অভিভাবকদের অভিভাবক হই যখন ||শপিং মলে মা'দের সাথে কাটানো কিছু মুহুর্ত ও কেনাকাটা||
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা
কেমন আছেন? পুস নিয়ে নিশ্চই সক্কলের দারুণ কাটছে? স্বপ্নের মায়াজাল যে সবার মনে মনে বহুদূর বিস্তার লাভ করেছে সে কথা আলাদা করে বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না৷ আচ্ছা বাকি সব খবর নিশ্চই ভালো৷ আমিও ভালোই আছি। রোজ যেমন থাকি। আপনাদের সক্কলের সুস্থ জীবন কামনা করে আজকের ব্লগ শুরু করছি৷
ছবি দেখে নিশ্চই বুঝতে পারছেন শপিং মলের। পুণের বাবধানে অবস্থিত এই শপিংমলটি, ঠিক যে ডবলু ম্যারিয়টের পাশে। ঢোকার মুখে লোকজনের আদব কায়দাই বলে দেয় ঐতিহ্যপূর্ণ জায়গায় এসেছি। তবে আজকের ব্লগে শুধু শপিং মলে ঘোরার গল্প করব তা নয়৷ সন্তান বেড়ে উঠে বড় হবার গল্পও করব।
গল্পটা শুরু হয় অনেক বছর আগে৷ তখন আমি বেশ ছোট। পরিবার যেহেতু অনেক বড় তাই সারা বছরের বিলাসিতা বলতে আমাদের সেরকম কিছুই ছিল না। খুব সাধারন নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়িতে যেমন হয় সেরকম। আপনারা ভালই জানেন দুর্গাপূজা আমাদের এমন একটি উৎসব যেখানে যারা পারে তারা প্রত্যেকেই নতুন জামা কাপড় পড়ে। এই উৎসবে আমাদের সবার মধ্যে দেওয়া-নেওয়ার রীতি রয়েছে। ছোটবেলায় দেখতাম আমার বাবা পুজোর দিন পনেরো আগে যখন শেষবার দোকানের জন্য বাজার করতে কলকাতায় যেতেন তখন দাদার জন্য একটা নতুন জামা প্যান্ট এবং আমার জন্য একটা নতুন জামা আনতেন। আর সপ্তমীর দিন সন্ধ্যেবেলায় দোকান সেরে বাড়ি ফেরার সময় মায়ের জন্য একটা শাড়ি আনতেন। সেই শাড়িটা পরে মা পরের দিন অঞ্জলি দিতে যাবেন। পূজোর বাজার বলতে এইটুকুই ছিল আর সেটা বছরের পর বছর দেখতে দেখতে অভ্যস্ত। তার মধ্যে আরও একটা জিনিস লক্ষ্য করতাম যে আমার বাবা কখনোই আমাদের মত পুজোতে নতুন জামা কাপড় পরার কথা ভাবতেন না৷ মা বহুবার বলেছেন, কিন্তু বাবা সব সময়ই বলেন 'আমার তো অনেক জামা আছে, আমি কখন পরবো অত জানা? নতুন জামার দরকার নেই।' বাবারা কোথায় এমনই হয়। আর মায়েরাও তাই৷ সেই দিনগুলোতে আমি কখনো দেখতাম না মাকে এটা বলতে বা ভাবতে যে নতুন শাড়ি তো এল পেটিকোট, ব্লাউজ কেন এলো না? অথচ আমাদের কারণ মুখেই কিন্তু হাসির অভাব ছিল না। এক একদিন আমি কোন কথা বলতে গেলে মা বলতেন আজ আমি তোমার মা তুমি আমার কথা শোনো, যখন তুমি বড় হবে তখন তুমি আমার মা হবে সেদিন আমি তোমার কথা শুনবো।' মায়ের এই কথাটা আমার হয়তো আজীবন কাল মনে থাকবে। শপিংমলে যখন ঢুকছিলাম তখন মায়েদের হাসিমুখগুলো দেখে এই কথাগুলোই বারবার মনে পড়ছিল।
শপিংমলে ঢুকেই প্রথমে বললাম চলো চা খেয়ে আসি, দেখুন কি সুন্দর তামার পাত্রে করে চা বানানো হচ্ছে। আসলে যেতে যেতে বিকেল হয়ে গিয়েছিল তো, বিকেল হলে বাঙালি মানুষের আবার চা খেতে পছন্দ করে। লেখার ফাঁকে বলে রাখি আমি কিন্তু একা আমার মাকে নিয়ে যাইনি। আমার শাশুড়ি মা সমেত পুরো পরিবারই গিয়েছিলাম৷ সবাই মিলে এখানে চা খেতে বসলাম। যদিও আমি চা বা অন্য কিছু খাইনি। কারণ আমি চা-খোর নই। হা হা হা।
চায়ের সাথে নিয়েছিলাম পুনের বিখ্যাত বান মাসকা। এই বান মাসকা নিয়ে আগে একদিন পোস্ট লিখেছিলাম। যাইহোক মেয়ে বান মাসকা দেখলেই খেতে লোভ করে৷ অগত্যা সবার জন্যই নেওয়া হল৷
শপিং মলে ঢুকতেই বিরাট একটা পটারি মার্কেট বসেছিল, যেখানে বেশিরভাগ দোকানদারই বাঙালি। এটা বেশ অভিনব লেগেছে আর ভালো লেগেছে। আমি এই মার্কেটটার একটা ছোট্ট ভিডিও বানিয়েছি সেটা রইল আপনাদের জন্য।
