বুবু নাটকের রিভিউ।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

২৭ ই কার্তিক ১৪২৮ , বঙ্গাব্দ | শুক্রবার | হেমন্ত-কাল |


আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।

আজ আমি আপনাদের সাথে বুবু নাটকের রিভিউ শেয়ার করব।




Screenshot_20211112-211154.jpg
ছবিঃ স্ক্রিনশট এর মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে।

নাটকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলীঃ

  • মিতু চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিশা।
  • সেতু চরিত্রে অভিনয় করেছেন আইরিন আফরোজ।
  • সেলিম এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহেদ শরীফ খান।

নামবুবু।
সম্পাদনাতাইজুল ইসলাম ।
অভিনয়তিশা, শাহেদ শরীফ খান,আইরিন আফরোজ
দৈর্ঘ্য৪১ মিনিট।
ধরনবাস্তবধর্মী।
ভাষাবাংলা।
মুক্তির তারিখ৮.১০.২০২১ইং।

নাটকের সারসংক্ষেপ


মিতু ও সেতু দুই বোন। সেতুর জন্মের কিছু দিন পর থেকে তাদের মা অসুস্থ হতে শুরু করে। তাই ছোট্ট সেতুর সব দায়িত্ব এখন মিতুর উপর এসে পড়ে। মিতু সেতুকে মায়ের মত আদর-স্নেহে বড় করতে থাকে। এদিকে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মায়ের মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুতে বাবাও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই এখন সেতু ও তাদের বাবার সব দায়িত্ব মিতুর উপর। মিতুর আদর-স্নেহে সেতু আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে।

সেতু এখন স্কুলে পড়ছে। প্রতিদিনের মত মিতু স্কুল শেষে সেতুকে বাসায় আনছে। আজ সেতুর মন কিছুটা খারাপ। কেননা তার বন্ধুরা সবাই ভালো ভালো মোবাইল ব্যবহার করছে। কিন্তু তার মোবাইলটি বেশ পুরোনো। তাই তাদের কাছে তার খুব লজ্জা বোধ করছে। তাই সেতু মিতুর কাছে বায়না ধরেছে তাকে একটি আইফোন কিনে দেওয়ার জন্য। মিতুকে সেতুকে বুঝাতে থাকে। তাদের পক্ষে আইফোন কিনাটা কতটা কষ্টকর। একটা আইফোন কিনতে তাদের চার মাস না খেয়ে থাকতে হবে। এবং মিতু তাকে বলতে থাকে যখন সে বড় হয়ে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করবে তখন সে নিজের টাকায় আইফোন কিনতে পারবে। বিভিন্নভাবে তাকে বুঝাতে থাকে। কিন্তু সেতু মন খারাপ করে বসে থাকে মোবাইলের জন্য। তাই মিতু নানা ভাবে টাকা জোগাড় করে সেতুকে মোবাইল কিনে দেয়।

Screenshot_20211112-210754.jpg

নতুন মোবাইল পেয়েছে সেতু খুবই খুশি। এখন সেতু বেশিরভাগ সময়ই মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। পাড়ার সব ছেলেদের সাথে এখন তার যোগাযোগ হয়।এভাবে কাটে সেতুর দিন কাল। হঠাৎ করে একদিন সেতু ও মিতু রিক্সা দিয়ে আসার সময় পাড়ার একটি ছেলে সেতুর সাথে কথা বলতে চাওয়াই মিতু ছেলেটিকে বকা দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। এরপর বাসায় মিতু এসে সেতুর সাথে রাগারাগি করে। এতে সেতু মিতুর উপর রাগ করে মোবাইল আর নেবে না বলে ঠিক করে। পরবর্তীতে মিতু বুঝিয়ে-শুনিয়ে সেতুর রাগ ভাঙ্গায়। মিতু কখনোই সেতুর ওপর রাগ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারেনা। কিন্তু ছোটখাটো যেকোনো বিষয় নিয়ে সেতু সবসময় মিতুর উপর রাগ দেখাই। মিতু সবসময় চায় সেতু যাতে কখনো তার মায়ের অভাবটা না বুঝতে পারে।সব সময় মিতু তার বাবা ও সেতুর জন্য সবকিছুই ত্যাগ করে এসেছে। এমনকি তার বয়স বেড়ে যাওয়ার পরেও সে বিয়ে করছে না।

Screenshot_20211112-210938.jpg

একদিন মিতুর অফিসের কলিগ তাকে বিয়ের জন্য একটি ছেলে দেখায় যার নাম হচ্ছে সেলিম। একদিন সময় করে মিতু সেলিমের সাথে দেখা করে এবং তার পারিবারিক অবস্থার সব কথা বলে। সেলিম মিতুর সব কথা শুনে সব মেনে নে। মিতু সাথে আস্তে আস্তে সেলিমের ভালো একটি বন্ধুত্ব তৈরি হয়। তারা মাঝেমধ্যে দেখা করে এবং ফোনও বেশি সময় ধরে কথা বলে। আর এই ফোনে কথা বলার বিষয়টি মিতুর বোন সেতু বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করছিল। কিন্তু মিতু কখনই সেলিমের কথা তার পরিবারের কাউকে জানাইনি। এদিকে কোন একটি বিষয় নিয়ে মিতুর সাথে সেতুর ঝগড়া হয়। তাই সে ঝগড়ার প্রতিশোধ তুলতে সেতু ওই সেলিমকে কল দিয়ে মিতুর নামে আজেবাজে সব কথা বলে। আর এসব কথাগুলো সেলিম বিশ্বাস করে নেই। এবং মিতুর সাথে সে খুবই বাজে ব্যবহার করে।

