গল্প-তোমার শূন্যতা||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই তো আজকে আমি একটি গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আসলে খুব একটা ভালো গল্প লিখতে পারি এটা কখনোই বলবো না। তবে নিজের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় কোন কিছু লিখতে আমার বেশ ভালো লাগে। আজকে আমি একটি ছোট গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।
তোমার শূন্যতা:
Source
শূন্যতা নামক শব্দটি খুবই ছোট। কিন্তু সেই শব্দের গভীরতা শুধু সেই উপলব্ধি করতে পারে যে এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়। তেমনি নিলয় নিজের ভেতরের শূন্যতা অনুভব করতে পারছে। সুপ্তি আর নিলয় স্কুল জীবন থেকে বন্ধু। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যখন তারা কলেজে গেল তখন তাদের বন্ধুত্ব যেন আরও বেশি গভীর হয়ে গেল। কখন যে বন্ধুত্ব থেকে তাদের মাঝে ভালোবাসা তৈরি হলো দুজনে বুঝতেই পারেনি। দুজন দুজনকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছিল। দুজনের শূন্যতায় দুটি হৃদয় কেঁদে উঠত। এভাবে কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। তারা হয়তো জানেও না তাদের এই সম্পর্ক পরিণতি পাবে কিনা। কারণ সুপ্তি ছিল ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। অন্যদিকে নিলয় মুসলিম পরিবারের ছেলে। তবুও তারা কোন কিছু না ভেবে ভালোবেসেছিল। একে অপরের সাথে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল। এভাবে যখন তাদের মিষ্টি প্রেমের সম্পর্ক এগিয়ে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করেই তাদের সম্পর্কের মাঝে কালো ছায়া নেমে এলো। সুপ্তি জানালো বাসা থেকে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু সুপ্তি কিছুতেই নিলয়ের কথা বাসায় বলতে পারছিলনা। সুপ্তির পরিবার নিলয়কে মেনে নেবে না এটা সে খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল।
এবার দুজনে মিলে ভেবেচিন্তে অনেক বড় সিদ্ধান্ত নিল। তারা দুজনেই একসাথে ঘর বাঁধার চিন্তা করল। সেই চিন্তাধারা থেকে দুজনে পালিয়ে গেল দূরে। অনেকটাই দূরে। দুই পরিবার থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে তারা ঘর বাঁধলো। পরিবারের লোকজন তাদেরকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছে। কিন্তু তাদেরকে খুঁজে পায়নি। এরপর সুখে শান্তিতে কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। হয়তো তাদের সংসারে বিলাসিতা ছিল না কিংবা দামি দামি খাবার ছিল না। কিন্তু ভালোবাসাতে পরিপূর্ণ ছিল তাদের সংসার। হয়তো এক মুঠো ভাত ভাগাভাগি করে খেয়েছিল তারা। তবুও যেন ভালোবাসার কমতি ছিল না তাদের মাঝে। দুটো ছেড়া কাপড়ে দিনপার করেছে তারা। তবুও যেন তাদের মুখে হাসি লেগেই থাকতো। সুপ্তিকে দেখে নিলয়ের ভীষণ কষ্ট হতো। নিলয় বুঝতে পারত সুপ্তির অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এর থেকে ভালো রাখার সামর্থ্য যে নিলয়ের নেই। তাই তো সে ছোটখাটো কাজ করে দুজনের খাবারের জোগাড় করছে। সুপ্তি সব সময় হাসি মুখে নিলয়কে ভুলিয়ে রাখত। কিন্তু নিলয় সুপ্তির হাসিমুখের আড়ালের সেই কষ্ট বুঝতে পারত। আর আড়ালে গিয়ে কাঁদত।
