বয়স বাড়লে নাকি বন্ধু কমে, কথাটি কি সত্য?

কেমন আছেন সবাই? পৌষ মাসের শেষ দিকে এসে শীতের প্রকোপ টা মনে হয় কিছুটা কমলো। আমাদের এদিকে কালকে শীত মনে হয় কমই পড়েছে । তবে পাশের বাসার ফ্ল্যাটে খালাত ভাইদের কে দেখলে মনে হয় না যে এখন শীতকাল চলছে, কারণ ওদেরকে আমি কখনোই বাসার ভেতর গরম কাপড় মানে (জ্যাকেট, সোয়েটার ) পড়তে দেখিনি। কিছুদিন আগে তো বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম, ওদের শীত লাগছে না নাকি আসলেই শীত পড়ছে না নাকি আমার বয়স বাড়ার কারণে শীত বেশি আনুভুত হচ্ছে। তবে যাই বলেন না কেন, ছোটবেলায় যেরকম দুরন্তপনা কাজ করে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা ফিকে হতে থাকে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরেকটা জিনিস সবচেয়ে বেশি হয় সেটা হলো অনুভূতি গুলো ভোতা হতে থাকে। গতকাল পোস্টেই লিখেছিলাম বেশ ব্যস্ত সময় পার করছি এখন। সারাদিনই বিভিন্ন কাজে কম্পিউটারের সামনে থাকতে হচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কম্পিউটারে বসি কাজ করতে করতে কিভাবে সকাল পেরিয়ে বিকাল হয়ে যাই সেটাই খেয়াল থাকে না।

কাল রাতে ঘুমানোর সময় একটা বিষয়ে মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। মনে হয় বয়স যত বাড়ে ব্যস্ততা তত বাড়ে সাথে বন্ধুর সংখ্যা ও তত কমে। কারণ বহুদিন হল বন্ধুদের সাথে লং টুরে যাই না। অনেকের সাথে শুধুমাত্র ফেসবুকে কথা হয়, বাস্তবে দেখা হই না বহুদিন।

ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।

একটা ব্যাপার কি, যখন আমরা প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম তখন গ্রামে বিকেলে সমবয়সী সকলের সাথে খেলাধুলা করতাম। এরপর যখন হাইস্কুলে উঠলাম তখন বন্ধুর সংখা হয়ে গেল সিলেক্টিভ। কারণ তখন শহরে চলে আসছিলাম বাসা থেকে কড়া নির্দেশ ছিল খারাপ কারো সাথে যেন না মিশি। এরপর যখন এসএসসি পাস করে কলেজে উঠলাম তখন হয়ে গেল আরও সিলেক্টেড এলাকার বন্ধুবান্ধবদের সাথে তেমন একটা আড্ডা দেওয়ার সময় হতো না সারাক্ষণ থাকতাম তো শুধু কলেজে আর কোচিংয়ে , কলেজ কোচিং এর বন্ধুরাই তখন ভরসা, তাদের সাথেই সারাক্ষণ থাকা । এরপর যখন ভার্সিটিতে উঠলাম তখন সারাক্ষণ ক্যারিয়ারজব কোচিং এবং বাকি সময় টিউশনি করেই কাটিয়ে দেওয়া হত বন্ধুবান্ধবের সাথে ঘোরাফেরা সময়ও কমে এলো । এরপর যখন আস্তে আস্তে প্রফেশনাল কোন কাজে ব্যস্ত হয়ে যাই আমরা কিংবা কোন জব করি তখন তো বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা করার সময় হবে কালেভাদ্রে। আর বন্ধুবান্ধব থাকবে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন। এর পর যখন বিয়ের পিড়িতে বসবেন তারপর ত বন্ধুবান্ধব কি সেটাই ভুলে যাবেন সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকবেন বউ, বাচ্চা আর জব নিয়ে হি হি।

এই হলো আমাদের জীবন। জীবনের চরম বাস্তবতা। সময়ের কাছে আমরা বন্দী, জীবনের কাছে আমরা বন্দী। চাইলে অনেক সময় অনেক কিছু আমরা করতে পারি না। কারণ এই সমাজ আমাদেরকে হাত পা বেঁধে ফেলে। দায়িত্ববোধ আমাদের থেকে অনেক কিছু কেড়ে নেয়।