীয় পর্বটা পড়লে সেই কনফিউশন দূর হয়ে যাবে। আসলে একটু সময় নিয়ে নিজের মতো করে লেখার চেষ্টা করছি। আর চেষ্টা করছি কিছুটা সাসপেন্স রাখার।
আমার গল্পের নাম দিয়েছি "রাতুল" ।
প্রথম পর্বের পর থেকে..................
দাঁত মেজে ও চোখ মুখ ধুয়ে টেবিলের কাছে এসে ঢক ঢক করে সে খেয়ে নিল তরল হরলিক্স। টেলিভিশনের মনিটরে নিচের দিকে লাল আলো জ্বলছিল। রাতুল রিমোটের লাল বাটনে চাপ দিয়ে টিভি চালু করল। জি বাংলায় নাটক হচ্ছিল। রাতুল রিমোটের ৮ নম্বর বাটনে চাপ দিল আর সাথে সাথে দুরন্ত চ্যানেলে সেটা চলে গেল। এটা রাতুলের প্রিয় চ্যানেল। রাতুলের বয়সী একটি ছেলে তার বাবা-মায়ের সাথে চিড়িয়াখানায় এসে নানা ধরনের পশু পাখি দেখছে। ছেলেটির বাবা তাকে পশু পাখির নাম বলে তাদের সম্পর্কে নানান ধরনের তথ্য দিচ্ছে।
পশুপাখি দেখতে রাতুল খুব পছন্দ করে। আরো ভালো লাগে নদীর ধারে ঘুরে বেড়াতে এবং ফাঁকা মাঠে দৌড়াদৌড়ি করতে। চিড়িয়াখানার বিভিন্ন খাঁচার সামনে ফাঁকা জায়গা দেখে দৌড়াদৌড়ি করার ইচ্ছা জাগলো রাতুলের মনে। বিছানার উপরে রিমোট রেখে এক দৌড়ে সে ডাইনিং রুমে গেল এবং সাথে সাথে ফিরে এলো শোবার ঘরে। আবার সে ছুটলো ডাইনিং রুমের দিকে। তারপর ফিরে এলো শোয়ার ঘরে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করল সে। তারপর টেবিলের ওপরে থাকা ব্যাগ থেকে সে ড্রয়িং খাতা ও পেন্সিল বের করল। খাতার পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে সে আগে থেকে আঁকানো ছবিগুলো দেখতে লাগলো। আগের আকা ছবি দেখা শেষ হলে একটি সাদা পৃষ্ঠায় সে একটি ছোট মুখমণ্ডল আকলো। মাথার ওপরে ছোট ছোট চুল। তারপর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল, I am Ratul Sarkar. My nickname is Raghu. I am five and a half years old. আমি বড় হয়ে পাইলট হব।
শেষ বাক্যটির ইংরেজি রাতুল জানেনা। ফলে সেই বাক্যটি সে বাংলায় বলল। ছোট মুখমণ্ডলের পাশে রাতুল মাঝারি আকারের একটি মুখমণ্ডল আকলো। মাথার উপরে ছোট ছোট চুল। তারপর বলল, My father's name is Robi Sarkar. He is a marketing manager in a medicine company. বাবা ,,তুমি ভোরবেলা বাড়ি থেকে চলে যাও আর ফিরে আসো অনেক রাতে। গত চার দিনে তোমাকে একবারও দেখিনি। ছুটির দিনেও বাড়িতে বসে কাজ কর। আমাকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাও না, আমার সাথে খেলতে চাও না। তুমি ভালো না, বাবা । তুমি পচা।
বাবার মুখ মন্ডলের পাশে এসে একই সাইজের আরেকটি মুখমন্ডল আকলো। চোখ মুখ সব একই রকম। শুধু এই মুখ মন্ডলের উপরে চুলগুলো বড় বড় এবং এটির কপালে একটি টিপ আছে। আঁকানো শেষ হয়ে গেলে রাতুল বলল, My mother's name is Reena Sarkar. she is a teacher in Green Bird International School. মা,, আমি তোমার স্কুলে পড়বো। তুমি কিন্তু আমাকে বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করাবে না ,, ঠিক আছে?
