আমার বাংলা ব্লগের প্রতিযোগিতা -৬৩। আমার তোলা শরতের কিছু চমৎকার ফটোগ্রাফি।
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
জুঁই ফুলের পোলাও বেশ পছন্দ হয়েছে আপনাদের তা মন্তব্য দেখেই বুঝেছি। আজ দেখুনতো ছবিগুলো কেমন লাগে। বন্ধুরা আজকের ফটোগ্রাফি পোস্ট করছি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির কর্তৃপক্ষ দ্বারা আয়োজিত ৬৩ তম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চেয়ে৷ বিগত কয়েকমাস ধরে এখানে ব্লগ লিখছি। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রতিযোগিতা হয়েছে৷ প্রতিটা প্রতিযোগিতাই অভিনব৷ এবারের বিষয়টাই চমৎকার আমার কাছে। কেন জানেন আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি৷ আর শরৎকাল সারাবছরের মধ্যে এমন ঋতু যে সময়ে ছবি অত্যন্ত সুন্দর আসে এমনিতেই৷ কারণ বর্ষার পর আকাশে মেঘের কালো ভাব একেবারে চলে যায়, আকাশ অনেক বেশি নীল দেখায়। এছাড়াও বৃষ্টিতে ভিজে গাছপালা ঝকঝকে সবুজ হয়ে ওঠে৷ অনেক জায়গায় তো কালারফল দেখা যায়৷ সত্যি বলতে কি প্রকৃতি যেন শরৎকালেই হোলি খেলে। আমি কিছু কালারফলের ছবি শেয়ার করব ভেবেছিলাম যদিও পুরোনো ছবি থেকেই৷ কিন্তু আমার সেই হার্ড ডিস্কটা খারাপ হয়ে গেছে৷ তাই ছবিগুলোও হারিয়ে গেছে৷
'যা গেছে তা যাক'- যা আছে তা নিয়েই শুরু করছি আজকের প্রদর্শনী।
ছবিওয়ালা | নীলম |
---|---|
ছবির ধরণ | নদী ও কাশফুলের ল্যান্ডস্কেপ |
ছবির নাম | জলে দেখা শরৎকন্যা |
ছবির মাধ্যম | ফোন, স্যামসাং এফ ৫৪ |
ছবি সম্পর্কে
গত বছর শরতে বাড়ি গিয়েছিলাম, তখন তোলা ছবি৷ এই পোড়ার মারাঠা রাজ্যে কাশফুল কোথায় পাই বলুন। বিগত নয় বছরে একটিও চোখে পড়েনি৷ শরৎকালের ছবির সিরিজ অথচ কাশফুলের ছবি থাকবে না এ কিভাবে হয়? তাই সারা সন্ধে মোবাইল গ্যালারি খুঁজে বার করেছি। এইটে কংসাবতী নদী৷ আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে মাত্র কিছু দূরে৷ বাড়ি গেলেই নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকি আর এমন রূপ উপভোগ করি৷
ছবি ঘিরে ক' লাইন
ভালোবেসে যেদিন নদীতে পা রেখেছিলে
সেদিন উড়তে জানতে শুধু
আজ বইতেও জানতে হবে
জীবন ওড়ার প্রতিশব্দ নয়,
জীবন মানে বয়ে চলা।
এসো হাত ধরে মিশে যাই মহাসাগরের বিহ্বলতায়।
ছবিওয়ালা | নীলম |
---|---|
ছবির ধরণ | শরতের আকাশে সাদাকালো মেঘের ভেলা |
ছবির নাম | মেঘ-মালা |
ছবির মাধ্যম | ফোন, স্যামসাং এফ ৫৪ |
ছবির সম্পর্কে
চারতলা ঘরের জানালা থেকে এই একফালি আকাশ হঠাৎই দেখতে পেয়ে ভেবেছিলাম তুলে রাখি৷ এ যেন মেঘের মেলা। বর্ষার মেঘ এখন দুর্বার গতিতে ফিরে যাচ্ছে। তাই মাঝে মধ্যেই এমন থোকা থোকা মেঘ দেখতে পাওয়া যায়।
ছবি ঘিরে ক' লাইন
এমন দিনে তোমার সমস্ত বেদনা
মালা হয়ে ফিরে আসে আমার গলায়,
বড্ড ভার সব কিছু।
এত উৎসব এতো মনখারাপ
কেন জানিনা মেঘের ঝাপটায় সব পড়ে যেতে চেয়েও
টিকে থাকে শক্ত হয়ে।
ছবিওয়ালা | নীলম |
---|---|
ছবির ধরণ | শরতের রঙিন শাপলা |
ছবির নাম | নগ্ন পৃথিবী |
