গোয়েন্দা রহস্য গল্প : "অর্কিড যখন মৃত্যুর হাতছানি দেয়" - পর্ব ০৬
copyright free image source pixabay
পঞ্চম পর্বের পর
ছয়
দুই দিন পর । ইন্সপেক্টর অনীশ মিত্রকে জরুরি তলব লালবাজার হেডকোয়ার্টার্স থেকে । অফিসে ঢোকা মাত্রই জানতে পারলেন ডেড বডির পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আর অর্কিড ক্যাটালগের ফরেনসিক রিপোর্ট এসে গেছে, তাই এই জরুরি তলব । কিন্তু ইন্সপেক্টর বুঝতে পারলেন না; এই ধরণের রিপোর্ট খুব একটা আহামরি কিছু হয় না, তার জন্য এত জরুরি তলব কেনো ?
জলবৎ তরলং হয়ে গেলো অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার-এর পরের কথাতে ।
-"বুঝলে মিত্র, এই কেসটা আমি যা ভেবেছিলাম তার চাইতে অনেক বেশি জটিল এখন বোঝা যাচ্ছে । তোমাকে একেবারে জান লড়িয়ে দিতে হবে কিন্তু এটা সলভ করার জন্য, তা তোমায় আগেভাগেই জানিয়ে রাখছি । প্রোফেসর সেন খুন হয়েছেন সম্পূর্ণ এক অজানা বিষের কারণে ।"
-"সম্পূর্ণ অজানা বিষ, স্যার ?"
-"ইয়েস মাই বয়, একেবারে সম্পূর্ণ অজানা ভেষজ বিষ । আর এতটাই তীব্র যে প্রোফেসর সেনের মৃত্যুর কারণ মাত্র ৩০ মিলিগ্রাম বিষ ।"
-"মাত্র ৩০ মিলিগ্রাম !!! মানে মাত্র ০.০৩ মিলি !!! ওহ মাই গড !!!"
-"আমরাও হতবাক হয়ে গেছি মিত্র । এতো তীব্র বিষ কিন্তু সম্পূর্ণ অজানা । আমরা প্রথমে সাসপেক্ট করেছিলাম হয়তো বা পটাশিয়াম সায়ানাইড হবে । কারণ পটাশিয়াম সায়ানাইডের মতোই এই বিষের ক্রিয়া । মানব দেহের সেলগুলোকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে সম্পূর্ণ বাধাদান করে এই বিষ, প্রথমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ব্রেইনকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, এর পর হার্ট । মানবদেহের সবচাইতে গুরুত্ত্বপূর্ন এই দুটি অঙ্গের সবচাইতে বেশি অক্সিজেন দরকার হয়, তাই সর্বপ্রথমে বিষ এই দুটি অঙ্গকেই একেবারে নিষ্ক্রিয় করে দেয় । ফলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং অনিবার্য । কিন্তু, পরে ল্যাব থেকে এই বিষের কেমিক্যাল এনালাইসিস করে জানালো এটার রাসায়নিক গঠন পটাশিয়াম সায়ানাইড থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ।এবং এ যাবৎ আবিষ্কৃত কোনো বিষের রাসায়নিক গঠনের সাথে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি । তবে ..."
-"তবে কি স্যার ?"
-"আচ্ছা তুমি 'কুরারি ' বিষ সম্পর্কে কিছু জানো ?"