একটু নিচের দিকে সে একটি বৃহদাকার মুখমন্ডল আকলো। এটির চুল গুলো শুকনো বরবটির মতো, চোখগুলো হল্যান্ডের আলুর মতো। দাঁতগুলো বড় বড় মুলার মত। এই ছবিটির নাকের নিচে যে গোফটি রাতুল এঁকেছিল সেটি দেখতে ঠিক ঘোড়ার লেজের মত। আঁকানো শেষ হলে সে বলল, তুই আমার মায়ের স্কুলের প্রিন্সিপাল। তুই খুব পাজি। মা আমাকে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিল। তাই তুই মাকে বকা দিয়েছিস। তুই একটা শালা। তোকে আমি পেন্সিল দিয়ে পেটাবো।
চলবে ...............................
আপনার গল্প প্রথম পর্ব পড়ে তেমন কিছু বুঝতে পারিনি কিন্তু দ্বিতীয় পর্ব পড়ে বুঝতে পারলাম রাতুল বাবা, মা কারো ভালোবাসা পায় না, তারা কর্মে ব্যস্ত। সত্যি বাচ্চাদের সাথে সময় দেওয়ার প্রয়োজন আছে। রাতুল একা একা বসে সবারই ছবি আঁকছে।দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়।
সময় নিয়ে যে দ্বিতীয় পর্বটা পড়েছেন তার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন সব সময়।
এই ঘটনা আমার নিজের কাকুর ছেলের সাথেও হয়েছে। আমার কাকু এবং কাকিমা দুজনেই সরকারি চাকরি করে এবং বাড়িতে রেখে দেয়া হয়েছিল একজন কাজের লোক ভাইকে দেখাশোনা করার জন্য। তবে আমিও মাঝে মাঝে যেতাম কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখতাম যে কাকু বা কাকিমাকে ফোন করে কান্নাকাটি করতো আমার ভাই। সেই সকাল আটটার সময় কাকিমা অফিসে চলে যেত আর আসতো রাত নটায়। যেহেতু গল্পটা আমার নিজের সাথে অনেকটা রিলেটেড, তাই রাতুলের কষ্টটা কিছুটা হলে অনুমান করতে পেরেছি। বাচ্চাদের মানুষ করতে হলে আসলে বাবা মায়ের কাছে থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। বেশ ভালো একটা মেসেজ আছে আপনার গল্পে। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
আসলে আমার মনে হয় মা বাবা দুজনই যদি চাকরী করেন তাহলে ছোট বাচ্চাদের মানসিক বিকাশ খুব একটা হয় না। আর এই সময়টাতেই মা বাবাকে বেশি পাশে প্রয়োজন। এখন কার বেশির ভাগ পরিবারেই এমন চিত্র লক্ষ্য করা যায় আজকাল।
হাহাহা দারুণ মজা পেয়েছি আপনার রম্য গল্পটি পড়ে। আসলেই ছোট বাচ্চারা অনেক কিছু খেয়াল করে। এই বয়সের বাচ্চা গুলো একটু দুরন্তপনা হয় এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে। তবে একটি বিষয় খুব ভালো লেগেছে সেটি হচ্ছে ছবি একে নিজে নিজে কথা বলতেছে। অনেক মজা পেয়েছি মায়ের স্কুলের প্রিন্সিপালের ছবি একে তাকে পচা বলল বেশ ভালই লেগেছে।
আপু আপনি আপনি লেখাটার মূল ভাবটা ধরতে পেরেছেন তো? বাচ্চাটার কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে ছোট ছোট কিছু ম্যাসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
হাহা আলু, মুলা এতো কিছু আবার পেন্সিল দিয়ে পেটাবে বাচ্চাটা।এইটুকু বাচ্চা এতো সুন্দর করে কিভাবে এতো সবজির নাম বললো।ছেলেটির বয়সে তার তার বাবা মায়ের সাথে যে সময়টা অতিবাহিত করার কথা সেগুলো না করতে পেরে এরকম অবস্থা হয়েছে।আসলে বাবা মা চাকুরী করলে এরকমই হয় বাচ্চাদের পরিস্থিতি।ভালো লিখেছেন কিন্তু আপনি।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
এখনকার বেশির ভাগ বাচ্চাই একাকীত্বে ভোগে। সেই দিক টাই এই গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আপু। অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।