||স্মৃতি:-শৈশবের বৃষ্টির দিন,আজও মন ভিজিয়ে দেয়||
"সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি" |
---|
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
প্রতি দিনের মত আজকেও আপনাদের মাঝে আরেকটি বিষয় নিয়ে উপস্থিত হলাম। আজকের বিষয় হচ্ছে স্মৃতি:-শৈশবের বৃষ্টির দিন,আজও মন ভিজিয়ে দেয় আমি সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে নতুন কিছু পোস্ট নিয়ে আসার।আসলে আমার বাংলা ব্লগে নতুন কিছু শেয়ার করতে পারলে নিজেকে অনেক ভালো লাগে। তো আপনারা হয়তো টাইটেল দেখে বুঝতে পারছেন আজকে আমি কি বিষয় নিয়ে পোস্ট করবো।আপনারা সবাই জানেন যে সব অঞ্চলেই কিন্তু বৃষ্টিপাত হচ্ছে।আর এই বৃষ্টি গুলো দেখেই কিন্তু আমাদের শৈশব কাল মনে পড়িয়ে যায়। আমরা এখনো ভাবি যে যদি শৈশবকালটি আবারো ফিরে পেতাম। কিন্তু আফসোস সেই কালটি আমরা আর ফিরে পাবো না।
বৃষ্টির শব্দটা আজও কানে এলে মনটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। শহরের ব্যস্ত রাস্তা, গরম চায়ের কাপ, মোবাইলে জমে থাকা নোটিফিকেশন, সব কিছু থেকে দূরে, অনেক দূরে, কোনো এক শৈশবের দিনে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে।আমার ছোটবেলার বৃষ্টি ছিল এক অন্যরকম আনন্দের দিন। কোনো ছাতা ছিল না, ছিল না বৃষ্টি নিয়ে ভয়,ছিল শুধু খোলা আকাশের নিচে দৌড়ে বেড়ানো, ভেজা জামা কাপড় নিয়ে মায়ের বকুনি, আর প্রাণভরে হাসার দিন।
আমরা দল বেঁধে পাড়া ঘুরে বেড়াতাম। রাস্তার পাশের পুকুরে কদম ফুল ভাসত, আর কাদার ভেতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে পা যেন বৃষ্টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গান গাইত। একবার তো এমন হয়েছিল,তীব্র বৃষ্টির মধ্যে ছুটে গেছি স্কুল বন্ধ হয়েছে কি না দেখতে। গিয়ে দেখি, স্কুল খোলা! কিন্তু ভেজা জামা আর চুলে এমন চেহারা হয়েছে যে, দারোয়ান আমাদের ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে বলল,তোমরা তো ঝড়বৃষ্টির অতিথি মনে হয়!কিন্তু সেই দিন টি আমার এখনো মনে রয়েছে।কি আনন্দময় জীবন ছিলো আমাদের।
বৃষ্টির দিনে মা খিচুড়ি রান্না করতো, সঙ্গে কিছু ভাজা বেগুন আর ডিম। সেই গন্ধ এখনও মনে পড়ে, গরম ধোঁয়া ওঠা থালায় খিচুড়ির প্রথম চামচ যেন পুরো একটা শৈশব।তখনকার দিনে কোনো ক্যামেরা ছিল না, ছিল না স্মার্টফোন। কিন্তু আজও সেই স্মৃতি গুলো মনে করলে মনে হয়,সবকিছু যেন ঠিক আগের মতোই সামনে ভেসে উঠছে। বৃষ্টিতে ভেজা গাছের পাতার ঝকঝকে রং, টিনের চালের ওপর টুপটাপ শব্দ,এর মাঝেই তো গড়ে উঠেছিল ছোট বেলার সব চেয়ে আপন মুহূর্ত গুলো।
এখন বৃষ্টি হলে জানালার পাশে বসে থাকি। চায়ের কাপ থাকে হাতে, কিন্তু মনটা যেন একা হয়ে পড়ে। ইচ্ছা করে, একদিনের জন্য হলেও যদি ফিরে যাওয়া যেত,সেই কাদামাটিতে ভেজা দুপুরে, যেখানে চিন্তা বলতে ছিল শুধু,বাড়ি ফিরে বকা খাবো কিনা।আজকের পৃথিবী বড় হিসেবী, কিন্তু তখনকার আনন্দ ছিল নিখাদ, নির্ভেজাল।মাটিতে পা ডুবিয়ে গড়াগড়ি খেতাম যেন পৃথিবীটা এক বিশাল খেলার মাঠ।
শৈশবের সেই বৃষ্টিভেজা দিন গুলো হারিয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু স্মৃতি গুলো রয়ে গেছে মন জুড়ে। আর এই স্মৃতি গুলোর মাঝেই আমি খুঁজে পাই নিজের ছোট্ট আমি-কে,যে আজও ভেজা মাটির ঘ্রাণে চোখ বন্ধ করে বলে, এই তো আমি ঠিক এখানেই ছিলাম।কি দারুণ একটি শৈশব কাল ছিলো আমার।সময় যত এগিয়েছে, আমরা যেন একটু একটু করে সেই বৃষ্টির দিনে হাসতে ভুলে গেছি। এখন বৃষ্টি মানেই অফিস যাওয়ার দুশ্চিন্তা, ভেজা রাস্তায় ট্র্যাফিক, ভিজে গিয়ে ফোন নষ্ট হওয়ার ভয়। অথচ একসময় বৃষ্টি মানেই ছিল স্কুল ছুটি, নতুন জামা ভিজিয়ে ফেলার এক।অন্য রকম মজা, আর কাদায় পা ডুবিয়ে ঘরে ফেরার গল্প।
