এবার বাড়ি ফেরার পালা

নমস্কার,,

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসো হে বৈশাখ গানটিতে খুব চমৎকার কিছু লাইন লিখেছিলেন। "যাক পুরাতন স্মৃতি, ভুলে যাওয়া গীতি ",,, আবার একটা লাইন লিখেছেন, " বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক ",,,,, বাড়ি ফেরার মুহূর্তে কবিগুরুর এই লাইনগুলো বারবার মনে পড়ছিল খুব করে। জীবনের যত আবর্জনা জমে গিয়েছিল সেগুলো যেন চিরতরে চলে যায়। এবারের ইন্ডিয়া ঘোরাঘুরিটা সেজন্য খুব দরকার ছিল হয়তো। জীবনটাকে আর একটা বার নতুন করে যেন উপভোগ করলাম। নিজের চেনা জগতের বাইরেও যে আরেকটা জগত আছে সেটাকে উপভোগ করে আসলাম। এবার নিজের গৃহে ফেরার পালা। নিজেকে দাঁড় করানোর জন্য আর একবার চেষ্টা করার সময় এসে গেছে।

IMG20220813172022.jpg
Location

কলকাতা যাওয়া এবং আসার টিকিট আগে থেকেই কনফার্ম করেছিলাম। আর যে ৫-৬ দিন থেকেছি সবগুলো দিন ছিল পুরোপুরি প্ল্যান করা। প্লানের বাইরে কোন কিছু করার বিন্দুমাত্র সুযোগ ছিল না। এবার যাতায়াত করেছি শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসে। একদম সরাসরি কলকাতা থেকে ঢাকা একই বাসে। সব থেকে মজার ব্যাপার যে বাসে করে ঢাকা থেকে কলকাতা গিয়েছিলাম সেই একই বাস এবং বাসের স্টাফদের পেয়েছিলাম ফেরার সময়টাতেও। আবার বাসের মধ্যে মোটামুটি ১০ থেকে ১২ জন মানুষ পরিচিতও পেয়েছিলাম। আমরা যাওয়ার দিন একসাথে করে কলকাতা যখন যাই সবার সাথে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল । সেই সূত্রেই পরিচয়।

IMG20220813114948.jpg
Location

IMG20220813162420.jpg
Location

কলকাতার নিউমার্কেট থেকে বাস ছেড়ে দিল ইন্ডিয়ান সময় ঠিক দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে। রাস্তায় বেশ জ্যাম ছিল। আস্তে আস্তেই গাড়ি এগোচ্ছিল। দুপুর ২ টা যখন পেরিয়ে গেল ওই সময় বারাসাতের দিকে খাবারের বিরতি দিল। আমিও বেশ পেট ভরে খেয়ে নিলাম। আর তারপর কলকাতার সেই বিখ্যাত ভারের চা খেলাম। মোটামুটি ৩০ মিনিট পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। আর এবার একটানা পৌঁছে গেলাম বেনাপোল। ঘড়িতে তখন সময় সাড়ে চারটা বাজবে হয়তো। সরাসরি বাসের যাত্রীদের জন্য ভিআইপি ইমিগ্রেশন এর ব্যবস্থা থাকায় বর্ডারে কোন প্রকার বেগ পোহাতে হয়নি। পাঁচটার ভেতর সব কাজ কমপ্লিট হয়ে গেল। বাংলাদেশ সাইটে পৌঁছে বাস আসার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। এরই মাঝে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। যাওয়ার দিন যেমন বৃষ্টি পেয়েছিলাম ঠিক ফেরার মুহূর্তেও ওরকম বৃষ্টি আবার পেলাম। বেশ উপভোগ করলাম এই ব্যাপারটা।

