একটি দুর্দান্ত বিকেল [পদ্মার চর ]

in আমার বাংলা ব্লগ4 years ago (edited)

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি সবসময় আশা করি সবাই ভালো থাকুন আর সুস্থ থাকুন। কমিউনিটির প্রত্যেকটা মেম্বার যখন ভালো থাকবে তখন কমিউনিটি বেশি উজ্জীবিত হয়ে উঠবে। আল্লাহ্ তায়লার অশেষ রহমতে আমিও অনেক ভালো আছি। আর এজন্য আপনাদের সাথে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করতে চলে এলাম। অনেকদিন হলো আপনাদের সাথে লাইফস্টাইল রিলেটেড কোন পোস্ট শেয়ার করা হয় না। আজ সুন্দর সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফির সাথে আমার ছোট্ট একটি ভ্রমণ কাহিনী আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক।

ফটোগ্রাফি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। অনেকদিন হলো ক্যামেরা নিয়ে বেরোনো হয়না। তাই চিন্তা করলাম শুধু ছবি তোলার উদ্দেশ্যে একদিন বাইরে কোথাও যেতে হবে। সাঙ্গ-পাঙ্গদের সবাইকে আগেই বলে রাখলাম। চিন্তা করলাম চরের দিকে যাব। এই সময়ে চরের পরিবেশ দুর্দান্ত থাকে। এই সময়টায় নদীর পানি প্রায় পুরোটাই শুকিয়ে যায়। বিভিন্ন প্রকার শীতকালীন শাকসবজি চাষ করা হয়। বেশ দারুন একটা পরিবেশ। যাই হোক আমরা গত পরশুদিন গিয়েছিলাম চরে। বিকেল তিনটার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে সবাই একসাথে চরের দিকে রওনা দিয়েছিলাম । অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে এমন একটা ছোট নদী পাড় দিয়ে অন্য প্রান্তে পৌঁছে গেলাম খুব অল্প সময়ের মধ্যেই। সামনেই ছিল বিশাল বড় একটা কলা বাগান। ওটার মধ্যে দিয়েই হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখতে পেলাম একটি গাজর ক্ষেত । আমাদের সাথে একটি ছেলে ছিল। এই জমিটা ওদেরই। ওরা এখানে গাজর চাষ করেছে আর গাজরের জমির চারপাশ দিয়ে বেগুনের চারা লাগিয়ে দিয়েছে।

1638601412457-01.jpeg

1638601461366-01.jpeg

এরপর ওখান থেকে সোজা চলে গেলাম পরের নদীটির পারে। ওখানে গিয়ে আমি তো পুরাই অবাক। অনেকদিন যাবত এখানে আসা হয়নি। লাস্ট যখন এসেছিলাম তখন এই নদীটি নৌকা দিয়ে পার হয়ে ছিলাম। অনেক পানি ছিল তখন।

1638601519503-01.jpeg

এরপর একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে নদীটি পার হলাম। ওই পাশ দিয়েই সবাই পারাপার হয়। হালকা একটু পানি আছে, কিন্তু সমস্যা হয় না।
1638601605946-01.jpeg

1638601630154-01.jpeg

এরপর দুইনাম্বার নদীটিও পার দিয়ে ফেললাম আমরা। আমাদের এখন মেইন উদ্দেশ্য ছিল আখের খুলায় যাওয়ার। যেখানে আখ থেকে রস, রস থেকে গুর তৈরি করা হয় সেটাকে আমাদের এদিকে খুলা বলে। অন্যান্য জায়গায় অন্য কিছু বলতে পারে। তো আমরা যে জায়গাটাতে যেতে চাচ্ছিলাম ওটা অনেক দূরে ছিল। এজন্য অনেক সময় হাঁটতে হয়েছিল। আমরা যাওয়ার সময় অনেক সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখেছিলাম। সবেমাত্র সরিষা বপন করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু জমিতে কিছুদিন আগেই সরিষা বপন করা হয়েছিল। সেগুলোতে অল্পস্বল্প ফুল এসে গিয়েছে। সময়টা ছিল বিকেল। সূর্যের পর্যাপ্ত আলো তখনও ছিল। মাঠের দৃশ্য গুলো অসাধারণ লাগছিল। সবচেয়ে যেই জিনিসটা আমার কাছে ভাল লাগছিল সেটি হচ্ছে সরিষা ফুল আর পিয়াজের কালির গন্ধ। হালকা বাতাসে দুটির গন্ধ যখন নাকে আসছিল খুবই সুন্দর একটা ফিল পাচ্ছিলাম। যেসব মাঠে প্রচুর সরিষা চাষ করা হয় ওইসব মাঠে এই গন্ধটা খুবই পরিচিত।