তখনকার বৃষ্টি ছিল অনেক বেশি ব্যক্তিগত। চারপাশে এত কোলাহল ছিল না, এত ব্যস্ততা ছিল না। মাটির ঘ্রাণে একটা শান্তি ছিল, যেন সেই গন্ধেই মিশে ছিল শৈশবের গল্প। বৃষ্টি মানেই একরাশ আনন্দ, আর মনের মধ্যে জমে থাকা ছোট ছোট স্বপ্ন গুলোকে একটু ছুঁয়ে দেখা।একটা কথা বলি,তখন আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি ধরার খেলা খেলতাম। হাত বাড়িয়ে দিতাম, এক একটা ফোঁটা পড়লে হাসতাম, আর জোর বৃষ্টিতে পালিয়ে এসে ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভেজা শরীরে ঠাণ্ডা হাওয়ার মজা নিতাম। আজকাল আর কেউ আকাশের দিকে তাকায় না, তাকালেও খুঁজে পায় না সেই নির্ভেজাল অনুভব।
আমার মনে আছে, একবার একটা পুরনো ছাতা নিয়ে খেলতে গিয়ে ছাতাটা উল্টে গিয়েছিল প্রচন্ড বাতাসে। সেই ছাতা নিয়ে আমি আর আমার ভাই মিলে ছোট্ট একটা ‘নৌকা’ বানিয়েছিলাম উঠানে জমে থাকা পানিতে। আজ এসব গল্প শুনলে বাচ্চারা হয়তো হাসবে,কিন্তু সেই হাসির পেছনে যে ছিল যা অন্যরকম আনন্দ, সেটা হয়তো তারা আর বুঝবে না।
আর বৃষ্টির পরে বিকেল গুলো,তখন আকাশে রংধনু উঠতো। আমরাও দল বেঁধে দেখতাম, কে আগে দেখে বলে “রংধনু উঠেছে"মনে হতো, বৃষ্টির শেষ ফোঁটায় যেন কোনো অদৃশ্য রং মিশে আছে, যা কেবল চোখ দিয়ে নয়,মন দিয়ে দেখতে হয়।
এখন আমি যখন জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখি,নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। নিজের ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে। মনে হয় তখনকার আমি-টা অনেক বেশি নির্ভাবনায় ছিলাম।আজ আমরা সবাই বড় হয়েছি, কিন্তু সেই বৃষ্টির দিনের আমি, কি আজও কোথাও আছে?হয়তো আছে। হয়তো সে চুপ করে বসে আছে মনের ভেতরে কোথাও।সেই দিনের আশায় আমি আজও বৃষ্টি ভালোবাসি।কারণ বৃষ্টি আমাকে আমার হারিয়ে যাওয়া নিজেকে ফিরিয়ে দেয়।যে আমি ছিলাম নিখুদ, নির্মল,একটা বৃষ্টির দিনের মতোই শান্ত আর গভীর।যাইহোক বৃষ্টির সেই শৈশব কালটির স্মৃতি আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে পেরে খুবই ভালো লাগলো। মনে হচ্ছে আমার মনের ভিতরে না বলা কিছু কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।যা এখন আগের থেকে অনেক ভালো লাগতেছে। তো আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন।
ডিভাইস | Tecno camon 20 |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @polash123 |
লোকেশন | দিনাজপুর |
আসসালামুআলাইকুম,আমার নাম মোঃ পলাশ সরকার রাজু । আমার স্টিমিট ইউজার নেম @polash123 আমি দিনাজপুর জেলার, পার্বতীপুর উপজেলার একজন বাসিন্দা। আমি পড়া শুনা করি এবং পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করি। আমি ক্রিকেট খেলতে অনেক ভালোবাসি।আর ক্রিকেট খেলা দেখতেও খুব ভালবাসি।মাঝে মাঝে সময় পেলে যে কোন ধরনের ফটোগ্রাফি করি। আর অংকন করতেও ভালবাসি।আপনারা সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ ও নিরাপদে থাকবেন। |
---|
You can also vote for @bangla.witness witnesses
![]() |
---|
আজকের ডেইলি টেস্ক প্রুফ।।
https://x.com/Polashislam681/status/1928817379007447395?t=JKaT5cHH6_fX4A4OQ_hQ8w&s=19
https://x.com/Polashislam681/status/1928819997427601615?t=w6EbY6L-jTWGcOvHEmR_IQ&s=19
https://x.com/Polashislam681/status/1928846098719707583?t=DJrQq7lGRVIXzrtpuzSq6Q&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
শৈশবের স্মৃতিগুলো আমাদেরকে সব সময় পিছু ডাকে। এ স্মৃতি যেন সব সময় পিছে পিছে ঘুরে। এই স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনা। প্রত্যেকের জীবনের সুন্দর শৈশবের কিছু স্মৃতি রয়েছে। শৈশবে কত সুন্দর ছিল এই বৃষ্টির দিনগুলো। আপনার পোস্ট পড়ে আমার নিজের মনও কেঁদে উঠলো। নিজের শৈশবের কথা ভেবে। কোথায় হারিয়ে গেল সেই সুখ? চমৎকার পোস্ট ভালো লাগলো ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপু এতো সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।