শৈশব স্মৃতি:- “কুইশাল অভিযান”

in আমার বাংলা ব্লগyesterday

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

শৈশবের দিনগুলো ছিল মধুর, দুঃসাহসিক, আর নির্ভেজাল আনন্দের ভাণ্ডার। আজও স্মৃতির পটে স্পষ্টভাবে জ্বলজ্বল করে শৈশবের সেই এক মজার ঘটনা—কুইশাল চুরির গল্প (আমাদের এলাকায় আখকে কুইশাল বলা হয়)। সেই কুইশাল চুরি করতে যাওয়ার আনন্দ ছিল অবর্ণনীয়।শৈশবের স্মৃতির পাতা থেকে, কুইশাল চুরি বা আখ চুরির গল্পটি আজ আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে আসলাম।চলুন তাহলে শুরু করি...

1000043336.jpg

সোর্স

তখন আমি খুবই ছোট, তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। মামাতো ভাই-বোনেরা মিলে এক বিশাল দল, যেন ছোট্ট একটা বাহিনী। আমাদের প্রতিদিনের প্রধান কাজ ছিল গ্রামের এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ানো, দস্যিপনা করা আর নতুন কিছু আবিষ্কার করা।

একদিন দুপুরবেলা, সবাই মিলে বসে গল্প করছিলাম। এমন সময় বড় মামাতো ভাই রফিক বলল, “এই, চল সবাই মিলে কুইশাল চুরি করতে যাই।” প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও সবার উচ্ছ্বাস দেখে সাহস পেলাম। আমাদের গ্রাম থেকে খানিকটা দূরে বড়সড় এক জমি, যেখানে সারি সারি কুইশালের খেত। সেই জমির মালিক ছিলেন বড় চাচা, কিন্তু তার খুব রাগী স্বভাব ছিল।বেলা পড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পরিকল্পনা করলাম। সূর্য ডোবার ঠিক আগমুহূর্তে, যখন চারপাশে হালকা অন্ধকার নেমে আসে, তখনই অভিযান চালানো হবে। ৮-১০ জনের দল, প্রত্যেকের হাতে এক-একটা ব্যাগ বা ঝুড়ি। মিশনের নাম “কুইশাল অভিযান।”

যেই ভাবা সেই কাজ। সন্ধ্যার একটু আগে আমরা সবাই জমির পাশে জড়ো হলাম। দলপতি রফিক ইশারায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সে কৌশল ঠিক করে দিল—কেউ পাহারা দেবে, কেউ কাটবে, আর বাকিরা ঝুড়িতে ভরবে। আমি ছিলাম ছোট বলে আমাকে পাহারা দেওয়ার কাজ দেওয়া হলো।অভিযান শুরু হলো। হাত-পা কাঁপছিল উত্তেজনায়। কেউ যেন দেখে না ফেলে এই ভয়ে আমরা সবাই গায়ের সব শক্তি দিয়ে কাজ করছিলাম। রফিক আর হাসান কুইশাল কাটছিল, আর বাকি সবাই মিলে সেগুলো ব্যাগে ভরছিল। আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে চারপাশে নজর রাখছিলাম।

ঠিক তখনই বিপদ! দূর থেকে কারো ছায়া দেখতে পেলাম। আমি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে চিৎকার করে বললাম, “কেউ আসছে! সবাই পালাও!” সঙ্গে সঙ্গে সবাই ছোটাছুটি শুরু করল। কেউ ব্যাগ ফেলে দৌড়, কেউবা হাতে একটা-দুটো কুইশাল নিয়ে ছুটছে।আমরা একটা বড় পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়ালাম। হৃদয় দৌড়ানোর পরও কাঁপছিল উত্তেজনায়। রফিক বড়সড় একটা কুইশাল হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বলল, “দেখেছিস! আমরাই তো গ্রামের বীর।” তার কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।

তারপর বাড়ি ফিরে এলাম। মা-মামীরা আমাদের মুখের চেহারা দেখে বুঝতে পারল কিছু একটা হয়েছে। বড় আপু মুচকি হেসে বলল, “কী করেছো আজ?” আমরা কিছু না বলে কুইশালগুলো বের করলাম। সবাই হাসতে লাগল। মা বললেন, “তোমাদের এই দুষ্টুমি ছেড়ে যদি পড়াশোনায় মন দাও, তাহলে তো বেশ হয়।”সে রাতেই আমরা সবাই মিলে কুইশাল খেতে বসলাম। কুইশালের মিষ্টি রস আর সেই রাতের আড্ডা—সব মিলিয়ে যেন এক অনবদ্য মুহূর্ত। কেউ কেউ নিজের কাটার গল্প বলল, কেউ আবার বলল কিভাবে পালিয়েছিল।

আজ এত বছর পরও সেই দিনের কথা মনে পড়লে হাসি পায়। শৈশবের এইসব দুষ্টুমি, সাহসিকতার গল্প আমাদের জীবনের এক মিষ্টি অংশ। হয়তো তখন জানতাম না, কিন্তু আজ বুঝি, এই ছোট ছোট মুহূর্তই জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। কুইশাল চুরির সেই দিনগুলোই আমাদের শিখিয়েছিল সাহসী হতে, একসঙ্গে কাজ করতে, আর আনন্দ খুঁজে নিতে।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Sort:  
 yesterday 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 yesterday 

1000043342.jpg

 6 hours ago 

আখকে যে কুইশাল বলে তা আপনার পোস্ট থেকে জানতে পারলাম ভাই। আপনাদের আখ চুরির গল্প বেশ টানটান উত্তেজনায় ভরা। যেন থ্রিলিং মুভি একটা। তবে পড়ে বেশ মজা পেয়েছি কিন্তু। ছেলেবেলার এইসব স্মৃতি গুলো সারাজীবন বেশ রঙিন হয়ে থাকে। ভোলা সম্ভব হয় না। দারুণ মজার এক ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করলেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.24
JST 0.037
BTC 96071.21
ETH 3327.74
USDT 1.00
SBD 3.21