আম চুরি করতে গিয়ে আহত বন্ধু (পর্ব - ০২)

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

নমস্কার সবাইকে,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমিও বেশ ভালো আছি। আজকের ব্লগে তোমাদের সবাইকে প্রথমে স্বাগতম জানাই। আজকের ব্লগে তোমাদের সাথে কৈশোর জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার দ্বিতীয় পর্ব শেয়ার করব।

mango-2562592_640.jpg

ইমেজ সোর্স

প্রথম পর্বের লিংক

আমরা বেশ কিছু ঢিল নিয়ে এসেছিলাম এই আম পাড়ার জন্য । প্রথমে আমরা ছোট ছোট ঢিল মেরে আম পাড়ার চেষ্টা করছিলাম । এই কাজে আমরা বেশ সফল হই এবং আমরা বেশ কিছু কাঁচা আম পেড়ে ফেলি। তারপর আমি এবং আমার বন্ধু রাজু বড় ঢিল মেরে আম পাড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাই। বড় ঢিল মারলে একসাথে বেশি আম পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই জন্য আমরা দুই জন এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার সময় সমস্যাটা হয়েছিল আমি যখন বড় একটা ঢিল আম গাছকে উদ্দেশ্য করে ছুড়ে দি তখন একসাথে তিন চারটি আম মাটিতে পড়ে তাই দেখে আমার বন্ধু লোভে ছুটে যায় আমগুলো তোলার জন্য। সে বুঝতে পারিনি ততক্ষণে উপর থেকে ঢিল টা নিচে পড়েনি , আগে আগে আমগুলো কুড়িয়ে আনার জন্য গেছিল। তখন আর কি! যা অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য তাই ঘটেছিল। বড় সেই ঢিলটি উপর থেকে সোজা পরলো আমার সেই বন্ধুর মাথার উপর।

ব্যাস, আমার বন্ধু মাথায় হাত দিয়ে সাথে সাথে শুয়ে পড়লো। আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম তার মাথা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে এবং মাথার একগুচ্ছ চুলও কেটে পড়ে গেছে । ব্যাপারটা হয়েছিল অনেক উঁচু থেকে ঢিল টা পড়েছিল সেই জন্য মাথায় রেখে চুল পর্যন্ত কেটে গেছিলো। ঢিল টা মূলত ছিল ভাঙা ইটের একটা বড় অংশ। প্রথমে আমরা কেউ বুঝতে পারিনি যে সমস্যাটা কত বড় হতে চলেছে। আমি তখন রাজুর মাথার যে অংশে কেটে গেছিল সেই জায়গা চেপে ধরে অন্য দুই বন্ধুকে ডাক দি । সবাই ভয় এর মধ্যে পড়ে যাই আমরা। এমনিতেই আমরা লুকিয়ে গাছ থেকে আম পাড়ছিলাম তার মধ্যে এত বড় বিপদ! আমরা কি করে এই বিষয়টা সামলে নেব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। রাজুর মাথা দিয়ে অনেকটা রক্ত ঝরে যাচ্ছিল। তখন তার মাথার যে অংশ কেটে গেছিল সেইখানে চেপে ধরে আমরা নিকটবর্তী একটি হসপিটালে তাকে নিয়ে যাই।

