আমাদের গল্প (৬)

নমস্কার,,

book-863418_1280.webp

Source

পঞ্চম পর্বের পর থেকে

জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ। বিকাল ছয়টা বাজতে চলেছে। তপু হাঁটতে হাঁটতে তার প্রিয় পুকুর পাড়ে গিয়ে বসলো। জায়গা টা বেশ নিরিবিলি। হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছিল। তবে সেটা উপভোগ করার মতোই। এখানে তপু মাঝে মধ্যেই এসে বসে থাকে। তপু এবার সাথীকে ফোন দেবে। ভেতরটা অনেকক্ষণ হলো একটা উন্মাদ উত্তেজনায় ভরা। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না কিছুতেই। অবশেষে দিয়েই ফেললো ফোনটা।

ফোন কানে দেওয়ার পর ডায়ালিং কলের এক একটা টুউট টুউট শব্দ তপুর বুকের হার্ট বিট টা কে যেন আরো বেশি বাড়িয়ে দিচ্ছিল। একবার রিং হয়ে কেটে গেল। কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না। দ্বিতীয় বার ফোন দিতেই একটা বাচ্চা ছেলের কণ্ঠ ভেসে আসলো,,,,,

"হ্যালো,,"

"হ্যাঁ, হ্যালো। এটা সাথীর ফোন নম্বর নাহ্?"

"হ্যাঁ সাথী দির নাম্বার। কিন্তু আপনি কে?"

(সাথী দি শুনতেই তপু বুজে গেল এটা সাথীর ছোট ভাই। প্রথম দেখার দিন সাথী বলেছিল ওর একটা দুষ্ট ছোট ভাই আছে । ক্লাস সেভেনে পড়ে। নাম সায়ন।)

"তার মানে তুমি সায়ন? তাই তো? "

" হ্যাঁ, আপনি দেখছি আমাকেও চিনেন। কিন্তু আপনি কে?"

"আমি তপু বলছিলাম। সাথীর বন্ধু। সাথীকে কই ভাইয়া? "

"দিদি তো ছাদে গেছে সন্ধ্যা প্রদীপ দিতে। আচ্ছা আপনি কি সেই তপু যার অ্যাডমিট ভুল করে আমাদের বাড়িতে এসেছিল?"

"হাহাহাহাহা,, হ্যাঁ ভাইয়া আমি সেই তপু। তুমিও দেখি আমার ব্যাপারে জানো।"

"আরে দাদা আপনার ব্যাপারে আমরা সবাই জানি। আপনার চান্স পাওয়া, তারপর অ্যাডমিট হওয়া। তবে এবার ভুল করে আপনি আমাদের বাড়ি ফোন করেন নি তো? "

" একদমই ভুল করে নয় ভাইয়া। আমি তোমার জয় দাদার থেকে নম্বর নিয়ে তবেই ফোন করেছি।"

" ও আচ্ছা। দাদা আমি দিদি আসলে আপনাকে ফোন করতে বলবো। কেমন?"

"ওকে ভাইয়া। রাখছি তাহলে। "

এই বলে ফোন টা রাখলো তপু। বসে বসে অপেক্ষা করছে পুকুর পাড়ে। কখন ফোনটা বেজে ওঠে। সন্ধ্যা একদম ঘনিয়ে আসলো এর মাঝেই। মশার অসহ্যকর সাইরেন দিয়ে তপুর কান ভারী হয়ে যাওয়ার অবস্থা প্রায়। এমন সময় হঠাৎ করেই সাথী ফোন করলো। রিসিভ করেই,

"হ্যালো,,,,,"

"হুম,, হ্যালো"

(গলার স্বর কানে আসতেই দুজনের ভেতরে যেন একটা অদ্ভূত ভালো লাগা কাজ করলো। কিন্তু মুখে কেউ প্রকাশ করছে না। হয়তো এটাও ভালো লাগার একটা বহিঃপ্রকাশ)

"আচ্ছা,, আমি কি সাথীর সাথে কথা বলছি!"

"হ্যাঁ স্যার, আপনি সাথীর সাথেই কথা বলছেন।"

"অবশেষে তবে পেলাম আপনাকে ম্যাডাম"

" খুঁজেছেন বুজি খুব ?"

"কাউকে না কাউকে তো খুঁজতেই হবে। আপনি যখন খুঁজবেন নাহ্, তাহলে আমাকেই তো খুঁজতে হবে। "

"তা খোজার কারণ টা কি মহাশয়"

"এহহ,,,! ফোন করেছি বলে পার্ট টা বেড়ে গেছে বুঝি?"

"তুমি যেমন বলবে উত্তর টাও তো সেরকমই হবে তাই না, হিহিহিহি।"

"হ্যাঁ,, সব কথার উত্তর তো স্টক করাই থাকে তোমার কাছে।"

"এই ছাড়ো এসব কথা,, নতুন ভার্সিটি লাইফ কেমন চলছে?"

"বেশ মজায় মজায় দিন কাটছে বলা যায়। তবে সিনিয়র দের দিনের ভেতর হাজার বার সালাম দেওয়া, শত শত নিয়ম কানুন মেনে চলতে চলতে মাঝে মধ্যে চিড়িয়াখানার প্রাণী মনে হয়।"

"ওটা নতুন নতুন কয়দিন থাকবেই। কিছু দিন পর সবাই বন্ধুর মতো হয়ে যাবে।"

" সে তো বুঝলাম, রেজাল্ট বেরোনোর পর তোমার রোল টা না পেয়ে খুব মন খারাপ হয়েছিল সাথী"

"তাই বুজি!! তবে আমি তো তোমার রোল টা দেখে অনেক খুশি হয়েছিলাম।"

"তাহলে এখন কি করবে ভাবছো?"

