জিলাপি।steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আসসালামুআলাইকুম বন্ধুরা। কেমন আছেন সবাই? আজ হঠাৎ জিলাপি খেতে মন চাচ্ছে। জিলাপি বাঙালি খুবই পছন্দ করে । হয়তো বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করে আর অল্প মানুষ অপছন্দ করে। আমি মিষ্টি খেতে তেমন একটা পছন্দ করি না কিন্তু জিলাপি খেতে আমার বেশ ভালই লাগে। আমি বেশি পছন্দ করি ঝাল খেতে। যাহোক জিলাপি নিয়ে ছোটবেলার কিছু মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে এলাম।

তখন আমি ক্লাস থ্রি কিংবা ফোরে পড়ি বা ওরকমই একটা সময় হবে। অনেক ছোট ছিলাম যাই হোক। আমার বাড়ির পাশে এক চাচা আছে। নাম হচ্ছে রহিম। উনি বিভিন্ন সিজনে বিভিন্ন রকম ব্যবসা করতেন। যেমন যখন বতরের সময় আসতো, অর্থাৎ কৃষকরা জমি থেকে ধান কেটে শুকিয়ে সিদ্ধ করে চাউল বানিয়ে ঘরে তুলতে শুরু করেছে ওই সময় ওই রহিম চাচা জিলাপি বানিয়ে পাড়ায়-পাড়ায় বিক্রি করে বেড়াতো ধান, চাউল আর টাকার বিনিময়ে । আমাদের প্রতিবছরই ধান চাষ করত। আমাদের বাড়ির সাথে আমাদের যে জমিটা ছিল ওইখানে আমার আম্মু এবং আমার সব কাকিরা দেখতাম একদম সুন্দর সমান করে মাটি লেপে সেখানে ধান সেদ্ধ করার পর শুকাতে দিতো ।

pexels-photo-7242659.jpeg
Source

ধান কেটে ঘরে উঠানোর মুহূর্তগুলো উৎসবের মতন মনে হতো আমাদের কাছে। আর আমার জন্য একটা পজেটিভ ব্যাপার ছিল যেদিন জিলাপি খাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে টাকা দিতো না সেদিন আমি ওই শুকাতে দেওয়া ধান থেকে ধান নিয়ে গিয়ে জিলাপি কিনে নিয়ে আসতাম। গরম গরম জিলাপি নিয়ে যখন রাস্তা দিয়ে যেত আমি আর ঘরে স্থির থাকতে পারতাম না। আমার যেকোনো মূল্যে জিলাপি খেতেই হবে। যখন জিলাপি কিনে মুখে দিতাম তখন কি যে শান্তি লাগতো।

এছাড়াও বাড়ির আশেপাশের যেসব মেলা হতো সেই মেলাতে যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য গুলোর মধ্যে একটা থাকতো গরম জিলাপি খাওয়া। বাড়ির পাশে নৌকা বাইচের মেলা হলে আমি প্রতিদিনই বায়না ধরতাম জিলাপি খাওয়ার টাকা নিতে। আর যখন দুর্গাপূজার সময় আসত তখন আমি নানুদের বাড়িতে চলে যেতাম ছুটি পেলে। নানু বাড়ির পাশেই মেলা হতো বাজারে। আমার প্রথম কাজ ছিলো মেলায় গিয়ে এদিক সেদিক না দেখে জিলাপির দোকানে বসে যাওয়া আর গরম গরম জিলাপি খাওয়া। আসলে মিষ্টি আমি বেশি কখনোই খেতে পারতাম না। মিষ্টির মধ্যে জিলাপি টা একটু খাই বেশি কিন্তু আবার আহামরি বেশিও না।

আমি যেহেতু ঝাল খেতে বেশি পছন্দ করতাম আমি বাজারে গিয়ে মাঝেমধ্যেই সিঙ্গারা জিলাপি একসাথে কিনতাম। সিঙ্গারা জিলাপি একসাথে খেতে বেশ ভালোই লাগে। যারা খাননি একদিন ট্রাই করে দেখতে পারেন। ভালোই লাগে ঝাল মিষ্টি একসাথে খেতে। আবার যখন হালখাতার সময় আসত তখন ও দোকান থেকে জিলাপি খাওয়ার একটা সুযোগ আসতো। আমার ছোট নানার বড় একটা হার্ডওয়ারের দোকান ছিল বাজারে। নানার দোকানে যখন হালখাতা হতো তখন নানু বাড়িতে গিয়ে প্রচুর জিলাপি খেতাম।

pexels-photo-7566499.jpeg
Source

জিলাপির উৎপত্তিস্থল কিন্তু ভারত । বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্থানে তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এই মিষ্টান্ন খাবার টি। বিশেষ করে রমজান মাসে মুসলিমদের ইফতারে জিলাপির জনপ্রিয়তা বিশাল। ছোলা মুড়ি পেঁয়াজু সিঙ্গারা আর সাথে গরম গরম জিলাপি থাকলে ইফতারি টা একটু বেশি জমে ওঠে। এছাড়া বাঙ্গালীদের অতিথি আপ্যায়নেও জিলাপি পরিবেশন করতে দেখা যায়। কোন আত্মীয়ের বাড়ি গেলে গরম গরম জিলাপি দিলে সত্যিই আমি খুশি হয়ে যাব। তবে আমার গুড়ের জিলাপি ভালোলাগেনা । আমার চিনির জিলাপি ভালো লাগে।

