গোয়েন্দা রহস্য গল্প : "অর্কিড যখন মৃত্যুর হাতছানি দেয়" - পর্ব ০৭
copyright free image source pixabay
ষষ্ঠ পর্বের পর
সাত
সাত সকালেই একটা তোলাবাজির এফআইআর করতে এসেছেন এক প্রোমোটার । বড়বাবু প্রথমে ঠান্ডা মাথায় সবটা শুনলেন । ভদ্রলোককে খুব ভালো ভাবে নিরীক্ষণ করলেন । তারপরে বললেন,
-"দেখুন সোমেশবাবু আপনি মশাই নিপাট একজন ভদ্রলোক, কেন যে এই প্রোমোটারিতে এসে নাবলেন ! আরে মশাই, এখন শতকরা ৯০ ভাগ প্রোমোটারকে তোলাবাজির জুলুম সহ্য করতে হয় । পলিটিক্যাল এফিলিয়েটেড সব ক'টা তোলাবাজ । পুলিশ এখানে মশাই ঠুঁটো জগন্নাথ ছাড়া আর কিছুই না । আমি আজ আপনার এফআইআর নেবো আর কালকেই ট্রান্সফার হয়ে যাবো অন্য থানায় । কি লাভ এতো হুজ্জোতি করার । তার চাইতে একটা জেনারেল ডাইরি করে যান । সেটাই বেটার হবে । আর কিছু টাকা পয়সা দিয়ে আপনার ওই ব্যাপারটা closed করে দিন । মশাই, ভুলে যাবেন না এটা ভারতবর্ষ, এখানে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে ।"
এমন সময় ফোন এলো । থানার ফোনে নয়, বড়বাবুর মোবাইলে । নাম দেখেই বড়বাবু তথস্ট একেবারে ।
-"ওরে, বিষ্ণুপদ সোমেশবাবুকে চা দে । আর চ্যাটার্জি, তুমি সোমেশবাবুর জিডি টা নাও ।"
এই বলেই বড়বাবু কলটা রিসিভ করলেন ।
-"গুড মর্নিং স্যার!"
ওধার থেকে কি যেন শুনতে পেলেন । সঙ্গে সঙ্গেই বললেন -
"এক্ষুনি স্যার, এক্ষুনি আমি আসছি । কোথায় স্যার ? টেরিটিবাজার ? চিনাবাজারের পিছন দিকটায় ? ওক্কে স্যার, আমি এক্ষুনি আসছি । "
ইন্সপেক্টর অনীশ মিত্রের ফোন । হরিপদকে জীপ বের করতে বললেন বড়বাবু । তারপরে ঠিক সকাল দশটায় বেরিয়ে পড়লেন ।
লালবাজারের কাছেই এই চিনাবাজারটা । আগে দু-চার বার এখানে এসেছেন বড়বাবু । একটা বড় আফিমের ঠেক ছিলো এখানটায় । হং কং এর এক কুখ্যাত মাদক ডিলার চালাতো এই চক্রটা । বেশ কয়েকজন চীনা যুবককে কব্জা করে নিয়েছিল সে । তারাই ছিল সেই ব্যাটার ডান হাত । বহু কষ্টের পর তাকে ধরতে সমর্থ হয় পুলিশ । বড়বাবু তখন এদিকটায় পোস্টেড্ ছিলেন ।
লোকেশনে আসা মাত্রই দেখলেন ইন্সপেক্টর অনীশ মিত্র একটা সাদা রঙের মাহিন্দ্রা স্করপিওতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কার সাথে জানি কথা বলছেন । জীপ থেকে তাঁকে নামতে দেখে অনীশ মিত্র কথা শেষ করে বড়বাবুকে ইশারা করে গাড়িতে উঠতে বললেন । গাড়িতে ওঠার পর বড়বাবুর প্রথম প্রশ্ন ।
-"আমরা স্যার কোথায় যাবো ?"