তাদের এই সুখ দুঃখের সংসারে হঠাৎ করে খুশির খবর এলো। সুপ্তি জানালো সে মা হতে চলেছে। এই খবরটা শুনে নিলয় ভীষণ খুশি হয়েছিল। কারণ তারা দুটো মানুষ থেকে তিনজন হতে চলেছে। নিলয় দিনরাত পরিশ্রম করতে লাগলো তার পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। নিলয় একটু একটু করে টাকা জমাতে লাগলো যাতে করে তার অনাগত সন্তানের কোন কষ্ট না হয়। নিলয়ের কষ্ট দেখে সুপ্তির ভীষণ খারাপ লাগতো। সে বুঝতে পারতো নিলয়ের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও কোন কিছু বুঝতে দিত না নিলয়কে। ভালোবাসায় আগলে রাখার চেষ্টা করত সুপ্তি। এভাবে দেখতে দেখতে সময় চলে যাচ্ছিল। অন্যদিকে দুজনের পরিবারের সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই। হয়তো তারা অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু সুপ্তি আর নিলয়ের পরিবার তাদের সাথে কোন প্রকারের যোগাযোগ রাখেনি। সুপ্তি তার মায়ের সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করতো। নিলয়ের ভীষণ খারাপ লাগতো। দেখতে দেখতে অনেকটা মাস কেটে গেল। একদিন হঠাৎ করে সুপ্তির প্রচন্ড ব্যথা উঠল। সুপ্তিকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে নিলয় প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়ল। প্রিয় মানুষটিকে কষ্ট পেতে দেখে সে কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছিল না।
নিলয় সুপ্তিকে হসপিটালে নিয়ে গেলো। হসপিটালে নেওয়ার পর তারা জানালো তাকে অন্য হসপিটালে নিয়ে দিতে হবে। সুপ্তির অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। অন্য হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর তারা জানানো সেখানে অনেক টাকার প্রয়োজন। নিলয় দিশেহারা হয়ে পড়ল। তার ভালোবাসার প্রিয় মানুষটি এবং তার সন্তানকে বাঁচানোর জন্য নিলয় পাগলের মত ছুটতে লাগলো। তার পাশে আজ কেউ নেই। নিজেই নিজের পাশে দাড়িয়ে যেন সাহায্য করার চেষ্টা করছে। অনেক চেষ্টা করেও যেন প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে পারছিলোনা নিলয়। অভাবের সংসার থেকে কিছু কিছু করে টাকা জমিয়েছিল নিলয়। কিন্তু কিছুতেই সেই টাকা দিয়ে কাজ হচ্ছিল না। আরো অনেক টাকার প্রয়োজন। অন্যদিকে নিলয় সুপ্তি এবং তার নিজের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু কেউ তাদেরকে সাহায্য করে না। অনেক অনুরোধ করার পর অপারেশনটা করা হয়। অপারেশন করার পর নিলয়কে জানানো হয় তারা তার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারেনি। একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে সে। এই কথা শুনে নিলয় বেশ কষ্ট পায় এবং দিশেহারা হয়ে পড়ে।
প্রিয় মানুষটিকে হারানোর কষ্ট আর মানসিক যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে পড়ে। এরপর তার ছোট্ট কন্যা সন্তানকে বুকে নিয়ে নিলয় চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। চিৎকার করে বলতে থাকে সুপ্তি আমি তোমাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার মত একজন মানুষকে তুমি ভালোবেসেছিলে বলেই হয়তো আজ তোমাকে চলে যেতে হল। আজ আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে বাঁচাতে পারলাম না শুধুমাত্র অর্থের জন্য। এই কথাগুলো বলছিল আর নিলয় চিৎকার করে কাঁদছিল। হয়তো সেই চিৎকার সবাই শুনতে পেয়েছে কিন্তু কখনো অনুভব করতে পারেনি। হৃদয় থেকে ভেসে আসা সেই চিৎকার কেউ বুঝতে পারবেনা। প্রিয় মানুষটির লাশ বুকে জড়িয়ে চিৎকার করার ভাষা যেন নিলয় হারিয়ে ফেলেছিল। ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটি হয়তো আজ কিছুই জানবেনা কিংবা কিছুই বুঝবে না। তার মাকে হারানোর কষ্ট বুঝবে না। কিন্তু একদিকে যেমন নিলয় তার প্রিয় মানুষটির শূন্যতা অনুভব করবে অন্যদিকে সেই ছোট্ট মেয়েটিও তার মায়ের শূন্যতা অনুভব করবে।
