ভৌতিক গল্প : "মৃত্যুর কাছাকাছি" - পর্ব ০৪

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)


copyright free image source pixabay

তৃতীয় পর্বের পর


চার

পলকের জন্য সারা পৃথিবীটা একবার দুলে উঠলো যেন । একটা তীব্র আতঙ্কে চোখ বুজে ফেললো দুলাল ।মৃত্যুর হিমশীতল পরশ পাওয়া এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা । ক্ষনিকের জন্য দুলালের মনে পড়লো তার বৃদ্ধা মা, বৌ আর ৩ বছরের বাচ্চাটার কথা ।প্রিয়জনের সাথে আর বোধহয় ইহজন্মে দেখা হল না । করাল মৃত্যু তার সামনে দাঁড়িয়ে । পিশাচের হাতেই হয়তো তার করুণ মৃত্যু রয়েছে ।

পিশাচ নিতাই তাকে হিড় হিড় করে টেনে তুললো খালের জল থেকে । চোখ খুলে চাইলো দুলাল । নাহ, এ ভাবে সে হাল ছেড়ে দিয়ে কাপুরুষের মতো মরবে না । বাঁচতে তাকে হবেই, সে মারা গেলে তার পরিবারটা পুরো ভেসে যাবে ।একটা নিকৃষ্ট অশরীরী পিশাচের হাতে সে কিছুতেই মরবে না । যে করেই হোক বাঁচতে তাকে হবেই ।

পিশাচ এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত, শিকার তার কব্জায় । এখন রসিয়ে রসিয়ে প্রথমে দুলালের রক্ত খাবে, তারপরে খালের ধরে বসে হাড়মাস চিবিয়ে খাবে । দুলাল ইতিউতি চাইতে লাগলো, বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা এখন তার। গায়ের জোরে এই পিশাচের সাথে সে কিছুতেই এঁটে উঠতে পারবে না এটা সে বুঝতে পেরেছে । কৌশলে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে ।

পিশাচ লম্বা একটা হাঁ করলো । ঝকঝকে সাদা শ্বদন্ত চারটি বেরিয়ে পড়লো, লকলকে লাল জিহ্ববা বের করে আরো একবার ঠোঁটদুটি ভালো করে চেটে নিলো । এই বার দুলালের ঘাড়ে কামড় বসাবে ।

প্রাণ বাঁচানোর তীব্র তাগিদে শেষ মুহূর্তে দুলাল একটা অমানুষিক ঝটকা দিলো । পিশাচ অব্দি সেই ঝটকায় টাল সামলাতে পারলো না, দুলাল পিশাচের হাত হতে নিজের হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে এক লাফ দিয়ে লণ্ঠনটা দুই হাতে জড়িয়ে ধরলো ।

তীব্র আক্রোশে একটা জান্তব চিৎকার করে উঠলো পিশাচটা । যত শক্তিশালীই হোক না কেন আগুন ছোঁয়ার সাধ্যি নেই কোনো পিশাচের । আগুন যে ছুঁয়ে থাকে তাঁকেও ছোঁয়ার সাধ্যি নেই । আর এই জন্যই এতটা সময় ধরে দুলাল জীবন্ত আছে এখনো । দুলাল বাড়ি থেকে যখন বেরোয় তখন তার এক হাতে লণ্ঠনটা ছিল যেটা সে সব সময় বয়ে নিয়ে এসেছে । তাই রাস্তায় দুলালকে ধরতে পারেনি পিশাচটা । হাটখোলায় দুলাল যখন চালাঘরে লণ্ঠনটা নামিয়ে রাখে তখন একটা সুযোগ এসেছিলো; কিন্তু তা ছিল ক্ষনিকের । কারণ সাথে সাথে দুলাল আবার বিড়ি ধরায় । কিন্তু দুলাল যখন লণ্ঠনটা মাটিতে রেখে খালের জলে নামে তখনি পিশাচটা সুযোগ পেয়ে যায় তাকে ধরার ।

