সেই দিন গুলিও ছিল ভীষণ বন্যাকবলিত || পর্ব -২ ||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

প্রথম পর্ব

20220620_223141.jpg

প্রতিবছরই আমরা বর্ষাকালে একাধিকবার প্রবল বন্যার সম্মুখীন হই। সেটার জন্য যতটা না বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢল দায়ী তার চেয়ে অনেকটা বেশি আমরা নিজেরাই। মানুষ লোভে পড়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নির্বিচারে গাছ কেটে বনায়ন ধ্বংস করছে। যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা শুধু যে গাছ কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছি তা নয়। আমাদের দেশের নদ নদীগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার না করার কারণে নদীর নাব্যতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে নদীর ধারণ ক্ষমতা একেবারে কমে গিয়েছে। নদীর মাঝখানে বড় বড় চর জেগে ওঠার কারণে নদীর পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই নদীর পানি পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গ্রামগুলো দ্রুত পানির নিচে তলিয়ে যায়। এবং বন্যার পানি যতদিন থাকে তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করে। কোন কোন অঞ্চলে পানির ভয়াবহতা এতটাই বেশি থাকে যে তারা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটায়। সব সময় তারা বাইরে গিয়ে কোথাও থেকে খাবার নিয়ে আসবে সে অবস্থাও থাকে না। তাইতো তাকিয়ে থাকে কে কখন কোন সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। কিছুটা শুকনা খাবার নিয়ে আসবে সেই আশায়।

আজকে দুপুরে আনুমানিক বারোটা কি সাড়ে বারোটা হবে আমি বাজার এক কাপ চা খেয়ে বসে আছি। তেমন কোন কাজ নেই তাই একটু এদিক-ওদিক ঘুরছি ভাবছি হালকা কিছু কেনাকাটা করে বাসায় যাব। এমন সময়ে খুব বিধ্বস্ত এক লোকের সাথে দেখা হল। সে খুব ছটফট করছিল কিছু কেনাকাটা করে তাড়াতাড়ি করে চলে যাওয়ার জন্য। আমি কোন কিছু না ভেবে তার সাথে একটু কথা বলার চেষ্টা করলাম। কথা বলে জানতে পারলাম সে নদী পার হয়ে এসেছে কিছু কেনাকাটা করার জন্য মানে এই সামান্য কিছু শুকনা খাবার। তাদের এলাকাও বেশ বন্যাকবলিত নদীর কাছে হওয়াতে পানির পরিমাণ অনেক বেশি। সেই ভাইয়ের ঘরেও নাকি হাঁটু পর্যন্ত পানি কোনরকমে একটা বিছানা উঁচু করে বেঁধে নিয়ে সেখানে ঘুমায়। বাড়ির বাকি লোকজন ও গবাদিপশুর আশ্রয় এখন বাঁধের উপর। আমি বুঝে উঠতে পারিনা এত কষ্ট করেও তারা বাড়ি ছাড়তে চায় না কেন। যেখানে নানাভাবে তার জীবনের হুমকি আছে।

অথচ আমাদের দেশের নদী গুলো ড্রেজিং করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখলে প্রতি বছর বন্যায় এত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না। নদ-নদীগুলো তখন দুশ্চিন্তার কারণ না হয়ে আমাদের জন্য সম্পদে পরিণত হতো। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে দিন দিন আমাদের পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রতি বছরই অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার কারণে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। তাছাড়া সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধিও আমাদের অঞ্চলগুলোতে বন্যার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আসলে আমারা নিজেরাই নিজেদের এই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছি।

20220620_223341.jpg

যাইহোক এবার একটু আসল কোথায় ফিরে আসি। ২০১৭ সালের সেই অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি বলতে বলতেই আগের পর্বে থেমে গিয়েছিলাম। বাঁধে ফাটল ধরার খবর শুনে আমি অনেক দুঃশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যতই কাছাকাছি আসছি দুশ্চিন্তার মাত্রা আরও বেড়ে গেল। নানান ধরনের কুচিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর ভাবলাম বাসায় একবার ফোন দিয়ে জেনে নেই কি অবস্থা। এই ভেবে ফোনটা হাতে নিয়ে যখন বউয়ের ফোনে রিং দিলাম তখন সুইচড অফ দেখে আরও দুশ্চিন্তা বেড়ে গেল। পরক্ষনেই মনে হলো গতকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ফোনটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ভাবতে ভাবতে শহরের কাছাকাছি এসে লোকজনের মুখে আলোচনা শুনলাম বাঁধ ভেঙে গিয়েছে প্রচন্ড বেগে পানি প্রবেশ করছে। এই খবর শুনে আমি এদিকটায় আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত যাওয়ার চেষ্টা করলাম। যাওয়ার পথে একটি ব্রিজের কাছে এসে থমকে দাঁড়ালাম। ব্রিজটি ৫০ থেকে ৬০ মিটার লম্বা হবে হয়তো। বাঁধের যে অংশটা ভেঙে গিয়েছে সেই পানিগুলোর অধিকাংশই মনে হয় এই দিক দিয়ে যাচ্ছে। পানির এত তীব্র স্রোত দেখে মনে হচ্ছিল ব্রিজটি মনে হয় ভেঙ্গে যাবে। তাই ব্রিজের উপর উঠতে আমার ভয় লেগে গেল। রাস্তার উপরেও কোথাও কোথাও পানি উঠেছে। সেসব চিন্তা করে আর লাভ নেই বাড়ি যাওয়া অত্যন্ত জরুরী তাই ভয় কে জয় করে ব্রিজ পার হয়ে আসলাম। যতই বাড়ির কাছাকাছি আসতে থাকলাম আস্তে আস্তে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত আমার শ্বশুরবাড়ির যখন কাছাকাছি চলে আসলাম পাকা রাস্তার ওপর তীব্র স্রোত লক্ষ্য করলাম। পায়ের জুতা খুলে হাতে নিয়ে পানির মধ্য দিয়ে আমি মৃদুপায়ে হাঁটতে শুরু করলাম। যতই বাড়ির কাছে এগিয়ে যাচ্ছি ততই মনে হচ্ছে পানির গভীরতা আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে। তাই কাছাকাছি গিয়ে থেমে গেলাম। চিন্তা করলাম প্যান্ট পড়ে আর সামনে এগিয়ে যাওয়া চলবে না। তাই অপেক্ষা করতে লাগলাম বাড়িতে কিভাবে খবর পাঠানো যায়। অপেক্ষা করছি দেখাযাক কতক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কাউকে পাওয়া যায় কি না।
আজকে খুব ঘুম পাচ্ছে।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি A-10
ফটো@mayedul
লোকেশনw3w location
Sort:  

