হুবহু একই রকম ঘটল কি? আগেও ঘটেছিল? অনুভূতির বৈজ্ঞানিক নাম দ্যাজা ভু
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
কোন একটা ঘটনা ঘটার সময় কয়েক মুহুর্তের জন্য মনে হয় ঘটনাটা আগেও ঘটেছে। আমি রিপিট টেলিকাস্ট দেখছি। কিংবা জানি এটা হবে। এই জিনিসটা শুধু আমার সাথে নয় অনেকের সাথে ঘটে থাকে। আপনাদের কারো সাথে থাকলে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি না আমি কি নিয়ে বলতে চাইছি। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়ে দিলেই আরো স্পষ্ট হবে আমার বক্তব্যটা। ধরুন নদীর ধারে বসে আছেন একটি নৌকা যাচ্ছে আপনার সামনেই এক প্রেমিক-প্রেমিকা বসে, ছেলেটি মেয়েটিকে মাটির পুতুল দিচ্ছে। এই দৃশ্যটা দেখার সময় হঠাৎ করে মনে হল কোন একটা মুহূর্ত আপনি আগে দেখেছেন বা জানতেন এরকমই ঘটবে। কিন্তু বিষয়টা অস্পষ্ট, এবং অত্যন্ত ক্ষণিক। এই অনুভূতি কি ফ্রেঞ্চ ভাষায় বলা হয় দেজা ভু।
এই ঘটনা আমার সাথে বহুবার ঘটেছে এবং অনেক ছোট থেকেই ঘটে আসছে। এক সময় অনেক উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতাম মাঝে মাঝে মনে হতো আমার মানসিক সমস্যা আবার এমনও মনে হতো আমি বোধহয় সবকিছু জানি। লোকজনকে বললে হাসাহাসি করতে পারে ভেবে কখনো কাউকে সেভাবে বলা হয়ে ওঠেনি। পরে যখন ইন্টারনেট অ্যাভেলেবেল হলো নিজেই পড়াশোনা করে বুঝলাম এটা কোন কোইন্সিডেন্ট নয় বা মানসিক রোগ ও নয়। এটি ব্রেনের ট্রাফিক সিগনালের সমস্যা।
ফ্রেঞ্চ শব্দদ্বয় 'দ্যাজা ভু বা দেজা ভু'র অর্থ হল 'পূর্বেই দেখা হয়েছে'। অলৌকিক কিছু না তবে অনেকে মনে করে এই ধরনের ইলিউশন মস্তিষ্কে স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যহত হলেই ঘটে৷ আমরা সকলেই জানি হাসি, কান্না সমেত নানান অনুভূতি ও সেই অনুপাতে প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক সিগনাল বা ইশারাতেই করে থাকে৷ সেক্ষেত্রে এই সিগন্যাল গন্ডগোল হলে সমস্যা তো হবেই৷ পরিসংখ্যান বলছে এই সমস্যা প্রতি একশ'জনে ষাট থেকে সত্তর জনের ঘটে থাকে৷ এটা কোন অস্বাভাবিক বা অলৌকিক ঘটনা নয়।
আমাদের মস্তিষ্কের অন্যতম অংশ হল টেম্পোরাল লোব৷ যার ভেতর হিপোকম্প্যাস নামক একটি অংশ আছে, যা মস্তিষ্কের ফ্যামিলিয়ারিটির সাথে সম্পর্কযুক্ত৷ ফ্যামিলিয়ারিটি মানে মস্তিষ্ক আগে থেকে যা সম্পর্ক পরিচিত বা জ্ঞাত৷ এই হিপোক্যাম্পাস কোন কারণে উদ্দীপিত হলে এক ধরণের সিজারস ঘটে যাকে বলে টেম্পোরাল লোব সিজারস, সোজা ভাষায়, মস্তিষ্কের নিউরোনগুলির স্বাভাবিক সিগন্যালে ব্যাঘাত৷ ফলত অনেক ঘটনা আগেই ঘটেছে বলে মনে হয়৷
আবার কিছু গবেষণা বলছে, মস্তিষ্কের ভেতর শর্টটার্ম মেমোরি আর লং-টার্ম মেমোরির গোলযোগের ফল হল দ্যাজা ভু। কোন শর্ট টার্ম মেমোরি ও লং-টার্ম মেমোরির মধ্যে গোলযোগ ঘটলে এমন ঘটে৷ এই জিনিস জন্মান্ধ মানুষের সাথেও ঘটে৷
আবার কেউ কেউ বলে অতীত ও বর্তমান গুলিয়ে ফেলে মস্তিষ্ক। কারণ অনেকক্ষেত্রে শনাক্তকারী নিউরন আর ফ্যামিলিয়ারিটি নিউরনের মধ্যে জড়তা সৃষ্টি হয়। এই জড়তার কারণেই আমরা বাস্তবিক ভাবে সব গুলিয়ে ফেলি কয়েক সেকেন্ডের জন্য। আর ভাবি এ বোধয় আগেও ঘটেছিল। হুবহু এক।
আপনাদের কারও সাথে এমন হয়? হলে হোক অসুবিধে কি? এ কোন মানসিক রোগ না৷ খানিকটা গন্ডগোল সব যন্ত্রেই থাকে। মস্তিষ্কেও আছে৷ সেও তো যন্ত্র৷ তাই না?
এই সব গোলযোগ নিয়ে আপনারা ভালো থাকুন, আমি আবার আগামীকাল আসব অন্যকিছু নিয়ে বকবক করতে৷ আজ এ পর্যন্তই...
টাটা
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এই দ্যোজা ভু এর সুন্দর ব্যাখ্যা আছে বৈজ্ঞানিক ভাবে। সত্যি বলতে আমার সাথে প্রায়ই এমন হয়ে থাকে। মনে হয় এই ঘটনা আমার সাথে আগেও ঘটেছে বা এটা আমি আগেও দেখেছি। সাধারণত কয়েকটা মূহূর্ত এমন মনে হয়। অনেক বলে ঐ কয়েক মূহূর্ত নাকী আমরা ভবিষ্যত দেখতে পারি। সেজন্যই বতর্মান সময়ে যখন আমাদের সাথে ব্যাপার টা ঘটে আমাদের এমন মনে হয়।