শৈশবের স্মৃতি: "গ্রামের টিনের চালায় বৃষ্টির শব্দ"

আমার শৈশব কাটেছিলো একেবারে গ্রামে। প্রায় ১০-১১ বছর পর্যন্ত আমি গ্রামের সেই মাটির গন্ধ, সবুজ ধানের খেত আর মনোরম প্রকৃতির মাঝে বেড়ে উঠেছিলাম। গ্রামের সেই পুরনো বাড়ি, যেখানে লাল টিনের চালা ছিলো, আজও আমার মনে সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতির মতো।

বৃষ্টির দিনগুলো আমার জন্য ছিলো এক বিশেষ সময়। গ্রামের টিনের চালায় যখন বৃষ্টি পড়ত, তখন যে শব্দ বের হতো, সেটা আমার মনে হয় অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। টিনের চালায় বৃষ্টির ছোঁয়া যেন একটা সুরেলা মন্ত্র। একেক ফোঁটা বৃষ্টির সঙ্গে যেন একেকটা গল্প বলে। সেই শব্দগুলো শুনতে শুনতে আমি অনেকবার ঘুমিয়ে পড়তাম। কখনও টিনের চালার ওপর বৃষ্টির ফোঁটা এত জোরে পড়ত যে মনে হতো কোনো ড্রাম বাজছে। আবার কখনও হালকা হাওয়ায় টিনের ওপর বৃষ্টি আসত যেন মৃদু সুরেলা বাদ্যযন্ত্র।গ্রামের সেই বাড়ির চারদিকে ছিলো কাঁচা মাটি আর উঠান। বৃষ্টি শুরু হতেই বাড়ির সবাই ছাদ কিংবা বারান্দার নিচে জড়ো হতো। আমি ছোট ছেলেটা বলে গায়ে একটা মোটা চাদর ঢেকে নিয়ে টিনের চালার নিচে বসে থাকতাম। বৃষ্টির শব্দে মন এমন শান্তি পেত যে বাইরে গিয়ে ভিজতে মন চাইতো না। টিনের ওপর বৃষ্টির সেই টিপটিপ শব্দ যেন আমার শৈশবের সুরেলা সংগীত। বাড়ির ভেতর থেকে শুনলে যেন আরেকরকম মধুরতা।

সেই সময় বৃষ্টির জল টিনের ফাঁক দিয়ে ছোট ছোট ঝর্ণার মতো গড়িয়ে পড়ত। আমি বসে বসে সেই ঝর্ণাগুলোর ছবি কল্পনায় আঁকতাম, ভাবতাম একেকটা ঝর্ণা কেমন মজা করছে। অনেক সময় বৃষ্টি এত জোরে পড়ত যে চালার নিচে আমাদের ছোট্ট ঘর থেকে পানি ঢুকত। বাবা মা বলত, "বৃষ্টি আসছে, দেখ ভালো করে চালার গর্ত গুলো বন্ধ করো।" কিন্তু ওই ছোট গর্ত গুলোতেই যেন বৃষ্টির মজা লুকিয়ে ছিল।গ্রামের বৃষ্টি আর টিনের চালার সেই শব্দ আমাদের শৈশবের সঙ্গে এত ঘনিষ্ট যে সেটা কোনো শহরের ইট-পাতার বাড়ির চেয়ে একদম আলাদা। শহরে যেখানে বৃষ্টির শব্দ আসে রাস্তার কংক্রিট আর গাড়ির হর্ণের সঙ্গে মিশে, সেখানে গ্রামের বৃষ্টির শব্দ ছিলো একেবারে প্রকৃতির নিজের সুর। আর সেই সুর আমাকে ফিরে নিয়ে যায় অতীতের এক শান্তিময় জগতে।