সমস্যা গুলোকে পাশ কাটিয়ে কিছুটা বিনোদনের আশায় ||পর্ব - শেষ||steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

দ্বিতীয় পর্ব

Picsart_22-09-17_22-30-34-740.jpg

সেদিন আমার ওই প্রতারক কলিগের জায়গায় নতুন একজনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সমস্ত পেপারস রেডি করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ কয়েকদিনে একটি অন্যরকম ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রতারক কলিগ তার টেরিটোরির দুজন ডক্টর নিয়ে অফিসে গিয়েছিল। অফিসে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে একটি দরখাস্ত সাবমিট করে এসেছিল। সে ডক্টরদের সুপারিশে আরেকটি সুযোগের জন্য আবেদন করেছিল। যেহেতু ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানি তাই এখানে সবসময় ডক্টরদের মূল্যায়ন করা হয়।

আর এই দুজন ডক্টরের মূল্যায়ন দিতে গিয়ে তাকে আরেকটা সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে, শর্তটি অবশ্য আমার খুব ভালো লেগেছে। তিনি যে পরিমাণ মেডিসিনের অর্ডার দিবেন তার সমপরিমাণ টাকা পূর্বেই অনলাইন করতে হবে। এই শর্তে তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছিল। সবই ঠিকঠাক আছে কিন্তু আমাকে একটু বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। এখন ওই অঞ্চলে নতুন কিছু মার্কেট ক্রিয়েট করে আমাকে দুই কলিগের মাঝে ভাগ করে দিতে হবে। দেখা যাক কি হয় সে কতটুকু শর্ত মেনে চলতে পারে।

20220923_201120.jpg

এদিক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে অপরপ্রান্তে বেশ কিছু ফটোগ্রাফি করেছিলাম। নদীর একটু কাছাকাছি চলে আসায় নদী এবং নৌকার অনেকগুলো ফটোগ্রাফি খুব ভালোভাবে করতে পেরেছিলাম। যার বেশ কয়েকটি আগের পর্বগুলোতে শেয়ার করেছি। আজকে এখানে এসে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগলো ইন্ডিয়া থেকে বড় বড় জাহাজে পাথর ও কয়লা আসতে দেখে। মনে মনে একটু আফসোস হল ইস! যদি কয়েক বছর আগে এই ব্যবস্থা থাকত।

20220917_221159.jpg

চিলমারী নদী বন্দরে আসার পর আমি আমার অভিজ্ঞতাগুলো দুটি পর্বেই শেষ করতে চেয়েছিলাম। এই পর্বটা দেয়ার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু নদী বন্দরের বর্তমান কার্যক্রম দেখে আমার পুরনো একটি ঘটনা বলতে ইচ্ছা করলো আবার দুর্ঘটনাও বলা যায়। এখন এই ঘাটে বেশ বড় মাপের জাহাজ চলাচল করে। খুব বেশি বড় না হলেও নৌকাগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং নিরাপদ। ঘটনাটি বেশ কয়েক বছরের পুরনো নদী বন্দর ঘোষণা এবং কার্যক্রম শুরু হওয়ার অনেক আগে। তখন শুধুমাত্র ছোট ও মাঝারি মাপের কিছু নৌকা চলাচল করত।

20220917_220645.jpg

আমার পোস্ট যারা নিয়মিত ভিজিট করেন তারা অনেকেই জানেন। আমি ব্যবসায় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে, বলতে পারেন সর্বস্ব খুইয়ে ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে জব করতে এসেছি। তারপর সেখান থেকেই আমার বাংলা ব্লগে আমার বিচরণ। যাইহোক আমার প্রধান ব্যবসা ছিল ইন্ডিয়া থেকে পাথর ও কয়লা আমদানি করা। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানায় একটি এলসি স্টেশন ছিল। যেটা পরবর্তীতে স্থল বন্দর ঘোষণা করা হয়েছিল। আমি রৌমারীর নতুনবন্দর পোর্ট দিয়ে কয়লা আমদানি করতাম। কারণ ওই দিকে ভালো মানের নাঙ্গলের কয়লা পাওয়া যায়। নাঙ্গল হচ্ছে ইন্ডিয়াতে একটি কয়লা খনির নাম।

20220917_220951.jpg

এই দিক থেকে আমদানি করা কয়লার মান খুব ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক চাহিদা। আমি এখানকার কয়লা গাইবান্ধা, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলায় সরবরাহ করতাম। কিন্তু মাঝখানে ব্রহ্মপুত্র নদ থাকায় আমাকে যমুনা সেতু হয়ে ঘুরে যাওয়া লাগতো। তাই একদিন চিন্তা করলাম যদি নদী হতে নৌকায় চিলমারী পৌঁছাতে পারতাম তাহলে অল্প সময়ে ও অল্প খরচে সরবরাহ করা যেত। যা চিন্তা তাই কাজ বড় মাপের একটি নৌকা ঠিক করলাম। প্রথম চালানে এক গাড়ি পরিমাণ কয়লা নিয়ে নদী পার হলাম। এবং খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে স্থানীয় একটি ভাটায় কয়লা পৌঁছে গেল।