1638601726508-01.jpeg

1638601756179-01.jpeg

অনেকক্ষণ হাঁটার পর আমরা সেই কাঙ্খিত খুলায় পৌঁছে গেলাম। আমার এক ছোট ভাই ওই খুলাতেই ছিল। আমি ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম ওটা ওদেরই। ওখানে গিয়ে দেখলাম রস জ্বালানো হচ্ছে। পাশেই অনেকগুলো কুলা রেখে দেয়া হয়েছে যেগুলো গরম গুড়ে ভর্তি।

1638601781877-01.jpeg

1638601812069-01.jpeg

1638601867391-01.jpeg

আমরা ওখানে ভালোই সময় কাটাচ্ছিলাম। কিছু ছোট ছোট ছেলেরা আখ থেকে আখের খোসা ছাড়ানোর কাজ করছিল। দুজন আখের রস জ্বালাচ্ছিল। আর দুজন আখের ডংলা গুলো রোদে শুকোতে দিচ্ছিল। আর শুকনো ডংলা গুলো নিয়ে রস জ্বালানোর ওইখানে পৌঁছে দিচ্ছিল। আমরা যে সময় গিয়েছিলাম ওই সময়টাতে আখ থেকে রস বের করার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। কারণ আজকের দিনের জন্য পর্যাপ্ত রস বের করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার মেশিন স্টার্ট দেয় আখ থেকে রস বের করার জন্য। আমরা যাওয়ার পর আরো এক বার মেশিন স্টার্ট দিয়ে কয়েকটি বাছাইকৃত আখ মেশিনে দিয়ে রস বের করল। আমরা সাত থেকে আটজন ছিলাম। এক জগ রস হয়েছিল ৫ থেকে ৬ টা আখ থেকে।

1638603637346-01.jpeg

1638601961802-01.jpeg

আমরা সবাই মিলে এক জগ রস খেয়ে নিলাম। আমি এক গ্লাস খেয়েছিলাম মাত্র। শীতের এই সময়টাতে সকালের দিকে আখের রস বা খেজুরের রস খেতে বেশি ভালো লাগে। যাইহোক, রস খেয়ে আমরা সবাই একটা জায়গায় বসে আড্ডা দিলাম, গল্প করলাম। তখন সূর্য সবেমাত্র ডুবতে শুরু করেছে। বাড়ি যেতে হলে আমাদের অনেক দূর হেঁটে যেতে হবে এজন্য চিন্তা করলাম এখনই রওনা দেই।

1638602034163-01.jpeg

আমরা যেখানে ছিলাম ওখান থেকে আমাদের বাড়ি প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে । শেষ বেলায় এসে হেঁটে হেঁটে বাড়িতে যেতে ইচ্ছা করতেছিল না। তবুও সবাই গল্প করতে করতে আস্তে ধীরে হেঁটে বাড়ির দিকে চলে আসতে শুরু করলাম। পুরো সময়টাতে অনেকগুলো ফটোগ্রাফি করেছি। প্রায় তিনটা ফটোগ্রাফি পোস্ট করা যাবে। খুব শীঘ্রই ফটোগ্রাফি গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আমার বিশ্বাস ফটোগ্রাফি গুলো আপনাদের ভালো লাগবে।

ঠিক আছে আজ এ পর্যন্তই । আজ তাহলে আমি বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। নিজের প্রতি সবসময় খেয়াল রাখবেন। খোদা হাফেজ।

লোকেশনঃ- পদ্মার চর।
ছবিগুলো তোলা হয়েছে যে ডিভাইস ব্যবহার করেঃ- Xiaomi Redmi note 9 pro max.



JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 4 years ago 

সাঙ্গ-পাঙ্গদের সবাইকে আগেই বলে রাখলাম।

এটা মজা লাগলো ভাইয়া।
আপনার বন্ধুরা হাত উঁচু করে আছে, আর আপনি ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেছেন। ছবিটি খুব সুন্দর হয়েছে ভাইয়া আর মজার।
আর আমাদের এইদিকে রস পাওয়াই যায়না কোন রকমে।

 4 years ago 

ঠিকানা দেন,, পাঠাইয়া দেই।

 4 years ago 

আপনি এখানে আমাদের সাথে যে সুন্দর প্রকৃতির ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন তা আমি সত্যিই উপভোগ করি এবং আমি আখের জলের ছবি দেখতে পাই যা আপনি শেয়ার করেছেন, এটি আমার প্রিয় পানীয় বলা যেতে পারে।

 4 years ago 

দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনি অনেক সুন্দর একটি দিন পার করেছেন। আখের রস খেয়েছেন। অনেকদিন হলো আখের রস খাওয়া হয়না। আমিও এবার বাড়িতে গেলে আমার সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে পদ্মার চরে যাব আখের রস খাওয়ার উদ্দেশ্যে। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার ভ্রমণ কাহিনীটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 4 years ago 

ততদিনে সব রস শেষ হয়ে যাবে 😆

 4 years ago 

প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো এই জন্য যে এত সুন্দর ভাবে আপনি ফটোগ্রাফি করেছেন এবং আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আপনার ফটোগ্রাফি করা এবং তার পেছনের গল্প গুলো তুলে ধরা সবকিছুই আমার ভালো লাগে এবং আপনার এই পোস্টগুলো আমি অবশ্যই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ি । ছবির পিছনের গল্পগুলো ভাবার চেষ্টা করি। আমাদের প্রত্যেকেরই মনের খোরাক আছে । সবাই বিভিন্নভাবে সেই খোরাক মেটানোর চেষ্টা করে। কেউ বই পড়ে ,কেউ ভ্রমণ করে ,কে ফটোগ্রাফি করে ,আবার কেউ সিনেমা দেখে। আবার কেউ খেলাধুলা দেখেও তার মনের খোরাক সেটা মিটিয়ে থাকে ।আপনি আপনার মনের চাহিদা, আপনার মনের খোরাক ফটোগ্রাফি দিয়ে পূর্ণ করেন সেটা আমি মনে করছি। এই ছবিগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা একটি সুন্দর বিকেলের দৃশ্য উপভোগ করতে পারছি। সবুজ জমিতে সবজি চাষ, কৃষকের শুষ্ক নদীতে ফসলের বীজ বপন, এবং ফসলের ক্ষেতে আখের গুড় তৈরি এবং রস সবকিছু মিলিয়ে একটি সুন্দর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পরিবেশে সময় কাটিয়েছেন আপনি। আমার কাছে আখের গুড়ের থেকে রস বেশ ভালো লাগে এবং তৃপ্তিদায়ক মনে হয়।

 4 years ago 

অসাধারণ একটি মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 4 years ago 

সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আপনার ভ্রমণকাহিনী আপনি আরো সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন।
ঘুরতে আমারও খুব ভালো লাগে আমিও মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হই এবং ফটো গ্রাফি করি।

 4 years ago 

আপনি খুবই দুর্দান্ত বিকেলের গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন। আমার খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে আখের রস, এই আখের রস খেতে আমার খুবই ভালো লাগে এবং আমি খুবই পছন্দ করি। একবার এই আখের রস খেতে আমি চার কিলোমিটার দূরে চলে গিয়েছিলাম শুধু আখের রস খাওয়ার জন্য। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে শেয়ার করেছেন এবং সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 4 years ago 