Screenshot_20211112-211541.jpg

পরবর্তীতে মিতু যখন সেলিমের ব্যাপারে সেতুকে সব কথা বলে তখন সে তা বুঝতে পারে। সে কত বড় অন্যায় করেছে তার বোনের উপর। ছোটবেলা থেকে তাদের কথা ভেবে কতকিছুইনা বিসর্জন দিয়েছে সে। সেতু পরবর্তীতে নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেলিমকে ফোন দিয়ে সব সত্য কথা বলে দেয়। সেলিম ও নিজের ভুল বুঝতে পারে সে ভাবে যে একটি কথার কারণেই কতই না খারাপ ব্যবহার করেছে মিতুর সাথে। অনেকবার ধরে মিতুকে সরি বলার জন্য সেলিম। কিন্তু মিতু অভিমান করে ফোন আর ধরে না। এদিকে সেতু মিতুকে খুশি করার জন্য বাসার সব কাজ করে রাখে। সেতু অপেক্ষা করতে থাকে মিতু কখন অফিস শেষে বাসায় আসবে।

বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে সেতু ভাবে মিতু এসে গেছে তাই সে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখতে পাই একটি ছেলে এসেছে। সে এসে বলছে অফিস থেকে বাসায় আসার সময় কার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে তার। আর এখানে এভাবে অসমাপ্ত অবস্থায় নাটকটির সমাপ্তি ঘটে।

Screenshot_20211112-210858.jpg

শিক্ষা


আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা স্বার্থহীন ভাবে নিজের সবকিছু অন্যের জন্য বিলিয়ে দেয়। কিন্তু তা আমরা সময়মত বুঝতে পারি না। যখন তা আমরা বুঝতে পারি তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। এক কথায় বলতে গেলে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না। যখন দাঁত থাকেনা তখনই বুঝতে পারি দাঁতের মর্যাদা। তখন আফসোস করতে থাকি হায় কি হারালাম। এ নাটকটিতে থেকে আমরা এমনটাই শিক্ষা নিতে পারি। নাটকে,সেতু মিতুর মায়া মমতা আদর স্নেহ তা কখনোই বুঝতে চেষ্টা করত না। কিন্তু আজ যখন মিতু মৃত্যু সজ্জায় তখন সে উপলব্ধি করতে পারছে যে, মিতু তার জন্য কতটা করেছে।

ব্যক্তিগত মতামত


নাটকটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। নাটকের শেষ পর্যায়ে দিকে খুব ইমোশনাল ছিল। নাটকের নামটির নামের সাথে নাটকের কাহিনীটা অনেকটাই মিল আছে। তিশার অভিনয় সবসময় আমার ভালো লাগে। তবে ছোট বোনের চরিত্রে অভিনয় করা আইরিন আফরোজ এর অভিনয় আমার কাছে তেমন ভালো লাগেনি। তবে নাটকের গল্পটা অসাধারণ হয়েছে। কিন্তু সবথেকে খারাপ লেগেছে অসমাপ্ত অবস্থায় নাটকটি কে শেষ করে দেয়া হয়েছে। নাটকটির দ্বিতীয় পর্বে বের করা হলে খুবই ভালো হবে।

ব্যক্তিগত রেটিং


আমি নাটকটি কে ৮.৫/১০দিচ্ছি।

নাটকের লিংক


নাটকটি দেখতে -

ধন্যবাদ সকলকে।


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 3 years ago 

তিশা আমার একজন প্রিয় অভিনেত্রী। তার প্রতিটি নাটক আমার ভালো লাগে। তবে বুবু নাটকটি আমার এখনো দেখা হয়নি। আপনার পোষ্টটি পড়ে বুবু নাটক সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিষয় খুব ভালো ভাবে জানতে পারলাম। নাটকটি পড়ার পর কেন জানি বুকের মধ্যে কষ্টের অনুভূতি হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা নিঃস্বার্থভাবে তার ভালোবাসা বিলিয়ে দেয়। আবার এমন কিছু মানুষ রয়েছে সেই ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে তাকে আঘাত করে। ধন্যবাদ ভাইয়া দারুণভাবে বুবু নাটকের রিভিউ আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 3 years ago 

