সেই দিন গুলিও ছিল ভীষণ বন্যাকবলিত || শেষ পর্ব ||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

দ্বিতীয় পর্ব

20220624_114003.jpg

Location

গতকাল বৃহস্পতিবার আমি সারাটাদিন আপনাদের ছেড়ে অনেকটা দূরে ছিলাম। একেবারেই নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গিয়েছিলাম। আপনারা অনেকেই ইসমাইল হোসেন কে নিয়ে কভার করা আমার কয়েকটি পোস্ট দেখেছিলেন নিশ্চয়ই। আমি গতকাল বন্যার পানি উপেক্ষা করে একটি নৌকা নিয়ে ইসমাইলের চড়ে গিয়েছিলাম। ইসমাইলের সাথে মাঝেমাঝেই আমার ফোনে কথা হয়। কয়েকদিন থেকেই ফোনে কথা হচ্ছিল তার বাসায় পানি উঠে গেছে বাড়ির চারদিকে প্রচুর পানি। সেটা না হয় অন্য আরেকদিন বিস্তারিত শেয়ার করা যাবে।

সম্ভবত দুই থেকে আড়াই মাস আগের কথা হঠাৎ করেই একদিন ইসমাইল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আপনারা অনেকেই সেটা জানেন। তারপরেও কিছুটা স্মৃতি মন্থন করছি। তার বাস্তব জীবনচিত্র আমার পোস্টে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলাম। সেদিনের পর থেকেই ইসমাইলের সাথে আমার বেশ ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর আবারও কয়েকবার তার বাসায় গিয়েছিলাম। গতকাল আবারো গিয়েছিলাম তার খোঁজ খবর নেয়ার জন্য। আসলেই পানিবন্দি মানুষেরা অনেক কষ্টে আছে স্বচক্ষে না দেখলে খুব একটা উপলব্ধি করা যায় না। গতকাল পর্যন্ত নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এরকমভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

অনেকদিন পর আজকে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই চনমনে রোদ দেখে বেশ ভালো লাগলো। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথেই রোদের তীব্রতা বুঝতে পারছি। এখন আস্তে আস্তে গরম টাকে অসহ্য মনে হচ্ছে। কল্পনা করতে পারবেন না রোদের তীব্রতা এত বেশি, মনে হচ্ছে পাশে থেকে আগুনের ঝাপটা লাগছে গায়ে। লিখতে বসার কিছুক্ষণ আগে ভাবলাম ইসমাইল কে ফোন দিয়ে একটু বন্যা পরিস্থিতির খবর নেই। যেই ভাবা সেই কাজ সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিয়ে তার সাথে কথা বললাম। জানতে পারলাম নদীর পানি স্থিতিশীল আছে শুনে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। আমি নিজেও আজ রোদের তীব্রতা দেখে এরকমটাই অনুমান করেছিলাম।

20220624_114328.jpg

Location

যাইহোক আসল ঘটনায় ফিরে আসি বন্যাকবলিত সেই দিনগুলি হ্যাঁ ২০১৭ সালের কথা বলছি। গতপর্বে বলতে বলতে থেমে গিয়েছিলাম। আমার শ্বশুর বাড়ির কাছাকাছি এসে রাস্তার উপর যখন প্রচন্ড স্রোত লক্ষ্য করলাম তখন সেখানে দাঁড়িয়ে পরলাম। আস্তে আস্তে পানির গভীরতা বেশি হচ্ছে তাই প্যান্ট পড়ে আর সামনে এগোতে পারছি না। সেখানেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম যদি কেউ আসে তাহলে বাড়িতে খবর পাঠাবো প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট লেগেই আছে। বাসায় ফোন করেও সবগুলো মোবাইল সুইচড অফ পাচ্ছি। সম্ভবত বিদ্যুৎ না থাকার কারণে সবগুলো মোবাইল বন্ধ হয়ে আছে। আমার সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল যখন আমাকে ফোন করে বাঁধে ফাটল ধরার খবর দিয়েছিল। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও যখন বাসায় খবর দেওয়ার মতো কাউকে পেলাম না মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ভিজেই চলে যাব। এমন সময় দেখলাম আমার শশুর মশাই আসছেন উনি কিছু মেডিসিন কেনার জন্য বাজারে গিয়েছিলেন। তারপর উনার সাথে স্রোতের মধ্যেও আস্তে আস্তে হেটে বাসায় চলে গেলাম। আমি একাই যেতে পারতাম কিন্তু বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর প্রচন্ড পানির স্রোতে বিভিন্ন জায়গায় বড় আকারের গর্তের সৃষ্টি হয়। কোন কিছু না জেনে কিভাবে যাই বলেন যদি গর্তে পড়ে যাই। একটু আস্তে করে বলি আমি তো আবার সাঁতার জানিনা হা হা হা।

