হঠাৎ কলকাতা ।। শেষ পর্ব ।। "অনেক তো হলো, এবার বাড়ি ফেরার পালা"
পঞ্চম পর্বের পর থেকে শুরু করছি। রাতের ঘুমটা চলে গিয়েছিল অন্য রাজ্যে। আমার কাছে ছিল না। ভাবলাম ঘুমটা আর ফিরে আনার দরকার নেই। নিজের বাড়ি গিয়েই না হয় ঘুমাবো। সকালের প্রতিশ্রুতি টাও দেখলাম ভেঙ্গে গেল। ভোর তখন ৫ টা বেজে ২০ মিনিট। ফেরার সময় টা তেও মুখ বুঝে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হলাম। নিজের অবস্থান নিয়ে বুঝতে আর বাকি রইলো না।
ইন্ডিয়ান সময় তখন সকাল সাতটা। আমাকে সকাল সাড়ে আটটার মাঝে এয়ারপোর্ট ঢুকতে হবে। কিভাবে ক্যাব বুক করে যাব কিছুই জানি না। যখন দেখলাম শেষ সাহায্য টুকুর হাত টাও গুটানো হয়ে গেছে তখন ইউটিবে দেখতে শুরু করলাম কিভাবে ক্যাব বুক করতে হয় আর কোন অ্যাপস ইনস্টল করতে হবে। ঈশ্বরের কৃপায় কোন প্রবলেম হলো না। সকাল সাতটা বিশ মিনিটে হোটেল থেকে চেক আউট করলাম। অসহ্য একটা যন্ত্রণা নিয়ে ফিরছিলাম। মাঝে দিদিভাই ফোন করলো। একটা ভরসার হাত যেন আমার কাঁধে এসে পরলো। কিছুটা হালকা হলাম ।
বিশ থেকে পঁচিশ মিনিটের মত লাগলো এয়ারপোর্ট পৌঁছতে। বাইরের বসার চেয়ারে বসে পুরো জার্নি টা চোখ বুজে একবার স্মরণ করলাম। আর তারপর নিজের সব রাগ অভিমান জেদ ক্ষোভ আক্ষেপ রাস্তায় ছুড়ে দিয়ে বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে এয়ারপোর্টের ভেতর ঢুকে গেলাম। আমার প্লেনের টিকিট স্পাইসজেট থেকে করা ছিল। টিকেট হাতে বুঝে নিলাম কাউন্টার থেকে। তারপর ইমিগ্রেশন এর পুরো প্রক্রিয়াটা শেষ করলাম। খুব বেশি বেগ পোহাতে হয় নি আমার।
আমি এয়ারপোর্টের ভেতরে নানান জায়গার ছবি তুলছিলাম দেখে হঠাৎ করেই এক পুলিশ আমাকে এসে ধরে। সে এক মজার কান্ড। আমাকে বলে গ্যালারি তে গিয়ে সব ছবি ডিলিট করে দিতে। এয়ারপোর্টের ভেতরে ছবি তোলা যাবে না । আমি কি আর বলবো। ডিলিট করলাম ওনার সামনেই। বললাম দুটো রেখে দেই 😉। বলল ওকে। তারপর আমাকে বলে রিসাইক্লিং বিন থেকে ডিলিট করে দিতে। আমি চালাকি করে বেরিয়ে গেলাম। ছবি ওখানে থেকেই গেল। হিহিহিহি।
হাতে মোটামুটি দু ঘন্টা সময় ছিল। বসে বসে ফোনে কথা বলছিলাম। আমি যে প্লেনে ফিরব সেটার পাশেই আমি বসে ছিলাম। তারপর একদম নির্ধারিত সময়ে প্লেন আমাকে নিয়ে আকাশে উড়ে গেল। ছোট ছোট ঘর বাড়ি, নদী বিল, জঙ্গল , রাস্তা ঘাট কে বলে যাচ্ছিলাম আমার মনের কথা গুলো। হয়তো বুঝে গেছে ওরাও সবটা। মাঝে প্লেন থেকে খাবার দিয়ে গেল। আমি ব্যাগে রেখে দেই।
ত্রিশ মিনিট এর মাঝে ল্যান্ড করি ভালোভাবেই। আগেই বলেছি বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট টাতে একটু ভিড় বেশি। তবে ই পাসপোর্ট যাদের ছিল তাদের বেশি ভোগান্তিতে পরতে হয় নি। আমার ইমিগ্রেশন টাও তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। দেরি না করে বেরিয়ে যাই কিছু টাকা এক্সচেঞ্জ করে নিয়ে।
তো এভাবেই শেষ হলো আমার কলকাতার পর্ব। হয়তো প্রাপ্তির খাতা পুরো টাই শূন্য। তবে আমি বাস্তবতাকে সামনে থেকে দেখেছি। নিজের অনুভূতিকে অনুভব করেছি আরেকটা বার। চেনা মানুষ কতটা অচেনা হতে পারে স্বচক্ষে দেখে এসেছি। সময় আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বলে দিয়েছে "পুরোনো কিছু আর তোর নেই, ফিরে যা এবার। নতুন করে বাঁচতে শেখ। কারো অভ্যেস হয়ে থাকিস না। বাড়ি ফিরে যা।"
দুর্ভাগ্যক্রমে আপনার একটি প্রশ্ন আমার হাতে পড়েনি। কিন্তু আজকের শেষ পর্বটি পড়েছে। এখন হঠাৎ শেষ পর্ব দেখে আমি আপনার পুরো জার্নি কেমন কেটেছে কি হয়েছে তা বুঝতে পারব না তবে বুঝলাম আপনি চেনা কোন মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হয়েছে। এটা আমার মনে হচ্ছে আপনার লেখাগুলো পড়ে।
অনেকটাই ঠিক বলেছেন আপু। অনেক বড় সত্যকে সামনে থেকে দেখে এসেছি।
আপনার কলকাতার শেষ পর্ব পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আপনার এর আগে সবগুলো পর্ব আমি দেখেছিলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন।
যাক প্লেনে ওঠার আগে আপনার সব দুঃখ কষ্ট ছুড়ে ফেলে এসেছেন জেনে ভালো লাগলো। আশা করি সেগুলো আর জীবনে ফিরিয়ে আনবেন না। ওগুলোকে কলকাতাতেই পড়ে থাকতে দিন। হয়তো আপনার মনে হচ্ছে যে কলকাতা শহর থেকে আপনি শূন্য হাতে ফিরেছেন । কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যে আপনি অনেক বড় একটি বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছেন। আপনি এর থেকেও বড় কোন বিপদে পড়তে পারতেন। যেভাবে আপনাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছিল। ভালই ভালই দেশে পৌঁছতে পেরেছেন সেটি অনেক। দোয়া করি সামনের পথ গুলো অনেক সুন্দর হোক।
ভুলে যাওয়া হয়তো সম্ভব নয় তবে কিছু শিক্ষা জীবন দিয়েছে আমাকে। সেটা গ্রহণ করে চলতে পারলেই হলো এবার। পাশে থাকবেন সবসময় এটাই চাওয়া। অনেক ভালো থাকবেন আপু।