খুব সুন্দর একটি নাটকের রিভিউ আপনি দিয়েছেন ভাইয়া নামটি শুনে আমার কাছে ভালো লেগেছে। পুরো কাহিনী পড়ে অন্যরকম ভালো লাগলো নাটকটি। আমি দেখিনি তবে দুই বোনের কাহিনী আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে আসলেই এমন অনেক মানুষ আছে যারা অন্যের জন্য শুধু ত্যাগ করেই যায়। এত সুন্দরভাবে নাটকটির রিভিউ দিয়েছেন যে আমার খুব দেখতে ইচ্ছা করছে নাটকটি। যদিও পুরো কাহিনী আপনার লেখা থেকে বোঝা গেছে তারপরে নাটকটি দেখার ইচ্ছা রইল। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি নাটক এর রিভিউ দেওয়ার জন্য।

 3 years ago 

আমাদের সমাজে এখনো ভালো মানুষগুলো বেঁচে আছে বলেই আমরা কিছুটা হলেও ভালো থাকি। ম্যাক্সিমাম সময় আমরা যেটা খেয়াল করতে পারি যে ভালো মানুষগুলো নিজের স্বার্থকে অপেক্ষা করে মানুষের জন্য, আপন মানুষের জন্য ,পরিবারের জন্য সবটুকু উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছে সামান্যতম ফিডব্যাক এর আশা না করে ।সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে তারা আমাদের জন্য সবকিছু করে যাচ্ছে কিন্তু দুঃখের বিষয় একটাই আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা। যে মানুষগুলো আমাদের জন্য এতোটুকু করছে সেই মানুষের জন্য আমরা সামান্যতম ভাবিনা ।সামান্যতম কিছু করার চিন্তাও করি না। একটা সময় এসেছে সেই মানুষগুলো ক্লান্ত হয়ে যায় তারাও কাউকে পাশে চায় কিন্তু সত্যি কথা বলতে তাদের পাশে তখন তারা কাউকেই পায়না হতাশা ,ক্লান্ত, বিপর্যস্ত হয়ে তারা নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে রাখে ।আমরা হারিয়ে ফেলি একটা প্রকৃত বন্ধু ,প্রকৃত সঙ্গী যে আমাদের সব সময় ভাল চাইতো আপনি ঠিক বলছেন আমাদের সমাজে মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝতে পারে না কিন্তু যখন বোঝে তখন ঢের দেরী হয়ে যায় করার কিছু থাকেনা শুধু তাকে আফসোস।

তিশার এই নাটকটি আমি দেখেছি। অসাধারণ একটি নাটক, মেয়েটির মা মারা যায়, তারপর তিশা সব কিছু কিরে, মেয়েটির সব ইচ্ছা পুরণ করে।

সব মিলিয়ে নাটকটি আমার কাছে ভালো লেগেছে।। আরিফ ভাইয়া আপনার রিভিউটা অনেক সুন্দর হয়েছে।

শুভকামনা রইলো ভাইয়া💓💓💓

 3 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া আপন।
যারা আমাদের জন্য স্বার্থহীন ভাবে অনেক কিছু করে দিন শেষে আমরা তাকেই ভুলে যাই।আর তার বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াই। নাটকটির রিভিউ পড়ে আমার খুব সুন্দর লেগেছে। আর তিশা নায়িকা হিসেবে আমার অনেক বেশি পছন্দের।

Hi @moh.arif,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Please consider to approve our witness 👇

Come and visit Italy Community

 3 years ago 

বউ নাটকের রিপোর্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। সত্যি ভাই আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা স্বার্থহীনভাবে তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং প্রিয় মানুষদের ভালোবাসে কিন্তু তার আত্মীয়-স্বজনের প্রিয় মানুষগুলো প্রথমে বুঝতে পারে না। আর যখন বুঝতে পারে তখন এ নাটকের মত অবস্থায় পরিণত হয়। ভাই আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

নাটকটি দেখা হয়নি কাহীনিটা পড়ে দেখেছি ।পড়ে খুব খারাপ লাগলো যদিও এটি একটি কাল্পোনিক কাহীনি ।তবে বাস্তোবে এমনই ঘটতেছে প্রায় পরিবারে ।কিছু সার্থপর থাকে তারা বুজতে পারে না চায় ও না ।যখন সব কিছু শেষ হয়ে যায় তখন বুজলে আর কাজে আসে না ।এই নাটকটি দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ সবার ।ধন্যবাদ ভাই এতো সুন্দর একটি শিক্ষনীয় নাটক শেয়ার করার জন্য ।

 3 years ago 

বুবু নাটকের রিভিউ অনেক হয়েছে ভাইয়া। আমি নাটকটি দেখিনি তবে ভাইয়া আপনার নাটকের রিভিউ দেখে খুব ভালো লেগেছে। আজকেই দেখবো নাটকটি।

এক কথায় বলতে গেলে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না। যখন দাঁত থাকেনা তখনই বুঝতে পারি দাঁতের মর্যাদা। তখন আফসোস করতে থাকি হায় কি হারালাম।

এই জায়গায় টা অনেক ভালো লাগেছে।
আমরা মানুষ নামের প্রাণী গুলো অনেক সার্থপর।
সময় থাকতে গুরুত্ব দিতে জানি না, যখন সময় চলে যায় তখন হাই হাই করি😥

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.11
JST 0.030
BTC 67768.16
ETH 3769.63
USDT 1.00
SBD 3.48