রূপনারায়ণের ইলিশ দিয়ে বানিয়ে নিলাম ঢাকাই ইলিশ পোলাও। দুই দেশের যুগলবন্দী।
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
পুনেতে ইলিশ মাছটা একেবারেই পাওয়া যায় না। এখানে মাছ দোকানগুলোতে অনেক ধরণের মাছ পাওয়া যায় কিন্তু অনেক বলে কয়ে দু একটা ইলিশ মাছ আনানো করা গেলেও তার স্বাদ রুই বা কাতলা থেকেও জঘন্য। সারা বছরে একদিন ওই ইলিশ খেতে পাবো না অথচ বাড়িতে সবাই প্রায় রোজই ইলিশ খাচ্ছে। তাই আমার দুই বাড়ির মা আমার কাছে চলে এলেন বড় বড় সাইজের দুটো ইলিশ সাথে নিয়ে। আমার প্রতিবেশী বাঙালি বন্ধুদেরও একদিন খাওয়ালাম, সরষে বাটা দিয়ে একদিন রান্না করলাম, তাহলে তেঁতুল দিয়ে একদিন টক বানালাম। তারপর মনে হল পোলাও বানিয়ে দেখি। ঢাকাই পোলাও। কিন্তু ঢাকাই পোলাতে কাঁচা ইলিশ লাগে। আসলে অতদূর থেকে মায়েরা এসেছে তো তাই কাছে ইলিশ কোনভাবেই আনা সম্ভব ছিল না। বাড়ি থেকে ভেজে নিয়ে এনেছে। মা বলল মাজা ইলিশ দিয়েও করা যায় খেতে খারাপ লাগে না। তাই বানিয়ে ফেললাম। কি রেসিপিটি একবার কোন একটা ইউটিউব চ্যানেলে দেখেছিলাম হ্যাঁ বাংলাদেশী ভদ্রমহিলা এক পশ্চিমবঙ্গের রাধুনীকে শেখার ছিলেন। আমিও তাই এপার ওপার বাংলার যুগলবন্দী করলাম। অর্থাৎ রূপনারানের ইলিশ আর ঢাকার রেসিপি। দেখুন তো ঠিকমতো হলো কিনা!
উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|
বাসমতি চাল | ৬০০ গ্রাম |
ইলিশ মাছ | ৫ পিস |
মিষ্টি দই | ২৫ গ্রাম |
নারকেল | একটা |
পেঁয়াজ বড় সাইজের | ১ টা |
রসুন | পরিমান মতো |
আদা | দু থেকে তিন ইঞ্চ |
কাঁচা মরিচ | ইচ্ছে মতো |
কাশ্মিরী রেড চিলি পাওডার | আন্দাজ মতো |
নুন | পরিমান মতো |
তেল | পরিমান মতো |
ঘি | পরিমান মতো |
ময়দা | এক টেবিল চামচ |
চলুন দেখে নিই কিভাবে বানালাম।
প্রথমেই কিছুটা পেঁয়াজ বেটে নিয়েছি সাথে আদা ও রসুন বেটে নিয়েছি। আর খানিকটা পেঁয়াজ কুচি করে রেখেছি। নারকেলটা কে করে নিয়ে সেখানে গরম জল মিশিয়ে নারকেলের দুধ বার করে নিয়েছি।
কড়াই গরম করে তাতে অল্প একটু ঘি এবং সাদা তেল দিয়েছি। ঘি গলে যাবার পর সাদা তেলটাও সাথে গরম হতে কুঁচানো পেঁয়াজ এবং আদা রসুন বাটা দিয়ে ভাজতে শুরু করেছি৷
কুচানো পেঁয়াজ টা বাজে বাজে হয়ে গেলে তারপরে তাতে অর্ধেক পরিমাণ বাটা পেঁয়াজ দিয়েছি এবং কাশ্মীরি লাল লঙ্কার গুঁড়ো পরিমাণ মতো নুন ও কাঁচা মরিচ দিয়ে আবারো বেশ কিছুক্ষণ অল্প আঁচে নাড়াচাড়া করেছি।
