সীতাকুন্ডে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে এক অনবদ্য যাত্রা: একটি অপ্রত্যাশিত সুযোগ।
আমার অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে, আর পরীক্ষার প্রস্তুতির মধ্যে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই এক বিশাল ঝামেলার কারণে সাত কলেজের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলো। গত ২৮ তারিখে আমার একটি পরীক্ষা ছিল, কিন্তু ঝামেলার কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেল। পরবর্তী পরীক্ষা ৩ তারিখে।এর মানে, আমি পেলাম দীর্ঘ সময়ের অবসর, যা যেন এক নতুন সুযোগ হয়ে উপস্থিত হলো।
এই দীর্ঘ অবসরে, আমি এবং আমার বন্ধু এক নতুন পরিকল্পনা নিয়ে বসেছিলাম। পরবর্তী পরীক্ষার জন্য এখন কোনও উদ্বেগ ছিল না, এবং আমাদের মন ছিল নতুন কিছু করার দিকে। অবশেষে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, সীতাকুন্ডে ঘুরতে যাওয়ার। আমাদের মধ্যে পরিকল্পনা ছিল, সীতাকুন্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি একরকম রিফ্রেশ হওয়ার। সেই অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় আমাদের যাত্রা শুরু হলো। সীতাকুন্ড যাত্রাপথ অনেক দীর্ঘ ছিল, কিন্তু ভ্রমণের আনন্দই যেন সবার ক্লান্তি দূর করে দেয়। শুক্রবার ভোর ৫টা নাগাদ আমরা সীতাকুন্ড পৌঁছলাম।
পৌঁছানোর পর, কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে আমরা রওনা দিলাম সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের দিকে। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, যা আমি আগে কখনো দেখিনি, তা ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতার অনুভূতি।সকালের প্রথম প্রহরে সৈকতের পৃষ্ঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে, মনে হচ্ছিল যেন আমি এক স্বপ্নের মধ্যে আছি। সকালের প্রথম প্রহরে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করার সাথে সাথে, সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে থাকার অনুভূতি ছিল অসাধারণ।
এক দিকে সবুজে ঘেরা গাছপালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আর অন্য দিকে সুবিশাল সমুদ্রের বিশালতা – দুইটি সৌন্দর্যের মিলনে তৈরি হয়েছিল এক অনন্য দৃশ্য। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতটি এতটা শান্ত এবং শান্তিপূর্ণ ছিল, যে, প্রতিটি মুহূর্ত মনে হতো যেন কোনো এক কাল্পনিক জায়গায় এসে পড়েছি। সমুদ্রের নোনা পানি অনেক দূরে ছিল, তাই সমুদ্রের তীরে সময় কাটানোতেই আমরা মগ্ন ছিলাম। আমরা বসে ছিলাম, হালকা বাতাসে দুলছিলাম, আর চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছিলাম।
এ এমন এক সময় ছিল, যা আসলেই জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়। প্রকৃতির মধ্যে কিছু সময় কাটানোর সময় মন ও মস্তিষ্ক যেন পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে। শীতল বাতাস, সমুদ্রের নরম ঢেউয়ের আওয়াজ, পাখির গান, আর গাছপালার মৃদু সঞ্চারণ – এসব মিলিয়ে এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব হচ্ছিল। প্রকৃতির এই শান্ত পরিবেশে আমরা অনেকক্ষণ সময় কাটালাম এবং মনে হলো, প্রকৃতি আমাদের জন্য অনেক কিছু শিখিয়ে দিতে পারে।
যতটা সম্ভব, আমরা সৈকতের সৌন্দর্য ক্যামেরায় বন্দী করার চেষ্টা করলাম। যদিও পানিতে নামার সুযোগ ছিল না, তবে সৈকতের পাশে বসে থাকা এবং চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করার অনুভূতি ছিল অমূল্য। একান্তে কাটানো সেই সময় আমাকে প্রকৃতির সাথে এক হয়ে যেতে সহায়তা করেছিল। বাঁশবাড়িয়া সৈকত আমাদের জীবনের এক বিশেষ স্মৃতি হয়ে রইল।
এটা ছিল এক আদর্শ প্রকৃতি ভ্রমণ, যেখানে প্রকৃতির সাথে মিলিত হয়ে মন, মস্তিষ্ক এবং শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। যদি আপনি কখনো এমন একটি ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, যেখানে প্রকৃতি এবং শান্তির মাঝে আপনি নিজের জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পাবেন, তবে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত হতে পারে আপনার জন্য একটি নিখুঁত স্থান।
এই ভ্রমণ আমাকে বুঝিয়েছে, কিছু সময় প্রকৃতির মাঝে কাটানো সত্যিই কখনো কখনো খুবই প্রয়োজনীয়। জীবনের সমস্ত প্রতিযোগিতা, দুশ্চিন্তা এবং চাপ থেকে বের হয়ে যখন আপনি প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন, তখন নতুন এক শক্তি এবং স্পিরিট পাওয়া যায়, যা আপনার সমস্ত দুশ্চিন্তা ও ক্লান্তি দূর করে দেয়। এবং এটি আমার জীবনের এক অমূল্য অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত থেকে সৌন্দর্য উপভোগ করার পর আমরা সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমরা এক অসাধারণ সময় কাটালাম, যা মনে পড়ে চিরকাল। পাহাড়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং উচ্চতা থেকে চারপাশের দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা ছিল অতুলনীয়। সেখানে আমরা জীবনের একটি সুন্দর শিক্ষা পেতে সক্ষম হলাম। প্রকৃতির মাঝে কাটানো সেই সময় আমাদের মনকে প্রশান্তি এবং শক্তি প্রদান করেছে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের এই ভ্রমণ কাহিনী ইনশাআল্লাহ পরবর্তী পোস্টে বিস্তারিতভাবে শেয়ার করব।
প্রত্যেকটা ছবি তোলার লোকেশন এবং ডিভাইসের নামঃ
Device:Samsung A33 (5G)
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
ফোনের বিবরণ
মোবাইল | Samsung A33 (5G) |
---|---|
ধরণ | "সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে এক অনবদ্য যাত্রা: একটি অপ্রত্যাশিত সুযোগ" |
ক্যমেরা মডেল | A33 (48+8+5+2) |
ক্যাপচার | @mohamad786 |
অবস্থান | সীতাকুণ্ড- বাংলাদেশ |
X-Promotion
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অনেক সুন্দর একটি যাত্রা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। সীতাকুন্ড সমুদ্র সৈকত আমাদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন আপনি। আপনার চমৎকার এই পোষ্টের মধ্য দিয়ে অনেক কিছু দেখার এবং জানার সুযোগ হলো। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে ঘুরতে আমারও ভালো লাগে।