গোয়েন্দা রহস্য গল্প : "অর্কিড যখন মৃত্যুর হাতছানি দেয়" - পর্ব ০৫

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


copyright free image source pixabay

চতুর্থ পর্বের পর


পাঁচ


কথা বলতে বলতে স্টাডি রুমে ঢুকলেন ইন্সপেক্টর মিত্র ও বড়বাবু । হরিসাধন ভেতরে ঢোকেনি, দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে । ইন্সপেক্টর ইশারা করলেন তাকে ঢুকতে । হরিসাধন রুমে ঢুকে জড়সড় হয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো । ইন্সপেক্টর প্রখর দৃষ্টিতে ঘরের সব পর্যবেক্ষণ শুরু করলেন । বড়বাবুও তৎপর হলেন তাঁর সাথে ।

ঘরটি মাঝারি আকারের, তিনটি দেয়াল ঘেঁষেই সারি সারি শোভা পাচ্ছে বুক শেলফ । ঘরের মাঝামাঝি আছে একটা স্টাডি টেবিল ও চেয়ার । আর এক কোণে আছে একটা rocking chair । বোঝাই যাচ্ছে প্রোফেসর সেনের আধা-শোয়া হয়ে রকিং চেয়ারে বসে বই পড়ার অভ্যাস ছিল, রকিং চেয়ারটায় তখনো দুটি বই ও একটা পিলো ছিলো । ইন্সপেক্টর মিত্র একটা বই হাতে নিয়ে দেখলেন । বইটি "Orchids of Tropical America" লেখক Joe. E. Meisel । অন্যটি হাতে নিলেন "Orchids Of Brazil: The World Of Orchids" লেখকত্রয়ী হলেন McQueen, Jim And Barbara। কিছুক্ষন নেড়েচেড়ে দেখলেন বই দুটো । তারপরে রেখে দিলেন যেখানে ছিল ।

আবার স্টাডি টেবিলটার কাছে এলেন । টেবিলের উপর বোটানির কিছু বই ও অর্কিড সম্বন্ধীয় বেশ কিছু বই ছিল । একটা রাইটিং প্যাড, দুটি পার্কার পেন, একটা টেবিল ল্যাম্প, আর একটা মার্কার পেন ছিল । ড্রয়ার খুললেন, পরপর তিনটি ডাইরী দেখতে পেলেন । বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে ডাইরী তিনটি বাজেয়াপ্ত করতে বললেন বড়বাবুকে ।

ড্রয়ারের মধ্যে ৪টা মুখ-ছেঁড়া চিঠির খাম দেখতে পেলেন । দ্রুত সেগুলোকেও বাজেয়াপ্ত করতে বললেন । এরপর তিনি আবার তাঁর ম্যাগনিফায়িং গ্লাসটা বের করলেন এবং টেবিল ল্যাম্পটা জ্বেলে কি যেন খুঁজতে লাগলেন । দু'মিনিটের মধ্যে পেয়েও গেলেন, আর সাথে সাথে টুইজার দিয়ে সেগুলোকে পূর্বের সেই সাদা খামটায় রেখে দিলেন । তারপর টেবিল ল্যাম্পটা নিভিয়ে ঘুরে বড়বাবুর মুখোমুখি হলেন ।

-"ভদ্রলোক প্রচুর বই পড়তেন, তবে প্রায় সব-ই অর্কিড সম্বন্ধীয় ।"

বড়বাবুর মন তখন একটা জিনিস জানার জন্য আঁকু পাঁকু করছে খুব ।

-"স্যার, স্টাডি টেবিলে কি পেলেন ? বসার ঘরের সোফার উপরে, টি টেবিলের তলায়ও আপনি কি যেন পেয়েছিলেন, স্যার । যদি অসুবিধা না হয় একটু বলবেন স্যার ? খুবই জানতে ইচ্ছে করছে ।"

-"সে তো আপনাকে জানাতেই হবে বড়বাবু, আফটার অল আপনি এই কেসের এক জন তদন্তকারী অফিসার । কিন্তু এখন না, পরে বলবো ।"

-"ওকে স্যার, নো প্রবলেম ।" মুখে বললেও মনে মনে ক্ষুব্ধ হলেন বড়বাবু ।

-"এ ঘরে দেখার আর তেমন কিছুই নেই । চলুন বড়বাবু অর্কিড দেখতে যাই । হরিসাধন, অর্কিডের ব্যালকনিটা কোন দিকে ?"

