সকাল সকাল বিবেকানন্দ রকে সময় কাটানোর অনুভূতি।।
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
বাঙালি মানেই কমবেশি সকলেই নরেন দত্তর নাম শুনেছেন। হ্যাঁ নরেন দত্ত যিনি আপামর বিশ্ববাসীর কাছে স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিত।
১৮৯২ সালে ২৫, ২৬, ২৭ শে ডিসেম্বর তিনদিন টানা ধ্যান করেছিলেন তিনি৷ ভারত মহাসাগরের ওপর একটি পাথর খন্ডে৷ সেই ঘটনারই স্মৃতি সৌধ হিসেবে এই উপাসনালয় তৈরি হয়েছিল সম্ভবত ১৯৭০ সালে৷ আমি প্রথমবার এসেছিলাম ১৯৯৬ সালে। তখন যা দেখে গেছি এবার সব কিছুই অনেক অনেক বদলে গেছে৷
ভোর প্রায় সাড়ে চারটা নাগাদ আজ বেরিয়ে সমুদ্রের ধারে চলে দিয়েছিলাম। সেখানে সূর্যোদয় দেখে কোনরকম ফেরির টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছি। টিকিট ঘর খুলেছিল সকাল আটটায়। এর মাঝে ইডলি আর মেদু বড়া খেয়ে পেটের কাজ মিটিয়ে দিয়েছিলাম। আটটায় যখন টিকিটঘর খুলল, সত্যি বলতে কি একেবারে হুড়োহুড়ি যেন এখুনি লাফিয়ে বোটে উঠে পড়বে লোকজন।
বেলা যত গড়িয়েছে রোদের বিশাল তাপ। মাথা ফেটে যাচ্ছিল। তাও ভারতের একেবারে দক্ষিণের এই বিশ্ববিখ্যাত স্মৃতিসৌধ আবারও না দেখলে মন ভালো লাগবে না৷ সেই কোন ছোটবেলায় দেখেছিলাম আরও কি মনে আছে?
টিকিট কেটে ভিড়ের মধ্যে আবারও লাইন দিয়ে ফেরিতে উঠে প্রায় ৫/৭ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বিবেকানন্দ রক। পৌঁছে দেখি একেবারেই বদলে গেছে৷ শুরুতে আমাদের থেকে ত্রিশটাকা টিকিট নিয়েছিল পরে জুতোর কাউন্টারে গিয়ে জুতো জমা করে খালি পায়ে চলে গেলাম বিবেকানন্দ রকের উপরে। সেখানেও আর সেই পুরনো দিনের ঢাল নেই এখন সুন্দর করে সিঁড়ি বাধাই করে দেওয়া হয়েছে৷ পর্যটকদের তীব্র ফলে এই সমস্ত উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী৷
উঠেই দেখলাম সিঁড়ি রয়েছে। যা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে। সেখানে সকলেই দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। ছোটরা বয়স্করা দেখলাম একে একে রিল বানাচ্ছে। কি যুগ এলো সুন্দর বিবেকানন্দ যেখানে সাধনার জন্য গিয়েছিলেন ধ্যানের জন্য গিয়েছিলেন সেখানে বর্তমানে মানুষ রিল বানিয়ে যাচ্ছে।
সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে ভিতরে গেলাম। ভেতরে দেখার মত কিছু নেই বড় একটা পিতলের বিবেকানন্দের মূর্তি রয়েছে । এই অংশ তে যদিও ফটো তোলা বারণ। আমি বাইরে থেকে একটা ছবি তুলেছি। ঢোকার সময় সবাইকে নীরবতা পালন করতে বলা হয়েছিল। মানুষ শান্ত হয়ে ঢুকে চুপ করে বেরিয়ে গেছে। এ মূর্তির ঠিক নিজেই রয়েছে একটি উপাসনা গৃহ। যেখানে দেওয়ালের ওপরে বড় করে ওম চিহ্ন লেখা আছে। এখানেও ছবি তোলা বারণ। চুপ করে শান্ত হয়ে বসে ছিলাম। বেশ কিছু পর শুনলাম ওম ধ্বনী। কি যে অসম্ভব প্রশান্তি পেলাম ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
একদিন বিবেকানন্দই বলেছিলেন হৃদয়ে এবং মস্তিষ্কের মধ্যে দুইটা না থাকলে হৃদয়ের কথা শুনতে হয়। বিবেকানন্দ রকে এসে আমার মস্তিষ্কই যেন বন্ধ হয়ে গেছে। পুরোপুরি হৃদয় দিয়ে সবকিছু শুনতে পাচ্ছি। আর হৃদয়ের অনেক কথা চোখের সামনে ভাসছে। বেশ কিছুক্ষণ এই উপাসনা ঘরে বসে ছিলাম। স্নিগ্ধতায় ভরে উঠেছিলাম।
বাইরের রোদের তাপ ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছিল। তাই গোটা রকের চারপাশে খুব একটা বেশি না ঘুরে একটি ছায়া খুঁজে সেখানেই বসেছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। একেবারে দক্ষিণে যেখানে বাঙালির সংস্কৃতির নূন্যতম ছিটেফোঁটা নেই। সেখানে বিবেকানন্দ কে ঘিরে এমন আয়োজন দেখে মন জুড়িয়ে যায়৷ এখানে যদিও মাতা কন্যাকুমারীর পাদুকা রয়েছে। কথিত আছে তিনিও বহুবছর আগে এখানেই ধ্যান করছিলেন। এছাড়াও এখানে দেখা যায় ৪১ মিটার উঁচু তিরুবল্লুবরের মুর্তি। এই মুর্তির কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি যদিও। তবে আমি যখন প্রথম এসেছিলাম তখন এই সব ছিল না৷ বিবেকানন্দ রক একাই দাঁড়িয়ে থাকত ঐতিহ্যের পতাকা মাথায় করে।
এই সব কিছু ভাবলেও শিহরিত হই। তাই এতো রোদের মধ্যেও জানি না কেন অদ্ভুত প্রশান্তি খেলে গেছে৷ বন্ধুরা আমার দেখা ও ভালোলাগার অংশটুকু আজ আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম। কেমন লাগল অবশ্যই জানাবেন৷
পোস্টের ধরণ | লাইফস্টাইল ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | আইফোন ১৪ |
লোকেশন | কান্যাকুমারী |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1871261370676654578?t=4f_zMUCWJLWsiClazM2DxA&s=19
বিবেকানন্দ রকে অনেকটা সময় কাটিয়েছিস দেখে বেশ ভালো লাগছে। আসলে এই জায়গার সঙ্গে মিশে আছে আমাদের কলকাতার সেই বীর সন্ন্যাসীর নাম। তাই কন্যাকুমারীর সাথে যেন বাঙালির এক হৃদয়ের বন্ধন। দারুন সুন্দর করে এইসব ছবিগুলি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছিস। প্রত্যেকটি ছবি দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। সমুদ্রের ছবিগুলি বিশেষ করে ভীষণ সুন্দর উঠেছে।