স্কুল পালানোর সাহসী অভিজ্ঞতা: শৈশবের এক ভাঙা পায়ের গল্প
শৈশবের দিনগুলো সবসময়ই রোমাঞ্চকর, বিশেষ করে স্কুল পালানোর সেই নিষিদ্ধ মজা। আমার স্কুলজীবনের প্রথম দিকে এমনই একটি ঘটনা ঘটে যা আজও স্পষ্টভাবে মনে পড়ে। তখন আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম, বয়স মাত্র দশ বা এগারো। আমাদের স্কুল ছিল শহরের এক কোণায়, চারপাশে সবুজে ঘেরা। সেই সময়ে স্কুলের নিয়মকানুন খুব কড়া ছিল, তবে আমাদের কিছু বন্ধুর দল ঠিক করেছিলাম স্কুল থেকে পালানোর। যেকোনো কারণেই হোক, আমরা ভেবেছিলাম স্কুল ফাঁকি দেওয়ার মধ্যে এক ধরনের স্বাধীনতা আছে।
একদিন বিকেলে আমি, আকাশ, এবং শফি মিলে প্ল্যান করলাম স্কুল থেকে পালাবো। অন্যরা তো কিছুটা দ্বিধায় ছিল, কিন্তু আমরা ছিলাম দুঃসাহসী। স্কুলের খেলার মাঠের পেছনে একটা ভাঙা দেয়াল ছিল, সেটাই ছিল আমাদের গেটওয়ে। স্কুল শেষ হওয়ার আগেই সেই দেয়াল টপকে পালানোর প্ল্যান ছিল আমাদের।দিনটি ছিল বুধবার। দুপুরের দিকে ক্লাস শুরু হলো, কিন্তু আমাদের মাথায় ছিল পালানোর পরিকল্পনা। দুপুরের খাবারের বিরতির সময় আমরা তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলে খেলাধুলার নাম করে খেলার মাঠে গিয়ে হাজির হলাম। শফি বললো, "এই দেয়ালটা খুব একটা উঁচু না, সহজেই টপকে যেতে পারবো।" আকাশ বলল, "হ্যাঁ, দেখো, আমি আগেই যাচ্ছি।"
দেয়ালটি ছিল প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু, তবে কিছুটা ভাঙাচোরা। আকাশ আগে উঠে যায়, আমি তার পেছনে। কিন্তু দেয়ালের ওপর উঠে বুঝলাম, এটা যতটা সহজ ভেবেছিলাম, ততটা নয়। ওপারে মাটি খানিক নিচে ছিল। আকাশ নিঃশব্দে লাফিয়ে নামলো। এখন আমার পালা। শফি পেছনে থেকে সাহস যোগাচ্ছে, "যাও, কিছু হবে না।"দেয়ালের ওপরে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকাতেই আমার পা কাঁপতে শুরু করল। কিন্তু আর পিছু হটার উপায় নেই। সাহস করে লাফ দিলাম। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, মাটিতে পড়তেই ব্যথার চোটে আমি বুঝতে পারলাম কিছু একটা ভুল হয়ে গেছে। ডান পায়ের গোড়ালিতে অসম্ভব ব্যথা শুরু হলো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, আমি আর উঠে দাঁড়াতে পারবো না।
আকাশ এবং শফি তখন আতঙ্কে। আমার ব্যথায় কাতরাচ্ছি দেখে ওরা প্রথমে চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর শফি বলল, "তোর পা ভেঙে গেছে মনে হয়!" আকাশও বলল, "আমরা কি করি এখন?"আমরা স্কুল পালাতে গিয়ে এতবড় বিপদে পড়বো, সেটা কেউই ভাবিনি। যেহেতু আমরা স্কুল থেকে পালিয়েছি, কাউকে বলতে গেলে ব্যাপারটা আরও বড় হতে পারে। শফি তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিল, "চুপচাপ বাসায় নিয়ে যাবো। কারও কিছু বলবি না।" আমি ব্যথায় অস্থির হলেও বন্ধুদের কথায় সম্মতি দিলাম। দু'জন আমাকে ধরে নিয়ে ধীরে ধীরে আমার বাসার দিকে রওনা দিল।
বাসায় পৌঁছানোর পর মা আমাকে দেখে আঁতকে উঠলেন। প্রথমে কিছু না বললেও পরে সব খুলে বললাম। মা খুব রাগ করলেন, কিন্তু আমার অসহায় অবস্থায় কিছু বললেন না। বাবাকে খবর দিলেন, আর আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।ডাক্তার জানালেন, আমার পায়ের গোড়ালিতে ফ্র্যাকচার হয়েছে। কিছুদিন প্লাস্টার পরে থাকতে হবে। এটা শুনে প্রথমে মনে হলো পৃথিবীটাই থেমে গেছে। বন্ধুরা যখন মাঠে খেলবে, আমি তখন বিছানায় শুয়ে কাটাবো। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। স্কুলের স্যাররা বিষয়টা জানতে পারলেন। আমার স্কুল পালানোর কাহিনী তখন সবার মুখে মুখে। স্যারেরা অনেক শাসন করলেন, তবে আমার শাস্তি ছিল পায়ের ফ্র্যাকচারটাই।
এই ঘটনা আমাকে অনেক শিক্ষা দিয়েছিল। শৈশবে স্কুল পালানো যেন ছিল একধরনের স্বাধীনতার অনুভূতি, কিন্তু তার ফলটা বেশ গুরুতর হয়েছিল। পরে যখন স্কুলে ফিরলাম, বন্ধুরা সবাই আমার প্লাস্টার করা পা দেখে হাসাহাসি করতো। তবে একদিকে ভালো লাগতো যে, আমি তাদের কাছে সেই দিন থেকে এক ধরনের সাহসী চরিত্র হয়ে উঠেছিলাম। যদিও সেই 'সাহসী' হওয়ার চেষ্টার ফল আমাকেই ভোগ করতে হয়েছিল।এই ঘটনার পর থেকে আমি আর কখনো স্কুল পালানোর চেষ্টা করিনি।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/mohamad786FA/status/1844266484148875334?t=GPWFCUazFX82lZYQPERxXA&s=19
আসলে শৈশবে আমাদের জীবনে অনেক স্মৃতি রয়েছে। আর সে সমস্ত স্মৃতি গুলো মধুর আবার দুঃখজনক। ঠিক তেমনি আপনার দুঃখজনক একটি ঘটনা শেয়ার করেছেন। হয়তো বন্ধুরা পাঁচিল টপকাতে পেরেছে কিন্তু আপনার কাছে সম্ভব হয়নি। কারণ পূর্ব অভিজ্ঞতা আপনার ছিল না। যাই হোক এক্সিডেন্টের সম্মুখীন হয়ে গেলেন পায়ের সমস্যা হয়ে গেল কি আর করার। পরিস্থিতির শিকার বলতে গেলে। ঘটনাটা আমাদের মাঝে শেয়ার করে জানার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভাইয়া স্কুল পালানোর মত সাহসিকতা আমিও দেখিয়ে ছিলাম। তবে মায়ের হাতে যে মার খেয়েছি জীবনের তবে স্কুল পালানো ভুলে গেছি। যায়হোক অপনার অভিজ্ঞতা পড়ে ভালোই লাগলো। ধন্যবাদ।