এত বড় ঘটনা আমার দ্বারা ঘটেছে তাই ভেবে আমার হাত-পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছিল। কিছু সময়ের জন্য আমি ভাবনার জগতে হারিয়ে যায়। আমি কি করে তার মা-বাবাকে কৈফিয়ত করব অথবা তার মা-বাবা যদি আমার বাড়িতে এই অভিযোগ নিয়ে আসে তাহলে কি করে বিষয়টা সামলে নেব আমি কোন কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। বন্ধুকে ইমারজেন্সি বিভাগে ভর্তি করা হয় যেহেতু মাথায় কেটে গেছিলো তাই বিষয়টাকে সিরিয়াস ভাবে নেওয়া হয়। ৩০ মিনিটের মধ্যেই আমরা তার বাবা-মাকে বিষয়টা জানিয়ে দিই। এই বিষয়টা জানানোর সময় আমাদের যদিও অনেক ভয় করছিল কিন্তু অন্য কোন উপায়ও আমাদের কাছে ছিল না। কিছু সময়ের মধ্যে তার বাবা-মা ছুটে আসে। তাদের দেখেই চোখে মুখে কান্নার ভাব বোঝা যাচ্ছিল। হঠাৎ করে কি থেকে কি হয়ে গেল তারাও বুঝতে পারছিল না। অনেকটা সময় টেনশনে কাটে আমাদের। প্রায় দুই ঘন্টা পরে জানতে পারি সে বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে তবে তার সুস্থ হতে অনেকটা সময় লাগবে ।

চলবে...


বন্ধুরা, আজকের শেয়ার করা ব্লগ টি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানিও। সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 11 months ago 

আম চুরি করতে গিয়ে আপনার বন্ধুর আহত হওয়ার ঘটনাটি পড়ে আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে। আসলে যেহেতু এটি ইটের ঢিল ছিল সেজন্যই মাথায় আঘাতটি খুব জোরে লেগেছে এবং সাথে সাথে রক্ত পড়া শুরু হয়েছে। তবে এই কাজটি ভালোই করেছেন। সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে নিয়ে। পরবর্তীতে কি হল তা জানার অপেক্ষায় রইলাম।

 11 months ago 

ঘটনাটি যেদিন ঘটেছিল আমারও প্রচন্ড খারাপ লেগেছিল আপু । এই ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর একমাস পর্যন্ত অনেক মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম আমি।

 11 months ago 

বন্ধুদের সঙ্গে আম পারতে গিয়ে তাহলে তো দেখছি অনেক বড় একটা বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল। আসলে লোভ যে মানুষকে কতটা ধ্বংস করে দেয় সেটা আপনার এই পোস্ট করলেই বোঝা যায়। আপনার ওই বন্ধুটা হয়তো অনেক বেশি খাদক ছিল যার কারণে সে লোভ সামলাতে না পেরে আগেভাগে আম নিয়ে আসতে গিয়ে মাথা কেটে নিয়েছে। এত বড় একটা বিপদ যেহেতু চলে এসেছে আর আপনাদের ভয় লাগবে এটাই স্বাভাবিক। খুব জানতে ইচ্ছে করছে যখন তার বাবা-মা হাসপাতালে পৌঁছে গেল তখন তার বাবা-মা আপনাদেরকে কি বলেছিল আর আপনারা তাদের কি উত্তর দিয়েছিলেন...?? পরবর্তী পর্বের আশায় থাকি। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

খুব জানতে ইচ্ছে করছে যখন তার বাবা-মা হাসপাতালে পৌঁছে গেল তখন তার বাবা-মা আপনাদেরকে কি বলেছিল আর আপনারা তাদের কি উত্তর দিয়েছিলেন...?

সিচুয়েশন একটু নরমাল হলে তার বাবা-মাকে সত্যি ঘটনাটিই বলে দিয়েছিলাম ভাই কারণ সেই মুহূর্তে সত্যি বলা ছাড়া অন্য কোন উপায়ও ছিল না।

 11 months ago 

আসলে আনন্দ করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকি। এটা জীবনেরই একটা অংশ। এতে আপনার বা আপনার বন্ধুর কোনো দোষ নেই। তখনকার বয়সটা এমনই ছিলো আপনাদের। আমার জীবনেও এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। সেগুলো ধীরে ধীরে শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। যাইহোক আপনার বন্ধু বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছিল,এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 11 months ago 

হ্যাঁ ভাই, তখনকার বয়সটাই এমন ছিল । এরকম বয়সে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কমবেশি অনেকের সাথেই ঘটে থাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59493.68
ETH 2649.33
USDT 1.00
SBD 2.45