স্বল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে ভাটায় কয়লা পৌঁছাতে পেরে এই ট্রিপে আমার মুনাফা কিছুটা বেশি হলো। এভাবেই কিছুদিন চলতে লাগল। আমি নৌপথে কয়লা নিয়ে এসে রংপুর ও গাইবান্ধা পর্যন্ত বিভিন্ন ভাটায় সরবরাহ করতে থাকলাম। পরিবহন খরচ স্থল পথের চেয়ে নৌপথে অনেকটা কম তাই ব্যবসায় বেশি লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু সব ঠিকঠাক থাকলেও একটি রিস্ক কিন্তু থেকেই গিয়েছিল। সেটি হচ্ছে জাহাজের তুলনায় নৌকাগুলো অনেক ছোট। এভাবেই একদিন ঘটে গেল চরম দুর্ঘটনা।

20220917_221034.jpg
20220923_213655.jpg

এই ফটোগ্রাফিতে আমরা যে জাহাজটি দেখতে পাচ্ছি এটা আসলে কাস্টমস চেকপোস্ট। আবার সেখানে নদী বন্দরে কর্মকর্তারাও রয়েছে। আমদানিকৃত পাথর ও কয়লা চিলমারী নৌবন্দরে পৌঁছানোর পর এখান থেকেই ছাড়পত্র নিয়ে শিপমেন্ট করতে হয়। স্থলবন্দরে যে প্রক্রিয়ায় কাস্টমস ও স্থল বন্দরের কর্মকর্তারা পণ্য খালাস করে এখানেও সেই একই নিয়মে প্রক্রিয়াটি চলে।

যাইহোক আমার দুর্ঘটনার কথায় চলে আসি। বরাবরের মতোই একদিন নৌকা কয়লা লোড দিয়ে যাত্রা শুরু করে। সেদিন অবশ্য শুরুতেই আবহাওয়া অনেক খারাপ ছিল। নদীতে প্রচন্ড ঢেউ লক্ষ্য করেছিলাম। একবার অবশ্য মন চাইছিল না নৌকা ছেড়ে দিতে। মন বলছিল যদি কয়লা সহ নৌকা ডুবে যায় তাহলে আর শেষ রক্ষা করা যাবে না। ওদিকে আবার ভাটায় কয়লা অত্যন্ত জরুরি ছিল। ভাটায় কয়লা দেয়ার কনট্র্যাক্ট করলে সরবরাহ ঠিক রাখতে হয়। তাই উপায় না পেয়ে নৌকা ছেড়ে দিলাম। কিন্তু অনেক ঢেউ উপেক্ষা করে নৌকা নদী পাড়ি দিয়ে ঘাটের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।

একদম ঘাটের খুব কাছাকাছি এসে প্রচন্ড স্রোতের মুখে পড়ে যায় সাথে আবার বড় বড় ঢেউ। হঠাৎ কয়েকটা বড় ঢেউ আসলে পানি নৌকার উপরে উঠে আসে। কয়লাভর্তি নৌকায় পানি উঠে গেলে নৌকা আস্তে আস্তে ডুবতে শুরু করে। ঘাটের একদম কাছাকাছি নৌকা ছিল। নৌকার মাঝি অনেক দক্ষ থাকায় সে যাত্রা অনেক বড় ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম। মাঝি নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ না করে নৌকা ঘাটের দিকে নিয়ে আসে। তারপরেও অনেকটা ডুবে গিয়েছিল এবং কয়েক টন কয়লা পানিতে ভেসে যায়। সেই থেকে নৌপথে বিশেষ করে নৌকায় কয়লা পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছিলাম।

20220917_220855.jpg

নদীবন্দরে অনেকটা সময় ঘোরাঘুরি করতে মাগরিবের আজান দিয়ে দিল। নামাজ ঘাটের কাছেই এক মসজিদে আদায় করলাম। তারপর ফেরার সময় নতুন কলিগকে নিয়ে নদীর তীরে অবস্থিত হাছান ফুসকা হাউজে দুজনে ফুচকা খেয়ে নিলাম। তারপর সেখান থেকে সোজা চিলমারী শহরে এসে কলিগের জামিনদার ও কলিগের জন্য প্রয়োজনীয় পেপারস গুলো সিগনেচার করে নিয়েছিলাম। অতঃপর সমস্ত কাজ শেষে বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করলাম।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি A-10
ফটো@mayedul
লোকেশনw3w location

Logo.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Sort:  
 2 years ago 

প্রথমেই বলি আপনার ব্যাবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুনে মনটা খুব খারাপ হলো। যাক উপর ওয়ালা যা করেন তাই মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই হবে।

আপনার ঐ কলিগ তাহলে আরো একটি সুযোগ পেলেন। দেখা যাক এবার সে কি করে, তবে আগে টাকা জমা দিলে খুব বেশি সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। তারপরও খারাপ মানুষ অনেক বুদ্ধি ব্যাবহার করে ।

নদী বন্দর এলাকাটা বেশ সুন্দর। আমার কাছে নদী এবং নৌকা দুটোই খুব ভালো লাগে। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের জাহাজটা দেখে দারুণ লাগলো।

 2 years ago 

কোন ধরনের ব্যবসা করলে লাভ লোকসান ক্ষতি জিনিসগুলো মেনে নিতে হবে। কারণ বিভিন্ন ধরনের আপদ বিপদ আল্লাহ আমাদের উপর বর্জন করে এবং সেগুলো থেকে বিপদমুক্ত করার মতো রাস্তা বের করে দেয়। ঠিক তেমনি ভাই কোন কিছুর উপর ভেঙ্গে পড়িয়েন না।
এত সমস্যার পরেও আপনি অনেক সুন্দর একটি সময় কাটানোর পাশাপাশি ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর ভাবে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59511.68
ETH 2613.19
USDT 1.00
SBD 2.39