পোস্টের শেষভাগে এসে আমার জিলাপি খাওয়ার আরো একটি দারুণ স্মৃতি মনে পরল। ছোটবেলায় মসজিদে যেতাম আমরা দলবেঁধে। মসজিদে জুম্মার নামাজ শেষে জিলাপি দেয়া হতো। আমরা সবাই বেশি বেশি নেয়ার চেষ্টা করতাম । একটা লোভ থাকতো সবসময় যে নামাজ শেষে জিলাপি দিবে। ছোটবেলায় নামাজ শেষে সিরনি জিলাপি খাওয়া নিয়ে বেশ মজা করতাম। আমরা ছোটরা ভীষণ আনন্দ পেতাম। এইতো গত দু-তিন বছর আগের একটি ঘটনা। একদিন শুক্রবারে নামাজ শেষ করে বাসায় ফিরছি আমরা তিন বন্ধু। তো ফেরার সময় দেখলাম মসজিদ থেকে যারা বের হচ্ছে তাদের হাতে জিলাপি। তো আমি আর আমার এক বন্ধু আবার মসজিদে যাব জিলাপি আনতে বলে স্থির করলাম। কিন্তু আমার আরেকটি বন্ধু সে যেতে রাজি না। আমরা দুজনেই গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি জিলাপি দেয়া শেষ।

ফিরে আসতে হলো হতাশা নিয়ে। আর এদিকে যে বন্ধুকে রেখে গিয়েছিলাম তার কাছে যাতে অপমানিত হতে না হয় এজন্য দূর থেকে আঙ্গুল চেটে অভিনয় করতে করতে আসতেছিলাম। কিন্তু কাছে আসার পর ও বুঝে ফেলছিল। হাহাহাহা।। আমার ঐ বন্ধু এই গল্প এখনো করে বেড়ায়। কেমনডা লাগে কন?? যাইহোক মজাই ছিল ব্যাপারটা। আজ তাহলে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে ইনশা আল্লাহ্। আল্লাহ্ হাফেজ।



JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abbVD.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 

ভাই আজকে আপনার পোষ্টটি পড়ে সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমিও কৃষক পরিবারের সন্তান।আর ছোটবেলা যখন ধান কাটা হত তখন অনেক আনন্দ হতো। কারণ ধান দিয়েই বরফ এবং জিলাপি কেনা হতো।অনেকেই তখন জিলাপি বিক্রি করতে আসত। তাদের থেকে আমরা জিলাপি কিনতাম। আসলে রহিম চাচার জিলাপি বিক্রি করার এই দৃশ্যটি আমার ছোটবেলার সেই দিনের কথা মনে করিয়ে দিল। আসলে ছোটবেলা টাকা দিয়ে তখন আর জেলাপি বা বরফ কিনতাম না, ভাই আপনার পোস্টটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। ছোটবেলার সেই দিনের কথা মনে হয়ে গেল।

 2 years ago 

সত্যিই ভাই দিনগুলো অনেক মজার ছিল।

 2 years ago 

কিনে খাওয়ার চেয়ে শুক্রবারে জুম্মার নামাজ শেষে তবারকের জিলাপিটাই আমার কাছে বেশি ভালো লাগে।
ভাই-ব্রাদারদেরই কেউ না কেউ জিলাপি দেয়ার দায়িত্বে থাকে।সবাই এক প্যাকেট পাইলে আমরে নেবো ২/৩ টা😁।
জিলাপি আমার খুব পছন্দের।ইফতারে বুড বুন্দার সাথে মিশে খেতে আরো ভালো লাগে।

আপনার গল্প জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া।শুভ কামনা রইলো।

 2 years ago 

ছোটবেলায় ধানের সিজন আসলে আমরাও গ্রামের বাড়িতে যেতাম। তখন বাড়িতে ধান উঠানো হতো। আপনার জিলাপির গল্প পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম মসজিদের জিলাপি আপনি মিস করেছেন। শেষে এসে দেখলাম যে না মসজিদের জিলাপির মজার একটি গল্প শেয়ার করেছেন। মসজিদের মিলাদের জিলাপি গুলো খেতে বেশ ভালই লাগতো। তাছাড়া সিঙ্গারা এবং জিলাপি একসঙ্গে খেয়েছি খুব মজা লাগে খেতে। এখন তো আপনার জিলাপির গল্প পড়ছিলাম আর খাওয়ার জন্য কেমন লাগছিল।

