ভ্রমন: সিদ্ধেশ্বর পাহাড় ও শিব মন্দির (পর্ব -০৩)

in আমার বাংলা ব্লগlast year

বন্ধুরা,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমিও মোটামুটি ভালো আছি।

আজকের নতুন একটি ব্লগে সবাইকে স্বাগতম । আজকের ব্লগে তোমাদের সাথে ভ্রমণ মূলক একটি পোস্টের তৃতীয় পর্ব শেয়ার করব।

কয়েক মাস আগে ঘাটশিলা ভ্রমণে গিয়ে সিদ্ধেশ্বর পাহাড় চড়ে শিব মন্দিরে যাওয়ার গল্পটা অনেকটাই বড়। তাই কয়েকটি পর্বের মাধ্যমে সেখানে যাওয়ার গল্পটা তোমাদের সাথে শেয়ার করব।

20230224_132246.jpg

20230224_133812.jpg

দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক

আমরা আমাদের চলার পথে কয়েকজন দর্শনার্থীর সাথেও দেখা পাই যারা শিব মন্দির দর্শন করে নিচে নামছিল। তখন তাদের আমরা জিজ্ঞেস করি, আর কতটা উঠতে হবে? তখন তারা এটা জানায়, এখনো বেশ খানিকটা উপরে উঠে সেখানে যেতে হবে। এটা শোনার পর পুনরায় আমাদের চলা শুরু হয়। পাহাড়ে উঠতে গিয়ে অনেকটাই কষ্ট হচ্ছিল আমাদের । মাঝে মাঝে বেশ বিপদজনক পথ আসছিল উঠতে গিয়ে। অনেকটা উঁচুতে উঠতে হচ্ছিল আর সেখানে নুড়ি পাথর ছিল। নুড়ি পাথরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় আমার এক বন্ধু তো পড়েও গেছিল তবে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তার। জাস্ট সামান্য একটু কেটে গেছিল হাতে।

20230224_132239.jpg

20230224_132243.jpg

যে পথ দিয়ে আমরা চলছিলাম সেই পথটি মানুষের চলাচলে তৈরি হয়েছে এমনটা ছিল না। বর্ষার সময় বর্ষার জলধারা উপর থেকে বছরের পর বছর নিচে নামার সময় এই রাস্তাটি তৈরি হয়েছে যা দেখে মনে হচ্ছিল। অনেকটা উপরে উঠে আসার পর দূরের পাহাড় গুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। পাহাড় আমার এমনিতেই সব সময় ভালো লাগে। পাহাড়ে একটা আলাদা শান্তি রয়েছে। অনেকটা উপরে উঠে এই অঞ্চলের সবথেকে উঁচু পাহাড় দেখা যাচ্ছিল। চলার পথের ডান দিকে ছিল অনেক গভীর খাদ । সেখান থেকে কেউ যদি পড়ে যেত তাহলে অনেকটা গড়িয়ে নিচে চলে যেত সেরকম ছিল। সব কিছু বুঝে আমরা খুব সাবধানে চলছিলাম তাই। চলতে চলতে এমন অনেক গাছের দেখা আমরা পেয়েছিলাম যেগুলো পাথুরে মাটির স্পর্শ ছাড়াই বেড়ে উঠেছিল সম্পূর্ণ শক্ত পাথরে। এভাবে প্রায় ২৫ মিনিটের মতো হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে আমরা পৌঁছে যাই পাহাড়ের সবথেকে উপরে যেখানে ছিল শিব মন্দির।

20230224_132159.jpg

20230224_132209.jpg

এখানে পৌঁছানোর পর অনেকটা হাফ ছেড়ে আমরা বাঁচি কারণ অনেকটা কষ্ট হয়েছিল আমাদের সেখানে পৌঁছাতে। যেহেতু গরমের দিন ছিল তাই আমাদের বারবার জল তেষ্টা পেয়ে যাচ্ছিলো ।আমরা দোকান থেকে যে জলটি কিনে নিয়ে গেছিলাম তা উপরে উঠতে উঠতেই শেষ হয়ে গেছিল। যাইহোক পাহাড়ের উপরের এই মন্দিরটি অনেক ছোট হলেও স্থানীয় লোকদের কথায় জানতে পেরেছিলাম এই মন্দিরটি নাকি খুবই জাগ্রত। সেখনে গিয়ে মন্দিরের পূজারীর সাথে আমাদের দেখা হয়েছিল। পূজারীর সাথে কথা বলতে বলতে মন্দিরে গিয়ে প্রথমে শিবলিঙ্গ দর্শন করে আমরা আমাদের ভ্রমণ সার্থক করি। মন্দিরের মধ্যে যে শিবলিঙ্গ টি প্রতিষ্ঠা করা ছিল তা বাদেও পাশের একটি জায়গায় আরো একটি শিবলিঙ্গ ছিল। অনেক আগে সেটিতে পুজো করা হতো এবং সেটি ছিল অনেক বেশি পুরনো যা আমরা পূজারীর কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম।

20230224_133806.jpg

20230224_133820.jpg

মন্দিরের পাশেই ছিল নন্দীর মূর্তি। সব কিছু দেখে পূজারীর কাছে এই মন্দির সম্পর্কে আমাদের জানার আগ্রহ হয়। পূজারীর কাছ থেকে আমরা জানতে পারি এখানের শিবলিঙ্গ নাকি পাহাড় থেকেই প্রথম আবির্ভাব ঘটেছিল। সেখান থেকে আমরা এটাও জানতে পারি এই মন্দিরটিতে প্রতি সোমবার করে পুজো হয়। তাছাড়া শিবরাত্রি এবং শ্রাবণ মাসে সবথেকে বড় করে এখানে শিব পুজো করা হয়ে থাকে। এই মন্দিরের দেখাশোনা স্থানীয় কিছু লোকে করে থাকে। পূজারীর কাছে আমাদের এই প্রশ্ন থাকে , শিব পূজা করার জন্য প্রচুর জলের প্রয়োজন হয় সেই জল উপরে কি করে তারা নিয়ে আসে? তখন তিনি আমাদের জানান, সাইকেলে করে স্থানীয় লোকেরা জল দিয়ে যায়। এই কাজ অনেকটা কষ্টের হলেও তারা বছরের পর বছর ধরে এইভাবে পাহাড়ের উপরে এসে জল দিয়ে যায় আর তাই দিয়ে শিব পুজো করা হয়ে থাকে।

চলবে...

20230224_133826.jpg

পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীভ্রমণ
ডিভাইসSamsung Galaxy M31s
ফটোগ্রাফার@ronggin
লোকেশনগালুডিহ ব্যারেজ, কুমির্মুরি, ঝাড়খণ্ড, ভারত।

সিদ্ধেশ্বর পাহাড় ও শিব মন্দির ভ্রমণের তৃতীয় পর্বটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও। সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.026
BTC 56989.27
ETH 2425.90
USDT 1.00
SBD 2.39