ক্রিয়েটিভ রাইটিং || গল্প : জঙ্গলে দীনু (পর্ব -০৩) শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ26 days ago

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমিও ভালো আছি।

আজকের এই ব্লগে তোমাদের সাথে একটি গল্প শেয়ার করবো । গল্পটির নাম "জঙ্গলে দীনু"। গল্পটির তৃতীয় বা শেষ পর্ব নিচে দেখে নেওয়া যাক।

forest-7150274_1280.jpg

ইমেজ সোর্স

দ্বিতীয় পর্বের লিংক

দীনু যখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডাকাতদের কর্মকান্ডগুলো দেখছিল, সেই মুহূর্তে সে যে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল সেই গাছ থেকে একটা শুকনো ডাল ভেঙ্গে তার মাথার উপরে এসে পড়ে। শুকনো ডাল হঠাৎ করে তার মাথার উপরে ভেঙ্গে পড়ার কারণে সে চিৎকার করে ওঠে ভয়ে। সেই সময় ডাকাতদের নজর দীনুর উপর পড়ে যায়। তারপর তারা ছুটে গিয়ে দীনুকে ধরে ফেলে। এই সময় ডাকাতদের আর বুঝতে বাকি রইলো না, আগের বার পুঁতে রাখা স্বর্ণ গুলো কে চুরি করেছে। এর পর তারা রীতিমতো দীনুকে অত্যাচার শুরু করে, সেই স্বর্ণগুলো কোথায় রেখেছে সেটা জানার জন্য। তবে দীনু কোন অবস্থাতেই স্বীকার করতে চায় না, সেই স্বর্ণগুলো কোথায় সে লুকিয়ে রেখেছে।

সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল, দীনুদেরও সংসারেও একটু সুখ ফিরে এসেছিল। টাকার অভাবটা অনেকটা মিটেও গেছিল তাদের। কিন্তু দ্বিতীয়বার এই জঙ্গলে আসার কারণে দীনু পুরোপুরি ভাবেই ফেঁসে যায়। তাছাড়া ডাকাতদের কবলে যখন সে পড়েছে, তার জন্য যে বিপদ অপেক্ষা করছে সেটা বুঝতে তার আর বাকি রইলো না। দীনু ভিতর বিভিন্ন ভাবনা চলতে থাকে সেই সময়। সে যদি স্বর্ণগুলো কোথায় রেখেছে, সেটা বলেও দেয় তাহলেও ডাকাতের দল তাকে মেরে ফেলে দিতে পারে আবার যদি নাও বলে তখনো ডাকাতের দল তাকে মেরে ফেলে দিতে পারে। এই সব ভেবে সে অনেক ভয় পেয়ে যায় । দীনুকে অনেকক্ষণ ধরে ডাকাত গুলো অত্যাচার করেও তার মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারেনা। অতঃপর একটা ডাকাত রাগ করে দীনুর মাথায় পাশে পড়ে থাকা একটা ইট দিয়ে আঘাত করে

কান্নার সাথে চিৎকার করতে করতে দীনু নিস্তেজ হয়ে যায়। ডাকাত গুলো দীনুকে প্রাণে মারতে চায়নি। তবে অঘটন ঘটে যায় কিছু সময়ের মধ্যেই। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দীনু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এবং তার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ডাকাতের দল কিছু সময়ের জন্য ঘাবড়ে যায় এই ঘটনায়। তবে যেহেতু এটা গভীর জঙ্গল ছিল তাই কেউ দেখে নিয়েছে, এরকম কোন ভয় ছিল না। ডাকাতের দল কিছু না ভেবে পেয়ে সেই জঙ্গলের একটি জায়গায় মাটি খুঁড়ে দীনুকে পুঁতে রেখে দেয় এবং যেই স্বর্ণগুলো এখানে পুঁতে রাখার জন্য এনেছিল, সেইগুলো এই জঙ্গলে আর পুঁতে রাখে না। সেইগুলো তারা তাদের সাথে নিয়ে চলে যায়।

তবে এর আগের বার যে স্বর্ণগুলো এই জঙ্গলে রেখেছিল, সেই স্বর্ণ গুলো চুরি করে কোথায় রেখেছে দীনু এই সম্পর্কে কোন ইনফরমেশন তাদের কাছে থাকে না। সেই জন্য জঙ্গলের পাশের গ্রামে তারা খোঁজ নিতে থাকে, কোন বাড়ির ছেলে কিছু দিন নিখোঁজ আছে সেই সম্পর্কে। অতঃপর তারা বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে দীনুদের বাড়ির খোঁজ পেয়ে যায়। কয়েক দিন ধরে দীনু ঘরে না ফেরায় তার বাবাও খুব টেনশনে থাকে। যেহেতু তার বাবা এর আগে একদিন দীনুকে শহরে যাওয়ার কথা বলেছিল, তাই তার বাবা মনে মনে ভাবছিল ছেলে হয়তো শহরে চলে গেছে। তবে ছেলে যে চির নিদ্রায় জঙ্গলে রয়েছে, সেটা তার বাবা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।

দীনু নিখোঁজ হওয়ার অনেকদিন পরেই তাদের বাড়িতে ডাকাতি হয়। গ্রামের লোকজন তো হতবাক হয়ে যায়, এই গরিবের বাড়িতে ডাকাতি কেন হল তাই নিয়ে । তবে কেউ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না। কয়েক মাস এইভাবে কেটে যাওয়ার পরেও যখন দীনু বাড়িতে আর ফেরে না, তখন তার বাবার মনে সন্দেহ হয়। সে তখন ডাকাতদের সাথে তার ছেলে হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা মেলাতে পারে। তবে দীনু বাবা মনে করে, ডাকাদের সাথেই হয়তো তার ছেলে কোন কাজ করতো এবং ডাকাতদের কোন কিছু নিয়ে বাড়িতে রাখার কারণে ডাকাতের দল দীনুকে হয়তো মেরে ফেলেছে। এই ভেবে দীনুর বাবা দীনুর আশাও ছেড়ে দেয়। দীনু আর দীনুর বাবা যেহেতু পরিবারের দুজন সদস্য ছিল, দীনুর হারিয়ে যাওয়ার কারণে তার বাবা পুরোপুরি একা হয়ে যায়। জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া পরাজিত এক সৈনিকের মতো তার জীবন কাটতে থাকে।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীক্রিয়েটিভ রাইটিং (গল্প)
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আমার আজকে শেয়ার করা "জঙ্গলে দীনু" গল্পের শেষ পর্বটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65248.25
ETH 3471.40
USDT 1.00
SBD 2.51