গল্প।শেষ পর্ব। অনিশ্চয়তার ভালবাসা।। 10% Beneficiary to @shy-fox
সঞ্জয় বলল মা রান্না ঘরে রান্না করছে, আর ওখান থেকে মা কিছুই শুনবে না। তারপরও তুই যেহেতু ইতস্তত করছিস তাহলে চল পুকুর পাড়ে যাই। দুজনে পুকুর পাড়ে গিয়ে দাড়াল। সঞ্জয় হেলানো নারকেল গাছে নিজেও হেলান দিল আর সাহেদ একটি আম গাছের সাথে ডান হাতে কিছুটা ভর করে দাড়াল। সাহেদ বলল তোকে ছাড়া এই কথা আমি আর কাওকে বলতে পারছি না, কারন তুই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। তার আগে তোকে একটি প্রশ্ন করি, তুই কি সুচিকে পছন্দ করিস? সঞ্জয় অনেক জোড়ে খিলখিল করে হেসে উত্তর দিল তোর কি মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি? একেত হচ্ছে আমি হিন্দু আর সুচি মুসলমান। তার উপর আমার ফ্যামিলির অনেক রেস্ট্রিকশন আছে প্রেম ভালবাসার বেপারে। আর সেখানে তুই বলছিস মুসলিম মেয়ের সাথে আমার প্রেম? যাক সেসব কথা তা তুই কেন আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছিস? সাহেদ সঞ্জয় কে বলল দোস্ত তুই সেদিন ঠিকই ধরেছিস। আমার সুচিকে ভাল লাগে আর কেন জানি যত দিন যাচ্ছে আমার ভাল লাগা বেড়েই যাচ্ছে। আমি ঠিকমত পড়াশোনা করতে পারছি না। সব এলোমেলো লাগে।
সাহেদ সন্জয়কে বলল দেখ্ তুই সবার সাথে মিশুক এবং ক্লাসের সবচেয়ে ভাল ছাত্র তাই সবাই তোকে একটু আলদাভাবে পছন্দ করে। কিন্তু আমি কয়েকবার খেয়াল করেছি সুচির তোর প্রতি ফিলিংস কাজ করে যা বন্ধুত্তের বাহিরে। এইজন্য আমি আগে শিউর হয়ে নিচ্ছি তোর সুচির প্রতি কোন ফিলিংস আছে কিনা। সঞ্জয় বলল ওই যে বললি না আমি সবার সাথে খুব মিশি, সেই মেশার কারনে হয়ত তোর কাছে একটু অন্যরকম মনে হয়েছে। আর সুচির আমার প্রতি ফিলিংস কাজ করবে কেন, সে আমার সাথে একটু বেশি ফ্রেন্ডলি এই যা। সাহেদ সঞ্জয় কে বলল, এখন তুই বল আমার কি করনীয়? আমি রীতিমতো এই বেপার নিয়ে অনেক সিরিয়াস হয়ে গিয়েছি। কোনভাবেই পড়ায় মন বসাতে পারছি না। সঞ্জয় সাহেদ কে বলল দেখ্ সামনে এইচ এস সি পরীক্ষা। এখন এসব নিয়ে মাথা খারাপ করিস না। পরীক্ষা ভাল করে দে। তারপর যতটুকু করা যায় আমি সাহায্য করব। সাহেদ বলল তুই যত সহজভাবে বলছিস বেপারটা তা না। সঞ্জয় আবার বুঝিয়ে বলল সামনে এইচ এস সি পরীক্ষা, আর তোর রেজাল্ট খারাপ হলে আংকেল কি করবে চিন্তা করেছিস? আর তোর রেজাল্ট খারাপ হলে সুচিও কি তোকে পছন্দ করবে? সুচির অপছন্দের কথা বলাতে সাহেদের মনে হয় একটু টনক নড়ল। সে সঞ্জয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে গেল।
এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এর মাঝে সাহেদ সঞ্জয় কেউ কারো সাথে খুব একটা যোগাযোগ হয়নি। সবাই পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। শেষ পরীক্ষার দিন সাহেদ, সঞ্জয়, তানিয়া, সুচি, সোহেল, জিল্লুর আর প্রিয়তি সবাই একসাথে কলেজের পুকুর ঘাটে বসে কথা বলছিল। সবাই খুব খুশি। সবার পরীক্ষা ভাল হয়েছে। সোহেল উঠে পড়ল আর বলল সবাই ভাল থাকিস, আমি বাসায় যাচ্ছি। তার সাথে সাথে জিল্লুর আর প্রিয়তিও বলল এতদিন পরীক্ষা দিয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি যাই বাসায় গিয়ে রেস্ট করি, বলেই তারা চলে গেল। সাহেদকে আজ অনেক খুশি মনে হচ্ছিল। তানিয়া জিজ্ঞেস করল কিরে সাহেদ তোকে আজ অনেক খুশি মনে হচ্ছে? সাহেদ বলল তেমন কিছু না। সঞ্জয় বলল সাহেদের পরীক্ষা নিশ্চয়ই ভাল হয়েছে তাই অনেক খুশি। এর মধ্যে সুচি সঞ্জয়কে বলল কাল বিকেলে আমাদের বাসায় একটু আসবি? সঞ্জয় হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেল। সবাই চুপ হয়ে গেল। সাহেদের হাসি মাখা মুখ নিমেষেই অন্ধকার হয়ে