আর এখন দুলাল আবার সেই লণ্ঠনটাই জাপটে ধরে আছে । তাই পিশাচটার কাছে কোনো উপায় নেই তাকে স্পর্শ করার ।পিশাচটা অন্ধ আক্রোশে গোল হয়ে ঘুরতে লাগলো দুলালের চারিপাশে । ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে দু'গালের পাশ দিয়ে তার লালা ঝরছে, ক্ষনে ক্ষনে ক্রুদ্ধ গর্জন করছে ।

-"দেখি আজ তোকে আমার হাত হতে কে বাঁচায় ? তুই আমার শিকার । কারো সাধ্যি নেই তোকে আমার কবল থেকে মুক্ত করে ।"

দুলাল ছোটবেলা থেকেই ঘোরতর নাস্তিক । ঠাকুর-দেবতায় তার কোনোকালেই বিশ্বাস ছিল না । আজ সেই দুলাল একমনে ঈশ্বরকে ডেকে চলেছে, আর দু'চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে । যাঁকে মানে না তাঁকেই আজ ডেকে চলেছে এক মনে । আসলে মানুষ যখন কোনো ঘোরতর বিপদে পড়ে তখন একটা অবলম্বন খোঁজে, আর সেই অবলম্বন হলো যাঁর যাঁর ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী গড বা ঈশ্বর ।

বিপদের উপরে বিপদ, লণ্ঠনের শিখাটা হঠাৎ স্তিমিত হয়ে এলো কিছুটা । খুব সম্ভবত তেল ফুরিয়ে আসছে । এই মুহূর্তে লণ্ঠনের শিখা নিভে যাওয়ার অর্থ হলো দুলালের জীবনদীপ নিভে যাওয়া ।

দুলাল আরো ব্যাকুল হয়ে আরো শক্ত করে দু;হাতে আঁকড়ে ধরে রইলো লণ্ঠনটাকে ।

বাঁচতে থাকে হবেই হবে, যে ভাবেই হোক ।


[চলবে ....]

Sort:  
 3 years ago 

কাল গল্প লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । শেষ রাত্রে হঠাৎ ঘুম ভেঙে আর লিখিনি ওখানেই চতুর্থ পর্ব শেষ করে দিয়েছি । কাল সকালে ফাইনাল এপিসোড পাবলিশ করবো ।

 3 years ago 

টান টান উত্তেজনা। শেষ পর্ব টা দারুন হবে মনে হচ্ছে।

 3 years ago 

মানুষের উপস্থিত বুদ্ধি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এই গল্প থেকে বোঝা যাচ্ছে।বুদ্ধি করে দুলাল লণ্ঠন টা আঁকড়ে ধরেছে তাই ক্ষনিকের জন্য বাঁচতে পেরেছে।খুবই সুন্দর হচ্ছে দাদা।দাদা দুলালকে কিন্তু বাঁচতে হবে তার পরিবারের জন্য।দয়া করে লণ্ঠনের তেল ফুরিয়ে দিয়েন না,সবই আপনার হাতে।

 3 years ago 

এবার জমে গেছে পিশাচটার সাথে দুলালের লড়াই। কিন্তু কিভাবে পেরে উঠবে দুলাল যদি লুণ্ঠনটার আগুন নিভে যায়, যদি তেল ফুরিয়ে যায়? তাহলে এখন কি করবে দুলাল, তার বিকল্প কোন বুদ্ধি কি কাজে লাগাবে? নাকি বিড়ি ধরিয়ে সুখ টানে বুদ্ধি বের করার চেষ্টা করবে?

দেখা যাক লেখকের মাঝে দুলালের প্রতি কতটা মায়া কাজ করে এবং দুলালকে কিভাবে বাঁচিয়ে দেয়? পরের পর্বের অপেক্ষায় আমরা....