-"আমাদের দুটি ব্যালকনিতেই বাবু, অর্কিড আছে । একটা দক্ষিণে আর একটা পূবে ।" বললো হরিসাধন ।

-"চলো, আগে তাহলে দক্ষিণেরটা দেখি, তারপরে পূবের দিকটায় যাবো ।আসুন, বড়বাবু । চলো হরিসাধন ।"

দক্ষিণের ব্যালকনি । সারা ব্যালকনি জুড়ে নানান আকৃতির টব, কিছু মেঝেতে, কিছু দেয়াল-হ্যাংগিং আর কিছু তিনটে স্টিলের রডের উপর থেকে ঝুলছে । প্রত্যেকটা টবে আছে অর্কিড । নানান আকারের, নানান রঙের অর্কিড । অপূর্ব দেখতে প্রতিটা অর্কিড । ফ্যালেনপসিস (গোলাপি ও সাদা এবং তাদের মিশেল), ক্যাটেলেয়া (গোলাপি ও হলুদ এবং তাদের মিশেল), সিমবিডিয়াম (গোলাপি ও সবুজ এবং তাদের মিশেল), ডেনড্রোবিয়াম (গোলাপি, সাদা ও হলুদ এবং তাদের মিশেল), সার্কোকিলাস (সাদা, হলুদ ও লাল এবং তাদের মিশেল) প্রায় সব রকমের অর্কিড-ই দেখা যাচ্ছে প্রোফেসর সেনের সংগহে রয়েছে ।

প্রায় বেশ কিছুক্ষণ অর্কিডগুলোর দিকে চেয়ে রইলেন ইন্সপেক্টর মিত্র । তারপরে, নিজের মোবাইল বের করে ঝটপট ছবি তুলতে লেগে গেলেন । ১০-১২ টা স্ন্যাপ-শটের পরে তিনি মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখে অন্য ব্যালকনির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন ।

পূবের ব্যালকনি । দক্ষিণের ব্যালকনির মতো এখানেও অর্কিডগুলো টবে সুসজ্জিত রয়েছে । সংখ্যায় তারা বেশ অল্প দক্ষিণের ব্যালকনির তুলনায় । কিন্তু তাদের রঙের বাহার যেন হাজারগুন বেশি । তাদের সেই অপরূপ বর্ণচ্ছটায় চোখ যেন ঝলসে যায় । কিছুক্ষন হাঁ হয়ে অর্কিডগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলেন বড়বাবু । এক একটা অর্কিড যেন এক এক টুকরো হীরক খন্ড । সূর্য্যের আলোয় ঝলমল করছে তাদের রূপ । দু'জনের কেউই কিছুক্ষন কথা বলতে পারলেন না ।

বেশকিছুক্ষন পরে ইন্সপেক্টর আবার মোবাইল বের করে ২০-২২ টা শট নিলেন অর্কিডগুলোর । বড়বাবু একটা অর্কিডের পাপড়িতে হাত দিতে যাচ্ছিলেন, হাত নেড়ে তাঁকে নিষেধ করলেন ইন্সপেক্টর । তারপর ব্যালকনি থেকে লিভিং রুমের দিকে পা বাড়ালেন । অগত্যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও বড়বাবু তাঁকে অনুসরণ করলেন, পিছন পিছন হরিসাধন ।

সোফায় বসে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছলেন বড়বাবু ।

-"এ কী দেখলাম স্যার !!! ওগুলো কি সত্যিকারের ফুল ? এ-তো স্বর্গের পারিজাতকেও হার মানায় স্যার । আমার লাইফে কোনোদিন এমন ফুল দেখিনি । একটা নিয়ে যাবো স্যার ? আমার গিন্নি হাঁ হয়ে যাবে এই ফুল দেখলে নির্ঘাত। জীবনে তো কোনোদিন তাঁকে কোনো কিছু দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারিনি । দেখি, যদি এই স্বর্গীয় ফুল দিয়ে মন জয় করতে পারি কি না !!!", ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বড়বাবু ।

বড়বাবুর কথায় হেসে ফেললেন ইন্সপেক্টর মিত্র, বললেন - "কী বলছেন বড়বাবু ? এতকাল মন জয় করতে পারেননি ? তাহলে আর পারবেন না । আরে মশাই, আমি আপনার ছেলের বয়সী । আর একটা কথা বড়বাবু, অর্কিড গুলো আমার কাছে খুবই দামি মনে হয়েছে । তাই কোনো ফুল ছেঁড়া আমাদের দু'জনের কারোই উচিত হবে না ।"

