সুর্যের ছুঁড়ে দেওয়া সকাল এ লেগে আছে স্মৃতিমেদুর উৎসবের দিন
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
ইদানিংকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয় না, ঝিরিঝিরি রোদের আলো ভোর হতে না হতেই শুয়ে থাকে মুখের ওপর, ছোট ছোট পাখির কিচিরমিচির। রাস্তাগুলো আমায় চিনতে পারে, ছুঁয়েছিলাম সেই যুগ আগে৷ তখন উৎসবের আড়ম্বর ছিল না, রাত গভীর হলে ভুতের কথা ভেবেই বিছানায় সেঁদিয়ে যেতাম। চোদ্দ প্রদীপ পুড়ে ছাই হয়ে গেলে ধানের গোলার দিকে উঁকি দিতাম, ঠাকুমার যত্ন করে ঝুলিয়ে রাখা কুলো নির্বিকারে ঝুলেই থাকত৷ যেন ঝুলে থাকার জন্যই তার জন্ম। আজ ঠাকুমা নেই, কুলোও নেই, না আছে ধানের গোলা৷ অথচ এই মাটিতে এলেই ভোরের রোদে আমি আরও অনেকটা ধানী বর্ণের হয়ে যাই৷
রাতের দিকে গরম বাড়লে জানালা খুলে দিই৷ ইচ্ছে করেই একা হয়ে যাই। আস্তে আস্তে ফুরিয়ে যায় সময়, পাতা বাহার গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে ঝুপ করে ঢুকে পড়ে অনুমতি ছাড়াই। কানে কানে বলে "তুই এলি আবারও?" চোখ বুজেই ফিসফিস করে বলি, "এলাম"। বেশি কথা বলতে ভালো লাগে না। বেশি বললেই তো আবার দরজা খোলার শব্দ হবে, অভিমানগুলো হুড়োহুড়ি করে ভিড় জমাবে, যেন কেউ মরে গেল, যেন কারও চিতায় হবন দেওয়ার লোকের ডাক৷
চুপ করে থাকি। আজকাল সব মেনে নেওয়াই পথ আর পথের বাঁক বলে মনে হয়। বিবাদ বিরহ এই ছোট ছোট চৌকাঠ পেরতে পারলেই ব্রহ্ম ছোঁয়ার দিকে আরও একটু এগিয়ে যাব৷ আমার তো আর নিজস্ব কিছু নেই, থাকার জায়গাও নেই৷ যখন যেখানে জীবন নিয়ে যায় সেখানেই দুদন্ড বসি৷ ফিরে আসি জন্মস্থানে৷ সে সব তো চলে যাবার জন্যই৷ এভাবেই একদিন ফুরিয়ে যাব।
সকালের রোদে এতো কথার জন্ম কিভাবে হয়? প্রসব যন্ত্রণা আর সদ্য ঘুম ভাঙা পাখিদের মধ্যে আলংকারিক টানাপোড়েন নেই ঠিকই তবে কাল রাতে যখন আবারও চোদ্দ প্রদীপ নিভে গেল বাতাসে সেই এক পোড়া গন্ধ- আমার এই মাঝে মধ্যে ফিরে আসাকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।
এতো আঁচড় কামড়ের কি আছে? কিই বা হয় যদি এতো কিছু না ভাবি? উঠোন একই আছে, শুধু মানুষগুলো পা সমেত বদলে যায়৷ মুছে যায় আদি -
যত বয়স বাড়ছে বাড়ি এলে, ভোর হলে আমার খুব ঠাকুমার কথা মনে পড়ে। হঠাৎ করেই কথা বলতে বলতে চলে যাওয়া মানুষটা আর কোনভাবেই ফিরে এলো না৷ থাকলে বলত উৎসবের দিনে আলতা পরতে৷ সুন্দর করে পাট ভাঙা শাড়ি পরতে৷ শত কুঁড়েমির মধ্যেও ওই ভোরের রেডিওর সুরে আর উঠোনে ঝাঁটার শব্দ, আমার মনুষ্য জন্মের ফুরিয়ে যাওয়ার দৌড়ে সামান্য আলো জ্বালত। যা আমাকেও জ্বালিয়ে রাখত৷
আজ সেসব নেই। আমি এসেছি অবাঞ্চিত অথবা কাঙ্খিত আসার মতো করেই৷ মানুষগুলোর নির্মল কণ্ঠে চায়ের গন্ধ আসে৷ রোদের মায়ায় বিছানা ছেড়ে আয়নায় নিজেকে দেখি। কেউ আর বলে না "আহারে মেয়েটাকে দেখো পাকা ধানের মতো বেড়ে উঠেছে"। নিজেও কিছু বলি না৷ চুলে পাক ধরেছে অনেক আগেই৷ তাও কপালে একটা টিপ এঁটে ভাবি খানিকটা কি ঠাকুমার মতো দেখতে লাগছে? ভাবতে ভাবতেই চোখ চলে যায় মায়ের তুলে রাখা আলতার দিকে...
পোস্টের ধরণ | লাইফস্টাইল ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, ইনশট |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
কি লিখবো বুঝতে পারছি না দিদি!তার কারণ হলো আপনার এই লেখা পড়ে মন্তব্য করার মতো জ্ঞান আমার বিন্দুমাত্র নেই তাই সেই দুঃসাহস দেখানোর চেষ্টাও করছি না তবে এতটুকু বলতে পারি লেখাগুলো পড়ার সাথে সাথে আমার মধ্যে অন্য রকমের একটা অনুভূতি হচ্ছিলো যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।অসম্ভব রকমের ভালো অনুভব করানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই দিদি সেই সাথে ভালোবাসা রইলো।🙏🙏🙏🙏💗❤️
এই টুকুই আমার লেখার স্বার্থকতা। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই বিছানায় শুয়ে শুয়ে লিখেছিলাম। এখানে কেউ এসব পোস্ট পড়ে না জেনেই পোস্ট করেছি। এর মধ্যেই আপনি পড়লেন। আমি ভরে গেলাম। ভালোবাসা দিলাম৷
আপনাকেও অনেক অনেক ভালোবাসা 💗💗