-"বেশি দূরে নয় এই কাছেই । সাত সকালেই পুলিশের জীপ দেখলে এখানে শোরগোল পড়ে যাবে । মাদক এর স্বর্গ রাজ্য তো, আফিম চরস গাঁজার ঠেক সর্বত্র । তাই আপনাকে আমার গাড়িতে আসতে বলেছি । শোরগোল আমার পছন্দ নয় ।"
মিনিট পনের পর । একটা অর্কিডের নার্সারির সামনে এসে গাড়ি থামলো । নার্সারীটা চীনাপল্লীর পিছন দিকটায় ।
নার্সারিটার নাম "Carla Porto" । হঠাৎ বড়বাবুর মনে হলো নামটা কোথায় যেন তিনি দেখেছেন । কিন্তু, মনে করতে পারলেন না ঠিক ।
গাড়ি থেকে নামলেন ইন্সপেক্টর ও বড়বাবু । গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকার সাথে সাথে ম্যানেজার দ্রুত ছুটে এলেন তাঁদের কাছে । সাত সকালেই পুলিশ দেখে তাঁর মোটেও ভালো লাগেনি । পুলিশ মানেই রাজ্যের ঝামেলা ।
-"আসুন স্যার, আসুন । বলুন আপনাদের জন্য আমি কি করতে পারি ?" বশংবদ হয়ে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা করলেন ম্যানেজার ।
ইন্সপেক্টর দ্রুত একটা প্যাকেট থেকে একটা অর্কিডের ক্যাটালগ বের করলেন । ক্যাটালগের উপরে নার্সারির নামটি জ্বলজ্বল করছে । Carla Porto ।
নামটি দেখেই বড়বাবু হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়লেন । এই নামটিই তিনি সেদিন দেখেছিলেন প্রোফেসর সেনের ফ্ল্যাটে অর্কিডের ক্যাটালগটাতে । এর মধ্যেই তিনি ভুলে গেছিলেন নামটা ।
প্রথমে কথা বললেন ইন্সপেকটর ।
-"আপনিই তো ম্যানেজার ? দেখুন আমি একটা কেসের তদন্তের স্বার্থে আপনাকে বেশ কিছু question করবো । আপনি খুব ভেবেচিন্তে উত্তর দেবেন ।"
-"অবশ্যই স্যার অবশ্যই । চলুন আমরা বসে কথা বলি ।"
-"তার দরকার নেই ম্যানেজারবাবু । আমরা এখানেই সেরে নিচ্ছি ।"
ইন্সপেক্টরের এই কথাটি বড়বাবুর মোট্টেও মনঃপুত হলো না । তিনি মোটা মানুষ, দিব্যি চেয়ারে বসে চা খেতে খেতে সব কথাবার্তা হবে । তা না , যত্ত সব ।
-"দেখুন তো ম্যানেজার বাবু এই ক্যাটালগটি তো আপনাদের নার্সারির , নাকি ?"