খুব বড় শপিংমল না হলেও ছোটর উপর বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো, মোটামুটি ভালো ব্র্যান্ডের আউটলেটগুলো রয়েছে এখানে। কিন্তু যাবার উদ্দেশ্য ছিল কিছু শপিং করা। সামনেই তো পূজো, তাই ভাবলাম দুই মা কেই কিছু কিনে দিই৷ তাছাড়া মেয়ের জন্মদিন আছে, এই সব হেতুই প্রথমে লেখা কথাগুলো আমার মনে হচ্ছিল। আমার মা'র জুতো লাগত। তাই এদিক ওদিক খুঁজে অবশেষে লাইফস্টাইলে ঢুকে অনেক দেখাদেখির পর দুই মাতৃদেবী দুটো জুতো নিলেন৷ হা হা হা। সে জুতো দেখার ভিডিও যদি তুলতাম আপনারাও হাসতেন৷
অনেকগুলো শহরের সময় দেখছেন? আসলে জীবনটাই সময়ের খেলা। মায়েরা যত বয়স্ক হচ্ছেন ততই তাদের মধ্যে ছেলেমানুষী জেগে উঠেছে। তাঁরা জানেন দিন ফুরিয়ে আসছে। আমিও জানি। তাই চেষ্টা করি আমার সাধ্যমত যত্ন করার, ভালো থাকা এনে দেওয়ার। শপিং মলে দাঁড়িয়ে মা বলছিলেন, একদিন ছিল যখন পড়াশুনো করার টাকা ছিল না ছাগল চাষ করে পড়াশুনো করেছেন। এই কথাগুলো শুনলে মন ভারী হয়ে আসে৷ ভাবি আমাদের কোনদিন এই কষ্টটা করতে হয়নি।
জুতো কেনার পর দুজনকে দুটো ব্যাগ কিনে দিলাম, মেয়ের জন্মদিন সামনেই তাই ওর জন্যও দুটো জামা কেনা হল। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল দুটো শাড়ি কিনে দেওয়ার। শাড়ি ছাড়া মেয়েদের পূজোর গিফট সম্পূর্ণ হয় কি? কিন্তু এই শপিং মলে শাড়ির দোকান ছিল না৷ তবে মল থেকে বেরিয়ে একটু দুরের মুলচাঁদ মিল বলে একটি বিখ্যাত দোকান ছিল। সেখানে ফেরার পথে ঢুকে খুব কম সময়ের মধ্যে দুটো করে শাড়ি কিনে দিলাম। মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত সিল্ক ইরকল। এখানে পৈঠানি শাড়িও বিখ্যাত। কিন্তু মায়েরা ইরকল শাড়ি পরেনি কোনদিন তাই এবার কিনে দিলাম৷ রাত্রি হয়ে গেছিল, হাতে সময় ছিল না বলে ছবি তোলা হয়নি দোকানের৷
যাইহোক সব শেষে গার্ডেনকোর্ট বলে একটি রেস্টুরেন্টে চাইনিজ খাইয়ে বাড়ি এলাম যখন ঘড়িতে রাত দশটা।
এই কেনাকাটার মাঝে মায়েরাও আমায় কিছু নিতে বলেছেন বার বার। কিন্তু আমার কাল কিনে দিয়েই সুখ হচ্ছিল। আমি ক্রমশ বাবা হয়ে উঠেছিলাম। ভাবছিলাম বাবার মতো ভাবাতে অনেক প্রশান্তি আছে৷ এতো জিনিসপত্র একসাথে মায়েদের হাতে তুলে দেবার পর তাদের চোখে মুখে যে আনন্দ আমি দেখেছি পুজো উপলক্ষে একটা বা দুটো নতুন জামাতে তা কোনদিনই পেতাম না হয়তো৷ সেই ইচ্ছে বা লোভ কোনটাই হয়নি। তাই মায়েদের বাবার মতো করে বললাম, 'আমার যা জামা আছে আপাতত দশ বছর কিছু না কিনলেও চলবে'। ওরা আর কিছু বলল না৷ বাড়ি ফিরে মেতে রইল নতুন শাড়ি জুতো ব্যাগ নিয়ে৷
মায়ের ভারি ইচ্ছে ছিল একটা পিওর সিল্ক কেনার৷ কিন্তু আমার বাজেটে কুলোচ্ছিল না৷ মাকে বললাম মা এবছর থাক৷ আমার পুসের টাকা যেদিন তুলব সেদিন নাল্লি থেকে কিনে দেব৷ মা হাসলেন৷ কি জানি সে আশা পূর্ণ হবে নাকি৷ হবে এই আশাই করি।
বন্ধুরা, গতকাল মায়েদের নিয়ে বেশ কেটেছে৷ সেই আনন্দের রেশ আজও আছে৷ আপনারাও আপনাদের গুরুজনেদের ভালো রাখুন এই আশা করব৷ আমার অনুভূতির রেশ থাকুক, আপনারাও ভালো থাকবেন৷ আজ এখানেই শেষ করছি।
টা টা।
পোস্টের ধরণ | লাইফস্টাইল ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | অনুলিপি, ইনশট |
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1840599890918883641?t=PJyshNsipY9fpoU0EMjbww&s=19