 3 years ago 

দুলাল তার বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে শেষমেষ কোন রকম প্রাণ ফিরে পেলো।সেই কথায় আছে বুদ্ধি থাকলে উপায় হয়।পৃথিবীতে বুদ্ধি মানুষের বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।বুদ্ধি ফুরিয়ে গেলে মানুষ মুল্যহীন হয়ে পড়ে।দাদা আপনি অসাধারণ একটি গল্প আমাদের মাঝে উপহার দিয়েছেন।

বিপদের উপরে বিপদ, লণ্ঠনের শিখাটা হঠাৎ স্তিমিত হয়ে এলো কিছুটা । খুব সম্ভবত তেল ফুরিয়ে আসছে । এই মুহূর্তে লণ্ঠনের শিখা নিভে যাওয়ার অর্থ হলো দুলালের জীবনদীপ নিভে যাওয়া ।

দেখি দুলাল এইবার বাঁচতে কি ধরনের বুদ্ধি কাজে লাগায়।

কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমেই ঘোর বিপদ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।যেটা দুলাল মিয়ার মধ্যে সম্পূর্ণ ফুটে উঠেছে।তার কঠিন মনোবল তাকে বাঁচতেই হবে।সে মরলেও লড়াই করেই মরবে।সে কাপুরুষের পরিচয় সে কখনোই দিবেনা।দুলাল মিয়া নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টায় পিচাশের সাথে বিশাল যুদ্ধ করতেছে তার পরিবারের কথা চিন্তা করেই।এই পর্বে দুলাল মিয়ার একটি সংগ্রামী জীবন এর পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে।যা তাকে বেচেঁ থাকার তীব্র শক্তি যুগিয়েছে।

শুভ কামনা দাদা সুন্দর চলছে চলবে👌💖

 3 years ago 

আমার মনের তীব্র বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত সে বাঁচবেই, যেভাবেই হোক। কারন না হলে তার পরিবার ভেসে যাবে। সে নাস্তিক হলেও প্রান পনে ঈশ্বরকে ডাকছে। ঈশ্বর তাকে সহযোগিতা করবেন অবশ্যই। অপেক্ষায় রইলাম কি ঘটে জানার জন্য।

আমার মনে হচ্ছে দুলাল নিশ্চয়ই বেঁচে যাবে। তবে বিপদে পড়লে যে মানুষ তার সৃষ্টিকর্তাকে স্বরণ করে এটা কিন্তু বাস্তব। যাই হোক গল্পটা খুবই চমৎকার হয়ে উঠেছে দাদা।

পরের পাঠের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। 💗

দাদা অনেক সুন্দর লিখেছেন.... চতুর্থ পর্বের অপেক্ষা করলাম❤️❤️❤️

 3 years ago (edited)

দুলাল কি সত্যিই বাঁচতে পারবে।আগুনের বুদ্ধিটা তার ছিল বিধায় আপাতত বেঁচে আছে।তবে লন্ঠনটার তেল ফুরিয়ে গেলেই শেষ।তবে একটা বিষয় খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করা গেল-তা হল বিপদে পড়লে রামনাম।নাস্তিকের মুখে ধর্মের বাণী। খুবই উত্তেজনা পূর্ণ একটা অবস্থা বিরাজ করছে।

 3 years ago (edited)

আজ সেই দুলাল একমনে ঈশ্বরকে ডেকে চলেছে, আর দু'চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।

সৃষ্টিকর্তা যে কত মহান, কত উদার সেটি দুলাল জানেনা, এতদিন দুলাল ভুল করে এসেছিল আর যখন সে একমনে সৃষ্টিকর্তাকে ডেকেছে তখন অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা তার দিকে ফিরে তাকাবে, সৃষ্টিকর্তা তো আর দুলাল এর মত নয়।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.17
JST 0.033
BTC 64258.81
ETH 2772.25
USDT 1.00
SBD 2.65