-"হ্যাঁ স্যার, একশভাগ ।"
-"গুড । আমাকে আর একটি ক্যাটালগ দিন ।"
ম্যানেজার বাবু দ্রুত কাউকে একটা ক্যাটালগ আনার নির্দেশ দিলেন । প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একটা ছেলে এসে একটা ক্যাটালগ ম্যানেজার বাবুর হাতে ধরিয়ে দিলো । ম্যানেজার বাবু সেটি ইন্সপেক্টরের হাতে দিলেন । তিনি দ্রুত কয়েক পৃষ্ঠা উল্টে ম্যানেজারকে বললেন ,
-"এটা আলাদা, ম্যানেজার বাবু । আমাকে সেম এই রকম ক্যাটালগটা দিন ।" প্রোফেসর সেনের ঘর থেকে পাওয়া ক্যাটালগের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন ইন্সপেক্টর মিত্র ।
-"দুঃখিত স্যার । I am extremely sorry । এই বিল্টু "এ+" ক্যাটালগটা দে । এই ক্যাটালগটা আমাদের premier কাস্টমারদের জন্য স্যার । আসলে আমাদের নার্সারিতে দু'ধরণের অর্কিড মেলে । এক. সচারচর যে ধরণের অর্কিড সবখানে পাওয়া যায়, পপুলার, সেই গুলি আর, দুই. খুবই রেয়ার ক্যাটাগরীর অর্কিড, সচারচর যা সব খানে পাওয়া অসম্ভব । এই দ্বিতীয় ধরণের অর্কিড এর দাম আকাশছোঁয়া । বিত্তবানরা ছাড়া আর কেউ কেনার ক্ষমতা রাখে না । আমরা তাই দু'ধরণের ক্যাটালগ ছাপিয়ে রাখি ।"
বলতে বলতে সেই আগের ছেলেটি এসে আরো একটি ক্যাটালগ দিলো । ইন্সপেক্টর হাতে নিয়ে দেখলেন প্রোফেসর সেনের ঘরে পাওয়া সেম ক্যাটালগ ।
-"আচ্ছা, ম্যানেজার বাবু, প্রোফেসর প্রফুল্ল কুমার সেন-কে চিনতেন ?"
উত্তরে এক গাল হাসলেন ম্যানেজার বাবু ।
-"সে কী বলছেন স্যার, কেন চিনবো না । ইন ফ্যাক্ট উনি আমাদের এক জন premier কাস্টমার । প্রচুর 'এ+' ক্যাটেগরির অর্কিড কিনেছেন উনি । প্রচুর টাকা পয়সার মালিক উনি । এই তো স্যার এই সপ্তাহে ওনার একটা অর্ডার আছে । প্রায় ১ লক্ষ টাকার অর্কিড ।"
-"এক লক্ষ টাকার অর্কিড ? কি বলছেন মশাই ফুলের এত দাম !!!!', বড়বাবুর বিস্ময় ।
-"হ্যাঁ, স্যার এর চাইতেও অনেক দামি অর্কিড আছে পৃথিবীতে । এই তো চায়নাতে এক ধরণের অর্কিড আছে নাম 'Shenzhen Nongke' । একটা সিঙ্গেল পিসের দাম আড়াই লক্ষ ডলার, মানে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৮৫ লাখ রুপি ।"
-"ওহ মাই গড !!!!" বড়বাবুর বিস্ময়ে চোখ পুরো আলুর দম ।
-"আর, আমাজনের গহীন অরণ্যে বেশ কিছু অর্কিড আছে যাদের বাজারমূল্য priceless । এরকম একটা ফুল একবার আমেরিকায় গোপনে নিলামে বিক্রি হয়েছিল; ভারতীয় মুদ্রায় যার দাম ২৫ কোটি রুপি ।", বুঝিয়ে দিলেন ইন্সপেক্টর ।
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো বড়বাবুর । বুঝলেন দুনিয়াতে ফুল কত অমূল্য হতে পারে, আর এই কেস কতটা জটিল সেটার কিছুটা ধারণা করতে পারলেন আজকে ।
আরও যে কত পর্ব হবে তা বুঝতে পারছি না। যতই এপিসোড যাচ্ছে ততই জট পাকাচ্ছে। এবং আপনি কত বড় মাপের এবং দক্ষ একজন লেখক তা এই রহস্য গল্প থেকেই বোঝা যাচ্ছে। অসাধারণ দাদা।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
