হঠাৎ দেখা||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। গল্প লিখতে আমার ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝেই গল্প লেখার চেষ্টা করি। তেমনি আজকে সুন্দর একটি গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার কাছে ভালো লাগবে।
হঠাৎ দেখা:
Source
আজ অনেক বছর পর শামীমের সাথে তনিমার দেখা হয়ে গেল। একটা সময় শামীম আর তনিমা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। দুজনে একই ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। দুজনের বন্ধুত্ব দেখে অনেকের হিংসে হত। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। দিন যত যাচ্ছিল তাদের বন্ধুত্বের গভীরতা যেন বেড়েই যাচ্ছিলো। দুজনের খুনসুটি, একসাথে ছুটে চলা সবকিছুই যেন তাদের জীবনের এক অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সময় যত যাচ্ছিলো তাদের বন্ধুত্বের গভীরতা আরো বেড়ে যাচ্ছিল। একটা সময় দুজনে অনুভব করল হয়তো তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু। হয়তো তাদের দুজনের মাঝে ধীরে ধীরে ভালো লাগার তৈরি হয়েছে। হয়তো সেই ভালোলাগা শুধু বন্ধুত্বের ভালোলাগা নয়। তারা দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছে।
শামীম ও তনিমা দুজন দুজনকে মনে মনে ভালোবাসতো। কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারেনি। কারণ একটাই যদি তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায় এই ভয়ে দুজনেই চুপ করে ছিল। আসলে ভালোবাসা হয়তো চাপা রাখা যায় না। সময়ের সাথে সাথে তারা নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে লাগলো। একদিন হঠাৎ করেই শামীম তনিমাকে বলল আমি তোকে ভালোবাসি। আমি যদি তোর সারা জীবনের সঙ্গী হতে চাই তুই কি আমায় রাখবি তোর পাশে? শামীমের মুখে এই কথাগুলো শুনে তনিমা যেন খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেল। তনিমা নিজের মনের কথা কখনো শামীমকে বলতে পারেনি। কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটি আজ তার কাছে এসে ধরা দিয়েছে এই কথাগুলো ভাবতেই তনিমা অবাক হয়ে যাচ্ছে। অন্য রকমের এক ভালোলাগা কাজ করছিল তার ভিতরে।
এভাবে তাদের দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের সম্পর্ক আরো গভীর হয়ে গেল। দুজনের খুনসুটি যেন আরো বেড়ে গেল। হঠাৎ করে তনিমা একদিন শামীমকে বলল আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে। বাড়ি থেকে জরুরি ভাবে ডেকেছে। তনিমার চলে যাওয়ার কথা শুনে শামীমের ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল। তনিমা যখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম তখন শামীম তাকে ট্রেনে তুলে দিল। যতক্ষণ পর্যন্ত তনিমাকে দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ শামীম অবাক নয়নে তাকিয়ে ছিল তনিমার দিকে। মনে হচ্ছিল যেন এই দেখাই তাদের শেষ দেখা। শামীমের ভীষণ মন খারাপ। বাড়ি ফেরার পর থেকে তনিমা শামীমকে একবারও ফোন করেনি। অনেক চেষ্টা করেও শামীম তনিমার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না। এরপর বাধ্য হয়ে শামীম তনিমার বাড়ির ঠিকানায় রওনা দিল।
শামীম যখন তনিমার বাড়িতে গেল তখন তনিমাকে দেখে বেশ অবাক হলো। সেই কাজল কালো চোখে আজ কালি পড়েছে। হয়তো সেই কালিতে অনেক দুঃখ লুকিয়ে আছে। তনিমার পরিবারের সবাই শামীমকে চেনে। তাইতো তারা সবাই শামীমকে আপ্যায়ন করার চেষ্টা করল। তনিমার বাবা এসে শামীমের হাত ধরে বলল বাবা তুমি যখন এসেই পড়েছ কয়েকটা দিন থেকে যাও। হঠাৎ করে তনিমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমি বুড়ো মানুষ সবদিক সামলাতে পারছি না। এই সময় তোমাকে খুবই প্রয়োজন বাবা। আমার বয়স হয়েছে। আমি শেষ বয়সে মেয়েটাকে পাত্রস্থ করতে পারলেই বেঁচে যাই। মেয়ের সুখ দেখে মরতে চাই বাবা। তনিমার বাবার মুখে কথাগুলো শুনে শামীম যেন শোকে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। শামীম বুঝতেই পারছিল না এখন তার কি করা উচিত। একদিকে তার বাবার দেওয়া দায়িত্ব অন্যদিকে তার প্রিয় মানুষটিকে হারানোর যন্ত্রণা।
