নীলনয়না||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে।আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। গল্প লিখতে আমার ভালো লাগে। তাই আজকে আমি সুন্দর একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আর এই সুন্দর গল্পটির নাম দিয়েছি "নীলনয়না"


নীলনয়না:

CM_20221013134007039.jpg
Device-OPPO-A15(edited)


আকাশের ওই নীল থেকে নীল চুরি করে হয়তো তুমি তোমার দুই নয়নে বসিয়ে নিয়েছো। তাই তো আজ তুমি নীলনয়না। আকাশ নামের সেই ছেলেটি প্রথম দেখাতেই নীলনয়নাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। আকাশ যখন ভার্সিটিতে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করেই দেখল একটি মেয়ে তার মায়ের সাথে রিকশায় বসে আছে। মেয়েটির মায়াবী মুখটা দেখে আকাশ মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেল। মেয়েটির দু চোখের নীল আভা যেন আকাশের মন পাগল করে দিল। আকাশ বেশ কিছুক্ষণ সময় সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটিকে দেখল। আকাশ যখন মেয়েটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তখন মনে মনে ভাবছিল সেই মেয়েটি তার অনেক চেনা। হয়তো আপন মানুষগুলোকে দেখলে বড়ই চেনা মনে হয়। এরপর মেয়েটি রিকশায় করে তার গন্তব্যে চলে গেল। আকাশ তার যাওয়ার পথ পানে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আকাশ মনে মনে ভাবতে লাগলো আর কিছুক্ষণ যদি সে থাকতো তাহলে দুচোখ ভরে দেখে নিতো।


সেদিন ভার্সিটিতে গিয়ে আকাশের আর ভালো লাগেনি। সারাক্ষণ সেই মেয়েটির মায়াবী চোখ গুলোর কথা মনে পড়েছে। বারবার যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতো সেই মায়াবী নীলনয়না। এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুদিন। আকাশ মেয়েটিকে ভুলতে পারিনি। মেয়েটির দেখা পাবার জন্য আকাশ সব সময় আন মনে হয়ে থাকতো। ভাবত হয়ত কোন একদিন আবারও তার দেখা পাবে। এভাবে কেটে গেল আরো কয়েকটি দিন। আকাশ নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। একদিন আকাশ সময় করে তার ফুফুর বাসায় বেড়াতে গেল। ফুফুর বাসায় বেড়াতে গিয়ে তার নীলনয়না দেখা পেল। আকাশ যখন গেট দিয়ে ঢুকছিল তখন দূর থেকেই দেখল একটি মেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সেই মেয়েটিকে ভালোভাবে দেখে আকাশ বুঝতে পারল সে আর কেউ নয় তার নীলনয়না। আকাশের মন আনন্দে নেচে উঠলো। অনেক খুশি মনে আকাশ নিজের ফুফুর বাসায় গেল। সেখানে গিয়ে বেশ কিছুটা সময় কাটালো। তার ফুফাতো ভাই বোনের সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটানো আকাশ। কিন্তু মেয়েটির কথা কোনভাবে বলতে পারছিল না। নাম না জানা সেই মেয়েটির কথা কি করে বলবে আকাশ শুধু সেটাই ভাবছিল।


অবশেষে আকাশ বলেই ফেলল সেই মেয়েটির কথা। যখন আকাশ সেই মেয়েটির কথা বলছিল তখন মুহূর্তেই তার ফুফাতো ভাই ও বোনের মন খারাপ হয়ে গেল। আকাশ তাদেরকে চিন্তিত দেখে অনেকটা অবাক হল। এরপর সেই মেয়েটির সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চাইলো। অবশেষে আকাশ যা জানতে পারলো তা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। আকাশের ফুফাতো বোন বলল ওই আপুটার নাম সুস্মিতা। আপু চোখে দেখতে পান না। আপুর মায়াবী চোখের চাহনিতে কোন দৃষ্টিশক্তি নেই। কথাগুলো শুনেই আকাশের মন ভেঙ্গে গেল। সে কেন জানি বুকের মাঝে ব্যথা অনুভব করতে লাগলো। মনে হয় প্রিয় মানুষটির এই কথাগুলো শুনে তার হৃদয় একেবারে ভেঙে গেল। এরপর আকাশ বাড়ি ফিরে এলো। বাড়ি ফিরে আকাশ কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছে না। বারবার যেন সেই নীলনয়নার মুখখানি তার চোখে ভেসে বেড়াচ্ছে।


অবশেষে আকাশ সিদ্ধান্ত নিল সে তার নীলনয়নাকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে চায়। হয়তো পারিবারিক অনেক বাধা আসতে পারে। তবুও সে তার ভালোলাগার মানুষটিকে পেতে চায়। এবার সে আবারও তার ফুফুর বাসায় গেল। সেখানে গিয়ে তার ফুফাতো ভাই-বোনদের সহযোগিতায় মেয়েটির সাথে কথা বলার সুযোগ পেল। যেহেতু তাদের সাথে মেয়েটির বেশ বন্ধুত্ব ছিল তাই খুব সহজেই আকাশ মেয়েটির কাছে পৌঁছে গেল। কাছ থেকে মেয়েটিকে দেখে আকাশ যেন নিজের বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। তার মায়াবী চোখের জাদুতে আকাশের হৃদয়ের সব কথাগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। এবার মেয়েটি যখন চলে যাচ্ছিল তখন আকাশ পিছন থেকে মেয়েটিকে ডাকলো। অচেনা একজনের কণ্ঠস্বর শুনে মেয়েটি কিছুটা আন মনে হয়ে গেল। এবার জানতে চাইলো সে কে? আকাশের ফুফাতো ভাই বোন আকাশের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিল। বেশ কিছুক্ষণ গল্প হলো তাদের। তবে মনের কথাগুলো বলার সাহস পাচ্ছিল না আকাশ। এভাবেই সেই দিনটি চলে গেল।


এভাবে মাঝে মাঝেই আকাশ মেয়েটির সাথে দেখা করতো। অনেক গল্প করতো ও আড্ডা দিত। মেয়েটির সাথে সময় কাটাতো আকাশ। মেয়েটিও আকাশের বন্ধুত্ব খুব ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিল। হঠাৎ একদিন আকাশ মেয়েটিকে তার মনের কথা বলে ফেলল। সেই কথাটি শুনে মেয়েটি কোন উত্তর দিল না। আকাশ বেশ কষ্ট পেয়ে সেখান থেকে চলে এলো। এরপর বেশ কিছুদিন মেয়েটির দেখা পায়নি। হয়তো মেয়েটি নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে। মেয়েটির সাথে কথা না বলতে পেরে আকাশ মানসিকভাবে বেশ ভেঙ্গে পড়ল। আকাশের এই অবস্থা দেখে তার পরিবারের লোকজন বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। অবশেষে তার ফুপাতো ভাই বোনের কাছ থেকে সবকিছু তারা জানতে পারল। এভাবে আরো বেশ কিছুদিন কেটে গেল। আকাশ আগে থেকে অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। আকাশ এখন আর কারো সাথে খুব একটা কথা বলে না। আনমনে ওই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। হয়তো নিজের মনের কথাগুলো মনে চাপা রেখে দেয়।


এভাবে আরও বেশ কিছুদিন কেটে গেল। বাসা থেকে আকাশের বিয়ে ঠিক করা হলো। আকাশ প্রথমে বিয়েতে রাজি ছিল না। এরপর মায়ের জড়াজড়িতে রাজি হয়ে গেল। আকাশ মেয়েটিকে দেখার জন্য একবারোও আগ্রহ প্রকাশ করল না। এরপর কয়েকদিন পরে হঠাৎ করে একটি অচেনা ফোন নাম্বার থেকে ফোন আসলো। আকাশ ফোন কল রিসিভ করে একটি মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। সেই কণ্ঠস্বর শুনে আকাশের হৃদয়ে কেন জানি চিনচিন করে উঠলো। সেই কণ্ঠস্বর তার অতি পরিচিত লাগছিল। এবার নীরবতা ভেঙে মেয়েটি বলল আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাই আমি আপনাকে একটিবার দেখতে চাই। অনেক জোরাজুরির পর আকাশ মেয়েটির সাথে দেখা করতে রাজি হল। নির্দিষ্ট একটি জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ে আকাশ পৌঁছে গেল। সেখানে গিয়ে দেখল চারপাশটা সুন্দর করে সাজানো। এমন সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবেশ দেখে আকাশের বেশ ভালো লাগলো। এরপর যখন একটি মেয়ে তার সামনে আসলো তখন তার হৃদয় একেবারে এলোমেলো হয়ে গেল।


কারণ সে আর কেউ নয় সে তার নীলনয়না। নীল শাড়ি পড়ে নীলনয়নাকে দারুন লাগছে। এবার নীলনয়না নিজের নীরবতা ভেঙে আকাশকে বলল আপনি তো আমায় অনেকবার দেখেছেন কিন্তু আমি তো আপনাকে কখনো দেখিনি। তাই বিয়ের আগে আপনাকে একবার দেখতে চেয়েছিলাম। নীলনয়নার মুখে এই কথাগুলো শুনে আকাশ যেন অবাক হয়ে গেল। এরপর নীলনয়না বলল আমি এখন চোখে দেখতে পাই। বেশ কয়েক মাস বিদেশে ছিলাম। সেখানে গিয়ে চিকিৎসা করার পর আমার চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছি। কয়েক বছর আগে আমি আমার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলাম। একটি দুর্ঘটনা আমার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিয়েছিল। এরপর আমি অনেকটা হতাশা হয়ে যাই। কখনো এই পৃথিবীটাকে দেখতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু যেদিন আপনি আমাকে ভালোবাসেন এই কথাটি বলেছিলেন সেদিন আপনাকে দেখার প্রতি আমার খুবই ইচ্ছা জেগেছিল। আজ আমি দুচোখ ভরে আপনাকে দেখে নিজের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার আনন্দ সার্থক করলাম। এভাবে আকাশ ও নীলনয়নার মিষ্টি প্রেমের পরিণতি পেল।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 2 years ago 

