গতকাল আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি বাজে অভিজ্ঞতা।
আজ - ৮ই ভাদ্র | ১৪২৮ বঙ্গাব্দ | সোমবার | শরৎকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
আজ আমি আপনাদের সাথে গতকাল আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি বাজে অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।
আমার আব্বু ছিলেন একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। উনি মারা যাওয়ার পর আমার আম্মু এখন পেনশন পান। গতকাল ব্যাংকে গিয়েছিলাম আম্মুকে নিয়ে পেনশন উঠানোর জন্য। অবশ্য মাসের প্রথম দিকে সব সময় যাওয়া হয় তবে আম্মুর শরীরটা এতদিন ভাল না থকাই মাসের শেষএর দিকে যেতে হয়েছে।
আমাদের বাংলাদেশ সরকার যদি ও পেনশনের ব্যাপারটা এখন অনলাইন ভিত্তিক করে দিয়েছে। তবে আমাদের সামান্য কিছু সমস্যার কারণে অনলাইনে পেনশন আসছেনা। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাপারটা ঠিক হয়ে যাবে। তখন আর এত কষ্ট করে ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হবে না। আমরা যে দিন পেনশনের জন্য যাওয়ার পরিকল্পনা করি। সেদিনই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। কেননা খুব ভোরে যেতে হয় ব্যাংকে। তা না হলে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। আসলে আমি একদমই সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারিনা। সকালে ঘুম থেকে উঠতে আমার অনেক কষ্ট হয়।
যাই হোক কাল সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়েছিলাম ব্যাংকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। যখন বাসা থেকে রওনা দিই তখন মনে হয় সাড়ে সাতটা বাজে। আমাদের বাসা থেকে ব্যাংকের দূরত্ব খুব বেশি নয়। যদি রিকশা দিয়েছে তবে ১৫ মিনিটের মত সময় লাগে।
ছবিঃ ব্যাংকের সামনে লম্বা লাইন।
সকলের মনে প্রশ্ন জাগবে যে ব্যাংক তো এত সকাল-সকাল খুলে না। হ্যাঁ, ব্যাংক এত সকাল খুলে না, ব্যাংক দশটার দিকে খুলে। তবে আমাদের এত সকাল যাওয়ার মুল কারণ হচ্ছে লাইনে দাঁড়ানো । এত সকাল ব্যাংকে যাওয়ার পরও দেখি অনেক বড় লাইন হয়ে গিয়েছে ব্যাংকের মধ্যে। আমাদের আগে অনেকেই এসে হাজির হয়েছে। যাইহোক ২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমদিকে লাইনে দাঁড়ানো মানুষগুলো থেকে শুরু করলেও পরবর্তীতে দেখি যারা আমাদের অনেক পরে এসেছে তাদের কাজগুলো আগে করে দিচ্ছে। কেননা তারা ঘুষ দিয়েছে তাদের কাজটা আগে করে দেওয়ার জন্য। অথচ আমরা যারা সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি সেটি তাদের কাছে কোন ব্যাপার না।
তাদেরকে যারা টাকা দেবে তাদের কাজটাই মূলত আগে করবে। আমাদের এই লাইনের মধ্যে অনেক বৃদ্ধ ব্যক্তি আছে যাদের এত সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে পা ফুলে গেছে পর্যন্ত । এছাড়া অনেক দুর দুর থেকে মানুষ জন আসে এ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কর্তৃপক্ষ এসকল বিষয় বিবেচনা না করে যারা টাকা দিচ্ছে তাদের কার্যক্রম গুলো আগে শেষ করছে।
আমার কাছে এই সকল ব্যাপারটি অত্যন্ত কষ্ট লেগেছে। এখানে লাইনে দাঁড়ানোর মানুষ গুলো ভেবে বসে আছে তাকে কখন ডাকবে। এছাড়াও তাদের মধ্যে অনেক মানুষই আছে যারা এই ঘুষ নেয়ার ব্যাপারটি জানেও না ।
ঘুষ দেওয়া মানুষগুলোর কাজ আগে শেষ করতে করতে যখন লাঞ্চের সময় হয়ে আসে। তখন তারা লাঞ্চে চলে গেল । লাঞ্চের পর যখন আবার তারা কাজ শুরু করল তখন তারা সবার পেনসন দিতে পারল না, কারন ৪ টা বেজে গেছে আজ আর কাজ করতে পারবে না। আর বাকি যারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে তাদেরকে বলছে, আগামীকাল আবার আসার জন্য।
