এবারের ইন্ডিয়া ট্যুরে এক ব্যতিক্রমধর্মী অভিজ্ঞতা
নমষ্কার,,
কোচবিহার থেকে দুপুর একটায় রওনা দিয়েছিলাম মালদার উদ্দেশ্যে। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। আমার সিট ছিল থ্রি টায়ার এসিতে। শুয়ে শুয়ে মোবাইল চাপতে চাপতে মোটামুটি ৮ ঘণ্টার মাঝেই মালদা এসে পৌঁছে যাই। আমি যখন মালদা স্টেশনে নামি তখন ঘড়িতে রাত নয়টা বাজে। স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটি অটো নিয়ে রওনা দিলাম আমার গন্তব্যে। অটো থেকে নামার পর কাধের ব্যাগটা নিয়ে যখন হাঁটছি হঠাৎ কেন যেন বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল হাতটা। মুহূর্তেই অনুভব করলাম আমার হাতের আরেকটি কাপড়ের ব্যাগ নেই। যত নতুন জামা কাপড় কিনেছিলাম সব ছিল ওই ব্যাগটাতে। দুই মিনিটের জন্য চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম রাস্তার মাঝে। বারবার ভাবতে থাকলাম ব্যাগটা কই ফেলে এসেছি। শেষমেষ আমি নিশ্চিত হলাম ব্যাগটি আমি ট্রেনেই ফেলে এসেছি। মাথায় রীতিমতো হাত দিয়ে বসে গেলাম। কারণ এরকম ঘটনা এর আগে কখনো আমি ঘটাই নি।
ঘড়িতে তখন রাত নয়টা বেজে ২০ মিনিট। ট্রেন ইতোমধ্যেই মালদা স্টেশন ছেড়ে গিয়েছে। আর আমিও অনেক দূর চলে এসেছি। কি করব এটা আর বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সাথে সাথে আমার মামাকে ফোন করলাম। আমাকে শুধু বলল রাস্তায় এত কিছু চাপ নিও না, চুপচাপ বাড়িতে চলে এসো। তারপর দেখছি কি করা যায়। বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে রীতিমতো নানান কথা শুনতে হলো। সত্যি বলতে এমন ভুল সহজে কেউ কখনো করে না। আমি নিজেও অনেকটা আহম্মক সেজে গিয়েছিলাম।
ব্যাগটা কি করে উদ্ধার করা যাবে এটা ভাবতেই সবার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। আমি থানাতে কমপ্লেন করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু অনেকেই তাতে বারণ করছিল। কারণ যেহেতু আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি অর্থাৎ ফরেন নাগরিক তাই হয়তো উল্টো ঝামেলার সম্মুখীন হতে পারি আরো। তবে আমার একটা বিশ্বাস ছিল যে ট্রেনটা লাস্ট স্টপেজ অব্দি না পৌঁছা পর্যন্ত আমার ব্যাগ যেখানে ছিল ওখানেই থাকবে। এসি কম্পার্টমেন্ট গুলোতে সাধারণত কেউ কারো ব্যাগে হাত দেয় না। তাই সঠিকভাবে কোন একটা উপায় বের করতে পারলে ব্যাগটা ফিরে পাওয়া সম্ভব।
শেষমেষ বাধ্য হয়ে অপর এক দাদার সহায়তায় অনলাইন হেল্প সেন্টারে ফোন দিলাম। আমার পুরো ঘটনাটা ওদেরকে খুলে বলার পর ওরা একটি কমপ্লেইন লিখে নিল। জানালো মোটামুটি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমাদের সাথে অপর একটি টিম যোগাযোগ করবে ব্যাগটি উদ্ধার করার জন্য। ঠিক দশ মিনিটের মাঝেই আমাদের কাছে ফোন আসলো ব্যাগের ব্যাপারে। আমার টিকিটের ডিটেলস ওরা জেনে নিল এবং ব্যাগের সম্পূর্ণ বর্ণনা নিল। তারপর জানালো ওরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবে ব্যাগটা উদ্ধার করার জন্য। ১৫ মিনিট পর আবার একটি ফোন আসে। সেখান থেকে জানানো হয় ট্রেনটি সেই স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে তাই তারা ব্যাগটি উদ্ধার করতে পারেনি। তবে পরবর্তী স্টেশনের RPF এর কাছে আমার কমপ্লেইন টা রেফার করা হয়েছে।
রাত তখন দশটা ত্রিশ মিনিট। জঙ্গিপুর রোড স্টেশন থেকে ফোন আসলো। আমাকে জানানো হলো আমার ব্যাগটি উদ্ধার করা হয়েছে। পরদিন সকালে যেন উপযুক্ত প্রমাণ সহ ব্যাগটি নিয়ে আসি। মোটামুটি একটু স্বস্তি ফিরে পেলাম। তবুও যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাগটা হাতে পাচ্ছিলাম না, কেন যেন শান্তি পাচ্ছিলাম না।