আপু বাস্তবতার চোখ দিয়ে দেখলে আমাদের সমাজের চারপাশে এমন অহরোহ অনেক গল্পই আমরা দেখতে পাই। আর আপনার গল্পটি যেন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। নিলয় সুপ্তি আর তাদের ফুটফুটে বাচ্চা তাদের প্রত্যেকের জন্যই আমার বেশ খারাপ লাগছে। কিভাবে থাকবে নিলয় আর আর বাচ্চাটি। কেন আপু বিরহ দিয়ে শেষ করলেন আপু? আপনি কি তাহলে আমার মতো বিরহ প্রেমী লেখক হয়েগেলেন? অসাধারন আপনার লিখনীর হাত।
বিরহ নিয়ে লিখতে কেন জানি বেশি ভালো লাগে। হয়তো শেষটা বিরহ দিয়েই সব সময় শেষ করার চেষ্টা করি। আসলে গল্প লেখার মাঝে কখন যে বিরহ চলে আসে বুঝতেই পারি না। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
আপনি ঠিক বলেছেন আপু শূন্য কথাটা ছোট কিন্তু এর গভীরতা ব্যাপক। আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে সত্যিই হৃদয়টা ব্যতীত হয়ে উঠেছে। একদিকে যেমন নিজের ভালোবাসার জন্য বাবা মাকে ছেড়ে দূরে চলে গিয়েছে। যতটুকু টাকা ইনকাম করে ওই টাকা কিন্তু তাদের সংসারও সেভাবে চলে না। বছর পার না হতে সুপ্তির পেটে বাচ্চা এদিকে ঠিকমতো সংসার চলে না। আবার এরপরে পরিবারের লোক সংখ্যা একটা বেড়ে যাচ্ছে। যখন তার বাচ্চা হওয়ার সময় আসে তখন টাকার অভাবে সে নিলয় ছুটে বেড়ায়। যদিও সন্তানের জন্ম হয়, কিন্তু ভালোবাসার মানুষ মারা যায়। এটা যে কতটা বেদানাদায়ক বাস্তবে যাদের হয় তারাই উপলব্ধি করতে পারে। এই কষ্ট এ ব্যথা কখনো ভোলার নয়।
সত্যি ভাইয়া শূন্যতা কথাটি অনেক ছোট। কিন্তু এর গভীরতা অনেক বেশি। আসলে সব সময় কেন জানি জীবনের শূন্যতা গুলো আমরা দেখতে পাই না। হয়তো কারো কষ্ট আমরা অনুভব করতে পারি না। যাইহোক চেষ্টা করেছি ভিন্ন ধরনের একটি গল্প লিখে শেয়ার করার জন্য।
হৃদয় ছুঁয়ে গেল লিখাটি আপু।বিরহের গল্প আমার খুব একটা পছন্দ না। তবে আমাদের জীবনেতো কেবল সুখ দিয়ে গড়া নয়। পাশাপাশি দুঃখও আছে। সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন। বেশ ভাল লাগলো আপনার গল্পটি। তবে কস্ট হচ্ছে নিলয় এর জন্য । কিভাবে সে শূণ্যতা নিয়ে বেঁচে থাকবে।অনেক ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
আপু আপনি বিরহের গল্প পছন্দ করেন না তবে কেন জানি বিরহ নিয়ে লিখতেই আমার বেশি ভালো লাগে। হয়তো বিরহ নিয়ে লিখার মাঝে আলাদা রকমের অনুভূতি খুঁজে পাই। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে কারণ প্রথম দিকে দুজন সার্থক ভালোবাসার মানুষের পূর্ণতা পাওয়ার বিষয়টি উপলব্ধি করেছি। ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যে ভালোবাসা সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম যেমনটা সুপ্ত করতে পেরেছিল। সর্বশেষ খুবই খারাপ লাগলো প্রিয় মানুষটিকে অর্থের কাছে হারিয়ে ফেললো। আসলে দারুন একটা গল্প আসলে এই শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না।
আসলে প্রিয়জন হারানোর কষ্ট যে কেমন,সেটা যার হারায় একমাত্র সে ই বুঝে। আসলে অনেক সময় কপালে সুখ সয়না। তাদের সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলেও, ভালোবাসা ছিলো ভরপুর। সুপ্তি বেঁচে থাকলে তাদের তিনজনের দিনগুলো আরো ভালো কাটতে পারতো। কিন্তু বিধাতার নিয়মে সবাইকে একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতেই হবে। সেটা দুই দিন আগে হোক নয়তো পরে। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।