কি দারুণ রোমান্টিক ব্যাপার। বাস্তবের সব আকাশরা যদি এমনই হত তবে কোন সুস্মিতাকেই আর হীনমন্যতায় কাটাতে হত না। ভীষণ পজেটিভ একটা গল্প। পড়ে বেশ ভালো লাগলো।আমার মনে হয় সুস্মিতার যদি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার কোন সম্ভবনা না ও থাকত তবুও আকাশ ওকে বিয়ে করতো।

 2 years ago 

আসলে বাস্তবতা থেকেই গল্পগুলোর তৈরি হয়। হয়তো বাস্তবতার মত গল্পের চরিত্রগুলো খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে গল্পগুলো কিন্তু ভালো লাগে। গল্পের শেষটাতে দুজন মানুষ একত্রিত হয়েছে এটাই গল্পের সার্থকতা।

 2 years ago 

ভীষণ রোমান্টিক এবং অর্থবহ একটি গল্প ছিল।
প্রথমত আকাশ একজন ভালো হৃদয়ের মানুষ এবং সে সত্যিকারের প্রেমিক। যে একজন মেয়ে অন্ধ জেনেও তাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছে। সুস্মিতাও তাকে পেয়ে জীবনের ছন্দে ফেরার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়ে তার চোখ অপারেশন করিয়ে আকাশকে দেখার স্বাদ মিটিয়েছে। সবশেষে চমৎকার ভালোবাসার মিলন। ভীষণ মিষ্টি একটি গল্প ছিল আপু।
ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

রোমান্টিক একটি গল্প লিখতে আমার ভালো লেগেছে। হয়তো এর মাঝে অনেক অর্থ লুকিয়ে আছে। গল্পের মাঝে অনেক কথাই তুলে ধরা যায়। তাইতো আমিও আকাশ এবং সুস্মিতার সুন্দর একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প শেয়ার করেছি। মন্তব্য করে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

 2 years ago 

ভালো লিখেছেন। সত্যিই তো আশা ভালোবাসাই মানুষকে নতুন জীবন পেতে সাহায্য করে।

 2 years ago 

ভালো লিখেছে কিনা জানিনা তবে আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। যখন প্রিয় মানুষের সাথে নতুন জীবন শুরু হয় তখন হয়তো ভালোবাসার সার্থকতা আসে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

আপনার গল্পটা যখন পড়ছিলাম আমি কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। সত্যিই অসাধারণ ছিল। আকাশ এবং নীলনয়নার অনেক সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন। প্রথমে নীলনয়নার চোখের দৃষ্টি নেই শুনে খারাপ লেগেছিল। শেষের দিকে মনে হচ্ছিল আকাশ আর নীলনয়নার বুঝি আর দেখা হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আকাশ আর নীলনয়নার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল এবং সবচেয়ে ভাল লেগেছে নীলনয়নার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার কথা শুনে। খুব সুন্দর একটি পরিসমাপ্তি ছিল। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি গল্প লিখে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

যখন কেউ গল্প পড়ে অন্য কোথাও হারিয়ে যায় তখন লেখকের লেখা স্বার্থক হয়। যাই হোক ভাইয়া আমি আমার গল্পের মাঝে সুন্দর একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আকাশ এবং নীলনয়নার এই সুন্দর সম্পর্ক পূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

 2 years ago 

অসাধারণ প্রেম ও ভক্তি। আকাশে রে ভালোবাসা আকাশের মতই বিশাল ছিল। আর তাইতো নীলয়না পবিত্র ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে তার মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখেছে। শুভ হোক দুজনার পবিত্র মিলন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া আকাশের ভালোবাসা ঠিক যেন আকাশের মতই বিশাল। তাইতো নিজের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

মিস্টি একটি রোমান্টিক গল্প আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। সব ভালবাসার যদি এমন পরিনতি হতো তাহলে খুব ভাল হতো। আকাশ ও সুস্মিতারা ভাল থাকুক সবসময়। অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।

 2 years ago 

গল্প লিখতে আমার ভালো লাগে। তাই এই মিষ্টি প্রেমের গল্প শেয়ার করেছি। হয়তো এভাবে সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো পূর্ণতা পায়। হয়তো আকাশ ও সুস্মিতার মতো অনেকে তাদের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিতে সক্ষম হয়।

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.16
JST 0.028
BTC 67628.32
ETH 2424.36
USDT 1.00
SBD 2.35