এবার একটা বাটিতে করে প্রায় ২৫ গ্রাম মত মিষ্টি দই নিয়েছি তাতে এক টেবিল চামচ ময়দা দিয়ে বেশ করে ফেটিয়ে নিয়েছি যাতে কোনরকম লাম্বস না থাকে। এবং সেটা কি কড়াইতে কষা মসলার সাথে দিয়ে দিয়েছি।
মসলাটা আরো একটু ভাজা ভাজা হয়ে গেলে তারপরে তাতেই এক কাপ মত নারকেলের দুধ মিশিয়েছি। এটা কি আরও একটু সময় ধরে রান্না করলাম।
এরপর ইলিশ মাছগুলো দিয়ে খানিকক্ষণ ঢাকা দিয়ে দিয়েছিলাম। এই সময় যদি মনে হয় যে জল একেবারেই কমে গেছে তাহলে সামান্য গরম জল দেওয়া যেতেই পারে। ইলিশ মাছটা যেহেতু ভাজা তাই রান্না হতে খুব একটা বেশি সময় লাগেনি। ৫-১০ মিনিট ফোটানোর পরই নামিয়ে নিয়েছি।
প্রথম ধাপের রান্না শেষ এবার দ্বিতীয় ধাপের রান্না। এবার আমি পোলাওটা রান্না করবো। তার জন্য প্রথমেই কড়াইতেই ঘি দিয়ে দিয়েছি। এবং পেঁয়াজের বাটা পেঁয়াজ যতটুকু বাকি ছিল সবটাই দিয়ে তাতে আধা পেঁয়াজ বাটা মিশিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করেছি। এরপর ইলিশ মাছের যেই গ্রেভিটা ছিল সেটাই পোলাওয়ের মসলার মধ্যে মিশিয়ে দিয়েছি মাছগুলোকে আলাদা করে রেখে।
আমি তো ৬০০ গ্রাম চাল দিয়েছি তাই আমাকে তার ডবল জল নিতে হবে৷ ৬০০ গ্রাম চালটা আমি কৌটোতে মেপে নিয়েছিলাম আমার কৌটো অনুযায়ী তিন কাপ চাল হয়েছে। আর আমার কাছে এক ছিল দিন কাপ নারকেলের দুধ। তাই তিন কাপ জল আমি মসলার মধ্যে ঢেলে একটু ফুটিয়েই চালটা ঢেলে দিয়েছি।
প্রথমে ফ্লেম হাই করে রেখে তারপর একেবারে কমিয়ে চাপা দিয়ে দিয়েছি। প্রায় দশ মিনিট এভাবেই রান্না করেছি। ঢাকাটা খুলে দেখলাম জলটা প্রায় কমে গেছে।
এবার আমি বাকি নারকেলের দুধটা মিশালাম। নারকে দুধ শুরুতেই মেশাইনি কারণ শুরু থেকে যদি মিশিয়ে দিতাম তাহলে হয়তো দুধটা কেটে যেতে পারত। এরপর কয়েক মিনিট পাঁচটা থেকে ফুটিয়ে নিয়ে ভাতটা এভাবে করার উপরে একটু বিছিয়ে দিয়েছি যাতে করে মাছগুলো সুন্দর করে বসিয়ে দিতে পারি।
আজকে রান্না সেই ধাপ। ইলিশ মাছগুলো সুন্দর করে বসিয়ে দিয়েছি যাতে ভেঙে না যায়। এরপর একদম কম আঁচে প্রায় ১০ মিনিট মত রেখে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু করাইটা ঢাকা ছিল আরো প্রায় ২০ মিনিট। হলো তো রান্নাটা সেট হয়ে যাওয়ার জন্য অনেকটাই সময় পেয়েছিল। এভাবেই তৈরি করে ফেলেছিলাম রূপনারানের ইলিশ মাছ দিয়ে বাংলাদেশী ঢাকাই ইলিশ পোলাও।
আচ্ছা, আবার আগামীকাল আসব নতুন কোন পোস্ট নিয়ে। ততক্ষণ আপনারা ভীষণ ভালো থাকুন আনন্দে থাকুন। আজ এ পর্যন্তই...