মালদা থেকে জঙ্গিপুর রোড স্টেশন প্রায় তিন ঘন্টার রাস্তা। আমরা সকাল সকাল রওনা দিয়ে সেখানে পৌঁছে যাই। আর সেখানকার পুলিশ স্টেশনে আমার ফেলে আসা ব্যাগটা দেখতে পেয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্সের সকল কর্মকর্তা আমাদের সাথে খুব আন্তরিক ছিল। কিছু অফিশিয়াল ফর্মালিটিজ মিটিয়ে আমার হাতে তারা ব্যাগটি হস্তান্তর করল। ব্যাগের ভেতরের সব মালামাল একদম ঠিকঠাক ছিল।
ব্যাগটা যে আমি ফিরে পাবো এটা একদম কল্পনার বাইরে ছিল। এবার ইন্ডিয়া ট্যুরে গিয়ে এটা একটি ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা ছিল আমার জন্য। পরবর্তীতে যে যে শুনেছে আমার এই কান্ডটা সবাই শুধু আমার সাথে মজাই নিয়েছে। হিহিহিহি। সত্যি বলতে আমার বোকামির কথা মনে হলে এখন আমার নিজেরই হাসি পায়। ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছিল বলেই সবকিছু ঠিকভাবে মিটে গিয়েছে। নয়তো অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হতে হতো।
ট্রেনে ব্যাগ হারিয়ে আবার ফিরে পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু সেই অসম্ভব কাজটি হলো আপনার সাথে। ট্রেনের গন্তব্য বেশি দূরে হওয়াতে তা সম্ভব হয়েছে। বেশ মজা পেলাম আপনার পোস্টটি পড়ে।মজার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
সত্যি বলতে নিজের কীর্তির কথা মনে হলে নিজেরই হাসি পায় এখন আপু। হিহিহি। তবে ব্যাগটা যে ফিরে পাব এটা ভাবতেও পারি নি একদম। অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য।
লোকাল ট্রেন হলে হয়তো ব্যাগ খুঁজে পেতেন না ভাই। তবে এসি কম্পার্টমেন্টে সাধারণত চোর ঢুকতে পারেনা। তবে আপনার ভারতে আসার প্রথম অভিজ্ঞতাটা তো বেশ দুর্ধর্ষ ছিল। যদিও এরকম ঘটনা অনেকের সাথেই হয়। তবে আপনাকে প্রথমে এসেই অনেকটা চিন্তার মধ্যে পড়তে হলো, এটা আমাদের জন্য অনেক দুঃখের ব্যাপার। তবে একটা ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা হলো বৈ কি।
তবে উল্টো ঝামেলা হবে কেন, এটাই তো বুঝলাম না। এসব ক্ষেত্রে তো পুলিশকেই সবার আগে জানানো উচিত।
ট্রেনে ব্যাগ হারিয়ে আবার ফিরে পেয়েছেন এটা সত্যিই খুব আশ্চর্যজনক একটি ব্যাপার। অনলাইন হেল্প সেন্টার এবং RPF সত্যিই খুব ভালো একটা কাজ করেছেন ওনাদের জন্য আজকে আপনি আপনার ব্যাগটা ফিরে পেয়েছেন। এত ঝামেলার ভেতরে যে আপনার এই বুদ্ধিটা মাথায় এসেছে এটাই তো অনেক। আপনার পোস্টটি পড়ে সত্যি খুব ভালো লাগলো।
আসলে মানুষ মাত্রই ভুল,আর চলাফেরা করতে গেলে ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে স্বস্তির খবর এটাই যে, ব্যাগটা ফিরে পেয়েছেন। আমাদের দেশে হলে তো ব্যাগ ফিরে পাওয়া অসম্ভব ছিলো মনে হচ্ছে। এমন একটা কান্ড ঘটালেন, সবাই তো হাসাহাসি করবেই। তবে আমার লাইফে এই পর্যন্ত আমি তেমন কিছু হারাইনি। শুধু ২ বছর আগে শীতলক্ষ্যা নদী পার হওয়ার সময় ট্রলারে নতুন ছাতা রেখে চলে এসেছিলাম। যদিও ট্রলার চালক আমাকে দূর থেকে ডেকেছিলেন,তবে আশেপাশে অনেক মানুষ ছিলো বলে বুঝিনি যে আমাকেই ডাকছিলো। সন্ধ্যার পর ঘটনাটি ঘটেছিল আমার সাথে। বাসায় এসে মনে হয়েছিল ছাতা রেখে এসেছি 😂। আপনার পোস্ট পড়ে আমার ছাতা হারানোর ঘটনা মনে পড়ে গিয়েছে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।