শামীম কোন কিছুই যেন বুঝতে পারছিল না। নিজের ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতেও পারছিল না। সেই অসহায় মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে শামীম কিছুই করতে পারছিল না। শামীম দেখছিল পুরো বাড়ি জুড়ে আলোকসজ্জা। আর বাড়ির মানুষগুলো কত খুশি। সেই মানুষগুলোর খুশি কেড়ে নেওয়ার অধিকার শামীমের ছিল না। সে অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে সুখী হতে চায়নি। শামীম যখন আনমনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তনিমার কথা ভাবছিল তখন হঠাৎ করেই অনুভব করলো কেউ একজন তার কাঁধে হাত রেখেছে। পেছন ফিরে দেখলো সে আর কেউ নয় সে তার ভালোবাসার তনিমা। তনিমা শামীমকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু কেন জানি তনিমাকে জড়িয়ে ধরতে শামীমের বিবেকে বাঁধছে। তবুও সে তনিমাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারল না। তনিমা শামীমকে বলল চলো আমরা কোথাও পালিয়ে যাই। শামীম তনিমার কথা শুনে কেঁদে ফেলল। শামীম বলল তনিমা হয়তো তুমি আমার ভাগ্যে নেই। তাইতো তোমাকে এই জীবনে সাথী করে পেলাম না। হয়তো পরপারে তুমি আমি আবারও মিলিত হবো। বিধাতা হয়তো এই জনমে আমাদের মিলন লিখেননি। আসলে তারা তাদের সম্পর্কের কথা প্রকাশ করতে পারছিল না। কারণ শামীম ছিল মুসলিম পরিবারের সন্তান। আর তনিমা ছিল হিন্দু পরিবারের সন্তান। তাই তো তারা নিজেদের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে পারেনি।
আজ অনেক বছর পর শামীম ও তনিমা মুখোমুখি বসে আছে। কিন্তু তাদের দুজনের মুখে কোন কথা নেই। তনিমার পাশে বাসা ছোট্ট ফুটফুটে একটি মেয়ে। ঠিক যেন তনিমার মতোই দেখতে। সেই চোখ, সেই নাক, ঠিক যেন ছোট্ট তনিমা। আজ অনেক বছর পর শামীম তনিমাকে দেখলো। পরনে তার সাদা শাড়ি, শিথিতে নেই সিঁদুর। তনিমার এই রূপ দেখে শামীম মেনে নিতে পারছিল না। হয়তো বিধাতা তনিমাকে সুখ দেননি। তাই তো ভালোবাসা মানুষটিকেও তনিমা পায়নি। এমনকি যাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল সেই মানুষটিও তার থেকে দূরে চলে গিয়েছে। আসলে মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্র। হয়তো এভাবেই কেটে যাবে তনিমার জীবন। হয়তো বুক ভরা ভালোবাসা নিয়েও প্রিয় মানুষটিকে কখনো বলতে পারবে না আজও তোমায় ভালোবাসি। হয়তো এভাবেই হঠাৎ দেখা হয়ে যাবে তার প্রিয়জনের সাথে। কিন্তু কথা হবে না।
আশা করছি আমার লেখা গল্পটি সকলের কাছে ভালো লাগবে। আমার লিখা গল্পটি যদি সকলের কাছে ভালো লাগে তাহলে আমার গল্প লেখা সার্থক হবে।
প্রথম থেকে গল্পটি পড়তে বেশ ভালো লাগছিল। শামীম এবং তনিমার ভালোবাসাটা যেন খুব সুন্দর ভাবে এগিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও শেষ রক্ষা হলো না। তনিমার বাবার কথা শুনে শামীম পিছিয়ে পড়লো। আসলে পরিবারের বড়রা আমাদের সবকিছু। এজন্যই হয়তো শামীম তার বাবার কথা ফেলতে পারেনি কিন্তু নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করলো। আসলে তাতেও কোন লাভ হলো না। তনিমা নিজের ভালোবাসাকেও পেল না এরপর নিজের স্বামীকেও হারালো। আসলে ঠিক বলেছেন এইরকম প্রিয় মানুষটির সাথে হঠাৎ দেখা হলেও কিছুই বলার নেই।