IMG20220813165154.jpg
Location

IMG20220813170140.jpg
Location

IMG20220813211732.jpg
Location

IMG20220813210751.jpg
Location

আধাঘন্টা পর বাসের সব যাত্রী উঠে পরলে পুনরায় ঢাকার উদ্দেশ্যে বাস যাত্রা শুরু করে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর তার মাঝে বাস ছুটে চলেছে। বেশ লাগছিল আবহাওয়াটা। অনেক সময় ধরে বাসে বসে থাকার জন্য সবযাত্রী অনুরোধ করলো কোন একটা স্টেশনে চা খাওয়ার বিরতি দিতে। এভাবে চা বিরতি গেল ২০ মিনিটের মত। ফরিদপুরের কাছাকাছি এসে রাতে খাবারের ব্রেক দিল। সময় তখন রাত নয় টা পার হয়ে গেছে। আমি ফ্রেশ হয়ে শুধু কফি খেলাম। অন্য কিছু আর খেতে ইচ্ছে করছিল না। তারপর আবার যাত্রা শুরু হল। যাত্রাবাড়ীর এইদিকে এসে কিছুটা জ্যামে পড়তে হলো। সবকিছু পার করে ঠিক রাত বারোটায় কমলাপুর এসে বাস আমাদের নামিয়ে দিল। আমি সাথে সাথে একটা সিএনজি পেয়ে গেলাম। অন্যান্য সময় যেখানে আড়াই ঘন্টার মত সময় লাগে সেখানে রাতের বেলায় ২০ মিনিটের ভেতর আমার বাড়ি পৌছে গেলাম।

IMG20220814000845.jpg
Location

এইতো ছিল আমার বাড়ি ফেরার গল্প। এতোটুকু বলতে পারি আপনাদের সকলের আশীর্বাদে এবারের ইন্ডিয়া ঘোরাঘুরিটা সত্যিই অসাধারণ হয়েছে। এখনো অনেক কিছু পোস্ট করা বাকি আছে ইন্ডিয়ায় যেসব জায়গায় ঘুরেছি। ধীরে ধীরে হয়তো সেগুলো পোস্ট করব। আশা করি আপনারা বেশ উপভোগ করবেন প্রতিটি পর্ব। আর হ্যাঁ যে কথাটি না বললেই নয়, কিছু কিছু মানুষের প্রতি আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। যাদের জন্য আমি নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন জগৎ চিনে ফিরতে পেরেছি।

সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।

Sort:  
 2 years ago 

নতুন জায়গা থেকে বাড়ি ফিরতে আমারও বেশ খারাপ লাগে। তবে এটা বেশ কাকতলীয় ছিল একই বাসে যাওয়া আসা এবং বাসে একই স্টাপ এবং কিছু যাএী। ভালো ছিল ভাই আপনার ভ্রমণ কাহিনী টা। আপনার সুস্থতা কামনা করছি।।

পরিচিত মুখগুলোকে ফেলে আসতে সত্যি খারাপ লাগছিল। হয়তো আবার কোন এক দিন সবাইকে নিয়ে মেতে উঠবো। অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

আমি যখন দার্জিলিং গিয়েছিলাম আমারও একই অবস্থা হয়েছিল। যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে যাদের সঙ্গে গিয়েছিলাম ফেরার সময় তাদের বেশ কয়েকজনকে পেয়েছিলাম। তাছাড়া দার্জিলিং গিয়েও বিভিন্ন স্পটে তাদের সঙ্গে দেখা হচ্ছিল যদিও আলাদা হোটেলে ছিলাম।
শেষমেষ চায়ের বিরতি পেলেন আমার বাড়ির কাছে ফরিদপুরে শুনে ভালোই লাগলো। অবশেষে ভালোমত পৌঁছাতে পেরেছেন যেন ভালো লাগলো।

বাইরে গিয়ে পরিচিত মুখ দেখলে একটা অন্যরকম আস্থা পাওয়া যায়। আর সময়টাও বেশ ভালো কেটে যায়। যাক অবশেষে জানতে পারলাম আমার আপুর বাড়ি বরিশাল নয় ফরিদপুর 😊। এর পরের বার চায়ের দাওয়াত রেস্টুরেন্টে না নিয়ে সরাসরি বাড়িতে গিয়ে নেব।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59508.12
ETH 2603.38
USDT 1.00
SBD 2.39