আমাদের গল্প (৫)
নমস্কার,,
১৭ দিন পর হবে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। তপুর যেন আর দেরী সইছে না। আরেকটু আগে হলেই বোধ হয় বেশি ভালো হতো। এটা সেটা নানান কিছু গুছিয়ে নির্ধারিত তারিখের আগের দিন হলে গিয়ে উঠলো তপু। যারা যারা নতুন এসেছে সবাইকে সে জয়ের কথা জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু কেউ তাকে জয়ের ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারছে না। পরদিন ওরিয়েন্টেশনেও জয়ের দেখা পেল না তপু। বাধ্য হয়ে সবার নাম চেক করলো বেচারা। কিন্তু সেখানে যেন মাথায় হাত পড়লো তপুর। সবার নাম আছে, শুধু জয়ের নাম টাই নেই। পরে জানতে পারলো জয় অ্যাডমিশন ক্যান্সেল করে অন্য জায়গায় চলে গেছে। তাহলে এখন সাথীর সাথে যোগাযোগ হবে কি করে!! ভার্সিটির প্রথম দিন টা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেল তপুর কাছে। একা একা আনমনে একটা পুকুর পাড়ে বসে বসে ঢিল ছুড়তে লাগল। শত ইচ্ছেরা যেন মুহূর্তেই মাটি চাপা পড়ে গেল।
রাতের দিকে মনমরা তপুকে দেখে তার নতুন রুম মেট প্রান্ত জিজ্ঞাসা করলো,
" হ্যাঁ রে তপু, গতকাল থেকে তোকে দেখছি এত আনন্দ করে সবাইকে মাতিয়ে রাখছিস, কিন্তু আজ সকালের পর থেকে তোকে কেমন যেন ছন্নছাড়া লাগছে! হয়েছে টা কি তোর?"
"আসলে ঠিক কি বলবো এটাই বুঝে পাচ্ছি না"
"আরে আমি তোর রুম মেট, আমাকে না বললে বলবি টা কাকে শুনি? খুলে বল সবটা। দেখবি, ভালো লাগবে।"
"শুনে আবার মজা নিবি নাহ্ তো আমার সাথে?"
"খুচরো আলাপ না করে, একটু ঝেড়ে কাশ"
"চল ছাদে গিয়ে সব বলছি তাহলে"
তপু আর প্রান্ত দুজনে ছাদে চলে গেল। সময় তখন রাত সাড়ে এগারোটা হবে হয়তো। আকাশের চাঁদটা পুরো ওঠে নি। দূর থেকে কেমন যেন আধো ভাঙ্গা ভাঙ্গা লাগছে। তপু ছাদের রেলিং এ গা টা আলতো করে হেলিয়ে দিয়ে প্রান্ত কে সবটা খুলে বললো। সব শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ভেসে আসলো প্রান্তের কানে।
আর তারপর,,,,
"আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে ,মামা। ভার্সিটি শুরু করতে না করতেই প্রেমের বাতাসে গা পুরো ভারী হয়ে গেছে দেখছি।"
" না রে প্রান্ত,, প্রেম টেম আমি বুঝি না ঠিক। তবে একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করেছিল মেয়েটাকে দেখে। চেয়েছিলাম আর একটা বার না হয় আমাদের দেখা হোক। কিন্তু যোগাযোগের কোন রাস্তাই খুঁজে পেলাম না আর।"
"ফেসবুকে ট্রাই করছিস?"
"তোর কি মনে হয় এই চেষ্টা করতে আমার এতদিনেও বাকি আছে?"
"আসলে এভাবে ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া টা সত্যিই অসম্ভব। এই তপু, একটা বুদ্ধি মাথায় এল। একটু মুশকিল আছে, তবে চেষ্টা করলে বের করা সম্ভব।"
"কি এমন বুদ্ধি শুনি?"
"শোন, জয় তো এখান থেকে চলে গেছে ঠিক আছে। কিন্তু এখানে ভর্তির সময় একটা ফর্ম আমাদের সবাইকে পূরণ করতে হয়েছিল। যেখানে সবার কন্ট্যাক্ট নম্বর দিতে হয়েছিল। মনে আছে তোর?"
"হ্যাঁ সে মনে আছে, কিন্তু ঐ ফর্ম আমি কি করে পাব…!"
"মামা, একটু টেকনিক করে কাজ করলে সব কিছুই হয়ে যাবে।"
"কিভাবে শুনি?"
" শোন, আমরা যেহেতু মোস্ট জুনিয়র তাই আমাদের কথায় অফিসে কোন কাজ হবে না। আমি আমার একটা পরিচিত সিনিয়র ভাইকে ব্যাপারটা বলবো। আর রিকোয়েস্ট করবো যে, এডমিনের পিয়ন কে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে হলেও যেন জয়ের ফর্ম থেকে ওর নাম্বার টা ম্যানেজ করে আমাদের দেয়।"
"বাহ্, আইডিয়া টা মন্দ নাহ্। কিন্তু বড় ভাই আমাকে পরে র্যাগিং করবে নাহ্ তো?"