"তেমন কিছু না, একটা গল্পের বই পড়ছিলাম। একটু বাকি আছে। ওটাই শেষ করব।"

"ওরে বোকা,,, আমি সেটার কথা বলছি না। কোথায় পড়াশোনা টা শেষ করবে সিদ্ধান্ত নিলে?"

"ওহ্ তাই বলো। বাবা বলছিল ঢাকায় একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেবে। আমারও ইচ্ছে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা আর্কিটেকচার নিয়ে পড়ার।"

"বাহ্ ,, বেশ ভালো পছন্দ। বলছি সাথী, আমাদের কি আর কখনো দেখা হবে না?"

"তপু,,, পৃথিবীটা তো গোল। এখানে কখন কি হয়ে যায়, কার সাথে কার কখন দেখা হয়ে যায় বলা মুশকিল। ঈশ্বর চাইলে হতেও পারে আবার আমাদের দেখা। এই দেখো কিভাবে কিভাবে যেন আমাদের আবার যোগাযোগ হয়েই গেল।"

"হ্যাঁ,, সেই ক্রেডিট টা সারা জীবন আমার থাকবে। আমি সব কিছু ম্যানেজ করে তোমাকে খুঁজে বের করেছি।"

"মন থেকে কিছু চাইলে, ভগবান ঠিক কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেন তপু।"

"সত্যি তো?" ( চুপি স্বরে ছোট্ট এই কথাটার মাঝে দিয়েই শত না বলা কথা যেন বলা হয়ে গেল।)

"প্রমাণ টা না হয় নিজেই মিলিয়ে নিও।"

"বাবারে, বড্ড পেঁচিয়ে কথা বলো তুমি। গল্পের বই যে খুব পড় সেটা বোঝায় যায়।"

"আসলে গল্পের বই, আর কবিতা এই দুটো আমার প্রাণ বলা যায়। ওদের নিয়েই আমার অবসর।"

"একুশে বই মেলায় যাও তাহলে প্রতিবছর?"

"হ্যাঁ,, শেষ চার বছরে মিস হয় নি একবারও। শেষের দিকে আমি যাই। আর মনমতো সব বই কিনে নিয়ে আসি।"

"আমি আজ অবধি যাই নি। তবে এবছর ভীষণ ইচ্ছে আছে যাওয়ার। আমি আসলে অতোটা বই প্রেমী না। তবে নতুন বই টেবিলে রাখতে খুব ভালো লাগে। হাহাহাহাহা।"

"তোমার দ্বারা তাই হবে। তুমি এসো। আমি যদি ঢাকা ভর্তি হয়ে যাই, তবে তোমাকে বই মেলা থেকে আমার পছন্দের একটা বই কিনে দেব। আশা করি মন্দ লাগবে না।"

"তুমি দেবে আর আমি পড়বো না, তাই কি হয় নাকি?"

"একটু বেশি হয়ে গেল নাহ্?"

"আচ্ছা তাহলে একটু কমিয়ে নিলাম"

সাথে সাথে সাথীর সেই বাধ ভাঙ্গা হাসির শব্দ টা কানে ভেসে আসলো তপুর। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাত টা বাজতে চলেছে। পুকুর পাড়ের চারপাশ টা অন্ধকার একদম। মশা রীতিমত তপুর কয়েক লিটার রক্ত হজম করে নিয়েছে এমন অবস্থা। আর কথা বেশি না বাড়িয়ে তপু ফোন টা এবার রেখে দিতে চাইলো।

"সাথী, তাহলে আজ রুমের দিকে এগোই, অন্য একদিন আবার তোমাকে বিরক্ত করব"

"এই বিরক্ত মানে টা কি হ্যাঁ? আর তুমি কই এখন?"

"পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছি"

"মানে কি! তুমি এই ভরা সন্ধ্যা বেলায় পুকুর পাড়ে কি মশা গুনতে গেছো? শিগগির রুমে যাও, এক দৌড়ে যাবে।"

অনেকটা নিজের না বলা অধিকার যেন তপুর ওপর খাটালো সাথী। মিষ্টি শাসনের সেই শব্দ গুলো তপুকেউ বেশ নাড়া দিয়ে গেল। ও বেচারাও রুমের দিকে ছুটলো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

Sort:  
 last year 

বেশ সুন্দর গল্প আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন আপনি। গল্পটি পড়ে ভালো লাগলো। আসলে এই ধরনের গল্প পড়তে সত্যি খুব ভালো লাগে। তপুর এবং সাথীর চরিত্র সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে ফুটিয়ে তুলেছেন। আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ ভাই এত দুর্দান্ত গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ধৈর্য্য নিয়ে আমার লেখা গল্পটা পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন সবসময়।

 last year 

এর আগের পর্ব পড়েছিলাম আর আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। এই পর্ব পড়ে আরও বেশি ভালো লাগলো। তপু কবে সাথিকে তার মনের কথা বলবে সেই অপেক্ষায় রইলাম। কেউ যখন প্রেমে পড়ে তখন তার অনুভূতি এমনি হয়। আপনার এই গল্প পড়ে আমি খুব মজা পেয়েছি। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 last year 

দেখা যাক আপু শেষ টা কি হয়,,, হাহাহাহা। পাশেই থাকবেন আশা করি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56688.84
ETH 2388.88
USDT 1.00
SBD 2.28