গেল। সঞ্জয় হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করল কেন কোন দরকার? সুচি বলল হ্যা দরকার। সঞ্জয় বলল তোর বাসায় ত কখনো যাইনি তার উপর আমি সাহেদকে ছাড়া কোথাও যাইনা। সাহেদ একপ্রকার রাগ করেই বলল আমি কোথাও যাব না। আর সুচি তোকে যেতে বলেছে তুই এর মধ্যে আমাকে টানছিস কেন? সুচি বেপারটা বুঝে সাথে সাথে বলে সঞ্জয় কে একটু দরকার তাই ওকে পারটিকুলারলি বলেছি। তোরাও চলে আয় একসাথে আড্ডা দেয়া যাবে। তানিয়া বলল আমার কাজ আছে আমি যেতে পারব না। বলেই সে উঠে পড়ল এবং বিদায় নিয়ে তড়িঘড়ি করে চলে গেল। তানিয়া রাগ করেছে এইটা সুচি বুঝেছে। কেউ সাথে না গেলে সঞ্জয় যাবে না এবং সাহেদও যেন রাগ না করে সেই জন্য সুচি খুব আন্তরিকভাবে সাহেদকে বলল প্লিজ আগামীকাল চলে আয়। সাহেদও কেমন যেন গলে গেল এবং এই সুযোগ কাজে লাগাবে মনে করে রাজি হল।
সাহেদের রাতে ঘুম আসছিল না। খাটের একপাশ থেকে আরেকপাশ করে রাত পার হয়ে গেল। সে রাতে চিন্তা করে মোটামুটি ডিটারমাইন্ড কাল সুচিকে নিজের ভালবাসার কথা প্রকাশ করবে। পরদিন সঞ্জয় আসার আগেই সকাল ১০ টার দিকে সাহেদ সঞ্জয়ের বাড়ি চলে গেল। সঞ্জয় সাহেদ কে দেখে বলল কিরে কি মনে করে আসা হল। সাহেদ বলল তুই ভুলে গেলি আজ সুচিদের বাড়ি যাওয়ার কথা। সঞ্জয় বলল আজ যেতে ইচ্ছা করছে না অন্যদিন যাব। সাহেদ চিৎকার দিয়ে উঠল। কি বলিস? সুচি আজ যেতে বলেছে তোকে। তোকে নিশ্চয়ই অনেক দরকার তাইত যেতে বলেছে। সঞ্জয় হেসে বলল সুচির থেকেত আমার মনে হচ্ছে তোর দরকার বেশি। সাহেদ বলল চল্ আর দেরি করিস না। সঞ্জয় এক প্রকার অনিচ্ছা নিয়েই রেডি হয়ে এল। সুচিদের বাসায় যেতে হেটে প্রায় ২০-২৫ মিনিট লাগবে। যেতে যেতে সাহেদ সঞ্জয় কে বলল দোস্ত্ আমি কিন্তু আজ পছন্দের কথা বলে দিব। সঞ্জয় বলল যেহেতু তোর মাথা থেকে এই ভুত যাচ্ছে না আর এইচ এস সি পরীক্ষাও শেষ তাহলে চল্ আজ একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। তারা প্রায় বেলা ১১ টা বাজে সুচির বাসায় গিয়ে পৌছেছে। সুচি সাহেদ আর সঞ্জয় কে দেখে খুব খুশি। বলল আমি তোদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তারপর সঞ্জয় আর সাহেদকে ড্রইং রুমে বসিয়ে সুচি ভিতরের ঘরে ঢুকল। এদিকে সাহেদ খুব উচ্ছ্বসিত। অনেক্ক্ষণ হেটে সাহেদ ক্লান্ত। সে তার চুল ঠিক করতে এবং চেহারায় পানি দিতে ওয়াশরুমে ঢুকেছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সাহেদ রুমে ঢুকতেই যা দেখল তা ছিল সাহেদের কল্পনার বাহিরে। সাহেদ আড়াল থেকে যা দেখল আর শুনল তা হচ্ছে সুচি সঞ্জয় কে জড়িয়ে ধরে আছে আর বলছে আমি তোকে অনেক ভালবাসি। সত্যিই অনেক ভালবাসি।
আমার অনিশ্চয়তার ভালবাসা নামক গল্পের আজ শেষ পর্ব শেয়ার করেছি। আশা করি কিছুটা হলেও আপনাদের গল্পের অনুভূতি দিতে পেরেছি। আমি নতুন আরেকটি গল্প লেখা শুরু করেছি। খুব শীগ্রই আপনাদের সাথে গল্পটি শেয়ার করব। ধন্যবাদ সবাইকে।
সাহেদ সঞ্জয় দুইজনের জন্যই কষ্ট হচ্ছে।একজন হারালো ভালবাসার মানুষ, আরেকজন হারালো বেস্টফ্রেন্ড।দারুন একটি ত্রিভূজ প্রেমের গল্প শেয়ার করেছেন।অনেক সুন্দর ছিল ভাই গল্পটি।অনেক শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
সুচি কেন এই রকম করে ভালোবাসল?শাহেদ ভালোবাসে সুচি কে, সুচি সঞ্জয় কে আহা তিন জনের বন্ধুত কি হয়ে গেল? অসমাপ্ত প্রেম হয়ে রয়ে গেল।
হে আপু গল্পটা একটু কমপ্লিকেটেড করেছি। তিনজনের কে এখন কার সেটাই হচ্ছে বড় প্রশ্ন। অসমাপ্ত রাখাটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। তাইতো নাম দিয়েছি অনিশ্চয়তায় ভালোবাসা।
বেস্ট আইডিয়া এভাবে কাহিনী টা অসমাপ্ত রাখলে মনে প্রশ্ন থেকে যায়।