দূর আকাশের তারা||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে।আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ শেয়ার করতে যাচ্ছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই আজকে আমি নতুন একটি গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। এবার চলুন দেখে নেয়া যাক আমি আজকে আপনাদের মাঝে কি গল্প নিয়ে এসেছি।
দূর আকাশের তারা:
Source
আজ অনুর জন্মদিন। তার প্রত্যেকটি জন্মদিনে অনুর ভীষণ মন খারাপ থাকে। কারণ তার জন্মদিনে সে তার মাকে হারিয়েছে। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে মা এমন একটি মানুষ যে মানুষটির সাথে মিশে আছে আদর, স্নেহ এবং ভালোবাসা। অনু যখন এই পৃথিবীতে আসে তখন তাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা পৃথিবী থেকে চলে যান। অনু যখন ছোট ছিল তখন থেকেই তার দাদীমার কাছে মানুষ হয়েছে। তার বাবা তাকে খুব একটা ভালোবাসতেন না। কারণ তার বাবা মনে করতেন অনুর জন্যই আজ সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়েছে। অনুর বাবা অনুর মাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। পরিবারের সবার অমতে অনুর বাবা অনুর মাকে বিয়ে করে তার নিজ বাড়িতে এনেছিলেন। কিন্তু তাদের এই বাড়িতে ঠাই হয়নি। তাইতো তারা ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া করে ছোট্ট সুখের সংসার শুরু করেছিলেন। অল্প বেতনের চাকরি তবুও তারা দুই টোনাটুনি মিলে বেশ আনন্দে দিন কাটাচ্ছিল।
যেদিন অনুর মা অনুর বাবাকে বলে সে মা হতে চলেছে সেদিন যেন তাদের এই ছোট্ট সুখের সংসার আরো বেশি আনন্দে ভরে ওঠে। প্রত্যেকটি দিন তাদের কাছে যেন সুখের মুহূর্ত ছিল। এভাবে ধীরে ধীরে অনু এই পৃথিবীতে আসার সময় হয়ে গেল। অনুর যখন এই পৃথিবীতে আসার সময় হলো তখন অনুর মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ডক্টর যখন জানালেন তারা মা ও বাচ্চাকে একসাথে বাঁচাতে পারবে না। তখন অনুর মা ডক্টরের কাছে অনুরোধ করলেন যাতে করে তাদের এই আদরের সন্তানকে এই পৃথিবীতে আনেন। অনুকে জন্ম দেওয়ার সময় অনুর মা এই পৃথিবীতে থেকে বিদায় নিলেন। একদিকে সন্তান হওয়ার আনন্দ অন্যদিকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া। সন্তানের জন্ম এবং সেই মুহূর্তটি অনুর মা হয়তো বেশিক্ষণ উপভোগ করতে পারেনি। যখন অনুকে তার বাবার কোলে তুলে দেওয়া হল তখন তার বাবা তার মুখের দিকে একটিবার তাকালেন না। কারণ তার জন্যই সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়েছে। হয়ত মনের ক্ষোভ থেকে এমনটি করেছেন।
অনু না পেল বাবার ভালোবাসা না পেলে মায়ের স্নেহ। অনুর মায়ের মৃত্যুর পর অনুর দাদু হঠাৎ করেই মারা যায়। এরপর তারা বাধ্য হয়েই তাদের বাড়িতে গিয়ে ওঠে। অনুর দাদীমা তাকে আদর যত্নে লালন করে। যখন সে একটু একটু করে বড় হতে শুরু করে তখন বারবার তার মায়ের কথা জানতে চায়। তখন তার দাদীমা বলে তোমার মা অনেক ভালো ছিল তাই তো সে ওই দূর আকাশের সুন্দর তারা হয়ে গেছে। এই কথাগুলো শুনে অনু চুপ করে থাকতো। যখন সে দেখত তার অন্যান্য বন্ধুদের মা তাদেরকে আদর করছে তখন তার খুবই কষ্ট হতো। তার দাদীমার কাছে এসে বলতো দাদীমা আমি আমার মাকে চাই। আমি ওই দূর আকাশের সুন্দর তারাটিকে চাই। তখন তার দাদীমা কষ্টে মুখ লুকাতেন। অন্যদিকে তার বাবা নিজের মতোই ব্যস্ত জীবন পার করছিলেন। নিজের অফিসের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। অনুকে দেখার মত সময় ছিল না তার। হয়তো তার হৃদয়ে জমা কষ্ট গুলো এসে পড়েছে অনুর উপর।
এভাবেই যখন অনুর দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল তখন ধীরে ধীরে অনু বড় হতে লাগলো। একদিন হঠাৎ করেই অনু বাড়ি থেকে কোথাও চলে গেল। তার দাদীমা তাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। তার প্রত্যেকটি বন্ধুর বাড়িতে খোঁজ নিয়েছে। কিন্তু কোথাও অনুকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনুর দাদীমা অনুর একটি বইয়ের উপর একটি খাতা পেল। সেখানে লেখা ছিল মা আমিও তোমার মত ওই দূর আকাশের তারা হতে চাই। তুমি কেন একা তারা হয়ে গেলে। এই পৃথিবীতে সবাইতো মা আছে। তবে আমার মা কেন দূরে চলে গেল। মা আমি তোমাকে কোনদিন দেখিনি। তবুও তোমাকে অনুভব করেছি। যখন আমি দূর আকাশে ছোট্ট তারা দেখি তখন আমার খুবই ভালো লাগে। কিন্তু মাঝে মাঝে ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ আকাশের যখন মন খারাপ হয় তখন আমারও মন খারাপ হয়ে যায়। আকাশ মন খারাপ করে যখন নিজেকে কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে ফেলে তখন আমরাও ভীষণ মন খারাপ হয়। কারণ ওই মেঘের আড়ালে আমিও তোমাকে হারিয়ে ফেলি মা।