 2 years ago 

জিলাপি নিয়ে লেখা আপনার পোষ্টটি সত্যি অনেক সুন্দর ছিল ৷বলতে গেলে বাস্তবকে তুলে ধরেছেন ৷গ্রামে এখনও ধান কাটার পর বাড়ি জিলাপি ব্রিক্রি করে ৷আবার গ্রামের মেলাতেও গুড়ের জিলাপি কি যে স্বাদ আহা!!!
তবে ছোট্ট বেলা কমবেশি সবাই বেশি জিলাপি খেতাম ৷এটা নতুন কিছু নয় ৷

 2 years ago (edited)

এমন এক রেসিপি শেয়ার করলেন ভাইয়া যার জন্য ৬ দিন অপেক্ষা করি , কারন শুক্রবার মানেই মসজিদে মসজিদে জিলাপির সমাহার , আরও একটু ছোট থাকতে এলাকার ২\৩ টা মসজিদে খোজ নিয়ে দেখতাম কোন মসজিদের জামাত আগে হয় আর কোনটার পরে সেই অনুযায়ী সব মসজিদেই হাজির হতাম জিলাপির জন্য , আমার কাছে এখনো জিলাপি অনেক ভাল লাগে ভাইয়া । আর রমজান মাসে জিলাপি নাহ হলে তো আমার চলেই নাহ , ইফতারে হেড ম্যানু আমি জিলাপিকেই বুঝি , আপনার গল্পটা শুনে ভালই লাগল ভাইয়া। মজাদার খাবার এর রেসিপিটা শেয়ার করার জন্য এবং আপনার কিছু মুহুর্তের কাহিনি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

 2 years ago 

ভাইয়া আমারও খুব পছন্দের খাবার জিলাপি। সময় পেলে আমিও খেতে যায় । মিষ্টি জাতীয় খাবারের ভিতর জিলাপি অন্যতম। জিলাপি হলে আমার আর কিছু লাগে না। একসাথে দুই তিনটা খেতে পারি। আপনি ঠিকই বলেছেন বেশি মিষ্টি খাওয়া যায় না ।জিলাপি খাওয়ার পর আমি আবার ঝাল কিছু খাই ।না হলে মুখের ভিতর ভালো লাগেনা ।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 
জিলাপি আমারও ভীষণ পছন্দ। কিন্তু কখনও ঝাল খাবার বা সিঙ্গারা দিয়ে খাওয়া হয়নি।একদিন খেয়ে দেখবো।দু-তিন বছর আগে জিলাপি নিয়ে গল্পটা হাসির ছিল ভাই।অবশ্য আঙুল কাটার পরেও বন্ধুর কাছে ধরা পরে যাওয়ার কারনে।এটা ঠিক ভাইয়া জুম্মার নামাজের পর জিলাপি ছাড়া যেন কেমন লাগে। আগে আমরা জুম্মার নামাজ পড়ার শুরুতে লক্ষ্য করতাম কারো মিলাদ বা দোয়া আছে কিনা। না হলে আরেক মসজিদে নামাজের জন্য চলে যেতাম।তার একটাই কারন জিলাপি।আপনার থেকে এই জিলাপির ইতিহাস ও এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম।আমাদের বাজারে অনেকগুলো মিষ্টির দোকান আছে। তারা প্রায়ই বিকেল জিলাপি ভাজে।এই জিলাপি গরম গরম খাওয়ার জন্য এখনও যখন বাসায় আগে যাই।তাড়াতাড়ি বাজারে চলে যাই।কারন গরম জিলাপি খাওয়ার স্বাদই আলাদা। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া,এত সুন্দর করে জিলাপি নিয়ে আপনার মনের অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
 2 years ago 

জিলাপি খাবারটা আমার কাছেও বেশ সুন্দর লাগে। সিঙ্গারা এবং জিলাপি অবশ্যই একদিন একসাথে খেয়ে দেখব কেমন লাগে। আপনার গল্পের শেষে এসে বেশ মজাই পেলাম যে তৃতীয় বন্ধুর কাছে অপমানিত না হওয়ার জন্য আঙ্গুল চাটার বুদ্ধিটা বেশ দারুন লেগেছে। চমৎকার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আমার বাংলা ব্লগে আপনার ব্লগিং জার্নি শুভ হোক এটাই কাম্য।

 2 years ago 

হায় হায় কি পরিমাণ বেইজ্জতি হলেন।😂😂হাসতে হাসতে শেষ,ধরা পরলে কি কষ্ট হয় বুঝেন তাহলে এবার।🤪🤪

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59631.75
ETH 2622.60
USDT 1.00
SBD 2.41