ছুটে চলেছে জীবন
নমষ্কার,,
ছুটে চলেছি। প্রতিনিয়তই ছুটছি। ২০১৪ সালে প্রথম বেড়িয়ে যাই বাড়ি থেকে। তারপর থেকে বাড়িতে যখনই আসি নিজেকে যেন অতিথি পাখি লাগে । অল্প সময়ের জন্য বাড়ি আসা। তারপর আবার চলে যাও। আত্মীয় স্বজন যেমন বেড়াতে আসে। আমিও যেন ঠিক তেমন। মাঝে করোনার জন্য বেশ লম্বা সময় বাড়ি থাকি। তারপর নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আবার শুরু ছোটাছুটি।
জীবনে প্রথমবার যেদিন এভাবে একা থাকার উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছিলাম মায়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না বেরোনোর সময়। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে মা আমার বাম হাতের কানি আঙ্গুলে হালকা করে কামড় দিয়ে মাথায় পায়ের ধুলি দেয় প্রতিবার। আর আমি ওই সময় মায়ের সাথে নানান রকম দুষ্টুমি করি। কিন্তু প্রথম যেদিন যাচ্ছিলাম একদম চুপ হয়ে ছিলাম। মাও যেন খুব বেশি কথা বলছিল না। আমি কথা শুরু করলেই মাও কেদে ফেলবে , সাথে আমিও। তাই চুপ ছিলাম। বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য যখন রিকশাতে উঠলাম বিপত্তি ঘটে তখনই। কিছুতেই যেন নিজেকে আটকাতে পারছিলাম না। এত কষ্ট হচ্ছিল বাড়ি ছেড়ে যেতে হাউমাউ করে কাদতে কাদতে টার্মিনাল গিয়েছিলাম। প্রথম প্রথম বাড়ি এসে যাবার বেলা এই সমস্যা টা খুব হতো।
আজ মোটামুটি আট বছর হয়ে আসছে এভাবে বাইরে থাকার। কখনো কোচিং, কখনো ভার্সিটি, কখনো জব , আবার কখনো জব প্রিপারেশন এসব কিছুর জন্যই বাইরে থাকা আসলে। মা বাবা দিদির সবসময়ের ইচ্ছে বড় চাকরি যে করতেই হবে এমন না, মোটামুটি ভালো কিছু একটা যেন বাড়ি থেকেই করি। কিন্তু এটা মোটামুটি এখন নিশ্চিত বাড়ি থেকে কখনোই হয়তো আর কোন জব করা হয়ে উঠবে না। বাইরে সেটেল হতেই হবে হয়তো। ঐ যে প্রথমবার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসছি ওটাই মনে হয় একবারে বেড়িয়ে আসা। এখন যখনই আসি নিজেকে অতিথি লাগে। আরাম আয়েশ করতেই সময় শেষ।
তবে এই আট বছরে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। আগে চলে আসার সময় খুব কান্না আসতো। এখনও মন খারাপ করে খুব। কিন্তু বাসে ওঠার সাথে সাথে কোথায় কি করবো, কিভাবে কি হবে এসব চিন্তা করতে করতেই যেন বাড়ির চিন্তা উধাও। বাবা মাও আগে তিন চার ঘণ্টা পর পর ফোন করতো। কখন কি করি সব খোজ তাদের চাই। এখন দিনে তিন বারের বেশি ফোন দেয় না। বিশেষ কোন দরকার হলে চার পাঁচ বার ফোন করবে।
সময় আমাদের কত দিক থেকে যে পরিবর্তন করে দেয় আর গতিশীল করে দেয় বোঝা বড্ড মুশকিল। আবার নতুন অনেক শিক্ষাও দিয়ে দেয় এইটুকু সময়ের মাঝেই। আপন পর হয়ে যায় , আবার পর আপন হয়। কিন্তু সব কিছুর পরেও ছোটাছুটির এই জীবনে চোখ বুজে সারা জীবনের আস্থা হয়ে পাশে থাকে শুধু মা বাবা আর নিজের পরিবার। পৃথিবীতে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। এই মানুষ মানুষ গুলোর জন্যই হয়তো বেঁচে থাকা। এই মানুষ গুলোর জন্যই ছুটে চলা।
ভাই একদম ঠিক কথাই বলেছেন, বাবা মা পরিবার যেন পৃথিবীতে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। আর তাই হয়তো বাবা-মা পরিবার ছেড়ে দূরে থাকতে গেলে মনটা বড়ই বেসামাল হয়ে ওঠে। বাবা-মা পরিবার থেকে আলাদা থাকা সত্যিই অনেক কষ্টের ব্যাপার। কিন্তু সময় তার নিজস্ব গতিতে চলে। এই সময়ের গতিতে চলতে গিয়ে মানুষ পরিবর্তন হয়ে যায়। তবে ভাইয়া বাড়ির বাইরে থাকার কারণে আপনি যখন বাড়িতে যান তখন নিজেকে অতিথি পাখি মনে করেন এটা ভাবতেও ভালো লাগে। আর সেই মুহূর্তে বাবা-মাও অনেক অনেক আদর যত্ন করে থাকে। এ বিষয়ে আমার বেশ ভালো অভিজ্ঞতা আছে। তাই আপনার লেখাগুলো আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। সত্যিই ভাই, ছুটে চলেছে জীবন তার নিজস্ব গতিতে। ধন্যবাদ
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। আপনার মন্তব্য সব সময় নতুন ভাবে আমাকে উজ্জীবিত করে। অনেক ভালো থাকবেন ভাই। ভালোবাসা রইলো।