ছবির মাধ্যম | ফোন, স্যামসাং এফ ৫৪ |
ছবির সম্পর্কে
আমাদের সোসাইটিতে বেশ কিছু রো হাউস আছে৷ তাদের সবার বাড়িতেই বেশ বড়সড় বাগান রয়েছে৷ একজনদের বাড়িতে ছোট্ট চৌবাচ্চা মতন বানিয়ে তাতে শাপলা লাগিয়েছে৷ অনেক রঙের। আজ সকাল মর্নিং ওয়াকে গিয়ে এই ছবিটা তুলে এনেছি৷ কী চমৎকার না? শাপলার বুকে দেখুন একটা মাছি বসে আছে৷ ছবি তোলার পর যখন দেখছিলাম তখন আফসোস হচ্ছিল এটা ভেবে যে কেন ম্যাক্রো লেন্সটা আনিনি। যাইহোক আজ একটা ফুলেরই ছবি তুলেছি৷ কেমন হয়েছে বন্ধুরা? শরতে কাশের পাশাপাশি শাপলাফুল না থাকলে যেন ষোলকলা পূর্ণ হয় না৷ আরও একটা ফুল আছে, ছাতিম৷ ও হ্যাঁ শিউলিকেই বা বাদ দিই কেন? এদের প্রত্যেকেই শরতের সুগন্ধিবর্ধক।
ছবি ঘিরে ক'লাইন
একদিন প্রেম ফুটেছিল এইভাবেই।
ব্যর্থতার টানাপোড়েনে টলমল জলে
নিজের প্রতিবিম্ব দেখি
আমি কিছু ধরে রাখতে পারি না বলে
আজ প্রমাণিত হল,
পৃথিবীর প্রেম আমার জন্য নয়
শাপলা হয়ে ফুটেছি
মৃত্যুর সময় পাপড়ি হয়ে ঝরে যাব।
ছবিওয়ালা | নীলম |
---|---|
ছবির ধরণ | শরতের মায়াবী সন্ধ্যা |
ছবির নাম | তরী ভিড়ানো খেলা |
ছবির মাধ্যম | ফোন, স্যামসাং এফ ৫৪ |
ছবির সম্পর্কে
সিরিজের প্রথম ছবিটি তোলার পরেই এই ছবিটিও তুলেছিলাম। আগের ছবিটির মুখ যেদিকে ছিল এই ছবিটির দৃশ্য ঠিক তার উল্টোদিকের৷ সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়লে দুই মুখের ছবিই চমৎকার হয়৷ তাই না? সারাদিনের মধ্যে ভোর বেলা ছাড়া এই সময়টাই সঠিক ছবি তোলার জন্য।
ছবি ঘিরে ক' লাইন
অস্তমিত সূর্যকে সাক্ষী রেখে বলি
এই জীবন তোমারই দান
ঢলে পড়ার সাথে সাথে
আমায় মুছে ফেলো, আমায় ফিরতে হবে অনেক দূর
বহু দূর....
ছবিওয়ালা | নীলম |
---|---|
ছবির ধরণ | শরতের সূর্যডোবা |
ছবির নাম | শেষ কিরণ |
ছবির মাধ্যম | ফোন, স্যামসাং এফ ৫৪ |
ছবির সম্পর্কে
এই ছবিটাও গত শরতের। এমন ধু ধু আকাশে ছিন্নভিন্ন মেঘ আর সূর্যাস্ত দেখে বাড়ির ছাদ থেকে খিচিক করে ছবি তুলে নিয়েছিলাম। তারপর আর খেয়ালই নেই। আজ বেরলো ঝুলি থেকে। এবার গেলে আরও কিছু ছবি তুলে আনব।
ছবি ঘিরে ক' লাইন
এই এতো মেঘও ছিঁড়ে যায়
আঘাতের বেড়াজালে আরও কত কি ছিন্ন হয়
তার হিসেব রাখতে নিজেকে
যাজ্ঞসেণী ভাবতে শুরু করি।
ছবিওয়ালা | নীলম |
---|---|
ছবির ধরণ | শরতের ব্যস্ততম মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভ |
ছবির নাম | মাঝরাতের ইতিকথা |
ছবির মাধ্যম | ফোন, স্যামসাং এফ ৫৪ |
ছবির সম্পর্কে
মুম্বাইতে থাকাকালীন এক দুর্গাপুজোতে রাণী মুখার্জির বাড়ি পুজো দেখে ফেরার পথে বসেছিলাম মুম্বাইয়ের বিখ্যাত মেরিন ড্রাইভ তথা নেকলেস রোডে৷ রাত্রি বেলায় আরব সাগরের অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ হয়৷ ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কিভাবে কেটে যায় আমি নিজেও জানি না৷ সেদিন ভাবলাম রাস্তায় যে গাড়িগুলো যে যার কাজ সেরে বাড়ি ফিরছে তাদের এই ফেরার ছবি তুলে রাখি৷ কেমন হয়েছে বলুনতো এই ছবি টা?