আখের রস আমার কাছেও খুব ভালো লাগে।

 4 years ago 

ভাইয়া আপনি সবসময় দারুন দারুন ফটোগ্রাফি করেন এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে আজকের ছায়ামূর্তির ফটোগ্রাফিটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আপনি দারুণভাবে এই ফটোগ্রাফিটি করেছে। আপনার ফটোগ্রাফির দক্ষতার পাশাপাশি আপনার চিন্তা ধারাও আমার খুবই ভালো লেগেছে।

এছাড়া আপনি গ্রামীন পরিবেশের বিভিন্ন সবজির বাগান এবং অন্যান্য আবাদি জমির দারুন কিছু ফটোগ্রাফি করেছেন। সবগুলো ফটোগ্রাফি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাইয়া।

 4 years ago 

আপনাদের সাথে শেয়ার করবো বলেই মূলত ছবিগুলো তুলি।

 4 years ago 

ওয়াও ভাইয়া অসাধারন, আপনার ভ্রমনটা যেমন স্পেশাল ছিল, আপনার ফটোগ্রাফি গুলো আরো স্পেশাল, এর চেয়েও বেশি স্পেশাল ছিল আপনার বর্ণনাগুলো। সত্যি অসাধারণ দেখতে জায়গাগুলো যদিও আমাদের অঞ্চলে এই জিনিসগুলো নেই বললেই চলে। সর্বপ্রথম খুব জানতে ইচ্ছে করছে আপনি কোন এলাকায় থাকেন। এবং আপনার এত সুন্দর পরিবেশ গুলো কোন জায়গার খুব জানতে ইচ্ছে করছে ভাইয়া। যদি সম্ভব হয় অবশ্যই বলবেন। আর আপনি যেখানে গেন্ডারির রস থেকে গুড় সংগ্রহ করে সেটাকে খোলা বলছেন। হ্যাঁ আমাদের এদিকে ধান সংগ্রহ করার জন্য যে খোলা তৈরি করে আমরা ওটাকে খোলাই বলি। যাই হোক আপনার ফটোগ্রাফির সাথে আপনার উপস্থাপনা অসাধারণ সত্যিই প্রশংসার করার মতো। আমাদের সাথে এত সুন্দর করে ফটোগ্রাফি শেয়ার এবং কি গল্প অনেক সুন্দর করে উপস্থাপনা সত্যিই অসাধারন ভাইয়া। আমাদের সাথে এত সুন্দর একটা পোস্ট ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য। ভালোবাসা অবিরাম ভাইয়া।

 4 years ago 

গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 4 years ago 

বর্ষা পানি নেমে গেলে নদীর তীরে অনেক পলি মাটি জমে থাকে। এবং এই পলি মাটিতে ফসল খুবই ভালো হয়। এবং ফটোগ্রাফি গুলো তো এককথায় অসাধারণ হয়েছে। কী সুন্দর একটি গ্রাম।

আমাদের দিকেও আগে আখের খোলা ছিল। এই খোলার সব কার্যক্রমের সাথে আমি খুব ভালোভাবে পরিচিত। কিন্তু এখন আমাদের এলাকায় আর আখের খোলা নেয়। ঠিকমতো কেউ আখ লাগায়ই না। অনেক দিন এইভাবে আখের রস খাওয়া হয়নি।

সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ একটি পোস্ট ছল ভাই।।

 4 years ago 

ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। পোস্টটি পড়ে বুঝতে পারলাম আপনি বিকেল বেলাটা খুবই উপভোগ করেছেন। আর গাজর 🥕 ক্ষেত এর ফটোগ্রাফি অসাধারণ সুন্দর হয়েছে। শীতের বিকেল বেলায় আখের রস খাবার কথাগুলো কিন্তু অত্যন্ত লোভনীয় ছিল। ভাইয়া আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.09
TRX 0.30
JST 0.034
BTC 113429.16
ETH 4066.71
USDT 1.00
SBD 0.60