এটি লজ্জাজনক ব্যাপার হলেও সত্যি আমাদের দেশটকে দুর্নীতি ঘিরে রেখেছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা এই দুর্নীতির শিকার হচ্ছি। বর্তমানে টিকে থাকতে হলে লোক ও টাকার প্রয়োজন। আর এগুলো না থাকলে ন্যায় বিচার থেকে শুরু করে সকল কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের দেশে এমন দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য শুধু সরকারকে দোষ করলে হবে না। আমরাও এই দুর্নীতির অংশীদারি। কেননা অন্যায় যে করে করে অন্যায় সহ্য করে সে সমান অপরাধী। আমরা যদি আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া সকল দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতাম তাহলে আমাদের এই দুর দিন দেখতে হতো না।
সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।
100 SP | 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP |
হাজার হাজার লেখক একত্র হয়েও যদি এরকম আরো কিছু প্রতিবন্ধকতা নিয়ে লেখে তবুও কোনদিন সমস্যার ফুরাবে না। মাঝে মাঝে কিছু দেশের কিছু কাজকর্ম আমাকে খুব ঘৃণার জন্ম দেয়।তবুও আমি সেখানে নীরবতা পালন করি।
এটি দুঃখজনক ।কিন্তু ঘুষের ব্যাপারটি সব দেশই আছে।তবে আমাদের দেশে ব্যাংকগুলো এখনো সম্পূর্ণভাবে স্বচ্ছ।ধন্যবাদ ভাইয়া।
কী করবেন ভাই সম্পূর্ণ বাংলাদেশের এই একই অবস্থা। ঘুষ দিলে কাজ আগে হয়। এবং আমাদের মতো সাধারণ লোক লাইনে দাড়িয়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা।
আমাদের দেশে কিছু সিস্টেম বদলানো উচিত তাহলে আমাদের মত সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ অনেকটাই কমে আসবে।
সত্যিই খুবই দুঃখ জনক ঘটনা।আসলে আমাদের দেশ মানেই দুর্নীতি দিয়ে ভরা ,যে কোন জায়গায়।
ভাইয়া কিছু করার নেই খুবই দুঃখজনক ঘটনা কিন্তু এটাই সত্য বাংলাদেশ দুর্নীতিতে যুক্ত এবং ঘষে আড্ডাখানায় ভরপুর।
আপনার লেখাটি পড়ে আমারই অনেক খারাপ লাগছে আর আপনাদের কেমন লাগতে পারে। সহ্য করা ছাড়াতো আমাদের কিছু করার নাই ।সত্যিই দুঃখ জনক।
আমার বাবাও একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। তিনিও হয়তো কষ্ট করে তার প্রতি মাসের পেনশনের টাকা তোলেন। বাবা মাথার উপর আছে বলে হয়তো আমাদেরএই কষ্ট গুলোর সম্মুখীন হতে হচ্ছে না। তবে আজ আপনার পোস্টটি পড়ার পর নিজের চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে আমার বাবা সেই প্রিয় মুখ। হয়তো আমার বাবা এই কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছে। যা হয়তো আপনার পোস্টটি না পড়লে কখনো উপলব্ধি করতে পারতাম না। ভালো থাকুক সব বাবা।
এটি আসলে একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিসে যারা আছে তারা যদিও আমাদের টাকায় বেতন পায় তারপরও আমাদের প্রতি তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই কারণ তাদের চাকরিটা সরকারি। সরকারের চাকর মানে হচ্ছে জনগণের চাকর। এই কথাটা ভুলে যায় যখন একটা চেয়ারে বসে। অথচ উচিত ছিল জনগণের সেবা টা সবার আগে সবচেয়ে বেশি করা। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো এই সেবার মান ভালো করার জন্যই খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দিনদিন তলিয়ে যাচ্ছে। অথচ একটা সময় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আদর্শ ছিল।
আমি এক বছরের মত একটা সরকারি ব্যাংকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদে চাকরি করেছি। আমি অনেকদিন দ্বিতীয় কর্মকর্তার কাজ করেছি এবং যে সময়টাতে আমি ছিলাম সেই সময়টাতে মানুষকে ভোগান্তি হতে দেয়নি। এমনও অনেক সময় গেছে তামিল চারটার পরে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়েছি। আমার অফিসের কলিগরা বলতো আপনি এগুলা কি করছেন। আমি মানুষের সেবা দেওয়াটাকে আগে দেখতাম, ঘুস ব্যাংকের অন্য কাউকে দিতে নিষেধ করে বলে দিতাম। তাই ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরও সে এলাকার মানুষ আমাকে এখনো মনে রেখেছে। এটা হচ্ছে প্রাপ্তি।
আসলে ভাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেকেরই দাঁড়ানোর ইচ্ছা থাকে কিন্তু সমাজটা আস্তে আস্তে এরকম দিকে যাচ্ছে যে অভিযোগ বা বিচার দেওয়ার কোন লোক পাবেন না আপনি। যদি আপনার কথা শুনে ম্যানেজার কোন পদক্ষেপ নিতেন তাহলে আপনি বিচার দিতে পারতেন কিন্তু তিনি আপনার কথা অনেক ক্ষেত্রে শুনবেন না কারণ ওই কর্মকর্তাকে দিয়ে তার কাজ চালাতে হয়