"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩ || আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক
- স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি
- ২৮, সেপ্টেম্বর ,২০২২
- বুধবার
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি " স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি " গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
গল্প - স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি
লেখাপড়া জীবনের স্বর্ণযুগ হল স্কুল জীবন। স্কুল জীবনের বন্ধুত্ব জীবনের সেরা বন্ধুত্ব। যেটা জীবনের শেষ পাতা পর্যন্ত রয়ে যায় অনেক স্মৃতি। প্রতিটা মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা থাকে স্কুল লাইফে যেটা কখনো ভুলবার নয়। বন্ধুদের সাথে একত্রিত হলেই সেই স্মৃতিগুলো আবার ভেসে ওঠে আবার সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। আমার কাছেও মাঝে মাঝে মনে হয় আবার যদি স্কুল জীবনে ফিরে যেতে পারতাম, সেই সোনালী দিনগুলো ফিরে পেতাম। তাহলে বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়ে খুবই মজা পাইতাম। যে মজাটাই এখন আর তেমন পাওয়া হয় না। যাইহোক, এখন মূল অনুভূতির কথা শেয়ার করি। স্কুলের সকল স্যারের সাথে খুবই মধুর সম্পর্ক ছিল। যখন ক্লাস নাইনে নতুন ভর্তি হই তখন আমি কোন সাবজেক্ট নেব সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না। তারপর আমার এক প্রিয় স্যার ক্লাস এইটে বিজ্ঞান ক্লাস নিতেন তিনিই সাইন্স নিতে বলেন। ক্লাস নাইনে অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষায় প্রতিটা সাবজেক্টে অনেক ভালো রেজাল্ট করি বিশেষ করে জীব বিজ্ঞানে আশি প্লাস মার্ক উঠে। আমাদের জীববিজ্ঞান স্যার তিনি খুবই কড়া একজন মানুষ ছিলেন। প্রতিদিন পড়া ঠিকমত করতে হবে এবং বইয়ের প্রতিটা লাইন খুব সুন্দর করে মুখস্ত করে ক্লাসে বলতে হবে। তার ক্লাসে খুব মনোযোগ সহকারে ক্লাস করতাম তার পড়াটা প্রতিদিনই কমপ্লিট করে আসতাম। কিন্তু অনেকেই এই মুখস্ত বিদ্যাকে অস্বস্তি মনে করত।
আমাদের স্কুলে এক খন্ডকালীন টিচার ছিল তিনি একটু ইয়াং আমাদের বিভিন্নভাবে অনুপ্রেরণা দিত উৎসাহ প্রদান করত। এদিকে জীব বিজ্ঞান স্যারের চাকরি প্রায় শেষের দিকে আর মাত্র এক বছর চাকরি আছে। তার মধ্যেই নতুন এক জীববিজ্ঞান স্যার স্কুলে জয়েন করেন। আমরা নিজেদের পড়া ফাঁকি দেয়ার জন্য নতুন স্যারকে আমাদের ক্লাস নেয়ার জন্য বলি কিন্তু আগের বিজ্ঞান স্যার থাকা সত্ত্বে এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তবুও আমরা একটা পরিকল্পনায় লিপ্ত হই কিভাবে স্যারকে ক্লাস থেকে বাদ দেয়া যায়। আমরা প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলি এই বিষয় নিয়ে তিনি ও রাজি হননি কারণ আগের জীববিজ্ঞান স্যার এর চাকরি বেশিদিন নেই। আমাদের মাথায় গেঁথে গিয়েছে আমরা স্যারের ক্লাস করব না যেভাবেই হোক, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম স্যার আমাদের ক্লাস নিতে আসলে আমরা স্যারের সালাম জানিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো। আমাদের চতুর্থ পিওডে জীব বিজ্ঞান ছিল স্যার যখন ক্লাস নিতে আসে তখন আমরা স্যারকে সালাম দেই তারপর দাঁড়িয়ে থাকি স্যার বসতে বললে আমরা বসতে অস্বীকৃতি জানাই। স্যার আমাদের এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যায় । আমরা স্যারকে বলি আপনার ক্লাস আমরা করতে চাচ্ছি না স্যার হতভম্ব হয়ে বলেন কেন ? আমরা বলি আপনার ক্লাস আমাদের ভালো লাগেনা আমরা নতুন স্যারের ক্লাস করব। স্যার আমাদের কথা শুনে অনেক কষ্ট পায় সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি। স্কুল জীবনে পা রাখার পর থেকেই স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম অনেক ভালোবাসতো আমাকে, কিন্তু বন্ধুদের একীভূত হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে।