রামি দাদা আপনার গল্পটা একটু অদ্ভুত টাইপের। রহস্যে ঘেরা এই গল্পের রহস্যের শেষ নেই মনে হয়। অর্কিডের দাম শুনে বড়বাবু গা শিউরে উঠল সাথে আমারও। দাদা আপনার গল্পের একটা পর্ব আমি যদি মুখস্ত করতে চাই আমার মনে হয় এক সপ্তাহ লাগবে বাক্যগুলো অনেক কঠিন। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য শুভকামনা রামি দাদা
দাদার এই গল্পের প্রতিটি পার্ট এমন ভাবে লেখা হয়েছে যে পরের পর্বেই মনে হয় সব রহস্য বেরিয়ে যাবে। কিন্তু না তা হয় না। কোনো না কোনো ভাবে সেই রহস্য থেকেই যাই। দেখা যাক পরের পর্বে কি হয়।
এ পর্বে এসেও বুঝতে পারছি না এখনো খুনটা কে করিয়েছে। দেখি পরবর্তী পর্ব থেকে কিছু বোঝা যায় কিনা।
গল্পটা যতই পড়ছি ততই যেন আরো ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে ।এতক্ষণ মনে করছিলাম অর্কিডের ক্যাটালগে কিছু থাকতে পারে। এখন তো দেখছি সেটাও হচ্ছে না ।কে সেই খুনি হতে পারে? এখনো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। খুবই কৌতুহলী হয়ে একটা পর্বের পর আরেকটা পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি। প্রতিটি পর্বেই যেন রহস্য বাড়ছে। ধন্যবাদ দাদা গল্পটি খুব ভালো লাগছে।
দাদা গল্পটা যত ভেতরের দিকে যাচ্ছে ততই যেনো জট পেকে যাচ্ছে। যদিও জট আপনিই পাকাচ্ছেন আর আপনি ই খুলবেন তা জানি।আসলস গল্পে যদি রহস্য না থাকে,জট না থাকে, গল্পটা নিয়ে যদি ভাবতে না পারি তাহলে ঠিক মজা আসেনা।আমি আপনার গল্পটা পড়ার পর অনেক ভাবি যদিও কুলকিনারা করতে পারিনা সেটা আলাদা বিষয়।
তবে আমার মনে হচ্ছে ক্যাটালগ একই হলেও কি হবে, পয়েজন শুধু ওই একটাতেই ছিলো। বাকিটা অনেক কিছুই মনে হচ্ছে। মানে একবার এটা মনে হচ্ছে আরেকবার ওটা মনে হচ্ছে তাই এখনই লিখছিনা মনের ভাবটা। আরেকটু সামনে পড়ি, এরপর পরিষ্কার হবে।
আপনি জাস্ট অসাধারণ লিখেন। কিন্তু দাদা আপনি তো রাতে গল্প লিখেন তাইনা?
অর্কিডের নাম শিখলাম এই কাহিনী টা পড়তে পড়তে তাছাড়া অর্কিডের দাম এত যে হতে পারে তা আমার জানাই ছিল না। তবু এখন একটা ধারনা হল। ধন্যবাদ দাদা চালিয়ে যান গল্পটা বেশ জমে উঠেছে। ভাল থাকবেন সব সময়।
যতই গল্পটি পড়ছি ততই রহস্যের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি। এবার ইন্সপেক্টর মিত্র এবং থানার বড়বাবু অর্কিডের নার্সারিতে গিয়েছেন। ইন্সপেক্টর মিত্র এবং থানার বড়বাবু নার্সারির ম্যানেজারকে অর্কিডের ক্যাটালগ এর বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করছেন। এই নার্সারির ম্যানেজারের কাছ থেকে ইন্সপেক্টর মিত্র দুই ধরনের অর্কিডের ক্যাটালগের তথ্য পেয়েছেন। প্রফেসর সেনের বাসায় যে অর্কিডের ক্যাটালগ ছিল নার্সারিতেও সেটি রয়েছে। এখন দেখার পালা ইন্সপেক্টর মিত্র এবং থানার বড়বাবু নার্সারির ম্যানেজারের সাথে কথা বলে কি তথ্য সংগ্রহ করতে পারে? আমার মনে হয় শীঘ্রই প্রফেসর সেনের খুনের কারণ ও খুনি সামনে আসতে চলেছে। অপেক্ষায় রইলাম শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য।
""ধন্যবাদ দাদা""
গল্পটা যতই পড়ছি ততই যেন আরো ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে ,দেখা যাক পরের পর্বে কি হয়।