বিস্মিত মুখে ইন্সপেকটর তাকালেন এসিপি স্যারের মুখের দিকে, "জানি স্যার, এ ব্যাপারে আমার অল্প স্বল্প জ্ঞান আছে । কিন্তু curare poison তো সেই সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গলের হিংস্র আদিবাসীদের ব্যবহৃত বিষ । এখানে কলকাতায় এলো কি করে ? যতদূর জানি আমাজনের কিছু অধিবাসী একধরণের লতাজাতীয় উদ্ভিদ থেকে এই বিষ নিষ্কাশন করে তীরের আগায় মাখিয়ে জীবজন্তু এমনকি মানুষ পর্যন্ত শিকার করে থাকে ।"
-"ওয়েল ডান মাই বয় ওয়েল ডান ! তুমি সত্যিই আমাদের ডিপার্টমেন্টের গর্ব । একেবারে ঠিক লোককেই আমি বেছেছি এই কেসের জন্য । তুমি একেবারে ১০০ ভাগ সঠিক বলেছো । আমাজন জঙ্গলের ওই সব অসভ্য আদিবাসীরা কুরারি বিষ ব্যবহার করেই শিকার করে থাকে । কিন্তু, প্রোফেসর সেনের জিহ্বা, হার্ট ও ব্রেইনে যে বিষের নমুনা পাওয়া গেছে তার রাসায়নিক গঠনের সাথে কুরারির রাসায়নিক গঠনের অনেকটাই মিল থাকলেও এক না, ডিফারেন্ট । কুরারি বিষের কাজ হলো ভিক্টিমের বডির পেশীর সংকোচনের মাধ্যমে পুরোপুরি বডি প্যারালাইজড করে দেয়া । পুরো শরীরের সব মাসল স্টিফ হওয়ার ফলে ফুল রেসপিরেটরি সিস্টেম ফেইলড হয়ে যায় । ফলশ্রুতিতে, কিছুক্ষনের মধ্যে ভিকটিম নিঃশ্বাস নিতে না পেরে মৃত্যুকবলিত হয়ে পড়ে । কিন্তু এই অজানা বিষ ভিক্টিমের দেহ শুধুমাত্র প্যারালাইজড করে তাই নয় পটাশিয়াম সায়ানাইডের মতো দেহকোষ গুলোকে সম্পূর্ণভাবে অক্সিজেন গ্রহণে বাধা দান করে, ফলে ব্রেইন আর হার্ট সম্পূর্ণ ড্যামেজড হয়ে যায় । আর সঙ্গে সঙ্গে ভিক্টিমের মৃত্যু ঘটে । দেহের মাংসপেশী গুলো এতটাই স্টিফ হয়ে যায় যে মনে হবে যেন রাইগার মর্টিস শুরু হয়ে গেছে । অথচ সেটা ভুল ।"
-"এই বার বুঝলাম স্যার, ড: সরকার কেনো বলেছিলেন যে প্রোফেসর সেনের বডিতে রাইগার মর্টিস শুরু হয়ে গিয়েছিলো উইদিন থার্টি মিনিটস ।"
-"হুমম, রাইট ।"
-"আর স্যার, ক্যাটালগের ফরেনসিক রিপোর্টটা ?"
-"ওটা আরো আষ্চর্যের বস্তু, মিত্র । অসম্ভব জটিল আকার ধারণ করেছে এই কেস । এখন একমাত্র তুমিই আমাদের ভরসা । খুনী অত্যন্ত ট্যালেন্টেড । সে যে রহস্যের জাল বুনেছে তা একমাত্র তুমিই পারবে ছিন্ন করতে । রহস্যঘেরা ঘন কুজ্ঝটিকার আড়ালে লুকিয়ে থাকা খুনিকে একমাত্র তুমিই পারবে প্রকাশ্যে আনতে । এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।"
বলতে বলতে অর্কিডের ক্যাটালগের ফরেনসিক রিপোর্টটা ইন্সপেক্টর অনীশ মিত্রের হাতে তুলে দিলেন এসিপি স্যার ।
একনিঃশ্বাসে রিপোর্টটা পড়ে একেবারে হতবাক হয়ে গেলেন ইন্সপেক্টর মিত্র ।
Wow Great
.
.