-"যা বলবেন স্যার । তবে লোকটার রুচির প্রশংসা করতেই হয় । অপূর্ব কালেশন ।"

-"আচ্ছা বড়বাবু আমার মোটামুটি আজকের মতো এখানে তদন্ত শেষ । এখন বেরোবো । আপনি খুবই দ্রুত ডেডবডির পোস্টমর্টেম আর ক্যাটালগটার ফরেনসিক রিপোর্ট আমাকে দেবেন । ও গুলো না পাওয়া অব্দি আমি তদন্ত স্থগিত রাখবো । আর এই খামটা আপনাকে দিচ্ছি । এটার ভিতরে যা আছে সেটা প্রোফেসর সেনেরই দেহের একটা অংশ । আপনি দ্রুত ডিএনএ ম্যাচ করান ।", বলতে বলতে ইন্সপেক্টর সেই সাদা খামটা বের করে বড়বাবুর হাতে দিলেন ।

বড়বাবুর অত্যন্ত সাবধানে খামটি গ্রহণ করলেন । ইন্সপেক্টর উঠে দাঁড়ালেন, হরিসাধনকে ডেকে নিয়ে ঘরের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ালেন । গলা খুব নিচু করে হরিসাধনকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন । হরিসাধন প্রবলভাবে মাথা দু'দিকে নাড়লো । ফের ইন্সপেক্টর আবার কি যেন জিজ্ঞাসা করলো । হরিসাধনের চোখেমুখে বিস্ময়ভাব ফুটে উঠলো । দ্রুত মাথা কাত করে সায় দিলো ।

একটু তফাতে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বড়বাবু । বেজায় চটেছেন মনে মনে । একই কেসে তাঁরা দু'জনেই তদন্ত অফিসার । অথচ তাঁকে বাদ দিয়ে কী এমন গোপন শলা পরামর্শ করছেন ইন্সপেক্টর । কিছু বলতেও পারছেন না । ছোকরা তাঁর ছেলের বয়সী হলেও পদমর্যাদায় অনেকটাই ওপরে । তবে তিনি একশোভাগ শিওর, এই কেসে ছোকরা ফেল মারবে । আরে বাবা, বয়স তো আর কম হলো না । কত কেসই তো unsolved mystry হিসাবে পুলিশের ফাইলের তলায় চাপা পড়ে যায় । তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, এই কেসটাও তাই হবে শেষটায় ।

কথা বলা শেষ । ইন্সপেক্টর চলে এলেন ফ্ল্যাটের মেইন দরজার সামনে ।বড়বাবুর পাশে এসে দাঁড়ালেন ।

-"আচ্ছা বড়বাবু, আজকের মতো কাজ তো শেষ । চলুন যাই । ও আচ্ছা ভালো কথা, আপনি প্রফেসরের মোবাইলটা বাজেয়াপ্ত করেছেন তো ?"

-"হ্যাঁ স্যার ।"

-"সিম কার্ড ?"

সিম কার্ড ছাড়া আবার মোবাইল হয় নাকি ? মনের বিরক্তি চেপে বড়বাবু বললেন - "হ্যাঁ স্যার ।"

-"গুড । শুনুন আপনি যত দ্রুত সম্ভব গত ৭ দিনের কল লিস্টের পূর্ন বিশ্লেষণ করাবেন । বিশেষ করে কোনো unknown number থেকে যদি কল আসে সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ analysis রিপোর্টটা আমার চাই ।"

-"পেয়ে যাবেন স্যার ।"

আবার জনতা ও সাংবাদিকের ভিড় ঠেলে নিচে চলে এলেন ওঁরা । বড়বাবু জীপে ওঠার পূর্ব মুহূর্তে হঠাৎ ইন্সপেক্টর মিত্রের দিকে ফিরে বললেন,

-"স্যার, এই কেসটা কি আমরা সলভ করতে পারবো ?"