সত্যিই আপু ভালোবাসা গুলো মাঝে মাঝে পূর্ণতা পায় না। হয়তো পারিবারিক কারণে কিংবা বড়দের কথা চিন্তা করে। যাই হোক অবশেষে তনিমার জীবন সুখের হলো না। হয়তো সুখ তার কপালে লেখা নেই।
প্রথম প্রথম গল্পটি পড়তে খুবই ভালো লাগছিল কিন্তু শেষের দিকে যখন আসলাম তখন যেন কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। তনিমা ভালোবাসার মানুষটিকেও হারালো এবং তার জীবনসঙ্গী কেও। হয়তো তনিমার ভাগ্যে সুখ ছিলই না। শামীম এবং তনিমার আজকের এই গল্পটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো আমার কাছে।
আসলে আমরা সবাই গল্পের আনন্দ নিতে চাই। তাই তো শেষে এসে আপনার খারাপ লেগেছে। আসলে জীবনের বাস্তবতার কাছে সবাই হার মেনে যায়। তাই তো শামীম আর তনিমার জীবনেও এই দুঃখ নেমে এসেছে।
শামীম ও তনিমা প্রথমে ভালো বন্ধু তারপরে তাদের সম্পর্ক টা ভালোবাসার সম্পর্কে পরিণত হয়। একজন মুসলিম একজন হিন্দু হওয়ার কারণেই তাদের ভালোবাসাটা পরিণতি পেলনা।কিন্তু তনিমার জন্য অনেক খারাপ লাগছিল সে বিধবা হয়ে গিয়েছিল।তার একটা মেয়ে ছিল।ভাগ্যের উপর মানুষের কোনো হাত নেই।শামীম আর তনিমার বিয়ে টা হলে অবশ্যই দুজনে সুখী থাকতো।ধন্যবাদ ভালো লিখেছেন আপনি।
বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসার তৈরি হয়। ভালোবাসা হয়তো জাতি ধর্ম বুঝে না। দুটি মানুষের মনের মিলে ভালোবাসা তৈরি হয় কিন্তু ভাগ্যের উপর আসলে কারো হাত নেই। তাইতো দুজন দুজনকে ভালোবেসেও হারিয়ে ফেলল।
প্রথম দিকে গল্পটা পড়ে খুব রোমান্টিক মনে হল। কারণ বন্ধুত্ব থেকে ভালোলাগা তারপর ভালোবাসায় পরিণত হতে চেয়েছিল তারা দুজন। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। কারণ একজন হিন্দু ছিল অপরজন মুসলমান ছিল। তানিমার বাবার কথা শুনে শামীম কিছু বলতে পারেনি। তনিমা স্বামীর ভালোবাসা পেল না এবং শামীমের ভালোবাসা ও পেল না। ভাগ্যের উপর কারো হাত নেই।
একটি গল্পের মাঝে সুখ-দুঃখ, হাসি কান্না সবকিছুই দেখতে পাওয়া যায়। তাই তো প্রথম দিকটা রোমান্টিক হলেও শেষের দিকটা বিরহে ভরা। হয়তো ধর্ম তাদেরকে আলাদা হতে বাধ্য করেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া মতামতের জন্য।
গল্পটা পড়তে ভাল লাগছিল খুব।শামীম, তনিমা ভাল বন্ধু থেকে ভালবাসার সম্পর্কে পরিনত হয়।একজন মুসলিম, অন্য জন হিন্দু বিধায় তাদের ভালবাসা টা পূর্ণতা পায়নি।তনিমার জন্য অনেক খারাপ লাগলো। তাদের বিয়েটা হলে তারা সুখেই থাকতো। অনেক ধন্যবাদ গল্পটা শেয়ার করার জন্য। অনেক অভিনন্দন আপনাকে আপু।🥰
বন্ধুত্ব থেকে তাদের ভালোবাসা সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি। আসলে যার কপালে সুখ নেই তার কোনভাবেই সুখ আসে না। ধন্যবাদ আপু।
ইস্ সময় মত যদি ওরা একে অপরকে ভালোবাসি টুকু বলে দিতে পারতো তবে হয়তো গল্পটা অন্যরকম হত। তবে হয়তো ওরা আজ মুখোমুখি না বসে পাশাপাশি বসতো। জীবনকে অবশ্যই দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া উচিত। খুব মন ছুঁয়ে যাওয়ার মত গল্প লিখেছো বোন। ভালো লাগলো।
সত্যি আপু ভালোবাসা গুলো হয়তো এমনই হয়। সময় গেলে ভালোবাসা প্রকাশ পায়। কিন্তু জীবনে অনেক কিছুই সুযোগ অনুযায়ী হয় না। হয়তো তাদেরও সেই সুযোগটি এসে আবার হারিয়ে গেছে।
আপু আপনার গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগছিল। কিন্তু শেষে খুব খারাপ লাগলো বেচারী পূর্ণিমার জন্য। তার ভেতরটা কত কষ্টে ফেটে যাচ্ছিল, কেমন লাগছিল তার ভিতর টা একটু ভাবেন তা আপু? আমার তো মনে হয় সে বেঁচে আছে পুতুলের মত।
আমার লেখা গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো আপু। আসলে কিছু কিছু গল্প আছে যেগুলো বাস্তবতা থেকেই উঠে আসে। হয়তো এরকম গল্প আমাদের জীবন থেকেই নেওয়া।