ভাগ্যিস আমার শশুর মশাই উঠান থেকে ঘর গুলো অনেক উঁচু করে তৈরি করেছেন। এই নিয়ে বিয়ের পর আমি অনেক কথাই বলেছি এত উঁচু করে ঘর করার কি দরকার ছিল। আজকে সেই কথাগুলো ভেবে মনে মনে একটু লজ্জাই পেলাম। যাই হোক দুপুরের পর থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছিল এখন পর্যন্ত বৃদ্ধি অব্যাহত আছে সে কারণেই প্রচন্ড স্রোত। সেই সময় শহর রক্ষা বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে অনেক বছর পর এই অঞ্চলটি প্লাবিত হয়। এর আগে বাধ হওয়ার পর গত ৫০ বছরেও এখানে পানি আসেনি। পানি এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে আমাদের জেলায় সারের গোডাউনে পর্যন্ত পানি ঢুকে গিয়েছিল। আশার কথা রাত বারোটার পর থেকে পানির প্রবাহ কিছুটা কমতে শুরু করে। এভাবে পানি ঢোকা বন্ধ হয়ে গেলে একদিনের মধ্যে অনেক পানি নেমে যাবে।

20220624_113855.jpg
20220624_113802.jpg

Location

পানিবন্দি হয়ে যাওয়ার পর সেই সময় আমাকে এক সপ্তাহের বেশি থাকতে হয়েছিল। পরের দিন থেকে পানি কিছুটা কমে যাওয়ার পরেও হাটুর উপর পর্যন্ত পানি ছিল। এভাবেই প্রতিদিন পানি পার হয়ে আমি আমার অফিশিয়াল কর্মকাণ্ড গুলো চালিয়ে যাচ্ছিলাম। পরবর্তীতে সপ্তাহ খানেক পর যখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসলো তখন আমি বাসায় ফিরে আসলাম। এই কয়েক দিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমি ভালই বুঝতে পেরেছিলাম বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষেরা কতটা কষ্ট ভোগ করে।

নদী তীরবর্তী অঞ্চলে প্রতিবছর বন্যায় নদী ভাঙ্গনের ফলে ঘরবাড়ি সহ আবাদি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই অল্প কয়েকদিনের দুর্দশা আমাদের জীবনক অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। অথচ দুর্গত এই অঞ্চলগুলো প্রতিবছর বন্যায়
দীর্ঘ সময় ধরে পানির নীচে তলিয়ে থাকে। আমরা শুধুমাত্র দূর থেকে দেখে তাদের এই কষ্টের জীবন উপলব্ধি করতে পারিনা। সারা দেশের বন্যার্তদের সাহায্যার্থে আমাদের সকলকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। @rme দাদাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। যিনি অন্য একটি রাষ্ট্রের অধিবাসী হয়েও আমাদের দেশের বন্যা দুর্গতদের জন্য অনেক বড় অংকের ডোনেট করেছেন।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি A-10
ফটো@mayedul
লোকেশনw3w location

Logo-1.png

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

Sort:  

দাদা কে অসংখ্য ধন্যবাদ। অন্য দেশের অধিবাসী হয়েও আমাদের দেশের বন্যা কবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পেরে কিছুটা হলেও বন্যা কবলিত মানুষদের মনোভাব বুঝতে পারছি। বড়রা যা করে ভালোর জন্যই করে। বাড়ি উঁচু করে না বানালে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতেন।২০১৭ সালের ঘটনাটা এত সুন্দর ভাবে লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে মুহূর্তগুলো শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপনি আমার পোস্টগুলো পড়েন এটা দেখে খুব ভালো লাগছে।
সুন্দর মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

কয়েকদিনের অঝোর বৃষ্টির পর গতকাল এতটাই তীব্র রোদ ছিলো। যা আসলে সহ্য করার মতো ছিল না। তবু একটা স্বস্তি ছিল বৃষ্টি কমেছে তাই বন্যাকবলিত স্থানগুলোতে আর পানি বাড়বে না।
২০১৭ সালে তুমি বন্যার কবলে পড়ে ছিলে। আর আমি বন্যা দেখেছিলাম ২০২০ সালে রংপুরে।
একবার বন্যার কবলে পড়ে বুঝতে পেরেছি বন্যা কতটা ভয়াবহ। আসলে কিছু কিছু স্থানে প্রতিবছরই বন্যা হয়। কী অসহায়ত্বের জীবন তাদের। তবুও এই বন্যা মোকাবেলার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না কেউ।
দাদার প্রতি কৃতজ্ঞ বন্যার্তদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য।

 2 years ago 

২০২০ সালে রংপুরে ওই বন্যার ২-৩ দিন পরে আমার মান্থলি মিটিং ছিল। রংপুরে গিয়ে দেখলাম নিচ তলার অধিকাংশ বাসায় বিছানার তোষক ফেলে দিয়েছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60340.89
ETH 2615.66
USDT 1.00
SBD 2.56