স্যার অনেক দুঃখ প্রকাশ করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায় অনেক বন্ধুই তখন তাদের ভুল বুঝতে পারে। এরপর নতুন স্যার আমাদের ক্লাস নিতে আসে তার সাথে পরিচয় হওয়ার পরপরই বন্ধুসুলভ আচরণ করতে থাকে ।অনেক ধরনের হাসি ঠাট্টা তামাশা মেতে উঠি ক্লাস নিতে আসলে তার সাথে আড্ডা মেরেই অর্ধেক সময় পার করে দিই। যে স্যারকে আমরা অপমানিত করে বিদায় জানাই সেই স্যার আমাদের উপর অনেকটা কষ্ট পায় দেখা-সাক্ষাৎ হলেও তেমন একটা কথা বলে না। আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছিল। আমাদের ভুলটা আমরা বুঝতে পারি আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম স্যারের কাছ গিয়ে ক্ষমা চাইবো স্কুল টাইমে হয়তো স্যার আমাদের কোনভাবেই ক্ষমা করবেন না আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম স্যারের বাড়ি গিয়ে স্যারের পা ধরে ক্ষমা চাইবো। সবাই স্যারের বাড়ি গিয়ে স্যারের কাছ ক্ষমা চাইতে যাই কিন্তু স্যার আমাদের দেখেই আমাদেরকে চলে যেতে বলে। আমরা তবুও স্যারের বাড়িতে ঢুকে ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাই। অনেকক্ষণ স্যারের সাথে কথা বলার পর স্যার কোনোভাবেই মন থেকে আমাদের ক্ষমা করল না সেটা আমরা বুঝতে পারলাম বলল যাও শুধু এতোটুকুই । তারপর আমাদের এসএসসি পরীক্ষার সময় চলে আসে এদিকে টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। টেস্ট পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট না করলে অনেকেরই এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে। প্রায় সবগুলো পরীক্ষা আমার ভালো হয়েছিল কিন্তু জীববিজ্ঞান সাবজেক্টে পরীক্ষা এতটাই খারাপ হয়েছিল যেটা বলতেই লজ্জা পেলাম। যে সাবজেক্টে ক্লাস নাইনে এ প্লাস পেয়েছিলাম, সেই সাবজেক্টে টেস্ট পরীক্ষায় আমার ফেল আসে। তারপর থেকে স্যারের কথা মনে পড়ছিল হয়তো স্যারের দুঃখটা আমাদের জীবনে অভিশাপ হিসেবে নেমে এসেছে সবারই জীববিজ্ঞানে এতটাই খারাপ রেজাল্ট হয়েছিল বলে প্রকাশ করা যাবে না।
এসএসসি বোর্ড পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান বাদে সব সাবজেক্টে অনেক ভালো রেজাল্ট হয়। তারপর থেকে স্যারের কথা মনে পড়ে হয়তো জীবনে বড় একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জীবনে অভিশাপ নেমে এসেছে। এইচ এস সি পরীক্ষাতেও জীব বিজ্ঞানে অনেক লেখাপড়া করার পরেও ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি। লেখাপড়া জীবনে অনেক গল্প শুনেছি স্যারের সাথে খারাপ ব্যবহার করলে জীবন ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। এটা আমার জীবনের একটি বাস্তব উদাহরণ সত্যিই এটা প্রমাণ করে দিল। তারপর থেকে জীববিজ্ঞান সাবজেক্টে কোনদিন ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি। জীবনের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। যেটা কখনো ভুলবার নয় এই অনুভূতিটা এখনো কষ্ট দেয়। জীবনের কিছু ভুল সারা জীবনের কান্না হয়ে দাঁড়ায়। এই অনুভূতি আমি কখনোই ভুলতে পারিনা সত্যিই এই অনুভূতিটা আমাকে বারবার আঘাত করে। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি মোঃ রিপন মাহমুদ। আমার স্টীমিট একাউন্ট@ripon40। আমি একজন বাঙালি আর আমি বাঙালী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি। আমি স্টীমিটকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি পড়তে, লিখতে, ব্লগিং,ফটোগ্রাফি,মিউজিক,রেসিপি ডাই আমার অনেক পছন্দের। আমি ঘুরতে অনেক ভালোবাসি। আমার সবচেয়ে বড় গুণ হলো কারোর উপর রাগ করলে সহজেই ভুলে যাই।