অনুর সেই খাতাটি যখন তার বাবা দেখল তখন খুবই কষ্ট পেলেন। এরপর নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। অনুর বাবা খুবই ভয় পেয়ে গেল অনুর জন্য। কারণ সে এখন অনেকটা বড় হয়েছে। যদি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তার ভালোবাসার শেষ স্মৃতিটুকুও সে রক্ষা করতে পারবে না। তার ভালোবাসার শেষ স্মৃতি হলো অনু। অনুর মাকে সে হারিয়েছে। তাই হয়তো অনুকে ভালোবাসতে তার বাবার কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু অনুকে এই পৃথিবীতে আনার জন্যই নিজের জীবন দিয়েছে তার মা। অনেক খুঁজেও যখন অনুকে পাচ্ছিল না তখন তারা ক্লান্ত মনে বাড়ি ফিরে আসলো। এসে দেখে অনু নিজের ঘরের বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওই দূর আকাশের তারা দেখছে। অণুকে ঘরে ফিরতে দেখে তার বাবা এবং দাদীমা প্রশান্তি পেল। এবার তার বাবা কাঁদতে কাঁদতে পেছন থেকে তাকে ধরিয়ে ধরল। অনু অনেকটা অবাক হয়ে গেল। কারণ তার বাবার ভালোবাসা সে কখনো পায়নি। এবার অনুর বাবা অনুকে জড়িয়ে ধরে বলল তোমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে তুমিও যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও তাহলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো। আজ থেকে তুমি আমি দুজনে মিলেই ওই দূর আকাশের তারার সাথে গল্প করবো। আমরা দুজনে মিলে তোমার মায়ের সাথে কথা বলবো। আজ থেকে আমিও ওই দূর আকাশের তারাকে আপন করে নিলাম।
দূর আকাশের তারা গল্পটি পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আসলে যার মা নেই তারা বোঝে মা কেমন। তাদের সব সময় একটি দুঃখ তাড়া করে তা হচ্ছে তাদের মা নেই। তারা শুধু চায় একটু মায়ের আদর পেতে। যখন সে তার বাবার আদরও পেত না তখন তার চেয়ে দুঃখী ত্রিভুবনে আর কেউ নেই। তবে গল্পের শেষে এটা ভালো লেগেছে যে তার বাবা তার ভুল বুঝতে পেরেছে এবং মেয়েকে সে মেনে নিয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
যার জীবনে মা নেই সে বুঝতে পারে মা হারানোর বেদনা। আসলে একদিকে অনু যেমন তার মাকে হারিয়েছে অন্যদিকে তার বাবার আদর থেকেও বঞ্চিত হয়েছিল। আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।
মায়েরা তো এমনি হয়। সন্তান পৃথীবির আলো দেখুক এটাই চেয়েছিল অনুর মা। তাই তো গর্ভধারণের সময় জীবন ত্যাগ দিয়ে হলেও মেয়েকে পৃথিবীর আলো দেখালেন। তবে তার বাবা প্রথমে বুঝতে পারেনি। পরে ঠিকই বুঝতে পেরেছে। ভালো ছিল গল্পটি আপু
পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মা তার সন্তানকে ভালোবাসে। এমনকি নিজের জীবনের বিনিময়েও তার সন্তানকে এই পৃথিবীতে ভালো রাখতে চায়। তাইতো অনুর মা তাকে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিল। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
মা কথাটি ছোট্ট হলেও মা ছাড়া একটি সন্তান অনাত বলা যায় ৷কারন যে সন্তান মায়ের আদর ভালোবাসা পায় না সে তো সবচেয়ে বড় অনাদ ৷
যাই হোক গল্পটি পড়ে অনেক কষ্ট পেলুম ৷তবে অনুর বাবা এটা ঠিক করে নি ৷তার মেয়েকে সে দেখতে পারে না ৷
তার বাবার এটা বোঝা উচিত যে এটাই তার ভালোবাসার সম্বল ৷যদিও তার ভালোবাসার মানুষটি পৃথিবী থেকে চলে গেছে ৷কিন্তু তার সৃতি ভালোবাসার প্রতীক রেখে গেছে ৷
মা শব্দটি সত্যি অনেক ছোট। তবে এই শব্দটির মাঝে কতটা ভালোবাসায় মিশে আছে তা আমরা প্রত্যেকেই জানি। তাই একজন শিশু যখন তার মাকে হারায় তখন সে অনাথ হয়ে যায়। পোস্ট পড়ে গঠনমূলক মন্তব্য করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।
কোন বাবা কি এমন হতে পারে সত্যিই!! জন্মের পর নিজের বাচ্চাকে দেখবে না ঠিক করে!! গল্পের এই পার্ট টুকু আমাকে বেশ অবাক করে দিল। তবে মা হারানো একটা সন্তান মায়ের আদরের জন্য যে কতটা ছটফট করতে পারে সেই আকুতি টা বেশ ভালো ফুটে উঠেছে লেখায়। ভালোই লিখছেন আপু আজকাল। ভালো একটা সমাপ্তি ছিল। সামনে হয়তো আরো ভালো কিছু পাব আপনার থেকে।
যখন একজন মানুষ তার প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে ফেলে তখন তার মনের ভেতর অভিমান জমা হয়। আর সেই অভিমানগুলো এসে করে তার সন্তানের উপর। তাইতো অনুর বাবা নিজের অভিমানগুলো নিজের সন্তানের উপর দেখিয়েছে। তবে যাই হোক শেষে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছে।