আমার অতি সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ বিষয়ক আপডেট -১৩steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

টাইগার হিলের সূর্যোদয় । হ্যাঁ, এটা একটা ভীষণই স্পেশ্যাল জিনিস দার্জিলিঙের । প্রায় সব ভ্রমণার্থী দার্জিলিঙে এলে একবার অন্ততঃ হলেও টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখবেনই । এটা মিস করা যায় নাকি ? এতো গ্র্যান্ড একটা সিনারি মিস করে গেলে জীবনটাই বৃথা ।

তবে টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখা মোটেও সোজা নয় । অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করা লাগে এটা দেখতে গেলে । প্রথম বাধা হলো সময় এবং শীত । টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখতে গেলে ঘুম থেকে উঠতে হবে রাত তিনটের দিকে । এই সময়টায় সারা দার্জিলিং শহর রাশি রাশি লেপ, কাঁথা, কম্বল জড়িয়ে ঘুম থাকে । অসহ্য শীত । যাই হোক এই শীত ঠান্ডা উপেক্ষা করে গাড়িতে করে যেখানে গিয়ে নামিয়ে দেবে সেটা সিঞ্চল জঙ্গলের ঠিক পাশেই । একদম ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে দু'পাশের গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চড়াই রাস্তা বেয়ে ক্রমশ উপরে উঠতে হবে । শরীর ফিট না থাকলে খুবই মুশকিল । কারণ, এই জঙ্গলের পথ দিয়ে একদম পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হবে পায়ে হেঁটে । এই সিঞ্চল জঙ্গলে আবার বাঘ, চিতাবাঘ, ভাল্লুক, কালো চিতা, নেকড়ে এবং হিংস্র বুনো কুকুর ঢোল আছে । তাই, আপনার যদি ভয় করে তবে সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয় ।

এরপরে, কোনোরকমে পাহাড়ের চূড়ায় যখন পৌঁছলেন তখন দেখলেন যে ঘন কুয়াশায় দিগ্বিদিক ঢাকা । বোকার মতো এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে কিচ্ছু দেখতে না পেয়ে ফিরে এলেন । হ্যাঁ, এটাই সব চাইতে মর্মান্তিক । আর এটা খুবই কমন একটা প্রব্লেম । ঘন কুয়াশা আর মেঘে প্রায়ই কাঞ্চনজঙ্ঘা ঢেকে থাকে । সূর্যোদয়ও কুয়াশার অন্তরালে হয় । তাই লাস্ট ধাপ হলো ভাগ্য । ভাগ্যে থাকলে দেখতে পাবেন, ভাগ্যে না থাকলে দেখতে পাবেন না ।

আমাদের ভাগ্য খুবই ভালো ছিল । একদম পরিষ্কার সব দেখতে পেয়েছি । কুয়াশা, মেঘ ছিল, তবে খুবই হালকা । এই শীতের মুখে এমন ঝকঝকে পরিষ্কার আবহাওয়া পাওয়া নিতান্ত ভাগ্য না থাকলে হয় না । আমরা দার্জিলিঙে পৌঁছানোর দিন ঘন কুয়াশায় মোড়া ছিল দিগ্বিদিক । কিন্তু, পরের দিন গুলোতে ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশ পেয়েছি । এমনও হয় মাসখানিক একটানা কেউ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পায় না কুয়াশার কারণে ।

প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে দেখা ফেলাম সেই কাঙ্ক্ষিত ক্ষণের । কালো পর্দা উন্মোচিত হলো প্রভাতের প্রথম সোনালী কিরণে । আর সেই সোনা রঙের কিরণছটা কাঞ্চনজঙ্ঘার শ্বেত শুভ্র বরফ-চূড়ায় প্রতিফলিত হয়ে এক অনির্বচনীয় দৃশ্যের সূচনা করলো । সাদা বরফে যেন আগুন লাগলো । সোনালী আভা ছড়িয়ে পড়লো ধবধবে সাদা বরফ চূড়ায় । প্রথমে ডিমের কুসুমের মতো রং, এর পরে কমলালেবুর মতো রং, সর্বশেষে সোনালী রং ধারণ করলো কাঞ্চনজঙ্ঘা ।

আর আমরাও এই অসাধারণ সূর্যোদয় প্রত্যক্ষ করে বাড়ির পথ ধরলাম ।

লাস্টে একটা কথা বলি, টাইগার হিলের এই অসাধারণ সূর্যোদয় আজ পর্যন্ত কেউই ঠিকভাবে ক্যামেরায় ধারণ করতে পারেনি । এ এমনই এক সৌন্দর্য্য যে খালি চোখে ছাড়া উপভোগ করা অসম্ভব ।


তখনো পাঁচটা বাজেনি । আমরা ঘন অন্ধকারে টাইগার হিলে দাঁড়িয়ে রয়েছি অধীর আগ্রহে ।

তারিখ : ১৯ নভেম্বর ২০২২

সময় : ভোর ০৪ টা ৫৫ মিনিট

স্থান : দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


প্রায় সাড়ে পাঁচটা এখন । আবছা আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত । সূর্য তখনো দিগন্ত রেখার নিচেই রয়েছে । একটা অপূর্ব সোনালী রঙে দিগন্তরেখার উদ্ভাসিত । কাঞ্চনজঙ্ঘা এই আবছায়া অন্ধকারেও বেশ ভালোই দৃশ্যমান ।

তারিখ : ১৯ নভেম্বর ২০২২

সময় : ভোর ০৫ টা ২৫ মিনিট

স্থান : দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


পাঁচটা চল্লিশ । আর মাত্র পনের মিনিট বাকি আছে সূর্যোদয়ের । দিগন্তরেখার কাছে আকাশ এখন ঘন আবিরের রাগে রঞ্জিত ।

তারিখ : ১৯ নভেম্বর ২০২২

সময় : ভোর ০৫ টা ৪০ মিনিট

স্থান : দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


ভোর পাঁচটা পঞ্চান্ন । সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আগত । টাইগার হিলের সূর্যোদয় । প্রথম কিরণছটা এসে পড়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘার শ্বেত শুভ্র কিরীট-চূড়ায় । এরপরের কয়েক মিনিটে এই শুভ্র বর্ণ সোনালী হয়ে উঠবে ।

তারিখ : ১৯ নভেম্বর ২০২২

সময় : ভোর ০৫ টা ৫৫ মিনিট

স্থান : দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


সূর্য্যের সোনালী কিরণে ধীরে ধীরে কাঞ্চনজঙ্ঘার শ্বেত শুভ্র বরফের মুকুট সোনালী আভায় উদ্ভাসিত হচ্ছে । এ এক বিরল দৃশ্য । আমার মোবাইলের ক্যামেরার সাধ্যি নেই এই অপরূপ সৌন্দর্যকে সঠিকভাবে ধারণ করার ।

তারিখ : ১৯ নভেম্বর ২০২২

সময় : ভোর ০৬ টা ১০ মিনিট

স্থান : দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


IMG_20221119_061443.jpg

IMG_20221119_061650.jpg

IMG_20221119_061721.jpg

IMG_20221119_061749.jpg

টাইগার হিল ত্যাগ করার পূর্বে বেশ কয়েকটা ফোটো তুললাম নিজেদের ।

তারিখ : ১৯ নভেম্বর ২০২২

সময় : ভোর ০৬ টা ১৫ মিনিট

স্থান : দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


ক্যামেরা পরিচিতি : OnePlus

ক্যামেরা মডেল : EB2101

ফোকাল লেংথ : ৫ মিমিঃ


✡ ধন্যবাদ ✡


পরিশিষ্ট


প্রতিদিন ৫০০ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৬ষ্ঠ দিন (500 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 06)




সময়সীমা : ২২ নভেম্বর ২০২২ থেকে ২৮ নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত


তারিখ : ২৭ নভেম্বর ২০২২


টাস্ক ১২৫ : ৫০০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

৫০০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : 91a5298631031ed117c2cdf6b19b5d42e39d393816700e5497065b1263c7d385

টাস্ক ১২৫ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

সত্যি বলতে যে জায়গায় যেই জিনিসটা সব থেকে বেশি আকর্ষণীয় তা না দেখে কিন্তু ফিরে আসা যাই না ,কারণ ফিরে আসলে ও মনে হবে,, না এতো কষ্ট করে এতো দূর গিয়ে কিছুই দেখিনি ,তবে দারুন একটা সময় উপভুগ করেছেন দাদা ,সত্যি দারুন একটা জায়গা ছিল।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Congratulations!

Your post has been rewarded by the Seven Team.

Support partner witnesses

@cotina
@bangla.witness
@xpilar.witness

We are the hope!

Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 2 years ago 

উফ মনে হলো দারুণ রোমঞ্চকর কোন সিনেমার গল্প পড়ছি, সত্যি আমি বোধহয় সেটা দেখতে পারবো না যা বর্ণনা শুনলাম! এতো ভোরে উঠা, তারপর শীতের প্রকোপ, অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ তাও আবার নানা প্রাণীর ভয়, বাবাগো কি একটা অবস্থা। তারপর আবার এই পরিবেশে একটা অজানা শংকা নিয়ে ঘন্টা খানেক দাঁড়িয়ে থাকা, মনে হচ্ছে পুরো যুদ্ধ জয়ের কাহিনী।

তবে হ্যা, এটা বলতে হবে, দৃশ্যগুলো যতটা সুন্দর ও মুগ্ধকর লাগছে তার জন্য এতোটুকু কষ্ট কোন কষ্টই না হয়তো। কারন ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট এতোটুকু কষ্ট করার আত্মবিশ্বাস ঠিক আছে। আপনাকে কিন্তু আজ বেশ স্মার্ট লাগছে দাদা। ধন্যবাদ

 2 years ago 

দাদা টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতার গল্প পড়ে তো আমি অবাক। অনেক টা কষ্টের মধ্যে এবং সংগ্রামের মাধ্যমে আবার ভাগ্যেও থাকতে হবে ।টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখতে সত্যি এই ধরনের ভাগ্যবতী হিসেবে আপনি দেখতে পেয়েছেন আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে অনেক ভালো লাগলো। পাহাড়ের সুন্দর বরফে ঢাকা দৃশ্যটি সত্যি মুগ্ধ করেছে।

 2 years ago 

টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখতে দারুন লাগছে ফটো তে। সামনে থেকে খালি চোখে দেখেছেন দাদা, তাহলে তো আরও সুন্দর ছিল বিষয়টা।এত চরাই উৎরাই পেরিয়ে একঘন্টা অপেক্ষা করে ৩ ধাপে সূর্য্য উঠতে দেখেলেন।সত্যি অসাধারণ ছিল মনে হয় অনুভূতি টা।যেখানে একমাস ও সূর্যের দেখা মেলেনা সেখানে একবার যেয়েই সূর্যের দেখা সত্যি ভাগ্যের ব্যপার।ধন্যবাদ দাদা অনেক সুন্দর ছিল ব্লগটি ।

 2 years ago 

আপনার বর্ণনা গুলো পড়ে আমি নিজেই হারিয়ে যাচ্ছিলাম টাইগার হিলের সূর্যোদয়ে।রাত তিনটায় ঘুম,শীত উপেক্ষা করে এক ঘন্টা বসে থাকলে যদি টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখা যায় তাহলেও সার্থক, আর যদি না দেখতে পাওয়া যায়,তাহলে ভাগ্য এর চেয়ে খারাপ কি হতে পারে।সব মিলিয়ে দারুন জিনিস দেখে এসেছেন।

 2 years ago 

সোনালী আভা ছড়িয়ে পড়লো ধবধবে সাদা বরফ চূড়ায় । প্রথমে ডিমের কুসুমের মতো রং, এর পরে কমলালেবুর মতো রং, সর্বশেষে সোনালী রং ধারণ করলো কাঞ্চনজঙ্ঘা ।

দাদা আপনার লেখাগুলো পড়ছিলাম আর কখন যে সেই রূপকথার রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। যখন বাস্তবতায় ফিরে এলাম তখন দেখি সবকিছুই ধোঁয়াশা🤪🤪। জানিনা কোনদিন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযোগ হবে কিনা তবে আপনার লেখাগুলো পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। আর এত কষ্ট করে সেখানে যাওয়ার পর যদি কাঙ্খিত দৃশ্যই দেখতে না পাওয়া যায় তাহলে সত্যিই অনেক খারাপ লাগে। দাদা আপনাদের ভাগ্য যেহেতু অনেক ভালো তাই তো প্রথমবারেই সফল হয়েছেন এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছেন। ফটোগ্রাফি গুলো দেখে খুবই ভালো লাগলো।

 2 years ago 

আপনি বাস্তবিক অর্থে একদম সঠিক কথা বলেছেন দাদা,স্লিপিং বুদ্ধ দেখা আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার। আপনাদের সবার ভাগ্য ভালো বললে কম বলা হবে কারণ আপনারা শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনই করেননি একদম সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দর্শন করেছেন তাও আবার একদম পরিষ্কার আকাশে, যা অনেক কপাল করেও মানুষ পায় না। আপনাদের প্রত্যেকের ছবি দেখে মনে হলো খুব সুন্দর ভাবে মজা করে আপনারা সময় কাটাচ্ছেন। আর প্রত্যেকটি ছবি অতুলনীয়।
সকলে ভালোভাবে থাকবেন, সাবধানে ঘুরবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 57226.98
ETH 2416.68
USDT 1.00
SBD 2.29