ক্রিয়েটিভ রাইটিং || ভৌতিক গল্প : নিশির ডাক
নমস্কার,
তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভালো আছো। আমিও ভালো আছি। আজকের এই ব্লগে তোমাদের সাথে একটি ভৌতিক গল্প শেয়ার করবো । গল্পটির নাম "নিশির ডাক"। |
---|
পশ্চিমবাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের নাম সবুজগ্রাম। এই গ্রামের নামকরণ হয়েছে এই গ্রামে প্রচুর পরিমাণে সবুজ ঘাস, গাছপালা থাকার জন্য। আসলে এই গ্রামের কোন অংশে সবুজ গাছ নেই এরকমটা দেখা যাবে না। গ্রামে দিনের বেলায় সূর্যের আলো পর্যন্ত ঠিকঠাকভাবে পৌঁছাতে পারো না, এতটাই জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামটি। তাছাড়া এই গ্রামে বিদ্যুতেরও কোন সুব্যবস্থা নেই। সূর্য যখন আকাশে থাকে, তখন কিছুটা দেখা যায়। তবে বিকেলের পর থেকে পুরো একেবারে অন্ধকার হয়ে যায় এই পুরো গ্রাম। এইরকম ঘটার কারণেই এই গ্রামের কেউই বিকালের পর আর বাইরে থাকে না। সবাই দিনের মধ্যে কাজ শেষ করে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার সকাল থেকে তাদের কাজকর্ম করে।
এই গ্রাম থেকে লোক শহরের দিকে খুব যায়না সাধারণত। তবে রবি চাষীর ছেলে সুজন গ্রাম থেকে শহরে চলে গেছিল কাজ করার জন্য। সেখানে সে তার এক আত্মীয়ের কাছে থেকে কাজকর্মের পাশাপাশি পড়াশোনা করেছে অনেক বছর। তারপর লেখাপড়া শেষ করে বহুকাল পরে গ্রামে ফিরেছে। এখানে এসে সে কোন পরিবর্তন দেখতে পায় না। আগের মতই সব কিছু রয়েছে। এই গ্রামে যেহেতু সন্ধ্যা হলেই অন্ধকার হয়ে যেত তাই গ্রামে আরও একটা কথা প্রচলিত ছিল রাত হলে নিশির ডাক পড়ে। আর ওই ডাকে যে সাড়া দেয় তাকে নিশি কোথায় যেন নিয়ে চলে যায়, তার খোঁজা আর কখনোই পাওয়া যায় না। এখানে আসার পর সুজন এই গল্পটা আবার শুনতে পায়। তবে সে যেহেতু এতদিন শহর থেকেছে, শহরের একটা অভ্যাস তার ভিতরে চলে এসেছে। সে তাই এইসব কোন কিছুই ভয় পায় না সে।
এইসব যখন সে এসে শুনতে পায়, সে এসব কথার একদমই পাত্তা দেয় না এবং তার এইখানে যে বন্ধুবান্ধব ছিল তাদেরকেও এসব মিথ্যে বলে অভিযোগ করে এবং সে জেদ ধরে বসে যদি তাকে কখনো নিশি ডাকে সে অবশ্যই সাড়া দেবে। আর এই ঘটনা যে মিথ্যে, নিশি ডেকে নিয়ে চলে যায়, সে সেটাকে ভুল প্রমাণ করবে। যাইহোক, সে গ্রামে এসে কয়েকদিন ভালোভাবেই কাটায়। হঠাৎ একদিন গভীর রাতে সুজন বলে কে যেন ডেকে ওঠে! হঠাৎ করে গভীর রাতে এরকম ডাক শুনে সে ভয় পেয়ে যায়। তখন তার বন্ধু-বান্ধব এবং আশেপাশের লোকজন যে নিশির কথা বলেছিল, তার তখন সেই কথা মনে পড়ে। তবে ভয়ের পাশাপাশি সে একটু সাহসও দেখাতে চায় এবং সে ডাকে সাড়া দিয়ে ওঠে। তার প্রচন্ড ভয় করছিল, যখন প্রতি উত্তরে সাড়া সে না পায়। সে ঘর থেকে একটু বাইরে চলে আসে। তারপর কে ডেকেছে তার নাম ধরে, সে সেটা খুঁজতে থাকে।
এরকম করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে দেখে কালো কোন অন্ধকার ছায়া তাকে ঘিরে ধরেছে। আর সে যেন আস্তে আস্তে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। তার চলার সময় সে খেয়াল করে সে কেমন যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আশেপাশের গাছপালা গুলো চলাফেরা করছে, মনে হচ্ছে তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে সবকিছু। কিন্তু কেউই তাকে ধরে রাখতে পারছে না। আস্তে আস্তে সে বিলীন হয়ে যায়। পরের দিন সকালে সবাই তার খোঁজ করতে থাকে। কিন্তু কেউই কখনো তাকে আর খুঁজে পায় না। পরিবারের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তার বাবা ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু সবাই বুঝতে পারে সে নিশির ডাকে সাড়া দিয়েছিল। এজন্যই তার এরকম পরিণতি হয়েছে।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | ক্রিয়েটিভ রাইটিং (ভৌতিক গল্প) |
---|---|
লোকেশন | বারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল। |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বাহ দারুন একটি গল্প শেয়ার করেছেন। আপনার গল্প পড়ে খুব ভালো লেগেছে। আমি আবার খুবই ভীতু। একটু শব্দ হলেই ভয় পেয়ে যাই। সুজন সাহস দেখালেও কাজে লাগাতে পারলো না। নিশির ডাকে সাড়া দিয়েছে বলে তাকেও বিলীন হতে হলো। সম্পূর্ণ গল্প পড়ে খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য।
আমার শেয়ার করা গল্পটি পড়ে যে আপনার খুব ভালো লেগেছে তা জেনে অনেক খুশি হলাম আপু আমি। আপনার এই সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার লেখা এই গল্পটা আমি তো বেশ আতঙ্ক নিয়ে পড়ছিলাম। তবে শেষে সুজন নিশির ডাকে সাড়া দেওয়ার কারণে হারিয়ে গিয়েছে শুনে খুব অন্যরকম লাগলো। আর অনেক ভয়ও কাজ করছে মনের মধ্যে। তার একেবারেই উচিত হয়নি এত রাতে বাহিরে বের হওয়া আর নিশির ডাকে সাড়া দেওয়া।
এরকম ধরনের ঘটনা শুনলে আসলেই আপু মনের ভিতরে অনেক ভয় কাজ করে।