"ওরে তপু, কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়, এটুকুও করবি নাহ তুই সাথীর জন্য?"
"ওকে ওকে। যা হয় পরে দেখা যাবে। তুই ব্যবস্থা কর প্রান্ত। কিন্তু ব্যাপার টা আর কারোর কাছে লিক করিস না প্লিজ"
" হাহাহাহাহা,, আমার ট্রিট মিস হলে সাথে সাথে অ্যাকশনে যাব, মনে রাখিস।"
কথায় কথায় মাঝ রাত হয়ে গেল। দুই বন্ধু এক সাথে রুমে চলে গেল ঘুমাতে। আজ একটু হলেও যেন কিছুটা স্বস্তিতে ঘুমাতে পারবে তপু। পর পর চার দিন কেটে গেল। তপুর আর সইছে না। অবশেষে পাঁচ দিনের দিন পিয়ন কে তিনশ টাকা বকশিস দিয়ে জয়ের নাম্বার টা পেয়ে গেল তপু। মনে যেন দিনের বেলাতেই খুশির চাঁদ উঠে গেছে সেদিন। রুমে এসে একটু স্থির হয়ে ফোন দিল জয়কে।
"হ্যালো,,,, "
"হ্যালো,, জয় বলছো?"
"হ্যাঁ আমি জয়। আপনি কে বলছেন?"
"জয়, আমি তপু। সেদিন যে দুপুরে দেখা করার কথা ছিল আমাদের কিন্তু পরে তো আর হলো না।"
"আরে তপু তুমি! আমার নাম্বার পেলে কি করে?"
"সে এক পলাশীর যুদ্ধের ইতিহাস গো। ওসব ছাড়ো। আগে বলো চলে গেলে কেন?"
"আমিও তো তোমার জন্য সেদিন অপেক্ষা করেছিলাম। বোধ ভুল বোঝাবুঝির জন্য আমাদের দেখা হয় নি সেদিন। সত্যি সরি তপু। মন খারাপ করো না।"
" হ্যাঁ ইটস ওকে। জয়,, একটা বিশেষ দরকারে তোমাকে ফোন করেছি। কিছু মনে না করলে তোমার কাছে একটা ছোট্ট আবদার আছে ভাই।"
"আরে এভাবে বলছো কেন! বন্ধুদের মাঝে এমন করতে আছে নাকি! নির্দ্বিধায় বলে ফেল"
"আসলে জয়, আমাকে সাথীর ফোন নম্বরটা একটু দেবে ? ঐ অ্যাডমিশন পরীক্ষার পর থেকে তো আর আমাদের কথা হয় নি। তাই ইচ্ছে করছিল খুব যে ওর সাথে একটু কথা বলি"
কথাটা শুনতেই খুব জোড়ে হেসে উঠলো জয়। কারণ টা বুঝতে আর নাকি নেই ওর। ওদিকে তো সাথীর ও একই অবস্থা। একটা ফোন নম্বর থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তবে সেটা দেওয়াই তো বুদ্ধিমানের কাজ।
"আরে তপু,,, এই সহজ কথা এতো দ্বিধা নিয়ে বলছো কেন!"
"না মানে তুমি ব্যাপারটা কেমন ভাবে নাও, তাই সাহস পাচ্ছিলাম না তেমন।"
"ধুর বোকা ছেলে, আমি ফোন টা রেখেই সাথীর নাম্বার তোমাকে ম্যাসেজ করে দিচ্ছি। তারপর তোমরা কথা বলে নিও। কেমন?"
তপু যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। অবশেষে সে সাথীর সাথে কথা বলতে পারবে। ফোনে এস এম এস টা ঢুকতেই যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মত খুশি হয়ে গেল তপু।
চলবেই,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
ওরে ভাই আপনি এমন জায়গায় এসে গল্প দাঁড় করিয়েছেন যে আর সহ্য করতে পারছি না। এত কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত সাথীর নাম্বার পাওয়া গেল। আমার তো পুরো পোস্ট পড়ে রীতিমতো গায়ে আগুন ধরে যাচ্ছিল। পরের পর্বে তাড়াতাড়ি সাথীর সাথে কথা বলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন, আমি অপেক্ষা করছি।
হাহাহাহা,, আসলে ভাই গল্প হলে অনেক তারাতারিই সব কিছু হয়ে যেত,, বাস্তবেই এমন কাঠ খোড় পোড়াতে হয়েছিল ভাই, তাই জন্যই তো আমিও এমন ঘুরিয়ে পেচিয়ে এগোচ্ছি।