আপনি আগের বন্যাকবলিত সময় গুলোকে এখন পর্বের মাধ্যমে আমাদের মাঝখানে উপস্থাপন করার জন্য এক অভিনব কায়দা অনুসরণ করছেন বলে অসংখ্য ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইলো ভাই।

 2 years ago 

এই বছর হঠাৎ বন্যার আগমন দেখে পুরনো সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল।

 2 years ago 

ঘুম আসার সময় পেল না। 🤔
প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার জন্য যে আমরা মানুষেরাই দায়ী সেটা স্বীকার করতে আমরা খুবই নারাজ। যতদিন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে না ততদিন এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো না।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

এই যে বড় বড় শহরে জলাবদ্ধতা। নদীর পানি প্রবাহ নেই সামান্য বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এসবই আমাদের কর্মফল

 2 years ago 

আপনি একদম ঠিক বলেছেন আজকের এই পরিস্থিতি জন্য আমরাই দায়ী। কারণ আমরা কিছু সুবিধাবাদী লোক বনজ সম্পদ গুলো ভোগ করে বিপর্যয় ডেকে আনছি। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারন মানুষদের। আর খাল-বিল নদী-নালা সংস্করণের কারণে পানি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আর নিচু এলাকাগুলো জলাবদ্ধতায় পড়ে যাচ্ছে। আপনি যেই লোকটার ছটফটানি এবং কি কিছু শুকনো খাবার নেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করছিল বুঝতেই পারছেন তার মনে কতটা অস্থিরতা ভোগ করছে। তবুও প্রশ্ন জাগে এত রিক্সে কেন থাকে নদীর ধারে হয়তো পৈত্রিক সম্পত্তি প্রতি ভালোবাসা তার কারণ। আর আমি মনে করি এসব পদক্ষেপের সরকারের জোরদার হওয়া উচিত। অসাধারণ ছিল আপনার অনুভূতি গুলো। যদিও আপনার প্রত্যেকটা কথার উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। তবুও আমাদের সাথে এত সুন্দর করে আপনার অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

 2 years ago 

প্রকৃতির আর দোষ কোথয় আমরা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছি। তাই এর কর্মফল আমাদের ভোগ করতেই হবে।

 2 years ago 

আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুবই মর্মাহত হলাম। বন্যা কবলিত তথ্য আপনি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আসলে সত্যি দৃশ্যগুলো হৃদয় বিদারক। আপনার কথাগুলো সময় উপযোগী খুবই বাস্তব । এত চমৎকার পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

 2 years ago 

আসলে বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়।
আমার পোস্টে এসে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনার পুরোনো সময়ের বন্যা কবলিত দিনের ঘটনা পড়লাম। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ এবারও আমাদের সিলেট বিভাগে খুবই ভয়াবহ ও খারাপ অবস্থার সৃস্টি করেছে। আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করছেন হয়তো। মহান আল্লাহ তা'আলার কাছে আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি যাতে এই অবস্থা থেকে আমাদের বের করে আনেন। আমিন।

 2 years ago 

পুরনো দিনের গল্প টা শেয়ার করেছি ঠিকই। কিন্তু এ বছর আমাদের এখানে হঠাৎ বন্যা টা দেখেই পুরনো সেই দিনগুলো মনে পড়ে ছিল। পরবর্তী পর্বে ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব আমাদের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি আসলে বন্যাকবলিত সমস্যার জন্য আমরা নিজেরাও অনেকটা দায়ী।আমরা প্রতিবছর যে পরিমাণ বনায়ন ধ্বংস করছি সে পরিমাণ গাছ রোপন করি না।এটা অনেক বড় একটি প্রবলেম আমাদের নিজেদের জন্য♥♥

 2 years ago 

যদি আমাদের নদীর নাব্যতা ঠিক থাকতো আর নদীগুলোর ধারণক্ষমতা পর্যাপ্ত হতো তাহলে এই পানিতে সম্ভবত বন্যা দেখা দিত না।

 2 years ago 

আমরা এখন হয়ে পড়েছি নিজের পায়ে কুড়াল মেরে নিজের ক্ষতি করা জাতি । আমরা যারা স্কুলে পড়েছি তাদের সেই প্রাইমারি লেভেল থেকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ, করনীয় এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে শিখানো হয়েছে । কিন্তু যতদিন যাচ্ছে নিজের দেশ এবং পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারছি ততই বুঝতে পারছি এই ব্যবস্থাপনা শুধু পাঠ্য বইয়েই সীমাবদ্ধ ।

 2 years ago 

সবাই স্বার্থপরের মতো নিজের সুবিধার জন্য পরিবেশ ধ্বংস করছি। আসলে আমরা সবকিছু জেনেও যেন কিছুই বুঝিনা।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60209.30
ETH 2627.55
USDT 1.00
SBD 2.55