টাটা
পোস্টের ধরণ | রেসিপি পোস্ট |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট |
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/neelamsama92551/status/1838648580283699604?t=uPW_uenNgFof8738Tv_UBg&s=19
ইলিশ দিয়ে তৈরি ঢাকাইয়া ইলিশ পোলাও রেসিপিটা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ইলিশ মাছ এমনিতেই আমার খুবই পছন্দের একটি মাছ। তারপরে যদি ইলিশ পোলাও হয় তাহলে তো আর কোন কথাই নেই। চোখ বন্ধ করলেই প্লেটটা সাভার হয়ে যায়। যাইহোক আপু আপনার রন্ধন প্রণালী এবং পরিবেশন দেখে মনে হচ্ছে ইলিশ পোলাও খুবই সুস্বাদু হয়েছিল। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু এরকম সুস্বাদু একটি লোভনীয় রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এই রেসিপিটা আপনাদের দেশেরই একজনের থেকে শেখা। খুবই ভালো হয়েছিল, বাড়ির সবাই খুবই উপভোগ করে খেয়েছেন।।
অনেক লোভনীয় একটি রেসিপি আজকে আপনি তৈরি করেছেন। দেখেই জিভে জল চলে এসেছে। ইলিশ পোলাও খেতে আমি অনেক বেশি পছন্দ করি। অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে খেতে অনেক ভালো লাগে। আপনি দেখছি খুবই সুন্দরভাবে ইলিশ পোলাও তৈরি করেছেন খেতেও নিশ্চয়ই অনেক বেশি সুস্বাদু হয়েছে।
আপনাদের দেশে তো খুবই ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে৷ করবেন একদিন। আমাদের সাথে শেয়ার করবেন।ভালো লাগবে৷
ইলিশ পোলাও রেসিপি দারুন হয়েছে। দুই দেশের যুগল যুগলবন্দীতে মৎকার রেসিপি তৈরি করেছেন আপু। দেখে তো খুবই লোভনীয় মনে হচ্ছে। আর আপনার রান্না মানেই তো নতুন কিছু। অসাধারণ হয়েছে আপু।
হে হে। ভালো লাগে আপু, নতুন নতুন রান্না করতে। আমি নিজেই আসলে খাইতে ভালোবাসি। 🙈
আসলে এই ধরনের রেসিপি এর আগে আমি কখনো দেখিনি এবং খাইনি। এই রেসিপিটা আমার কাছে সম্পূর্ণ একটা নতুন ধরনের রেসিপি। আসলে আপনি খুব সুন্দর ভাবে এই রেসিপিটা তৈরীর বর্ণনা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা রেসিপি পোস্ট আমাদের মধ্যে শেয়ার করার জন্য।
আমিও প্রথমবার বানিয়েছি। অনেক আগে রান্নাটা শিখেছিলাম। ভালোই হয়েছিল খেতে। ধন্যবাদ অনেক, মন্তব্য করে পাশে থাকলেন।
এমন রান্নার পদ দেখেই খেতে ইচ্ছে করছে। রূপনারায়ণের ইলিশ বরাবর বিখ্যাত। আমরা ছেলেবেলা থেকেই এই রূপনারায়ণের ইলিশের কথা শুনে আসছি। সেই ইলিশ দিয়ে এমন পোলাও লোভনীয়। ঢাকায় তথা সমগ্র বাংলাদেশের এই রান্নাটি ভীষণ প্রচলিত এবং বিখ্যাতও বটে। ভারতে আমি এই ধরনের রান্নার খুব একটা প্রচলন দেখি না। তবে আমি বাংলাদেশে গিয়ে এই ধরনের পোলাও গুলির স্বাদ গ্রহণ করে মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম। আমি আজও বাংলাদেশের মোরগ পোলাও এর স্বাদকে মিস করি। ইলিশ পোলাওটি দেখে সুন্দর লাগছে। ক্যাপশনটি দুর্দান্ত হয়েছে। সত্যিই এটি দুই দেশের যুগলবন্দী।
হ্যাঁ ঠিকই বলেছ, এই সব রান্না বাংলাদেশেই বেশি হয়৷ আমি চেষ্টা করলাম মাত্র।
ইলিশ এর স্বাদ ই এমন, যেভাবেই রান্না করবেন, সেভাবেই হিট!! আমি কদিন থেকেই ভাবছিলাম যে এবছর ইলিশ পোলাও এখনো খেলাম না! আর আপনি দেখি রেসিপি নিয়ে হাজির! আর সার্ভিং দেখেও লোভ সামলানো যাচ্ছে না! এবার তো বানাতেই হবে!! আশা করছি ভাজা ইলিশ দিয়ে করলেও, খেতে ভীষণ ই মজার হয়েছে!