-"পারবো না কেন ! ইনফ্যাক্ট খুনটা কি ভাবে হয়েছে আমি বুঝতে পেরে গেছি । এখন রিপোর্টগুলো পেলে হান্ড্রেড পার্সেন্ট কন্ফার্ম হবো । তারপর বাকি থাকে শুধু খুনীকে খুঁজে বের করা । ওটাও করে ফেলবো ।"

জবাব শুনে একেবারে হাঁ হয়ে গেলেন বড়বাবু । তিনি এখনো যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই আছেন ।


[ক্রমশ]

Sort:  
 3 years ago 

প্রফেসর সেনের মৃত্যুর রহস্য আমাদের কাছে এখনো পুরোপুরি বের হয়নি। তবে ইন্সপেক্টর মিত্র মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করে ফেলেছেন। প্রফেসর সেনের মৃত্যু কিসে হয়েছে তা আমরা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি। কিন্তু কে খুন করেছে তা এখনও বেরিয়ে আসেনি। আশাকরি আগামী পর্বে খুনের রহস্য এবং খুনীর তথ্য আমরা জানতে পারবো। আগামী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম দাদা। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো দাদা।

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 3 years ago 

গল্পের রহস্য এখনও গভীরেই যাচ্ছে।মারা যাওয়ার ব্যাপারটা বুঝা গেছে দাদা।পরের পর্বে আরেকটি রহস্যের উন্মোচন হবে।

 3 years ago 

টানটান উত্তেজনায় গল্পটি এগিয়ে চলছে। কিভাবে মারা গিয়েছেন এটা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু কে খুনটা করিয়েছে এখনো সে ব্যাপারে কিছুই বুঝতে পারছিনা। পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি দাদা। দুর্দান্ত লিখেছেন দাদা।

 3 years ago 

গল্পটি যত পড়ছি ততই যেন রহস্য এসে ঘেরাও করছে। এই ধরণের রহস্যময় গল্প আমার কাছে বেশ ভালো লাগে। কারণ আমি fm রেডিওর কুয়াশা তে এমন ধরণের কিছু গল্প শুনেছিলাম। গল্পটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত রহস্য রয়েই গেলো।

 3 years ago 

যতই পর্ব যাচ্ছে ততই মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হলেও অন‍্য একটি বিষয়ে দ্বিধা সৃষ্টি হচ্ছে। আস্তে আস্তে গল্পটি যেন রহস্যের বেড়াজালে আটকে যাচ্ছে। এর পিছনে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। সেটা পরবর্তীতে জানা যাবে।।

 3 years ago 

সত্যিই অসাধারন কাহিনী যতই পড়ছি ততই দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছি। আসলে আমরা যা ভাবছি হয়তো তা নয়। লোকটি আসলে মার্ডার হয়েছে নাকি নিজে নিজেই বিষক্রিয়ায় মারা গেছে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। যাই হোক দাদা সেটার গুরু রহস্য এক সময় উম্নোচিত করবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর আমরা পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রেইলাম । দাদা চালিয়ে যান আপনার লেখা। অসংখ্য ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন সব সময়।

 3 years ago 

অনেক সুন্দর গল্পটি। পড়া শেষ করে পরে বিরাট একটা আগ্রহ যে কি হবে পরের কাহিনী।খুব সুন্দর লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামণা রইল আপনার জন্য।

মৃত্যুর রহস্য আমার কাছে মুটামুটি ক্লিয়ার হয়েছে আমি বেশ আন্দাজ করতে পেরেছি দাদা।কিন্তু অপরাধীকে সনাক্ত করাটা একটু সময়ের ব্যাপার।আশা করছি খুব শীগ্রই কেস টা সোলব হবে।চলবে দাদা চালিয়ে যান।অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী পর্বের জন্য।

 3 years ago 

দাদা আমার মনে হচ্ছে ইন্সপেক্টর আসলে কেইস টা সলভ করে টের পাবে যে আসলে কেইসটা তখনো সলভ হয়নি। আর বড়বাবু একটু খুশিই হবে তখন। তবে পরে আবার ইন্সপেক্টর কেইসটা সলভ করবে। আমার কাছে এমনটাই মনে হচ্ছে।
বাকিটা বলবো খুব দুর্দান্ত হচ্ছে গল্পটা দাদা। বিশেষ করে এই ধরণের গল্প পড়তে আমার একটু অন্যরকম ভালো লাগে, অন্যরকম এট্রাকশন আছে এমন গল্পের প্রতি আমার।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 60506.21
ETH 3313.49
USDT 1.00
SBD 2.38