ছবি ঘিরে ক'লাইন
মাঝরাত হলে আমি আজও হাঁটি
তোমার স্বপ্নের সমুদ্রতটে
হাত ধরতে চেয়ে কখন
শরীর বিভাজিত হয়ে গেছে তা জানার আগেই শুনি
কে যেন সশব্দে ব্রেক কষেছে
নইলে...
ছবিওয়ালা | নীলম |
---|---|
ছবির ধরণ | শরৎকালের উপহার-কন্যা সন্তান |
ছবির নাম | প্রজন্ম |
ছবির মাধ্যম | নিক্কন ডি ৯০ |
ছবির সম্পর্কে
আমার হাতে তোলা জীবনের চমৎকার উপহারের অন্যতম ছবি। এই শরতেই ভভ্রমহিলা আমার কোল আলো করে এসেছিলেন আর নিজের সাথে সাথে আমাকেও বড় করে মা করে তুলেছেন। ভদ্রমহিলার তিনবছর জন্মদিনের দিন সকালে তুলেছিলাম এই ছবিটি। ওহ উনি আর কেউ নন আমার কন্যা সন্তান - অরিপ্রা। শরতের ছবির সিরিজে জীবনের অন্যতম প্রাপ্তির ছবি না দিতে পারলে সিরিজটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
ছবি ঘিরে ক'লাইন
নরম কাপড়ের ভেতর থেকে উঁকি মেরে
জীবন এসে জীবনে মিলেছিল সেদিন
আমিও জানলাম সূর্যের রঙের পরেও
সন্তান আলো এনে দেয়
জীবনের গভীর থেকে আরও গভীরে৷
বন্ধুরা, আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি, আবার আসব আগামীকাল অন্য কিছু নিয়ে৷ ততক্ষণ আপনারা সবাই ভালো থাকুন।
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
প্রথমেই তোমাকে চলমান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
তোমার ফটোগ্রাফি এবং বর্ণনা দুটোই খুব মনোযোগ সহকারে দেখেছি এবং পড়েছি। প্রতিটি ফটোগ্রাফি আমার কাছে দারুণ লেগেছে। তবে শাপলার ছবিটি কিন্তু আমার কাছে বেশ লেগেছে। আর শরৎকালের উপহার-কন্যা সন্তান ছবিটিতো তুলনাহীন।
এই সপ্তাহের চলমান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলেন দেখে ভালো লাগলো। অনেক সুন্দর হয়েছে আপনার ফটোগ্রাফি গুলো। শরৎকালের সৌন্দর্য দেখলে সবাই একেবারে মুগ্ধ হয়। আর এরকম সৌন্দর্যকে ক্যামেরা বন্দি করলে তো আরো ভালো লাগে। তেমনি সবগুলো ফটোগ্রাফি দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। ছবিগুলোর উপস্থাপনটা অনেক সুন্দর ভাবে করেছেন। ফটোগ্রাফি গুলো সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম পুরোটা পড়ে।
প্রথমে আপনাকে প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আপনি শরৎকালের অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। শরৎকালে চারদিকের পরিবেশ অনেক বেশি সুন্দর হয় আর এসব পরিবেশ দেখতে অনেক বেশি ভালো লাগে। নীল আকাশ সব রকম সবকিছুই আপনি সুন্দরভাবে ফটোগ্রাফি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।
বাহ শরৎকাল নিয়ে দারুন ফটোগ্রাফি করেছেন। সেই সাথে প্রত্যেকটা ফটোগ্রাফির নিচে চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। প্রত্যেকটা ফটোগ্রাফি শরৎকালের স্মৃতি ধরে রাখবে। ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি কন্টেস্ট অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি আজ আমাদের মাঝে দারুণ দারুণ কতগুলো ফটোগ্রাফি নিয়ে হাজির হয়েছেন। আসলে এত সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি দেখে আমি সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এত সুন্দর ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।