Get free upvote worth 0.17$ If you use our service | Triple 3x Your coins and Get Free Upvotes | How you may triple your coins : CLICK HERE
ভয়ানক বিষের কারণে মৃত্যু হয়েছে প্রফেসর সেনের। মৃত্যুর রহস্য ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে চলেছে। ইনেসপেক্টর সাহেব তার বুদ্ধি খাটিয়ে কিভাবে প্রফেসর সেনের খুনিকে আমাদের সামনে নিয়ে আসেন সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। আজকের এই পর্বটি করে পরবর্তী পর্ব পড়ার আগ্রহ অনেক বেড়ে গেল।
দাদা আমি গত পর্বেই বলেছিলাম যে এই রহস্য ইন্সপেক্টর এতো সহজেই মিটিয়ে ফেলতে পারবেন না।ভালোই কাঠ খড় পোড়াতে হবে এই রহস্য ভেদ করতে হলে তবে এখন মোটামোটি পরিষ্কার যে রহস্য সব ক্যাটালগেই।দাদা গল্প যত গভীরে যাচ্ছে ততই মজা হচ্ছে যেনো। শেষটা পড়তে ইচ্ছা করছে এখন ই।
আরেকটি নতুন শব্দ সম্পর্কে জানলাম curare poison
এবার দেখা যাক ইন্সপেক্টর অনীশ মিত্র অর্কিডের ক্যাটালগের ফরেনসিক রিপোর্টে কি পান। কিভাবে এই বিষ প্রফেসরের বডিতে গেল, দেখার বিষয়। অপেক্ষায় থাকলাম, পরের পর্বের
পরিমাণ দেখেই বিষের তীব্রতা কিছুটা বুঝতে পারছি। ঠিকই চলে গেল সেই রহস্যময় দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন। শেষটা পযর্ন্ত গল্পের রহস্য টা যে কবে উন্মোচন হবে।
দিন দিন এই গল্পের গভীরতা আরো বাড়ছে। যত পর্ব যাচ্ছে ততই যেন রহস্য বাড়ছে।
দিলেন তো আবার রহস্য ঢুকিয়ে, দাদা পারেনও আপনি হি হি হি।
ভাবতেছিলাম, এই বুঝি মি. মিত্র খুনের একটা রহস্যের জট খুলতে সক্ষম হবেন কিন্তু মনে হচ্ছে আরো দুই একটি পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে। দেখা যাক সম্মুখে আর কি কি বিষয় আসে। তবে কুরারি বিষের ব্যাপারে নতুন কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ
খুবই উত্তেজনা কাজ করছে এখন পর্যন্ত বুঝতেই পারলাম না কে খুন করেছে? প্রথমে মনে হয়েছিল হরিসাধন, তবে আমার মনে হয় অ্যামাজনে যখন তিনি কাজ করতেন তখন তার সাথে কারও শত্রুতার সৃষ্টি হয়েছিল, পরে নার্সারি লোকজনের মাধ্যমে তাকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মারা হয়।
রহস্য দেখি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। গত এপিসোডে ভাবছিলাম কেস প্রায় সলভ হয়ে যাওয়ার পথে, এখন তো দেখছি এটি আরো অনেক জটিল বিষয়।
গোয়েন্দা রহস্য গল্পটি ধীরে ধীরে আরও জটিলতম হচ্ছে। ভেবেছিলাম এই পর্বেই গল্পের রহস্যটি ভেদ হবে কিন্তু ফরেনসিক রিপোর্ট কেসটিকে আরো জটিল করে তুললো। খুনের রহস্য উদঘাটন হয়েছে কিন্তু খুনিকে তা সামনে এখনো আসেনি। এসিপি ইন্সপেক্টর মিত্রকে রিপোর্ট হাতে তুলে দিয়ে খুনি কে খুঁজে বের করার জরুরি তলব দিলেন। ইন্সপেক্টর মিত্র কি পারবে খুনি পর্যন্ত পৌঁছাতে? অপেক্ষায় রইলাম দেখার জন্য। ধন্যবাদ দাদা কৌতুহল আরো বাড়িয়ে দিলেন।