আপনার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনি খুব সুন্দর করে তিক্ত অভিজ্ঞতা অনুভূতি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। এত সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
আপনার কাছে ভালো লেগেছে এটাই কাম্য ছিল ধন্যবাদ।
জীবনের কিছু ভুল আছে যেগুলো বাস্তবতায় পরীক্ষিত হতে হয় যেটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে ভাই।
সত্যি ভাইয়া কোন শিক্ষক চায় না ছাএছাএীকে অভিশাপ দিতে।আপনার পোস্ট পড়ে যতোটুকু বুঝতে পেরেছি যে শিক্ষকটা আপনাদের ব্যবহারে এতো কষ্ট পেয়েছে যে নিজের অজান্তেই দোয়া লেগেছে। শুধুমাত্র মুখস্থ করতে হতো বলে সে সময়ে আপনারা বিশেষ করে আপনি স্যারের সাথে যে ব্যবহার করেছেন।তার জন্য মনে হচ্ছে আপনি জীববিজ্ঞানে ৮০ মাক পেয়েও ফেল করেছেন। আসলে ভাইয়া এমন কিছু দুষ্টমি আছে যা আমাদের জীবনে দুঃখ বয়ে আনে। ধন্যবাদ আপনাকে
হ্যাঁ স্যার অনেক কষ্ট পেয়েছিল যেটা আমরা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলাম। একটি ভুলের কারণে অনেক বড় সর্বনাশ জীবনে নেমে এসেছিল সেটা আগে বুঝতে পারিনি।
এজন্য স্যার দের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করতে নেই।অনেক খারাপ লাগল,আপনারা অল্পের জন্য মাধ্যমিকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেলেন না।ধন্যবাদ আপনার তিক্ত অনুভূতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ ভাই আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছে আসলে কিছু ভুল জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন আসলে ছোট্ট সময়ের এই ভুলটুকু জীবনে অনেক দুঃসময় বয়ে আনে।
আমি মনে করি স্যাররা যা করে তা আমাদের ভালোর জন্যই করে। কোন কিছুতে রাগ করে স্যারদের সাথে খারাপ আচরণ করা একদম উচিত নয়। আর এটা একদিন না একদিন হিতে বিপরীত হয়। দেখুন না তার প্রমাণস্বরূপ যে সাবজেক্টে আপনি এ প্লাস পেতেন সেই সাবজেক্ট খারাপ করলেন। বিষয়টি আসলেই অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা। প্রতিযোগিতায় আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন একদিন না একদিন তার বিপরীত হবেই যেটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে।
শিক্ষক হচ্ছে আমাদের মা বাবার মত। ছাত্র জীবনে বাড়ি থেকে শিক্ষকদের কাছেই বেশি সময় অতিবাহিত করি আমরা।। সব শিক্ষক মনের মত না হলেও সবারই কিছু প্রিয় শিক্ষক থাকে।। শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করা মানে মা বাবার সাথে বেয়াদবি করার শামীম।। যদি কেউ শিক্ষকের মনে আঘাত দিয়ে কথা বলে বেয়াদবি করে তাহলে মন থেকে বদ দোয়াটা আশাই স্বাভাবিক।। মা বাবা তেমন বদদোয়া দিলে কাজে লাগে শিক্ষকও ঠিক তেমনি বদদোয়া দিলে কিন্তু সেটা কাজে লেগে যাবে।। আপনার গল্প থেকে অনেক শিক্ষনীয় বিষয় বুঝতে পারলাম ধন্যবাদ আপনাকে।।।
হ্যাঁ ভাই সেটাই দেখছি কাজে লেগেছে আমাদের মধ্যে কেউই ভালো অবস্থানে যেতে পারেনি এটা খুবই দুর্ভাগ্য।
আপনি খুব সুন্দর করে আপনার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি লিখেছেন। আপনার পোস্টটি পড়ে বুঝতে পারলাম আপনি জীববিজ্ঞানে অনেক ভাল ছিলেন। সঙ্গ দোষের কারণে আপনি স্যারের সাথে ব্যবহার খারাপ করলে বা তার মনে কষ্ট লাগলো। শিক্ষক কখনো মুখ দিয়ে অভিশাপ দেয় না। অন্তর থেকে লেগে যায়। পরবর্তী পরীক্ষায় আপনি জীববিজ্ঞানে পাস করতে পারলাম না। প্রথমে যা ভালো লাগলো করতে পারে কিন্তু পরে একটু মন খারাপ হয়ে গেলো । যাইহোক আপনার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতাটি খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।
বন্ধুদের চিন্তা চেতনা এবং এই একটা ভুল যেটা জীবনকে অনেকটা ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে এই তিক্ততা কখনোই ভুলবার নয়।